অন্যমনে সাহিত্য. অন্য রকম দৃষ্টিকোন থেকে দেখা একটি প্রতিবিম্ব ভাবনা .. অন্যমনে সাহিত্য.

শনিবার, ৩০ মে, ২০২০

আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু ,বিরহ দহন লাগে




আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু ,বিরহ দহন লাগে

================================
ভাস্কর পাল
===============================

“জীবন আর মরণ তো একই সত্ত্বার দুই দিক- চৈতন্যে ঘুম আর জাগরণ যেমন!” বলেছিলেন কবি রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর বাসন্তী দেবীকে তাঁর ১৫ই কার্ত্তিক ১৩৩৮-এ লেখা একটি পত্রে । কবির প্রজ্ঞায় ধরা পড়েছিল মৃত্যু কিন্তু বিলুপ্তি নয়। কবি অনুভব করেছিলেন, মৃত্যুর মধ্যে দিয়েই জীবনের পরিপূর্ণ মুক্তি। সম্পূর্ণ প্রকাশ। পুরানো যা কিছু, তাকে নূতনের জন্য জায়গা করে দিয়ে যেতে হবে। মৃত্যুর সেই দূয়ারেই জীবনের মহাযজ্ঞ। আর মৃত্যুর মধ্যে দিয়েই পরিণতির মাত্রায় প্রকাশিত হয় জীবন, তার পূর্ণতায়!

অথ শঙ্খিনী কথা

অথ শঙ্খিনী কথা
=========================
সুদর্শন ব্রহ্মচারী
================ =========


শ্রীমতী আমার কোলে মাথা রেখে কুড়ি বছর আগের গল্প বলছে, ‘তখন সবে মাটি আঁকড়ে পৃথিবীটা দেখতে শুরু করেছি। যা কিছু দেখি শুনি ছবি এঁকে এঁকে সব মুখস্ত করে রাখি। সারাক্ষণ মায়ের গন্ধ ঘিরে রাখে। মায়ের ঠোটের আদর ছাড়া কিছুই ভাল্লাগে না। মা গুন গুন করে নেচে বেড়ায়। যদ্দূর দেখতে পাই ততটুকুই আমার পৃথিবী।’

পরিযায়ী পথ


পরিযায়ী পথ
===============================
মঞ্জীর বাগ
===============================


কিছু পথ হাঁটছে বলেই পথিক বলা যাচ্ছে নাওই মানুষদের; ওরা দলে দলে পরিযায়ী।
একটি অদৃশ্য ভাইরাস নামক ছোবলে হারিয়ে গেছে আধার কার্ডের বৈধতা।
দেশ এখন কোয়েন্টাইন সেন্টার। প্রত্যেকই আড় চোখে দেখছি অপরকে। দেশটাকে নিজের ভেবেই রুজির টানে ভিন্ন প্রান্তে যাওয়ার বাহবাটি এখন অপরাধ।
এরাজ্য বলছে তুমি আমার না,নিজের রাজ্য বলছে তুমি ভাইরাস
প্রতিবেশী বলছে তুমি কোয়েন্টাইন
পরিবার বলছে তোমার জন্য আমায় পঙ্গপাল হতে হয়েছে
পঙ্গপাল বলছে এবারে ছেয়ে দেব গোটা আকাশ
আমফান চলে যাওয়ার আগে হাসতে হাসতে বেঁচে থাকার আশাটিকে দুশ বছরের পুরোনো বট গাছের পুরোনো শিকড়ের মতো উপড়ে ফেলে হিজড়ে দলের হাত তালি এবং হাসিকে মাখামাখি করে
ছিঁড়ে ফেলল আশার রেশন কার্ড।
তবু ও আমাদের হাঁটতে হচ্ছে।ফিরে আসার অলীক রেলপাতে টুকরো টূকরো করে ছড়ানো আছে রক্তমাখা রুটি
রেল স্টেশানে মরা মার আঁচলে নিরাপত্তা নামক
অলীক আশ্রয়ের গান খুঁজছে যে শিশুটি এই এসময়েই কৌরবসভা দ্যুতক্রীড়া ছুঁচো বাজিটি দেখেছে
আমরা বাচ্চাটিকে দেখছি, মৃত আঁচলটি দেখছি
সোসাল মিডিয়া দেখছি, বহুকিছু দেখার পরেও
নিজেদের গুটি অবস্হাটি দেখছি না
দেখছিনা বলেই কৌরব সভায় মামাবাবু পাশা খেলছে হাসিমুখে
কেবল একটি ছেঁড়া কাপড়ের আড়ালে সদ্য জন্মানো না কাঁদা বাচচাটা জানে কিছু পরেও
কান্নাকাটি করা চলবে,কেননা বহু কান্না জমিয়ে রাখতে হবে জীবন কোয়েন্টাইনে

স্বপ্ন

স্বপ্ন
===========
ঋতুপর্ণা চ্যাটার্জি
============


পয়লা বৈশাখের হাটে খুব ভীড়, তার মধ্যেই বাচ্চাদুটোর জন্য কমদামী জামা কিনল পলাশ, প্রতিমার চুড়ি খুব পছন্দ.. অভাবের সংসার তবু বছরকার দিন প্রিয়মানুষদের মুখে হাসি ফোটে। বাড়ি ফিরে দুপুরের নির্জনতায় প্রতিমার হাতে পড়িয়ে দিল চুড়ি,

উপলব্ধি........


উপলব্ধি........
===================
নবনীতা চ্যাটার্জ্জী
===================


গতকাল নাইট ডিউটি থাকায় দুপুরে একটু ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, ঘুম ভাঙল রুদ্রর ঠেলায়"কিগো চা করবেনা"।লকডাউনের বিকেলে একসাথে দুজনে বসে চা এর সাথে টিভি দেখাটা আমার কাছে খুব প্রিয়। 16 বছরের বিবাহিত জীবনে এমন মুহূর্ত কম। চা নিয়ে ঘরে ঢুকতেই টিভিতে দেখি করোনা আক্রান্ত আর মৃতের সংখ্যা। খুব ভয় হয়,হসপিটালের চাকরি যদি আমার জন্য পরিবারটার কোনো ক্ষতি হয়।এমন অন্যমনস্কতায় হঠাৎ রুদ্র বলল," দেখ মিতা প্রধানমন্ত্রী স্বাস্হ্যকর্মীদের জন্য বীমা সুরক্ষা ঘোষনা করলেন। শুনেই আমি হেসে উঠলাম"তাহলে আমি মরলেই ভালো বল "। আমার হাতটা মুঠো বন্দী করে রুদ্র বললো-না মিতা তুমি ছাড়া এ সংসার অচল।চোখ ভরা জলে সেদিন উপলব্ধি করলাম ভরসা আর ভালবাসা।

পাখি,শিশু ও একটি ভুল সময়



পাখি,শিশু ও একটি ভুল সময়

=========================================
শ্যামশ্রী রায় কর্মকার
==========================================


তখনও রোদের মুখ বিষাদিত নয়
তখনও চায়ের রঙ বনজ মধুর
প্রথম চুমুকটুকু দিতে না দিতেই
আমার চোখের সামনে ফুটে উঠল পিচের বাগান
সবুজ পাতার ভীড়ে কাঞ্চনবর্ণ পিচফল, সামান্য রক্তিম
টেবিলের এককোণে হলুদ প্রিনিয়া এসে দোল খেতে খেতে
আমাকে শুনিয়ে গেলো ছায়াচ্ছন্ন কথা
হাতে দিয়ে গেলো গুল্মবীজ
ডানার বিষাদটুকু রেখে গেলো পেয়ালার গায়ে
কোলাহলের দরজাখানা আলতো ভেজিয়ে রেখে
উড়ে গেলো বস্তুমুখী জীবনের দিকে
বুনো কুল আঁকা ফ্রকে মৃদু ঢেউ তুলে কাছে এল
আমার আত্মজাত হিয়ামন পরী
সদ্য ঘুম ভাঙা তার মুখ
নিঃশব্দ অভিযোগ ভ্রু ও কপোলে
'পাখিটাকে একবার আমার জন্যে ডাকলে না?'
ওর পৃথিবীতে ওঠা রোদ্দুরের রঙ ঝিঙেফুল
আহত পাখির মতো, নিরুপায় বৃষ্টির মতো
টুপটাপ খসে পড়ে মেয়েরা এখন
ওকে তা বলি না আমি
সন্তর্পণে সরিয়ে রাখি সমস্ত ধর্ষণ-সংবাদ



কালবৈশাখী

কালবৈশাখী
======== =========
সুতপা পুততুণ্ড
=================


কালবৈশাখী ত নিয়ম মেনে খেলে না!
তার এলোপাথাড়ি বয়ে যাওয়ার মধ্যেই আভিজাত্য।
মানবজীবনে দমবন্ধ করা গুমোট পরিবেশে,
দমকা হাওয়ার মত!
কখন যে আসবে, কেউ বলতে পারে না!
হঠাৎ তার উদভ্রান্তের মত আগমন!
সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রবনতা!
একমাত্র বৃষ্টি ই পারে সবকিছু বদলে দিতে!
কালবৈশাখীর পরে জীবনটা যেন উল্টো স্রোতে বয়!
আলেয়া, মোহময় হয় ঠিকি, কিন্তু সুদূরপ্রসারী নয়!







রাত চরা রাত

রাত চরা রাত
===================
রথীন পার্থ মণ্ডল
===================


রাত চরা রাত কপালে কুয়াশার মেলা মুখে
চাঁদপালা-কালো রং নিয়ে জানালার পাশে।
কার্পাস তুলোর কান্না মাঠের সবুজে লেপ্টে আছে।
ঐ দিকে নিপুণ লণ্ঠন জ্বলে ওঠে যেন
দ্বিতীয়ার চাঁদ। কুয়াশা জাগানো রাত খোঁজে
ম্রিয়মান রং, তুলি, ভেঁপু তাদের গোপন আলাপ
পুরোনো ইতিহাস। হেসে ওঠে অভিমান হেসে ওঠে
লতা জড়ানো ক্ষোভ হেসে ওঠে কিচির মিচির করা
লজ্জা। এসব কিছু ছাড়িয়ে বোধের সীমানা
পেরিয়ে রাত এসে বসে কুলতলির ঘাটে।দেখে
সেখানে জড় হয়ে আছে চুপচুপ কিছু ধান,
চুপ চুপ কিছু ভাঙা স্বপ্ন, তুলোর আকুল কান্না
হে রাত চরা রাত এ সর্ব অচিরকালীনতা নিয়ে কি করবে?

পাগলি



পাগলি
===================
প্রনব রুদ্র
===================

কতবার তোর সাথে দেখা হয়েছে
কতবার ভেবেছি কত কিছু বলবো
অথচ আজো বলা যায়নি কিছুই।
প্রতিবারই আমি নির্বাক দর্শকমাত্র
আমার শব্দ পাথর চাপা ফসিলস।
শীতের বৃদ্ধ পাতাঝরা গাছ।
কত্ত কিছু শুধু দেখেছি আড় চোখে -
তুই কপালের চুল সরিয়েছিস
আনমনে ঠোঁট কামড়েছিস
হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে
কপালের ঘামরেণু মুছেছিস
যত্নে নাকছাবি ঘষেছিস
আমি দেখেছি সওওওব।
একদিন দেখলাম-
তোর পাশে বিপদজনক নিকটে
হাটঁছে তোর প্রশয়িত মানুষ
কীইইই আবেগে ছুঁয়ে রেখেছে হাত।
আমি নিরাপদ দূরত্বে
বুকের বাষ্প ঢাকি
ভালোবাসা ছিলো বলে
সওওওওব দেখে রেখেছি।
নিরব ছিলাম আগে
এখনো নিরবই থাকি।

নিত্যযাত্রী


নিত্যযাত্রী
======= =======
সূর্য মণ্ডল
==============

সকাল হলেই যাদের বেরুতে হয় কাজে
তাদের ভয় দেখিও না কুয়াশার চোখ রাঙানির
বড়জোর তারা একটা আড়মোড়া ভাঙতে পাড়ে ব্রাশ হাতে
বড়জোর তাদের ব্রাশ থেকে টুপ করে
খসে পড়তে পারে ট্রুথপেষ্ট
তারা দুটো নাকে মুখে গুজে
শিষ দিতে দিতে দ্রুত প্যাডেল ঘোরায় সাইকেলের
আর শক্ত করে চেপে ধরে রানিং ট্রেনের হাতল

স্মৃতিরহিত

স্মৃতিরহিত
===============
সম্পূর্ণা
===============

হৃদপিণ্ডের মধ্যে ঠোঁট ডুবিয়ে মাছরাঙা
তীক্ষ্ণ কোণে কয়েক বিন্দু ইচ্ছেদাগ
গাঢ় হওয়া স্বপ্নে উঠে আসে অপলক দৃষ্টি
ডানার ঝাপটায় খসে যায় বিরহ পালক!
যতোটা পাথরের রোদে বসলে সন্ধ্যে হওয়া যায়-
ততোটাই ছায়া হয়ে আছি।
যতোটা আঁধার জমালে জোনাকি আলো আনে
ততোটাই রাত ছুঁয়ে গেছি।
ওদিকে যেওনা! কতো রাত চাঁদে ভেসে গেছে
পথ বরাবর দীর্ঘ পাহাড় শুধুই প্রমাণে দাঁড়িয়ে
যোগ্যতার প্রবাহমানতা ন্যুড আকাশের ক্যাম্পে
সময় শুধুই চেয়েছে যুদ্ধ প্রতি আমি তুমিতে!
অনেকগুলো যন্ত্রণা প্রেমের মতো হয়
অথচ প্রেম কোনো দুঃখের মতো নয়!
এসো রুগ্ন পৃথিবী, তোমায় ভালোবাসতে শেখাই
তোমার মৃত্যুদের আদরে আদরে নির্লিপ্ত করে যাই...।

প্রাক্তন


প্রাক্তন
=========
পায়েল সেন
=========


ধূসর স্মৃতিরা পসরা সাজায় হৃদয়ের গলিতে,
মেয়েবেলা পথ হারায় ফেলে আসা সময়ের ছবিতে।
অতীতের কিছু পাতা ওল্টালে ; হাওয়ায় উড়ে যায় ডায়েরির ভাঁজে চাপা থাকা -
কিছু শুকনো গোলাপের পাপড়ি আর একটা ময়ূরের পালক।
কলেজের নবীন বরণের দিনে হঠাৎ ভিড়ের মধ্যে আসা, একটা লাজুক হাত থেকে পাওয়া;
মনের দরজায় আজও বারবার স্মৃতিরা কড়া নাড়ে।
দমবন্ধ গুমোট ঘরের দরজার ফাঁক গলে ;
চৌকাঠ পেরিয়ে নেমে আসে কয়েক ফোঁটা নোনা জলের ধারা।
মনের অগোচরে রয়ে যায় অসম্পূর্ণ গাঁথা ভালোবাসার বিনি সুতোর মালা,
প্রথম প্রেমের চিঠিরা সময়ের এজলাসে আজ বোবা সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে!
ভালোবাসার ডাকনামটা অবিকল রয়ে গিয়েছে শুধু ডাকার অধিকারটা আর নেই।
তাকে ছুঁয়ে দেখতে গিয়ে মুঠোফোনের দ্বারস্থ হতে হয়,
মুখপুস্তিকায় চেনা নামে খুঁজতেই পরিপাটি ছবি জানান দেয় সে আজকাল সুখী - সংসারী।
হাতুড়ির আঘাতের চেয়েও গভীর আঘাত অনুভব হয়,
বোরোলিনেও বুঝি এই ক্ষত সারে না!
আসলে কি জানেন তো, ব্যস্ততার অজুহাতে ভুলে থাকা সহজ কিন্তু ভুলে যাওয়া নয়।।