লেকের ধারে
==================
অভিষেক ঘোষ
==================
"হ্যাঁ রে ! এভাবে গড়ানে রাস্তায় গাড়িগুলো যাচ্ছে... খাদে পড়ে যাবে না তো ?" - পরলোকগত বন্ধুর কথাগুলো মনে করে, প্রথমে হো হো করে হাসতে থাকেন নরোত্তমবাবু, তারপর হঠাৎ এক্কেবারে চুপ করে গিয়ে শুকনো গলায় বলেন, "মনে আছে সুভাষ ? তুমি তখন অনেক ছোটো । সিকিমের পাকদন্ডি-তে বাসে বসে আতঙ্কে প্রভাস কেমন ভুল বকছিল !"
"মনে নেই আবার ? তারপর সবাই রে-রে করে বকাবকি শুরু করায় ওইসব বলা বন্ধ করল ! আসলে বাবা বরাবরই ভীতু প্রকৃতির ছিল । একা বাইরেও কখনও যায় নি সেভাবে, আপনাদের সঙ্গে ছাড়া ।"
"হ্যাঁ ঠিকই । ভীতু কিন্তু প্রকৃত বন্ধুবৎসল, কর্তব্যপরায়ণ ও সৎ একজন মানুষ ছিলেন তোমার বাবা ।" - গম্ভীর গলায় প্রিয় বন্ধুর স্মৃতিচারণ করে স্তব্ধ হয়ে যান নরোত্তম বাবু ।
কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে অবশেষে নীরবতা ভঙ্গ করে সুভাষ । শ্রাদ্ধের নিমন্ত্রণ-পত্রখানি কাকাবাবুর হাতে ধরিয়ে দিয়ে হাত জড়ো করে বলে, "আসবেন কিন্তু কাকাবাবু । আমি জানতাম আপনাকে সকালে লেকেই পাবো, তাই সোজা এখানেই এলাম । এবার উঠি, আরো কয়েকটা জায়গায় যেতে হবে । আসি ।"
"এসো তাহলে !" - সুভাষের অপসৃয়মান অবয়বের দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নরোত্তম বাবু লেকের জলের দিকে তাকান । জলে সবুজের মায়াময় ছায়া বাতাসে ভেঙেচুরে যাচ্ছে । তাঁর দু-চোখেও জল ।প্রতিদিন মর্নিং ওয়াকে আসার সূত্রেই এই লেকের ধারে একদিন আলাপ হয়েছিল হরপ্রসাদ, মণিময়, অখিল, রঞ্জন, প্রভাস - এদের সকলের সাথে । আজ কেউ নেই, তিনি একা । সবাই একে একে চলে গেছে পৃথিবী ছেড়ে । ওরা নেই, তিনি মানতে পারেন না কিছুতেই । নরোত্তম বাবু চোখের জলে শপথ নেন, যতদিন বাঁচবেন তিনি রোজ মর্নিং ওয়াকে আসবেন । বলা যায় না... কোনোদিন পুরনো বন্ধুদের কারো সাথে দেখা হয়ে যেতেও পারে ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন