==============
রীতা রায়
==============
ঋতম অস্থিরভাবে ছোটবেলা হাতড়ে চলেছে | যখন উঠতে-বসতে, খেতে-খেলতে, পড়তে-লিখতে, শয়নে-স্বপনে টিভির কার্টুন চরিত্রগুলো জ্যান্ত হয়ে আশেপাশে ঘুরে বেড়াতো | নিজের অস্তিত্ব ঘিরে তখন একটাই প্রচেষ্টা তাদের মতো আদবকায়দা রপ্ত করা |অন্যান্যরা যখন বড় হয়ে ডাক্তার, ইঞ্জিনীয়ার, পাইলট হওয়ার কথা বলতো .. তখন ঋতমকে যদি কেউ জিজ্ঞেস করতো যে সে বড় হয়ে কী হবে, সে স্বগর্বে বলতো যে সে বে-ব্লেড প্লেয়ার হবে | কখনো বলতো, পোকেমোন ক্যাচার হবে তো আবার কখনো ডিজিমোন প্লেয়ার.. আবার কখনও ডোরেমোন | এমনি করে সুপারম্যান, স্পাইডারম্যান, হিম্যান থেকে শক্তিমান, হনুমান .. সব চরিত্রে নিজেকে মানিয়ে নেবার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠার যে অদ্ভুত চেতনা কাজ করতো তা বেড়ে ওঠার প্রতিটি পদক্ষেপে নিভৃতে মানসিক দৃঢ়তা প্রদান করে চলেছিল | তার বিশ্বাসে ক্রমে ঝিল্লি বুনে চলেছিল যে একমাত্র সুপারপাওয়ার পৃথিবীকে রক্ষা করতে পারে সমস্ত ধ্বংসাত্বক শক্তিকে পরাজিত করে | তার ব্রেনসেলগুলো ক্রমাগত যুক্তি-তর্কের তুখোরতা অতিক্রম করে 'সুপার হিরো' হওয়ার জন্যই সে একদিন সিনেমার 'সুপার স্টার' হয়ে উঠলো | শুধু দেশজোড়া নয়.. বিশ্বজোড়া তার নাম | বিশ্বের যত অপরাধ.. যত নেগেটিভ শক্তি সব ধ্বংস করার জন্য সে সুপারস্টার হয়েছে | কিন্তু, একসময় সে বুঝতে পারলো .. সিনেমার হিরো সেজে ভিলেনদের সাথে লড়াই করে শুধুই মানুষকে ধোকা দেওয়া ছাড়া আর কিছুই না | সত্যিকারের লড়াই চাই !
সুপারহিরো হওয়ার
স্বপ্ন দেখতে দেখতে ক্লান্ত ঋতম আজকাল টেলিস্কোপে আকাশের তারার মাঝে নিজের জায়গা খুঁজছে | বর্তমান সময়ের করোনা আবহে বিপর্যস্ত কর্মহীন গৃহবন্দী
জীবন তাকে বুঝিয়েছে.. সুপারপাওয়ার বলে কিছু হয় না | মানুষের এই অসহনীয় অবস্থায় পৃথিবীকে 'করোনা ভাইরাস' থেকে মুক্ত করার জন্য কোনো সুপারম্যান সামনে এলো না | তার সমস্ত ইচ্ছা, স্বপ্ন , সুনাম .. সব মিথ্যে |
ঋতম আজ তার পুরোনো খেলনার আলমারীটা খুললো
.. অজস্র খেলনায় সাজানো আলমারীর তাকগুলো | বেশির ভাগই সুপার হিরোর মডেল | ডিজিমোন, পোকেমোন, বে-ব্লেড, সুপারম্যান , স্পাইডারম্যান .. বিভিন্ন কায়দায় বিভিন্ন সাইজে আজ যেন তাকে মুখ ভেংচে বলছে -- তুমি যাদের সত্যি ভাবো আসলে তা লোকঠকানো.. ভ্রমমাত্র |
ঋতম একে একে সমস্ত
খেলনাগুলো বার করে দুমড়ে মুচড়ে ছুঁড়ে ফেলতে ফেলতে ক্লান্ত হয়ে পড়লো | শ্বাসকষ্টে জর্জরিত ঋতম এবার কী সিদ্ধান্ত নেবে ? সে নিজেকেও তো এতদিন
সুপার-হিরো ভেবে এসেছে .. তাহলে কী সময় এসেছে নিজেকে শেষ করে দেবার ? এই মিথ্যে জীবন নিয়ে বেঁচে কী হবে ? যে জীবন মানুষকে শুধু আনন্দ দিয়েছে .. মানুষের বিপদে কোনো কাজে আসেনি !
ঋতম আকাশের দিকে চেয়ে রইলো অনেকক্ষন.. মনে মনে অঙ্গীকার করলো.. আকাশের তারায় মিশে যাওয়ার আগে তাকে অন্ততঃ একবার মিশে যেতে হবে মাটির মানুষের মাঝে | একুশ তলার ফ্ল্যাট থেকে ঋতম
নিচে নেমে এলো .. দুঃস্থ মানুষের সেবার জন্য, কোনো সুপার হিরো সেজে নয় .. একজন অতি সাধারণ মানুষ হয়ে | একদিনের জন্য হলেও সে আজ মানুষ হয়ে বাঁচতে চাই !
আপনার প্রাঞ্জল লেখনী আমাদের সমৃদ্ধ করেছে। অন্যমনে সাহিত্য আপনাকে শুভেচ্ছা জানায়।
উত্তরমুছুন