সেই পাগলীটা
============
জয়তী
============
যাআআহ্ ---
যাআআহ্----
আর দেবো না।
এই দেখ আমার। এই যে আমার কাছে কতকিছু আছে। নিবি নিবি?
চোখ দুটো আদুরে গলায় নিজেকে দেখাতে ব্যস্ত সে, যেন ওর কাছে যা আছে কারুর কাছে তা নেই।
দোতালার ব্যালকনি থেকে তাকিয়ে আছি নীচের দিকে। পাগলিটা শেষ পাউরুটি টুকরো ছুঁড়ে দিলো কালুর দিকে। কালু খাওয়া শেষ করে, লেজ নাড়তে নাড়তে পাগলীটার পেছনে ঘুরঘুর করছে। পাগলীটা সামনের বাড়ির নীচের সিঁড়িতে বসে ওর মলিন পুটলিটা খুলে ছেঁড়া কাগজ, ভাঙা লিপস্টিক, রঙচটা গলার হার, আধময়লা একটা কুর্তি, একটা একটা করে বের করে মাটিতে রাখছে। কালু এসে সেগুলো শুকছে আর লেজ নাড়ছে। হো হো করে হেসে উঠছে আপনমনে পাগলীটা। যেন ওকে দেখিয়ে খুব আনন্দ পাচ্ছে খুব।
-এই পাগলী তুই আবার এখানে এসব ছড়িয়ে বসেছিস? নোংরা জিনিসপত্র তুলে যা হাট এখান থেকে--
বাড়ির মালিক চিৎকার করতে করতে বেরিয়ে এলো বাইরে।
পাগলীটা চিরুনী দিয়ে চুল আঁচড়াচ্ছে এবার। কপালে বড়ো একটা লাল টিপ। একটু আগের খাওয়া পাউরুটির গুড়ো গুড়ো লেগে আছে দুই গালে।
-জানো, কাল আমি চান করেছি। ওই যে স্কুলের পাশে যে কলটা আছে ওখানে। তোমাদের রান্না হয়েছে গো?
পাগলীটা গায়ে মাখলো না তার কথা। যেন সেই লোকটি তার কত চেনা, আপনজন।
-বেরো বেরো ওঠ এখান থেকে। জল ঢেলে দেবো এবার গায়ে। যা ওঠ আগে। যত্তসব, একদিন খেতে দিয়েছি লোভে পেয়েছে। যাবি তুই?
-দাও না---ভাত খাবো
-এই একটা লাঠি আন তো। ভাত খাওয়ার শখ ঘোচাই। কী মাছি কী মাছি চারপাশে। ফিনাইল আর জল নিয়ে আয়। বিশ্রী গন্ধ বেরোচ্ছে গা দিয়ে।
লোকটি অসহ্য রকম বিরক্ত ও ক্রুদ্ধ...
-ভাত খাবো। এই দেখো এখানে কেমন যেন হচ্ছে
বলেই দড়ি পাকানো শুকনো পেটটা বের করে দিলো কাপড় সরিয়ে। পাঁজরের হাড়গুলো ঠেলে উঠে আছে যেন দুর্ভিক্ষ প্রদেশে। ব্লাউজের হুক খোলা বুকে মৃত দুই বাদুড় ঝুলে। বেত ফলের মতো চোখের মণিদুটো দুটো অসম্ভব জ্বলছে। ভাঙা চোয়ালে উদাসীন আকুতি; নিভন্ত উনুনের ভেজা জিভের মতো অসহায়।
একমগ জল ছুঁড়ে দিলো সামনের বাড়ির লোকটা। পাগলীটা ওর জিনিসপত্র কুড়িয়ে কোনোরকমে পুঁটলিটা বেঁধে নিয়ে সরে দাঁড়ালো। কালু তখনও লেজ নাড়াচ্ছে। পাগলীটা মোড়ানো কাগজের ঠোঙা খুলে ভাঙা একটা বিস্কুট ওর দিকে ছুঁড়ে দিলো। ঠোঙাটা ওখানেই পড়ে থাকলো। কালু মুখ নাড়িয়ে খেয়ে ঠোঙাটা নিয়ে এখন ব্যস্ত। এবার পাগলীটা রাস্তা পার হয়ে এবার আমাদের গেটের সামনে।
একমগ জল ছুঁড়ে দিলো সামনের বাড়ির লোকটা। পাগলীটা ওর জিনিসপত্র কুড়িয়ে কোনোরকমে পুঁটলিটা বেঁধে নিয়ে সরে দাঁড়ালো। কালু তখনও লেজ নাড়াচ্ছে। পাগলীটা মোড়ানো কাগজের ঠোঙা খুলে ভাঙা একটা বিস্কুট ওর দিকে ছুঁড়ে দিলো। ঠোঙাটা ওখানেই পড়ে থাকলো। কালু মুখ নাড়িয়ে খেয়ে ঠোঙাটা নিয়ে এখন ব্যস্ত। এবার পাগলীটা রাস্তা পার হয়ে এবার আমাদের গেটের সামনে।
-এই দাঁড়া। খাবি তুই? একটু দাঁড়া আসছি খাবার নিয়ে।
একটা কাগজের প্লেটে একটু ভাত, তরকারি, এক টুকরো মাছ নিয়ে তাড়াতাড়ি নামলাম নিচে। দরজা খুলে এগিয়ে আসলাম গেটের কাছে। কিন্তু কোথায় কে?
কালু তখন উচ্ছিষ্ট খাচ্ছে পাশের বাড়ির কলপাড়ে--
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন