অন্যমনে সাহিত্য. অন্য রকম দৃষ্টিকোন থেকে দেখা একটি প্রতিবিম্ব ভাবনা .. অন্যমনে সাহিত্য.

বুধবার, ১২ মে, ২০২১

ধ্বংসের রূপকথা

 
 
ধ্বংসের রূপকথা
===========================
মানিক পন্ডিত
===========================



‘অন্যমনে’ ওয়েব ম্যাগ মে ২০২১ সংখ্যার জন্য ‘ধ্বংসের রূপকথা’ এই শিরোনামে একটি লেখা নিয়ে ভাবছিলাম destruction নিয়ে ঠিক কোন দৃষ্টিকোণ নিয়ে অগ্রসর হওয়া যায় এবং দোলাচলে পড়ছিলাম এ জন্য যে আলোচ্য সময়কালে রাষ্ট্র এবং সমাজজীবনে চারপাশ জুড়ে এতটাই ভাগাভাগি (devide) এবং ভাঙাভাঙি (destruction) চলেছে তাতে রাষ্ট্র,শাসকশ্রেণি বা রাষ্ট্রীয় সমাজকে (political society) দায়ী করে বা কেবলমাত্র এই দৃষ্টিকোণ থেকেই লেখা হয়ে যেতে পারে। অন্যদিক এই ভাঙনের মাঝে নিঃশ্দে মনোজগৎ ভেঙে যাওয়ার বিষয় রয়েছে। কিন্তু সমস্যার গভীরে যেতে ব্যক্তিজীব (animal)তার সহজাত প্রবৃত্তি (basic instinct) তার হাজার হাজার বছরের প্রজ্ঞা- (intuition), তার psychoanalytic, নাগরিক সমাজ(civil society) এবং এসব কিছুর উৎসস্থল,এগুলি বাদ দিয়ে আলোচনা অসম্পূর্ণ। শিরোনামের বিষয়টির তাই বহুমাত্রিক অভিক্ষেপ থেকে দেখার সুযোগ রয়েছে,একাধিক মৌল উপাদান নির্ভর আলোচনার অবকাশও রেখেছে যেখানে লুকিয়ে আছে ‘ধ্বংসের রূপকথা’ বা fairytale of destruction.

একদিকে মানুষের টিকে থাকার লড়াই, বিবর্তন, অন্যদিকে শাসকের আগ্রাসন- সে রাজতন্ত্র,স্বৈরতন্ত্র ধনতন্ত্র কিংবা তথাকথিত গণতন্ত্র যা-ই হোকনা কেন। ফলে অনেকগুলি বিষয় না ছুঁয়ে উপায় নেই। তাই একদিকে ব্যক্তিমানুষ তার সহজাত প্রবৃত্তি,বিবর্তন, অন্যদিকে ব্যক্তিশাসক রাজতন্ত্র,স্বৈরতন্ত্র ধনতন্ত্র কিংবা তথাকথিত গণতন্ত্রের পথবেয়ে ধ্বংস বা ধ্বংসসাধন এবং নাগরিক সমাজে তার প্রভাব,সংক্ষেপে এ বিষয়েগুলিই থাকবে এই লেখায়।

এ কথা উল্লেখ করতেই হয় যে মানুষ সমাজবদ্ধ জীব এবং কয়েক হাজার বছরের সভ্যতা সাহিত্য সংস্কৃতির স্রষ্টা সে। তাই সে দাবি করে শ্রেষ্ঠত্ব। তার রয়েছে একটা নাগরিক সমাজ বা civil society । অন্যদিকে রাজতন্ত্র,স্বৈরতন্ত্র পিছনে ফেলে ক্রমশ গণতন্ত্রের পথে অগ্রসর হয়েছে রাষ্ট্রীয় সমাজ বা political society কিন্তু আসলে সে সমস্তকিছুর একছত্র নিয়ন্তা। এই হিসেবে বর্তমান রাষ্ট্রীয় সমাজকে স্বৈরতন্ত্রী বললেও অত্যুক্তি হবেনা।

আলোচ্য দশকগুলি বা শতাব্দীতে নাগরিক সমাজ বা civil society নিজের স্বাধীনতায় নাগরিকের জন্য উৎকৃষ্ট বিষয় কিংবা সৃষ্টিতে সরাসরি প্রবেশ করতে পারে না। তার গন্ডি অত্যন্ত সীমাবদ্ধ এবং তা তৈরি করেছে রাষ্ট্রশক্তি। ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দী থেকে চারপাশের নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠেছে গণতন্ত্র অথবা সমাজতন্ত্রের মোড়কে অন্য একধরণের শাসন যাকে স্বৈরশাসন বললেও ভুল হবেনা ।

কিন্তু civil society অথবা political, যে দৃষ্টিকোন থেকেই দেখা হোকনা কেন ব্যক্তি বা person গোষ্ঠি বা সমাজ গঠনে একটি unit বা এককমাত্র। ব্যক্তি থেকেই সমষ্টি বা বহুজনে ক্রমশ রূপান্তরিত হয়ে পড়ছে। ফলে জীব বা animal হিসেবে প্রাকৃতিক নিয়মে সে সহজাত প্রবৃত্তির দাস হয়ে যেসব গুণাবলী প্রাপ্ত হয় সেই ছাঁচের বাইরে যেতে পারবে না।

এখান থেকেই আলোচ্য বিষয়ের দিকে অগ্রসর হওয়া যেতে পারে। জীব বা প্রাণিকূল প্রকৃতির নিয়মেই একদিকে সৃজক অন্যদিকে সংহারক। এগুলি তাদের সহজাত প্রবৃত্তি কিন্তু মানব হিসেবে জীবশ্রেষ্ঠ হয়ে উঠেছে তার সুক্ষ্ম অনুভব সঞ্জাত সত্ত্বা অথবা গুণ বা দোষ বাহিত পথ বেয়ে।

এইসব বিষয়গুলি ছুঁয়ে যেতে সিগমুন্ড ফ্রয়েডের (Sigmund Freud)বিশ্বখ্যাত কিছু সিদ্ধান্ত অত্যন্ত বাস্তবিক এবং তা প্রাসঙ্গিক বিবেচিত হয়ে আছে। তাঁর কথায়-মানব ব্যক্তিত্ব জটিল এবং তা একাধিক উপাদানে সমন্বিত হয়ে আছে। (…‘human personality is complex and has more than a single component’).

তাঁর জগৎ বিখ্যাত psychoanalytic theory তে তিনি বর্ণনা করেছেন যে ব্যক্তিত্ব তিনটি উপাদানের মিশ্রণ এবং এগুলিকে id, the ego, and the superego. বলা হচ্ছে। এই উপাদানগুলি সংঘবদ্ধ ক্রিয়াশীল হয়ে মানবের জটিল আচরণ নির্মাণ করে থাকে (…These elements work together to create complex human behaviors.)

মনের অচেতন স্তরের সাথে Id-সম্পর্ক যুক্ত হয়ে আছে। ব্যক্তিত্বের অচেতন মনোবৃত্তীয় অপরিহার্য অংশ ও শক্তি যা সহজাত আগ্রহ,চাহিদা এবং অকাঙ্খাকে সন্তুষ্ট করে (the personality component made up of unconscious psychic energy that works to satisfy basic urges, needs, and desires.)

এই Id দু’ধরণের- (১)প্রেম/যৌনমূলক অথবা বিদ্যমান থাকার প্রবৃত্তি এবং (২) মৃত্যুপ্রবৃত্তি (eros or survival instinct and the death instinct or thanatos). বিদ্যমান বা টিকে থাকার প্রবৃত্তি সৃজনশীলতার দিকে চালিত করে যেখনে মৃত্যুপ্রবৃত্তি সংহারী, আক্রমণাত্বক অথবা ধ্বংসাত্মক দিকে চালিত করে। এই দ্বৈতসত্ত্বা জীবের মূল চালিকাশক্তি-

বাস্তবের সাথে সম্পর্কিত হয়ে id (আইডি)কে রোধ করার কাজে অনুশীলন করতে থাকে ego. (ইগো )id ‘র আগ্রহ,চাহিদা এবং অকাঙ্খাকে সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য আচারে পরিপূর্ণতা দেওয়া নিশ্চিত করে ইগো। id এবং super ego‘র মাঝে বিরাজিত থেকে ego সহজাত প্রবৃত্তির চাহিদা নিবৃত্তির দিকে নৈতিক অথবা মানবিক মূল্যবোধে বিশ্বাসের একটা সমন্বয়ের জন্য ঠোক্কর দিতে থাকে। সমন্বয়িত এবং স্বাস্থ্যকর ego ব্যক্তির বহির্বিশ্বের সাথে পারস্পরিক সম্পর্কের সমন্বয় ঘটানোর দক্ষতাকে উন্নত করে তোলে।

চেতন মন এবং এইসব মৌল দেহগত উপাদান সম্বলিত ব্যক্তি মানুষ যখন হয়ে ওঠে রাষ্ট্রনায়ক,শাসক,প্রশাসক তখন সহজাত প্রবৃত্তির এইসব উপাদান বর্জিত হতে পারে না। অন্যদিকে শুধুমাত্র শাসনতন্ত্রের কেতাবী নির্দেশ পালনেই তার সীমাবদ্ধ থাকার উপায় নেই, থাকে বাধ্যবাধকতা। রাষ্ট্রের মূল চরিত্রে থাকে শাসন আগ্রাসন ফলে স্বাভাবিকাবেই জন্ম নেয় মানবিক মুখহীন একটা চেহারা যার অন্যনাম ধ্বংস। ফলে একিকে সৃজনশীলতা অন্যদিকে ধ্বংসসাধন পাশাপাশি চলতে থাকে।

প্রতিটি উপাদান তার নিজস্ব অনুপম অংশ ব্যক্তিত্বের জন্য সংযুক্ত হয়ে পড়ে এবং ত্রিবিধ পারস্পরিক পথে ব্যক্তিক ক্ষেত্রে শক্তিশালী প্রভাব রেখে যায়। ব্যক্তিত্বের প্রতিটি উপাদান জীবনের ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ের সাথে মিশে যায়। এই সিদ্ধান্ত Sigmund Freud এর।

পৃথিবীর ইতিহাসের অতিশয় উজ্জ্বল সভ্যতা বললে প্রাচীন গ্রীক এর কথা আসেই। প্রাচীন গ্রীক পশ্চিমী সভ্যতার অসংখ্য ভিত্তি স্থাপন করেছিল। দর্শন বিজ্ঞান, শিল্পকলা স্থাপত্য সরকার, রাজনীতিসহ বহুবিধ ক্ষেত্রে জন্ম দিয়েছিল বিস্তৃত মৌলিক সৃজনশীলতার।

তখনও গণতন্ত্র বা তার ব্যবস্থা বিষয়ে কোন ধারণারই জন্ম হয়নি। হাজার বছরেরও পুর্বে ব্যক্তি মানুষ আলেকজান্ডারের নেতৃত্বে প্রাচীন গ্রীক বা ইউরোপের এবং পশ্চিম এশিয়া শাসিত হয়েছে মূলত স্বৈর বা রাজতন্ত্রের ক্ষেত্রভূমিতে। কিন্তু মৌলিক এবং বহুমুখী সভ্যতার যে নিদর্শন পৃথিবী পেয়েছে তার মৌল উপাদন লুকিয়েছিল id, the ego, and the superego এর ভিতর,যা বিংশ শতব্দীতে এসে বহুমুখী এইসব ব্যক্তিক প্রতিভার উৎসের সন্ধান পেলাম সিগমুন্ড ফ্রয়েড এর psychoanalytic theoryতে।

স্থান কাল পাত্রের পরিবর্তনের সাথে সামাজিক অনুসঙ্গের মিশেলে ব্যক্তিক মানুষের অনুভব এবং এ সঞ্জাত তার ক্রিয়াকলাপ সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে এমনসব প্রভাব ফেলেছে যা মানব সভ্যতা কৃষ্টি সংস্কৃতিকে একদিকে উন্নীত অন্যদিকে ধ্বংসের মুখোমুখি করেছে। উদাহরণ হিসেবে দুই মেরুর দু’জন একদিকে সৃষ্ট্রির রবীন্দ্রনাথ অন্যদিকে সভ্যতা মানবতা ধ্বংসের কারিগর হিটলারের নাম বলা যায়। মূলত রাষ্ট্রনেতা,তার ব্যক্তিক লিপ্সা এবং তাদের তৈরি রাষ্ট্রীয়সমাজই ধ্বংসর জন্য দায়ী। অন্যদিকে এদের ধ্বংসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ব্যক্তিক শিল্পীর শিল্পকলা সাহিত্য সংস্কৃতি দেশে দেশে সুদূরপ্রসারী প্রভাব রেখে গেছে। পাবলো পিকাসো ভ্যান গখ, রঁদা ভারতের রবীন্দ্রনাথ ইত্যাদির মতো শিল্পী কবি সাহিত্যিকগণ তাই চিরঅমর।

কিন্তু ব্যক্তিক জীবনে সংঘটিত সৃষ্টি বা ধ্বংস এবং রাষ্ট্রশক্তির আগ্রাসন সমন্বিত সৃষ্টি বা ধ্বংসের ভেতর গুণগত পার্থক্য অপরিসীম। ব্যক্তিমানুষ যদি শিল্পী হ’ন তবে প্রথমে ভেঙে তবে সৃষ্টির কাজে হাত লাগান তিনি। সৃষ্টির জন্য একাজ আবশ্যিক। শিল্পী পাবলো পিকাসোর কথায়- ‘every act of creation is first an act of destruction’  (প্রতিটি সৃষ্টির কাজের প্রথম কাজই হলো ধ্বংস সাধন)।

শিল্প সাহিত্য সমাজ রাষ্ট্রনীতির বৃহত্তর পরিসর থেকে বা সামগ্রিকতার বিচারে শিল্পীর এই মন্তব্যের দার্শনিক ভিত্তিকে উপেক্ষা করার যদিও জায়গা নেই যে ‘ধ্বংস জন্ম দেয় সৃষ্টির’। কিন্তু সেসৃষ্টি যদি সমাজ সভ্যতার হন্তারক হয়ে দাঁড়ায় তবে তা কেবলই ধ্বংস (destruction)। বিংশ শতাব্দী দেখেছে এমন অনেক ধ্বংস, প্রথম এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রসঙ্গ তাই এসেই পড়ে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ কেড়ে নিয়েছিল ১৭ মিলিয়ন প্রাণ এবং ২৫ মিলিয়ন গুরুতর আহত হয়ে যন্ত্রণায় বিদীর্ণ জীবনে শেষমেশ চির ঘুমের কোলেই আশ্রয় নিয়েছিল । কেন এই বিশ্বযুদ্ধ এ নিয়ে বিতর্ক থাকলেও বল্কান অঞ্চল থেকে ১৯১৪’র ২৮ জুলাই শুরু হয়ে ১১ নভেম্বর ১৯১৮ অব্দি এই তিন বছর চার মাস যুদ্ধের বিশৃঙ্খলা রেখে গিয়েছিল সমাজ এবং সভ্যতার সর্বগ্রাসী ধ্বংস।

১৯১৪ এর পুর্বেই ১৮৬৭’র শতকে উত্তেজনার পারদ উর্ধগামী করে তুলেছিল ইতালি ফ্রান্স জার্মানি সংযুক্ত রাষ্ট্র অস্ট্রিয়া এবং রাশিয়ার মতো মহাশক্তিধর দেশগুলি। এ যুদ্ধ ছিল কূটনৈতিক দৌত্যের সংঘাত বাহিত ইউরোপীয় এবং উপনিবেশ ইস্যুতে পারস্পরিক জোটের জটিল ঢেউ ও সেই সারিতে ছিল কেবলই রাজতন্ত্র। ইউরোপীয় মহাশক্তিধর দেশগুলির শক্তির পারস্পরিক ভারসাম্যে সৃষ্টির খেলা এবং শুধুমাত্র স্বৈরতান্ত্রিক রাজনীতি, রাজ্যবিস্তার ও অর্থনীতির কারণে সেনা আধিপত্য ও ধ্বংসের চিহ্ন রেখে গেল যুদ্ধের মধ্যদিয়ে।

এত বিশাল ধ্বংস যজ্ঞ তবু আধিপত্যবাদ এবং আগ্রাসনের আকাঙ্খা বিন্দুমাত্র হ্রাস না হওয়ায় মহামতি লেনিনের ১৯১৭’র ঐতিহাসিক রুশ বিপ্লবের মধ্য দিয়ে রাজতন্ত্রের অবসান এবং নূতন এক রাষ্ট্রব্যবস্থা সমাজতন্ত্রের নির্মাণ পরবর্তি দ্বিতীয় বিশ্বযু্দ্ধের (১ সেপ্টেম্বর ১৯৩৯-১৫ আগস্ট ১৯৪৫) বা আরও একটি মহাধ্বংসের সাক্ষী থাকলো বিংশ শতাব্দী। মাত্র ২৪ বছরের ভিতরেই রাজশক্তি এবং স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্রশক্তির হাতে আবারও ধ্বংস সমাজ সংস্কৃতি সভ্যতা এবং মানবতা।

ভারতীয় প্রতিনিধিদের সাথে পুর্ব আলোচনা ছাড়াই ব্রিটেন পক্ষে ভারতকে যুদ্ধে তাদের পক্ষ করে নেওয়া এবং কূটনৈতিক দৌত্যের কারণে বাধ্যহয়ে রসদ মনুষ্যশক্তিসহ সমস্ত রকম সহয়তা প্রদান করে পরোক্ষে যুদ্ধ জড়িয়ে পড়ায় ভারতে বা বাংলার সাধারণ মানুষের দরজায় পৌঁছে গিয়েছিল এই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ,এক অর্থে আর এক মহা ধ্বংসলীলা।

এই একবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে পৃথিবী ভুগছে মহা অসুখে। এখানে নিত্যদিন রোগী হয়ে উঠছে সাধারণ নাগরিক,তার পরিমন্ডল। সামাজিক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে পৃথিবীর জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়ংশ মানুষ। দেশে দেশে এই অসুখের উৎস শাসকদের সৃষ্ট শোষণের রাজনীতি এবং অর্থনীতি। এরা পরিকল্পিতভবে ধ্ংসের করে চলেছে মানুষে  মানুষে চিরকলীন সরল সামাজিক সম্পর্ক। মানুষের টিকে থাকার মৌল এবং ন্যুনতম প্রয়োজনগুলি মেটানোর চেয়ে ধর্ম  ধর্মাচরণ মন্দির মসজিদ সাম্প্রদায়িকতার মত অরাজনৈতিক বিষয়গুলিকে রাজনীতির কর্মসুচির অন্তর্ভুক্ত করে সামাজিক সঙ্কট ঘনীভুত করে তুলছে। কার্যকারণ যুক্তিগ্রাহ্যতার পরিবর্তে সামনে হাজির হচ্ছে ফেলে দেওয়া কুসংস্কার এবং অন্ধ বিশ্বাস এবং উত্তরসত্য প্রতিষ্ঠারপ্রবণতা। ঘটনা প্রবাহের পরিসরে ভারতের আভ্যন্তরীন বিষয়গুলি নেতিবাচক বিবেচিত হয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে বিবেচক শুভবুদ্ধির নজর কাড়ছে বেশি।

বিশ্ব জুড়ে মানুষের বেঁচে থাকার মৌলিক চাহিদার যোগান বা ন্যায়বিচার টিকে আছে শ্রমসম্পর্ক এবং পুঁজির দ্বন্দ্বের বা নিরন্তর শ্রেণিদ্বন্দ্বের তুলাদন্ডে। টিকে থাকার দর কষাকষিতে শ্রমিকশ্রেণি তাদের ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠন হাতিয়ার করে আংশিক সফল হওয়ায় শ্রেণি হিসেবে এবং সংখ্যা হিসেবেও বেঁচে থাকে টিকে থাকার আশা । কিন্তু পরিবার পরিজনসহ সাংস্কৃতিক পরিমন্ডল নিয়ে মানসিক ও সুকুমার প্রবৃত্তির বিকাশ কিংবা ধর্ম-সম্প্রদায়গত পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে বেঁচে থাকার প্রিয় civil society যখন ধ্বংসের মুখোমুখি তখন প্রকৃত একজন মানুষ হিসেবে টিকে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়ে। রাষ্ট্র নিজে এ কাজে যুক্ত হয়ে ঘনীভুত করে তুলছে সমাজের বর্তমান সঙ্কট।

স্মরণ করা যায় ১৯৯২ এ চার শতা্ব্দীর পুরাতন অযোধ্যার বাবরি মসজিদ ধ্বংসের সেই ঘটনা এবং এ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়দান। প্রামাণ্য ইতিহাস বা যুক্তি তর্কের ভিত্তির পরিবর্তে ‘রামমন্দির ছিল’ শুধুমাত্র এই ‘বিশ্বাস’ নির্ভর রায়দান হিন্দু মুসলমান এর ভিতর আবহমান কালের সামাজিক-সংস্কৃতিক-সামাজিক সম্পর্ক নিষ্ঠুরভাবে ধ্বংস করে গেল। এই ধ্বংসের সাথে কিন্তু সম্পর্ক ছিলনা রুটিরুজির। তাই বলা যায় রাষ্ট্রের হাতে ধ্বংস হয়ে যাওয়া পরিকাঠমো বা সভ্যতা সময়ের পথ ধরে পুনরায় নির্মাণের সুযোগ থাকে কিন্তু ব্যক্তি বা সমষ্টি মন, তাদের সমাজ মনস্কতা একবার ধ্বংস হয়ে গেলে পরবর্তিতে তার নির্মাণ ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তার খাদের কিনারায় ঝুলে থাকে,সে একটি দেশ কিংবা রাজ্য যাইই হোকনা কেন।

পাশাপাশি মানুষের লালসার শিকার হয়ে প্রকৃতির হাতে ধ্বংসলীলাও অন্যতম একটি বিষয়। মানুষ প্রাণি হিসেবে টিকে থাকার তাগিদে তার রসদ প্রকৃতি থেকে আহরণ করতে থাকবে,এতে বিপর্যয়ের বা ধ্বংসের কোন সম্ভাবনা থাকেনা। কিন্তু মুনাফার লক্ষ্যে আহরণের পরিবর্তে উৎপদনের দিকে অগ্রসর হয়ে প্রকৃতির ভরসাম্য বিনষ্ট করতে থাকায় প্রকৃতি নিজেই ধ্বংসকারি হয়ে ওঠে। প্রাকৃতিক সম্পদের অধাধ লুন্ঠনের জেরে খরা বন্যা মড়ক মহামারীর পথ ধরে ধ্বংসর জন্য অগ্রসর হতে থাকে।

বর্তমান সময়ে তথ্য প্রযুক্তির বিস্ময়কর উল্লম্ফনের হাত ধরে গোটা পৃথিবী এখন গ্লোবাল ভিলেজ। আন্তর্জালে বন্দী আট থেকে আশির মনোজগৎ। এখানে মিথ্যে এবং ধ্বংসের গতির কাছে হার মানতে বাধ্য হয় সত্য এবং সৃজনশীল মন এবং তার সৃজনশীল ভাবজগত। নিরপেক্ষতার মুখোশের আড়ালে কৌশলে খেলতে থাকে ধ্বংসের বীজ কিন্তু মানুষের জন্য প্রিয় প্রকৃতির জন্য মানুষকে অগ্রসর হতে হবে সৃষ্টির দিকেই।

__________________________________________________________

উৎস : psychoanalytic theory- Sigmund Freu.- google,World war I, II wiki.

সমসাময়িক বিভিন্ন নিবন্ধ-‘নন্দন’ শারদ সাহিত্য২০১৯/২০,

Various tabloid news.





1 টি মন্তব্য:

  1. মানুষের টিকে থাকার লড়াই, বিবর্তন, অন্যদিকে শাসকের আগ্রাসন আর এক দিকে মানুষের মনবীক্ষন সব কিছুকে নিয়ে এক নিখুঁত কোলাজ। অত্যন্ত সমৃদ্ধশালী ও বলিষ্ঠ এই লেখা। আশাকরি পাঠকের চেতনার স্তর বাড়াতে সাহায্য করবে ।

    উত্তরমুছুন