অন্যমনে সাহিত্য. অন্য রকম দৃষ্টিকোন থেকে দেখা একটি প্রতিবিম্ব ভাবনা .. অন্যমনে সাহিত্য.

বৃহস্পতিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২০

বড়দিনে জয়ী

 

বড়দিনে জয়ী
===================
বহ্নিশিখা
===================


জয়ী কচুশাক তুলছে। আলপথের ধার থেকে। এইশাক তুলে নিলে মা রান্না করবে তারপর খেয়ে সে স্কুলে যাবে।

এমন সময় ভাস্কর আর পাশের বাড়ির বলাই দৌড়ে গিয়ে জয়ীকে বলল,জয়ী তোর বাবা মারা গেছে। আমাদের গাড়িটাও ভেঙে গেছে।



বিশ্বাস করতে পারছে না জয়ী তার বাবা নেই। সে রাগের চোটে একসাথে চার পাশটা কিল ঘুসি বসিয়ে দিল ভাস্করের পিঠে। বলাই কোন মতে ছাড়ালো। জয়ীর কষ্টের চেয়ে বেশি নয় বলে ভাস্কর চুপ করে রইল।



ভাস্কর, জয়ী বলাই ওরা একসাথে পড়তো ক্লাস ফোরে। ভাস্করের বাবা স্বচ্ছল,তার দুটো অটো রিকশা আছে। ভাড়া চালাতো জয়ীর বাবা।



সেদিন ছিল বড়দিন,তার বাবা বলেছিল তার জন্য লাল জামা আনবে।পুতুল,আর ঘর আলো করার কিছু জিনিসপত্র আনবে। সবাই মিলে তাদের ছোট্ট ভাড়া ঘরটিকে সুন্দর করে সাজিয়ে তুলবে।



সেদিন সে ঘর আর সাজানো হলো না। কয়েকদিন পরে ভাড়াও থাকা গেলো না। জয়ীর মা জয়ী আর ছোট ছেলেকে নিয়ে বস্তির একটা ঘরে গিয়ে উঠল। বন্ধ হয়ে গেলো জয়ীর পড়াশুনা। জয়ী সারাদিন ভাইকে কোলে করে রাখে, তার মা বাড়ি বাড়ি কাজ করে। জয়ী কান্না চেপে রাখে। ওরা সবাই স্কুলে যায়। সে যেতে পারে না। তার খুব ইচ্ছে করে স্কুলে যেতে। তার খুব খিদে পায়। তার ভাইটাও খুব কাঁদে। খিদেতে জল খেতে চায় না।



আজ সেই বড়দিন। বাবার কথা খুব মনে পড়ছে জয়ীর । সে জেগে থাকে সান্টাক্লজের অপেক্ষায়। সে প্রার্থনা করে আর কাঁদে। তার বাবাকে ফিরে পেতে চায়।



সত্যিই সেদিন তার প্রার্থনা পূরণ হয়েছিল। সান্টাক্লজ হয়ে ফিরে এসেছে তার বাবা। সেদিন মারা গেছিল অন্য একজন। নিখোঁজ হয়ে যাওয়া জয়ীর বাবা স্মৃতি হারিয়ে ফেলেছিল। পুরোটা বছর আপনজনদের খোঁজতে খোঁজতে অবশেষে বড়দিনের আশীর্বাদ স্বরূপ ফিরে পায় স্মৃতি।



1 টি মন্তব্য:

  1. প্রিয় কবি,অন্যমনে সাহিত্য বড়দিন সংখ্যায় আপনাকে পেয়ে গর্বিত ও আশান্বিত । আমরা আপনাকে শুভকামনা ও শুভেচ্ছা জানাই।

    উত্তরমুছুন