অন্যমনে সাহিত্য. অন্য রকম দৃষ্টিকোন থেকে দেখা একটি প্রতিবিম্ব ভাবনা .. অন্যমনে সাহিত্য.

বুধবার, ১২ জানুয়ারী, ২০২২

অণুগল্পে শংকর

 

 

উত্তরণ
==============
শংকর ব্রহ্ম
==============



লক ডাউনের প্রভাবে কলকাতার আবহাওয়াটা একেবারেই অচেনা হযে উঠল। যেখানে এক কোটি মানুষের বাস, তারা সব গেল কোথায়? কোথায় আর? আতঙ্কে সব গৃহবন্দী।

রাস্তায় পথচারী কম, যানবাহনও কম। সাতসকালে বেরিয়ে একটা রিকশা নিই। রিকশাচালক প্যাডেল মারতে মারতে বলেন, ‘দেখিছেন স্যার, কী শহর কী হইল!’

আমি বলি, ‘কী হইল?’

‘মানুষজন সব হারায় গেছে।’

‘হারাবে না? করোনা বলে কথা! একবার ধরলে আর উপায় আছে?’

‘আমাগোর এসব ধইরলে চলে না, স্যার। প্যাটের দায়। করোনায় কী করবে? কাজকাম কম থাইকলে তো এমনেই না খাইয়ে মরতে হবে।’

রিকশাচালকের নাম পরেশ দাস। বয়স প্রায় পঞ্চাশ ছুঁইছুঁই। বয়স হলেও দিব্যি সুঠাম শরীর। থাকে বারুইপুরে। বাড়ি বনগাঁয়।

জানালেন, স্কুলগুলো বন্ধ হওয়ায় এখন খ্যাপ কমে গেছে। আগে যেখানে রিকশার মালিককে দিয়ে-থুয়ে রোজ গড়ে ৫০০ টাকা থাকত, এখন তা ২০০/৩০০ টাকায় নেমে গেছে। ভাবগতিক দেখে মনে হচ্ছে, আরও নেমে যাবে।তাই ভাবছি দ্যাশে গিয়া অন্য কিছু কাম কাজ করমু।

তার সঙ্গে কথা বলে বোঝা গেল, করোনার ভয়ে নয়, গ্রামে ফিরছেন জীবিকার তাগিদে। একমাত্র ছেলে পড়াশোনা করে। মেয়ের বিয়ে দিতে হবে।

খরচা-পাতির ব্যাপার আছে। তবে তাঁর এই ফিরে যাওয়ার মধ্যে লকডাউনের প্রভাব তো আছেই। করোনা ভাইরাস থেকে সতর্ক থাকতেই তো সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি বন্ধ।

গতকাল বাজারে সবজি কেনার সময় পরিচিত পেঁয়াজ বিক্রেতা বলেন,

‘পেঁয়াজ নেন, স্যার।’

বললাম, ‘এই তো পর্শু নিলাম তোমার কাছ থেকে,আজ আর লাগবে না। ’

‘গিরামে চলে যাচ্ছি, স্যার। এই শ্যাষ।’

‘কেন?’

‘দ্যাখেন না, কাস্টমার কম। বেইচা সুবিধা হয় না। বেবাকে করুনার ভয়ে ঘরে সেঁধিছে।’

‘আপনার ভয় নেই?’

‘এইগুলারে আমরা ডরাই না। মৃত্যু আইলে তো যহন-তহন আইতে পারে। করুনায় করব কি ? 'এই লাক ডাউনে তো অহন না খাইয়াই মরতে হইবো দেখচি'।

নিম্নশ্রেণীর মানুষ, যাঁরা সংবাদ মাধ্যম বা বিশ্বের খবরাখবর তেমন রাখেন না,আমাদের দেশে যখন কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয় বা কোনো রোগের কারণে মহামারি দেখা দিলে, তখন অনেক সময় হুজুগ আর গুজব পরিস্থিতি গুরুতর করে তোলে।

দেহ ব্যবসায়ীদের খদ্দের নেই, এই পরিস্থিতিতে

তা'রা তৈরী করতে শুরু করেছে মাক্স( মুখোশ)

তা'তে রুজি রোজগার কমে গিয়ে, দিন চলছে না আর। জানলো সাবী(সাবিত্রি বেরা) নামের এক দেহ-ব্যবসায়ী।

ছোটখাট কোম্পানীগুলো থেকে কর্মী ছাটাই শুরু হয়ে গেছে। তা'রা কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।

কেউ কেউ ভ্যান রিকশায় করে ডিম নিয়ে পাড়ায় পাড়ায় বিক্রি করছে।কেউ আবার অনভ্যাস্ত হাতে মুরগীর মাংস কেটে বিক্রি করছে।কেউ আবার সব্জী বেচছে। এক কথায়, যে রকম ভাবে পারছে সংসার চালাবার চেষ্টায় আছে,শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হলে, হয়তো ভবিষ্যতে সমাজ বিরোধী কাজকর্মে লিপ্ত হয়ে পড়বে।

আজ যে মুরগীর গলা কাটছে,কাল সে হয়তো মানুষের গলা কাটতে শুরু করবে। অসম্ভব কিছুই নয়,কারণ সেও দু'টো খেয়ে পরে বাঁচতে চায়,সে অধিকার তারও আছে। ন্যায্য পথে না হলে বাধ্য হয়ে অন্যায্য পথের আশ্রয় নেবে।

ভারতবর্ষে জিডিপি হার কমে গেছে প্রায় ত্রিশ শতাংশ। পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ।

তাই বলে কি আমরা নতুন দিনের স্বপ্ন দেখব না?

তবে আর বাঁচব কী নিয়ে? আশা নিরাশার ঢেউয়েই তো জীবন তরী এগিয়ে চলে।



তবে চলুন কবি কী বলে শুনি -



" নতুন বছর আসছে বলে,

বুকের ভিতর উঠছে ঢেউ

নতুন বছর আসছে বলে

নতুন করে আসছে কেউ?



নতুন বছর আসছে বলে

আকাশ বাতাস রঙিন হলো

নতুন বছর আসছে বলে

কেউ কি কারও মন রাঙালো?



নতুন বছর নতুন বছর

বলো তোমার নতুন খবর

নতুন বছর আসছে বলে

জিনিষেরও কি কমলো দর?



আসছে বলেই নতুন বছর

লাফাচ্ছ খুব মনে,

ভাবছ না তো থাকবে যে কে

থাকবে না কোন জনে।




আসছে বলেই নববর্ষ

ফুরিয়ে যাচ্ছে জীবন

এই কথাটা ভাবার সুযোগ

দিচ্ছে নাকি মন। 


নতুন বছর আসবে যাবে

তাতে তোমার আমার কি?
 
আমরা তো সেই পুরণো

গড্ডালিকা প্রবাহেই ভাসছি।






২টি মন্তব্য: