অন্যমনে সাহিত্য. অন্য রকম দৃষ্টিকোন থেকে দেখা একটি প্রতিবিম্ব ভাবনা .. অন্যমনে সাহিত্য.

বুধবার, ১২ জানুয়ারী, ২০২২

অণুগল্পে দেবলীনা




লিটিল ওলি
==========
দেবলীনা

==========

চল্লিশ ছুঁই ছুঁই আলোবাবু ওরফে লেফট্যানেন্ট কে পি তরফদার একজন সাহসী ও দক্ষ সেনাধ্যক্ষ।তার দায়িত্বপূর্ণ কাজের ফাঁকে সময় পেলেই ছুটে আসেন তাঁরই পৈতৃক নিবাসে গড়ে তোলা কিন্ডারগার্টেন স্কুল " লিটিল ওলি "তে।



এবং ফাঁকা বাড়ি ও স্কুলের সম্পূর্ণ দায়িত্ব মনোলিনা কে দিয়ে তিনি নিশ্চিন্ত।



বছর তিরিশের সুশ্রী, শান্ত এবং বয়সের তুলনায় বেশ পরিণত মনোলিনা,ভাগ্য তার থেকে সংসার কেড়ে নিলেও ফিরিয়ে দিয়েছে " লিটিল ওলি " র মত একটা নিশ্চিত ও সুরক্ষিত বাসস্থান ও কর্মজীবন।



স্কুলের ঘরগুলির একপাশে মনোলিনার নিজস্ব ঘর সংসার নিজের মতো করে গোছানো। সারাদিনের স্কুলে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের দেখে ওর রঙিন প্রজাপতির মতো মনে হয়, ওরা কত রঙিন, কত উজ্জ্বল , দুরন্ত ডানায় ভর করে ওরা কত প্রাণবন্ত। ওদের দেখেও মনে শান্তি আসে , বাঁচার তাগিদ পায়। বিগত জীবনের যত অন্ধকার যত কষ্ট সব যেন ছিঁড়েখুঁড়ে যায় ওদের আনন্দ হাসি গান আর আধো বোল শুনে।



মনোলিনা ও আলোবাবুর সম্পর্কটা ভীষণ ফর্মাল শুধুই আশ্রয় আর আশ্রিতার। তবে ওরা মুখে তেমন কথা না বললেও চোখের ভাষা পড়তে পারে একে অপরের... যে ভাষা নির্ভরতার , বিশ্বাসের , ভরসার।



দু তিন সপ্তাহ হলো মুন্নি স্কুলে এসেছে তার মামা রাজুর হাত ধরে , রাজু বয়সে নেহাতই ছোট কিন্তু পেটের দায়ে তাকেও কাজ করতে হয় । অনেক খোঁজ খবর নিয়েই সে তার তিন বছরের সদ্য মা - বাবা হারানো ভাগ্নিকে নিয়ে " লিটিল ওলি "র দারস্ত হয়েছে শিক্ষা সহবতের সাথে দিনের অনেকটা সময় নিরাপদ ও নিশ্চিন্তের আশ্রয় পাবে ভেবেই। এই অহেতুক ও অদ্ভুত আবদারে অনেকেই অবাক ও অসন্তুষ্ট হলেও মনোলীনা খুব খুশি এবং উৎসাহ পেয়েছিল , তার নিসঙ্গ জীবনে কয়েক ঘণ্টা বাড়তি আনন্দ ও ছটফটানিকে উপভোগ করার লোভে। আলোবাবুও রাজি হয়েছিলেন মনোলিনার চোখের ভাষা পড়ে।



কিন্তু সেদিন দিনের শেষে রাজুর দেখা না পেয়ে অস্থির হয়ে ওঠে মনোলিনা, দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যে আর সন্ধ্যে পেরিয়ে রাত যখন গভীর হলো তখন মুন্নির অনর্গল প্রশ্ন মনোলিনাকে অশান্ত করে তুলছিলো। তার এই অস্থিরতা আলোবাবুকেও আজ প্রথম উতলা করে তুললো ।

আলোবাবু ধীরে মনোলিনার কাছে এগিয়ে এসে

রাজুর আর কোনদিন না ফিরে আসার কারণটা জানালেন এবং

মুন্নিকে সস্নেহে আঁকড়ে ধরে মোনোলিনার উদ্দেশে বললেন ... আজ থেকে মুন্নির সব দায়িত্ব আমার আর আমাদের আগামীর উত্তরণের পথে মনোলিনা

তুমি হবে সুদৃশ্য ধ্রুবতারা!

কথাটা শুনেই মনোলিনা অনেক বছরের জমা কান্না আজ আবারও সামলে নিয়ে তার বিশ্বস্ত আলোবাবুর মধ্যে দেখল চট্টানের মতো দৃঢ়, নির্ভীক সেই দায়িত্ববান পুরুষকে যাকে শুধু শ্রদ্ধা নয়, ভালোবাসাও যায় আজীবন অকাতরে।




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন