……ওরা হাঁটছে, মাইলের পর মাইল। ক’দিন আগেও সন্দীপ ছিল লোনাভলায়, বৌ-ছেলে-মেয়ে নিয়ে। কোথা থেকে এই অতিমারি উড়ে এসে জুড়ে বসল মানবজাতির ছাতির ওপর। হঠাত একদিন ঠিকাদার হাতে কিছু টাকা দিয়ে বললে -ঘর যাও। লক্ডাউন হঠেগা তো বুলালুঙ্গা। আরকি! ভরা সংসার নিয়ে একেবারে মেদিনীপুরের পথে।
চলার শেষ নেই। রাস্তাতেই জিরোয়। মাঝে এক রাত্তিরে আশ্রয় পেয়েছিল এক লরিওলার বাড়িতে। রাত্রিবেলা সবে চোখ বুজে আসছে ক্লান্তিতে। হঠাত উদয় হল শয়তান। রাতটুকু থাকতে দিয়েছে, নজরানা চায় যুবতী বৌকে। অন্ধকারে পালিয়ে আবার সেই পথে। মালগুলো একাই টানে, বউয়ের কোলে ঘুমন্ত ছেলেমেয়ে। দূরে একটা বাস, ছাড়বে মনে হচ্ছে। দৌড়য়। বাসটা কটক পর্যন্ত যাবে। কোনোমতে লোকঠাসা বাসে চড়ে পরিবার মালপত্র সমেত।
মাসখানেক পর সন্দীপ নিজের গ্রামে পৌঁছেছে। অন্ধকারে জনাকয়েক ঘিরে ধরে – তোমরা? কোত্থেকে?- আমরা সেই মহারাষ্ট্র থেকে আসছি গো, হেঁটে। আর পারছি না, দরজা খোলো। বড়ভাই যতীন বললে – করোনার সময় এসে পড়েছ। বাড়ির লোকদের তো বিপদে ফেলতে পারিনা। নদীর ধারে গাছতলায় থাক চোদ্দ দিন। কোয়ারান্টাইন শেষ হোক, তখন দেখা যাবে।
সেই থেকে ওরা গাছতলায়। এক নেতা গোছের বরেনদা মাঝেমাঝে আসে। বাচ্চাদুটোকে চকোলেট দেয়। চোখদুটো ইতিউতি কাকে যেন দ্যাখে – নিরুপায় সন্দীপ সব বোঝে কিন্তু একটা কাজ তো চাই। বরেনদা অবশ্য লোক ভালো। সেই-ই ওদের ভাঙ্গা ক্যাম্পখাট আর তাঁবু যোগাড় করে দিয়েছিল। প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ওদের কোভিড টেস্ট হয়েছিল। সবাই নেগেটিভ। অনেক ধরা-করার পর বরেন তাকে একটা কাজ দিতে রাজি হল দোকান চালাবার – এক শর্তে –পার্টির হয়ে কাজ করতে হবে। এরপর ছ’মাস কেটে গেছে। করোনার প্রকোপ কমেছে খানিক। হার্ডওয়্যারের দোকানটা এখন সে একাই চালায়। মালিক ওর কাজে খুশি। থাকার ঘর দিয়েছে একটা।
সন্দীপ ভাবে ভগবান মুখ তুলেছেন। ঝাপসা চোখে সে লোনাভলায় ফেলে আসা টুকরো সুখগুলোকে মোছে। ওর বৌ রাত জেগে অর্ডারি মাস্ক বানায়। সামনে পূজো, বউকে নিয়ে পূজোর বাজার করতে গেল কালীগঞ্জে। ফেরার পথে পেট ভরে রোল-চাউমিন খেল। ছেলেমেয়ের মুখে হাসি ধরে না। তার সুন্দর বৌ আহ্লাদে বলে - এবার পুজোতে আমায় একটু বাপের বাড়ি নিয়ে যাবে?
প্রিয় কবি,অন্যমনে সাহিত্য বড়দিন সংখ্যায় আপনাকে পেয়ে গর্বিত ও আশান্বিত । আমরা আপনাকে শুভকামনা ও শুভেচ্ছা জানাই।
উত্তরমুছুন