অন্যমনে সাহিত্য. অন্য রকম দৃষ্টিকোন থেকে দেখা একটি প্রতিবিম্ব ভাবনা .. অন্যমনে সাহিত্য.

বুধবার, ১২ জানুয়ারী, ২০২২

অণুগল্পে দীপঙ্কর

  

 

এনগেজড
==================
দীপঙ্কর সরকার
==================


আমি এগেজড ‌‌। মিছেমিছি কেন একথা বললাম !

শুনে নিশ্চয়ই তোর আশ্চর্য ঠেকছে ।

হ্যা নিশ্চয়ই , তুই তো এসবের সাথে পাঁচে থাকিস না । তাহলে কী এমন ঘটল , খোলসা করে বল দেখি ।

আসলে কি জানিস , দিন কয়েক আগে থেকে একটি ছেলে আমার ওপর নজর রাখছিল । আমার স্কুল যাতায়াতের সময় সে থানার মোড়ে বিশুদার চায়ের দোকানে চা খেত , বেশ সম্ভ্রান্ত ঘরের ছেলে বলেই মনে হয় । প্রথম দিন গা করিনি কোনো । আর পাঁচটি

ছেলে যেমন করে চেয়ে দ্যাখে মেয়েদের দিকে তেমনি হয়তো দেখছে ভাবলাম । কিন্তু না , পরের দিন , পরের দিন , এমনকি তার পরের দিনও একই ভাবে হ্যাঙলার মতো চেয়ে দেখছিল । এইভাবে সপ্তাহ খানেক গড়ালে গত সোমবার সে একটু সাহস ভরে এগিয়ে এসে , আমাকে ডাকল , ম্যাডাম শুনছেন , একটু দাঁড়ান , কথা আছে ।


আমি এপাশ ওপাশ তাকিয়ে দেখি , ধারে কাছে কেউ নেই , তাহলে তো আমাকেই বলছে । আমি সে কথা না শোনার ভান করে , গট গট করে হেঁটে যেতে থাকলাম । সেও আমার পেছন পেছন আসতে থাকল ।

রথতলা গেটে প্রচণ্ড ভিড়ে যখন দাঁড়াতেই হল , তখন

সে আত্মপরিচয় দিয়ে জানায় , " আমি ওই স্বনামধন্য চৌধুরী বাড়ির বড় ছেলে , আগে বিদেশে থাকতাম কদিন হল এদেশে এসেছি । "


আমি বললাম, তাতে আমার কি , আপনি যেই হোন না , আমার কিছু আসে যায় না ।


আরে আরে রোস রোস , সে আপনি থেকে তুমিতে নেমে এসেছে । তোমার দরকার না থাকলে ও আমার আছে , আর আমার আছে মানে তোমার ও আছে ।


কী যাতা বলছেন ?


না , মানে ইয়ে , আর কি , আমতা আমতা করে সে শেষমেশ বলে বসে , ইয়ে মানে তোমাকে ভালোবাসি-- এই বলে সে চলে যায় ।


সেদিন স্কুল থেকে ফিরে বন্ধু পুরো ব্যাপারটা শোভনকে জানানোয় , সে বলে এরপর কিছু বললে তুই বলবি আমি এনগেজড , তাহলেই কেল্লা ফতে । সে আবার কি, আমি মিছেমিছি সে কথা বলতে যাব কেন !


আরে বলেই দ্যাখ না ।


আমি রাতভর শোভনের কথাটা ভাবলাম । একথা বললে কী কী হতে পারে তার একটা আন্দাজ করে নিয়ে পরদিন ইতস্তত করে স্কুলের পথে রওনা দিলাম ।

বিশুদার চায়ের দোকানের কাছাকাছি আসতেই আগ বাড়িয়ে ছেলেটি এসে জানতে চাইল , কী হল আমার

কথার উত্তর দিলে না যে । তাহলে কি ' মৌনম্ সম্মতিনাম্ লক্ষণম্ । ' বারো ক্লাসের ছাত্রী আমি সংস্কৃত অপশনাল থাকায় তার মানেটা আমার অজানা ছিল না । তাই নিঃশঙ্কোচে জানালাম ," না

আমি এগেজড । দু বছর ধরে কৌশিকদার সঙ্গে আমার সম্পর্ক ।"


একথা শুনে ছেলেটি বলল , আগে বলবে তো , এত নখরা কেন । এই বলে সে খাপ খুলে নিয়ে হাওয়া ।


এবার বুঝলি তো ছেলেটির সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে না যাওয়ার কারণেই এই মিথ্যের আশ্রয় নিতে হয়েছিল ।


ও তাই বল , এই বলে রমলা বলল , বেশ কায়দা তো ! আইডিয়াটা মন্দ নয় ।


এজন্য শৌভিকে অসংখ্য ধন্যবাদ , আচ্ছা রাখি ,পরে

আবার কথা হবে বলে মুঠোফোনটা টেবিলে নামিয়ে রাখলাম ।




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন