অন্যমনে সাহিত্য. অন্য রকম দৃষ্টিকোন থেকে দেখা একটি প্রতিবিম্ব ভাবনা .. অন্যমনে সাহিত্য.

বুধবার, ১২ মে, ২০২১

আজকের প্রজন্ম ও আমি

 


আজকের প্রজন্ম ও আমি
==================
রতন চক্রবর্তী
==================



#এক#
বাজার করে ফিরছিলাম। বাড়ির রাস্তার মোড়ের কাছটায় আসতেই থমকে দাঁড়ালাম।

পাশের বাড়ির সৌমেন বাবুর স্কুল পড়ুয়া ছেলেটা, তার এক সঙ্গীর সাথে দাঁড়িয়ে বিড়ি ফুঁকছে। আশেপাশে মুরব্বি-টুরব্বি আছে কিনা সেদিকে খেয়াল নেই।
হঠাৎ আমার সাথে তার চোখা-চোখি হলো। ভাবলাম এবার হয়তো লজ্জা পেয়ে বিড়িটা লুকিয়ে ফেলবে। কিন্তু না, আমিই লজ্জা আর অপমানিত বোধ করলাম, তার কথা শুনে। সে আমাকে দেখেই বললো, 'জেঠু, হবে নাকি? তবে জেঠু, বলে রাখছি, বাবাকে এসব বলার দরকার নেই। আপনি কিছুই দেখেন নি। কোথা থেকে হুট হাট, সামনে চলে আসেন বলুন তো?'

আমি মাথা নিচু করে চলে এলাম লজ্জা, অপমান আর রাগে কাঁপতে কাঁপতে।

#দুই#
বাড়িতে ফিরে কাউকে কিছু বললাম না। নিজের মনেই ভাবতে লাগলাম, কেমন প্রজন্ম তৈরি হচ্ছে আমাদের?
ছোট মেয়েটা এবার মাধ্যমিক দেবে। বিকেলে টিউশানে যায়। আমি গিয়ে দিয়ে আসি আর নিয়ে আসি।
সেদিনও তাকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলাম। কিছুদূর আসার পরই দুটো ছেলে পথ আটকালো।

একটি ছেলে বললো, 'কী জেঠু, মেয়েকে কী প্রতিদিনই পাহারা দিয়ে আনা নেয়া করতে হয়? আমাদোরও এক আধটু সুযোগ দাও।'

কথাটা শুনে আমার পায়ের রক্ত মাথায় উঠে গেলো। একটা ভদ্র ঘরের ছেলের এ কেমন আচরন? আমি রেগে গিয়ে বললাম, 'ভদ্র ভাবে কথা বলো ছেলে, নয়তো- - -'
'নয় তো কী, জেঠু? এই তো আপনার মেয়ের উড়না ধরে টান দিলাম, কী করবেন আপনি? ' বলেই সে আমার মেয়ে রুমকির উড়না ধরে টান দিলো।
রাগে আমি হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম। ওকে থাপ্পর মারতে গেলাম। আমার মেয়ে আমাকে আটকালো। সে কাঁদতে কাঁদতে টেনে নিয়ে এলো আমাকে। আমার নিজেকে বড্ড অসহায় মনে হলো। একোন ধ্বংসাত্মক সমাজে বাস করছি আমরা?

#তিন#
প্রায়ই বিকেল বেলা ছাদে একটু বসি। আজ মেয়েটার পড়া নেই। তাই আজও বসলাম। সূর্যটা ডুবতে বসেছে। কেমন টুকটুকে কমলা রং। তার সাথে আকাশটাও কমলা রং ধারন করেছে।

হঠাৎ একটা কালো মেঘ এসে সূর্যটা ঢেকে দিলো।
সুন্দর দৃশ্যটা ঢাকা পড়ে গেলো।
আমার মনে হলো, আমাদের এখনকার সমাজটাও যেনো ঐ কালো মেঘে ঢাকা ডুবন্ত সূর্য!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন