ধ্বংসের রূপকথা শীর্ষক ভাবনায় যে প্রশ্ন বার বার ঘুরে আসে তা হলো এই ধ্বংস কি শুধু মাত্র বাহ্যিক !! মহাজাগতিক উৎসের ধ্বংস , অপরিমিত ফ্লোরাইড ব্যবহারের ফলে ওজন স্তরের ধ্বংস , বনাঞ্চল ধ্বংস সাধন করে বনজ সম্পদ সংগ্রহের নামে অক্সিজেন এর ভাঁড়ার ধ্বংস, পররাষ্ট্র নীতির নাম নিয়ে দেশ ধ্বংস, খনিজ সম্পদ আরহন এর নামে পাহাড় ধ্বংস , আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ভেতর দিয়ে দেশের অর্থনীতি , ধর্মনীতি , রাজনীতি কিংবা সীমানা কে আরো ছোট করে এনে রাজ্য, জেলা থেকে পাড়া মহল্লা কিংবা আরো গভীরে এসে সম্পর্ক । সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার মন। মনের ধ্বংসও কি ধ্বংস নয় ?
একদিকে রাষ্ট্র তার শাসক শ্রেণী এর সাথে ওতপ্রেত ভাবে জড়িয়ে থাকা আমাদের সমাজ ব্যবস্থা আর তাতে স্বপ্নের ইমারত গড়ে তোলা আমরা বা আমাদের মতন অসংখ্য মানুষ । পাওয়া না পাওয়ার দ্বন্ধে ভেঙে যায় তাদের মনোজগৎ।
বহুমাত্রিক এই বিষয়কে দেখার অভিক্ষেপ ও বহুমাত্রিক । প্রকৃতি বা প্রকৃতি সৃষ্ট জাগতিক ভাবনার পর্যালোচনা থেকে সরিয়ে মানব সৃষ্ট বিভিন্ন পর্যায়ের কিছু মৌল উপাদানকে সাজিয়ে আমরা বুঝতে চাইবো আপাত ধ্বংসের ভেতর লুকিয়ে আছে নতুন করে গড়ে ওঠার বীজ।
ভাবনাটা শুরু হোক ঠিক এই ভাবে । পৌঁছে যাই ঠিক সেই সময়ে , সময়টা যখন থমকে ছিল। তারপর প্রায় শূন্য থেকে মাত্র এক সেকেন্ডের ব্যবধানে এক মহাবিস্ফোরণ ঘটলো। সেই ‘বিগ ব্যাং’ এর মাধ্যমে ক্ষুদ্রাকার ভরবিশিষ্ট ভীষণ উত্তপ্ত একটি বিন্দু দুই বিলিয়ন বিলিয়ন কিলোমিটার পর্যন্ত সম্প্রসারিত হলো।
বিগ ব্যাং এর প্রথম সেকেন্ডের একদম শুরুর মুহূর্তে সম্প্রসারণ অতি দ্রুত ঘটছিল, যা ওই সেকেন্ডেরই পরের দিকে কমে আসে। তখন অতিপারমাণবিক কণা তৈরি হয়,পরে যা আরও বড় পারমাণবিক কণা তৈরি করে। এসব অতিপারমাণবিক কণা প্রোটন ও নিউট্রন তৈরি করে, যা থেকে সৃষ্টি হয় পরমাণু। এসবই ঘটে বিগ ব্যাং এর প্রথম এক সেকেন্ডে।এক বিধ্বংসী ধ্বংসের মধ্য দিয়ে সৃষ্টি পেল এই মহাবিশ্ব । আমাদের সৌরজগত আর আমাদের পৃথিবী।
বিগ ব্যাং এর প্রথম সেকেন্ডের একদম শুরুর মুহূর্তে সম্প্রসারণ অতি দ্রুত ঘটছিল, যা ওই সেকেন্ডেরই পরের দিকে কমে আসে। তখন অতিপারমাণবিক কণা তৈরি হয়,পরে যা আরও বড় পারমাণবিক কণা তৈরি করে। এসব অতিপারমাণবিক কণা প্রোটন ও নিউট্রন তৈরি করে, যা থেকে সৃষ্টি হয় পরমাণু। এসবই ঘটে বিগ ব্যাং এর প্রথম এক সেকেন্ডে।এক বিধ্বংসী ধ্বংসের মধ্য দিয়ে সৃষ্টি পেল এই মহাবিশ্ব । আমাদের সৌরজগত আর আমাদের পৃথিবী।
এর সুন্দর ব্যাখ্যা রয়েছে ঋগ্বেদে। সুক্তের আলোকে সৃষ্টিতত্ত্ব নিয়ে যে তত্ব আসে সেই তত্ব মিলে যায় বিগব্যাং এর বিস্ফোরন তত্ব ভাবনার সাথে।
তারপর যেখানে বিস্ফোরন ঘটল গলিত পদার্থ থেকে,বিন্দু থেকে যেন সব প্রসারিত হতে শুরু হল।
(ঋগ্বেদ, ১০/৭২/২)
সেই বিস্ফোরিত অংশসমূহ থেকে বিভিন্ন গ্রহ,নক্ষত্র তৈরী হল।
(ঋগ্বেদ, ১০/৭২/৩)
তার এক জীবনপ্রদ অংশ থেকে পৃথিবী সৃষ্টি হল।
(ঋগ্বেদ, ১০/৭২/৪)
এ তো গেল ঋগ্বেদ আর পদার্থ বিজ্ঞানের কথা । কি বলছে আমাদের গীতা ,একাদশ অধ্যায়ে বিশ্বরূপ দর্শন যোগে তিনি ধ্বংসের প্রাক মুহূর্তে অর্জুনকে সৃষ্টির স্বরূপ দেখিয়েছেন ।
অনেকবক্ত্রনয়নমনেকাদ্ভুতর্শনম্।
অনেকদিব্যাভরণং দিব্যানেকোদ্যতায়ুধম্।।১০।।
দিব্যমাল্যাম্বরধরং দিব্যগন্ধানুলেপনম্।
সর্বাশ্চর্যময়ং দেবমনস্তং বিশ্বতোমুখম্।।১১।।
অনেকদিব্যাভরণং দিব্যানেকোদ্যতায়ুধম্।।১০।।
দিব্যমাল্যাম্বরধরং দিব্যগন্ধানুলেপনম্।
সর্বাশ্চর্যময়ং দেবমনস্তং বিশ্বতোমুখম্।।১১।।
অর্জুন সেই বিশ্বরূপে অনেক মুখ, অনেক নেত্র ও অনেক অদ্ভুত দর্শনীয় বস্তু দেখলেন। সেই রূপ অসংখ্য দিব্য অলঙ্কারে সজ্জিত ছিল এবং অনেক উদ্যত দিব্য অস্ত্র ধারণ করেছিল। সেই বিশ্বরূপ দিব্য মালা ও দিব্য বস্ত্রে ভূষিত ছিল এবং তাঁর শরীর দিব্য গন্ধ দ্বারা অনুলিপ্ত ছিল। সবই ছিল অত্যন্ত আশ্চর্যজনক, জ্যোতির্ময়, অনন্ত ও সর্বব্যাপী।
কিরীটিনং গদিনং চক্রিণং চ
তেজোরাশিং সর্বতো দীপ্তিমন্তম্।
পশ্যামি ত্বাং দুনিরীক্ষ্যং সমস্তাদ্
দীপ্তানলার্কদ্যুতিমপ্রমেয়ম্।।১৭।।
তেজোরাশিং সর্বতো দীপ্তিমন্তম্।
পশ্যামি ত্বাং দুনিরীক্ষ্যং সমস্তাদ্
দীপ্তানলার্কদ্যুতিমপ্রমেয়ম্।।১৭।।
অর্থাৎ কিরীট শোভিত, গদা ও চক্রধারী, সর্বত্র দীপ্তিমান, তেজঃপুঞ্জ- স্বরূপ, দুর্নিরীক্ষ্য, প্রদীপ্ত অগ্নি ও সূর্যের মতো প্রভাবিশিষ্ট এবং অপ্রমেয় স্বরূপ তোমাকে আমি সর্বত্রই দেখছি। শ্লোকের ১৯ তম অংশে অর্জুন বিশ্বরূপ দর্শন করে বলছেন
অনাদিমধ্যান্তমনন্তবীর্যম্।
অনন্তবাহুং শশিসূর্যনেত্রম্।
পশ্যামি ত্বাং দীপ্তহুতাশবক্ত্রং
স্বতেজসা বিশ্বমিদং তপন্তম্।।১৯।।
অনন্তবাহুং শশিসূর্যনেত্রম্।
পশ্যামি ত্বাং দীপ্তহুতাশবক্ত্রং
স্বতেজসা বিশ্বমিদং তপন্তম্।।১৯।।
এর অর্থ আমি দেখছি তোমার আদি, মধ্য ও অন্ত নেই। তুমি অনন্ত বীর্যশালী ও অসংখ্য বাহুবিশিষ্ট এবং চন্দ্র ও সূর্য তোমার চক্ষুদ্বয়। তোমার মুখমন্ডলে প্রদীপ্ত অগ্নির জ্যোতি এবং তুমি স্বীয় তেজে সমস্ত জগৎ সন্তপ্ত করছ।
দ্যাবাপৃথিব্যোরিদমন্তরং হি
ব্যাপ্তং ত্বয়ৈকেন দিশশ্চ সর্বাঃ।
দৃষ্ট্বাদ্ভুতং রূপমুগ্রং তবেদং
লোকত্রয়ং প্রব্যথিতং মহাত্মন্।।২০।।
ব্যাপ্তং ত্বয়ৈকেন দিশশ্চ সর্বাঃ।
দৃষ্ট্বাদ্ভুতং রূপমুগ্রং তবেদং
লোকত্রয়ং প্রব্যথিতং মহাত্মন্।।২০।।
এর অর্থ তুমি একাই স্বর্গ ও মর্ত্যের মধ্যবর্তী অন্তরীক্ষ ও দশদিক পরিব্যাপ্ত করে আছ। হে মহাত্মন! তোমার এই অদ্ভুত ও ভয়ংকর রূপ দর্শন করে ত্রিলোক অত্যন্ত ভীত হচ্ছে।সৃষ্টির এই সংহারক রূপ দেখে তিনি ভীত হলেন । কুরুক্ষেত্রের বিধ্বংসী যুদ্ধের ধ্বংসলীলায় মেতে নতুন করে সেজে উঠল পরীক্ষিতের ভারত ।
ফিরে তাকাই পেছনের দিকে ।মানুষ যে দিন আগুন আবিষ্কার করেছিল, সে দিন কি সে জানত যে, আগুন দিয়ে যেমন রান্না করা যায়, শীতের রাতে আরাম পাওয়া যায়, তেমনই আগুন দিয়ে শত্রুর ঘরও ধ্বংস করা যায়? আগুন কী ভাবে ব্যবহার করা হবে, আগুনের বিজ্ঞানে কি তার কোনও ইঙ্গিত আছে? নেই। তা হলে মানুষকে কে বলে দেয় আগুন কী ভাবে ব্যবহার করতে হবে?
এই বিপুল বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের মধ্যে মানুষ বড়ই একা ও অসহায়। এই বিশ্বজগতের যাবতীয় ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ কার্যকারণ সম্বন্ধ বিজ্ঞান দেখাতে অক্ষম। এটি বিজ্ঞানের সাময়িক সীমাবদ্ধতা। আধুনিক বিজ্ঞান আবিষ্কার করল এই জটিল জগতের অবশ্যম্ভাবী অনির্দেশ্যতার (আনপ্রেডিক্টেবিলিটি) কথা। আমরা জানতে পেরেছি অণু-পরমাণুদের জগতে অনিবার্য অনিশ্চয়তার কথা (হাইজ়েনবার্গের অনিশ্চয়তা নীতি)। ব্যক্তি মানুষ এই সমস্ত অনির্দেশ্যতার শিকার। মানুষের জীবনে কখন যে কী ঘটে, বলা যায় না। সে অসহায়। সে এমন কিছুকে আঁকড়ে ধরতে চায়, বিশ্বাস করতে চায়, যা তাকে শান্তি দেবে, স্বস্তি দেবে। ধর্মের মধ্যে, আচারের মধ্যে সে সেই আশ্রয় পায়। বিজ্ঞান এই বিশ্বাস, এই শান্তি, এই আশ্রয় তাকে দিতে পারে না।আর এই পর্যায়ে স্বাভাবিক ভাবেই চলে আসে সিগমুন্ড ফ্রয়েড আর তাঁর মনঃসমীক্ষণ তত্ত্ব । ফ্রয়েডের মতে, মানুষের মন প্রচণ্ডভাবে গতিশীল এবং এই ‘মন’ নামক মানবিক উপাদানটি সহজাত প্রবৃত্তির, তাড়না, বিরোধ, গূঢ়ৈষা, অবদমন ইত্যাদির মতো কিছু ইচ্ছামূলক ক্রিয়া দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। আমরা আমাদের সমাজব্যবস্থায় অবস্থান করি বিভিন্ন বিরোধ আর বাধাকে গ্রাহ্য করে এবং এর ফলে আমরা কখনোই সম্পূর্ণ স্বাধীন নই। আমাদের চিন্তারও নেই কোনো স্বতঃস্ফূর্ত প্রবাহ। পৃথিবীর অন্যান্য প্রাণীর মতো মানুষও একটি প্রাণী, তার আছে প্রাকৃতিক কারণেই জৈবিক তাড়না, কামনা ও বাসনা, আছে যৌনক্ষুধা। কিন্তু মানুষের সমাজে বসবাসরত একজন মানুষকে কিছু নিয়মকানুন মানতে হয়; সে ইচ্ছেমতো তার তাড়না, কামনা, বাসনাকে তৃপ্ত করতে পারে না,
ফ্রয়েডের তত্ত্ব অনুযায়ী মনের চেতনও অবচেতন স্তরের সমন্বয়ে তৈরি হয় একজন ব্যক্তিমানুষের অহং । সামাজিক অহং সবসময বাস্তবতায় নিয়মকানুন মেনে চলে এবং অচেতনে বন্দি কামজ ইচ্ছা/বাসনাকে সমাজ-বাস্তবতায় আসতে দেয় না। ফ্রয়েডের সংশোধিত মতবাদে অহং আংশিক চেতন ও আংশিক অচেতন রূপকে গ্রাহ্য করা হয়েছে। ফ্রয়েড কথিত আংশিক চেতন অহংকে আমরা শুধু অহং হিসেবেই চিহ্নিত করব এবং অচেতন অহংকে বলব অদ। অদ সবসময় সুখসূত্র মেনে চলে; জৈবিক সুখ, কামনা, বাসনা ইত্যাদির পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন চায় অদ। অদ-এর জৈবিক কামনা, বাসনা ও তাড়না যেহেতু সবসময় সমাজের নিয়মকানুন মানে না, সেহেতু অহং, অদ-এর সব ইচ্ছে পূরণ হতে দেয় না বাস্তবতার সূত্র গ্রাহ্য করে। অদ-এর যে কামনা, বাসনা বা ইচ্ছা সমাজের নৈতিক আদর্শের সাথে সংগতিপূর্ণ নয়, তা অপূর্ণ থেকেই অবদমিত হয়ে অচেতন মনে জমা হতে থাকে। যে অহং বাস্তবতার সূত্র মানে, তাকে ফ্রয়েড অতি-অহং বা অধিসত্তা হিসেবেও চিহ্নিত করেছেন।
সত্যান্বেষী, যুক্তিবাদী, বিজ্ঞানমনস্ক রবীন্দ্রনাথও তাঁর শেষ কবিতায় বলে গিয়েছেন—
‘‘তোমার সৃষ্টির পথ রেখেছ আকীর্ণ করি
বিচিত্র ছলনাজালে,
হে ছলনাময়ী।
মিথ্যা বিশ্বাসের ফাঁদ পেতেছ নিপুণ হাতে
সরল জীবনে।’’
বিচিত্র ছলনাজালে,
হে ছলনাময়ী।
মিথ্যা বিশ্বাসের ফাঁদ পেতেছ নিপুণ হাতে
সরল জীবনে।’’
সরল জীবনে ধ্বংস মানেই যুদ্ধ । আর যুদ্ধের ইতিহাস মানেই ধ্বংসের ইতিহাস ।
খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৫০০ খ্রিস্টাব্দে ইতিহাসের মধ্যে ২০০০ টিরও বেশি যুদ্ধ নথিভুক্ত করা হয়েছে। বিংশ শতাব্দীতে, আনুমানিক ১০২২৫ টি যুদ্ধে প্রায় ২৫৮ মিলিয়ন মানুষ মারা গিয়েছিল । ঘটে যাওয়া বিশ্বযুদ্ধে ২০ মিলিয়ন সৈন্য এবং ১৬৫ মিলিয়ন বেসামরিক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছিল বলে দাবি করা হয়। বর্তমান কালের এই যুদ্ধে, নিহতদের ৫ শতাংশই হলেন সাধারন নাগরিক এদের বেশিরভাগ মহিলা, শিশু, বৃদ্ধ এবং দরিদ্র।
১৯৪৫ সালে পেন্টাগনের ভিয়েতনাম থেকে প্রত্যাবর্তনের পর থেকে মার্কিন বাহিনী আফগানিস্তান, অ্যাঙ্গোলা, আর্জেন্টিনা, বসনিয়া, কম্বোডিয়া, এল সালভাদর, গ্রেনাডা, হাইতি, ইরান, ইরাক, কসোভো, কুয়েত, লেবানন, লিবিয়া, নিকারাগুয়া, পাকিস্তান, পানামা, ফিলিপাইন, সোমালিয়া, সুদান, সিরিয়া, ইউক্রেন, ইয়েমেন এবং প্রাক্তন যুগোস্লাভিয়া কেউই এই আগ্রাসন থেকে বাদ পড়েনি।
প্রকৃতি বিরুদ্ধে যুদ্ধ একটি দীর্ঘ ইতিহাস আছে। গিলগামেশের মহাকাব্য, বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন কাহিনী, একটি মেসোপটেমিয়ান যোদ্ধার হাম্বাবাকে হত্যা করার সন্ধানের কথা বর্ণনা করে - একটি দানব যিনি একটি পবিত্র সিডার ফরেস্টের উপরে রাজত্ব করেছিলেন। এই সত্য যে হাম্বাবা পৃথিবী, বাতাস এবং বাতাসের দেবতা এনিলিলের দাস ছিলেন, গিলগামেশকে প্রকৃতির এই রক্ষককে মেরে ফেলতে এবং দেবদারুগুলি হারাতে বাধা দিলেন না।
পেলোপোনেসীয় যুদ্ধের সময়, রাজা আর্কিডামাস শহরটির আশেপাশের সমস্ত ফল গাছগুলি ভেঙে প্লাতিয়ে উপর আক্রমণ শুরু করেন।
১৩৪৬ সালে, মঙ্গোল তাতাররা কৃষ্ণসাগরীয় শহর ক্যাফায় আক্রমণ করার জন্য জৈবিক যুদ্ধের কাজ করেছিল - দুর্গ প্রাচীরের উপরে প্লেগ আক্রান্তদের মৃতদেহকে জড়ো করেছিল।বিষাক্ত জলের সরবরাহ এবং ফসল ও পশুপাখি ধ্বংস একটি জনসংখ্যাকে বশ করার একটি প্রমাণিত উপায়। যার বর্তমান রূপ আরও ভয়ানক।
১৩৪৬ সালে, মঙ্গোল তাতাররা কৃষ্ণসাগরীয় শহর ক্যাফায় আক্রমণ করার জন্য জৈবিক যুদ্ধের কাজ করেছিল - দুর্গ প্রাচীরের উপরে প্লেগ আক্রান্তদের মৃতদেহকে জড়ো করেছিল।বিষাক্ত জলের সরবরাহ এবং ফসল ও পশুপাখি ধ্বংস একটি জনসংখ্যাকে বশ করার একটি প্রমাণিত উপায়। যার বর্তমান রূপ আরও ভয়ানক।
আমেরিকান গৃহযুদ্ধ জেনারেল শেরম্যানের "জর্জিয়ার মধ্য দিয়ে মার্চ" এবং ভার্জিনিয়ার শেনানডোহ উপত্যকায় জেনারেল শেরিডানের প্ররোচনা, বেসামরিক ফসল, পশুপাল এবং সম্পত্তি ধ্বংস করার লক্ষ্যে দুটি হামলা চালিয়েছিল। শেরম্যানের সেনাবাহিনী জর্জিয়ার ১০০ মিলিয়ন একর জমি ধ্বংস করেছিল এবং শেনানডোহের খামারগুলিকে আগুনের মতো কালোভূমিতে পরিণত করা হয়েছিল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার সাথে সাথে ইউরোপীয় গ্রামাঞ্চলে নতুন করে হামলার শিকার হয়েছিল। জার্মান সৈন্যরা হল্যান্ডের নিম্নভূমির খামারে নোনা জলে প্লাবিত করেছিল। মিত্রপক্ষের বোমা হামলাকারীরা জার্মানির রুহর উপত্যকায় দুটি বাঁধ ভেঙে ১৭৫০০ একর জার্মান খামার ধ্বংস করেছিল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার সাথে সাথে ইউরোপীয় গ্রামাঞ্চলে নতুন করে হামলার শিকার হয়েছিল। জার্মান সৈন্যরা হল্যান্ডের নিম্নভূমির খামারে নোনা জলে প্লাবিত করেছিল। মিত্রপক্ষের বোমা হামলাকারীরা জার্মানির রুহর উপত্যকায় দুটি বাঁধ ভেঙে ১৭৫০০ একর জার্মান খামার ধ্বংস করেছিল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক ঘটনাটি জাপানের শহর হিরোশিমা এবং নাগাসাকির উপর দুটি পারমাণবিক বোমা বর্ষণ। ফায়ারবলগুলি অনুসরণ করে কয়েক দিন ধরে একটি "কালো বৃষ্টি" হয় যা বেঁচে থাকা প্রাণীদের জন্য প্রানঘাতী। জল ও বাতাসে সহ পরিবেশ জুড়ে ছড়িয়ে থাকে এক রেডিয়েশন যা সমগ্র উদ্ভিদ, প্রাণী এবং নবজাতক শিশুদের ক্যান্সার এবং মিউটেশনের শীতল উত্তরাধিকার রেখে যায়।
১৯৬৩ সালে পারমাণবিক পরীক্ষা নিষেধাজ্ঞার চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার আগে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউএসএসআর ১,৩৫২ টি ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক বিস্ফোরণ, ৫২০টি বায়ুমণ্ডলীয় বিস্ফোরণ এবং আটটি উপ-সমুদ্র বিস্ফোরণ চালিয়েছিল। ২০০২ সালে, জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউট সতর্ক করেছিল এর ফলস্বরূপ কয়েক হাজার জন ক্যান্সারে মারা গিয়েছিল।
১৯৬৩ সালে পারমাণবিক পরীক্ষা নিষেধাজ্ঞার চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার আগে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউএসএসআর ১,৩৫২ টি ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক বিস্ফোরণ, ৫২০টি বায়ুমণ্ডলীয় বিস্ফোরণ এবং আটটি উপ-সমুদ্র বিস্ফোরণ চালিয়েছিল। ২০০২ সালে, জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউট সতর্ক করেছিল এর ফলস্বরূপ কয়েক হাজার জন ক্যান্সারে মারা গিয়েছিল।
১৯৫০ এর দশকের গোড়ার দিকে ৩৭ মাস ধরে, মার্কিন উত্তর কোরিয়াকে ৬৩৫,০০০ টন বোমা এবং ৩২৫৫৭ টন নাপাম বোমা আঘাত করেছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোরিয়ার বেশিরভাগ শহর, ৫,০০০ স্কুল, ১,০০০ হাসপাতাল, অসংখ্য বাড়িঘর ধ্বংস করেছিল।
১৯৯১ সালে, ইরাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের 88,000 টন বোমা পড়েছে, ঘরবাড়ি, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, প্রধান বাঁধ এবং বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয় উপাদান গুলি ধ্বংস করেছে।
কুয়েতের জ্বলন্ত তেলের ক্ষেতগুলি থেকে ধোঁয়া দিনে দিনে পরিণত হয়েছিল যা পরিবেশতন্ত্র কে সম্পূর্ণ রূপে ধ্বংস করার জন্য যথেষ্ট।
১৯৯১ সালে, ইরাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের 88,000 টন বোমা পড়েছে, ঘরবাড়ি, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, প্রধান বাঁধ এবং বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয় উপাদান গুলি ধ্বংস করেছে।
কুয়েতের জ্বলন্ত তেলের ক্ষেতগুলি থেকে ধোঁয়া দিনে দিনে পরিণত হয়েছিল যা পরিবেশতন্ত্র কে সম্পূর্ণ রূপে ধ্বংস করার জন্য যথেষ্ট।
১৯৯২ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত, মার্কিন বোমা হামলা আফগানিস্তানে বনভূমির ৩৮ শতাংশ ধ্বংস করতে সহায়তা করেছিল।
কঙ্গোতে গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের মধ্যে, সশস্ত্র সংঘাতের ফলে আবাসিক হাতির জনসংখ্যাটি ২২,০০০ থেকে ৫,০০০ পর্যন্ত কমে যায়।
কঙ্গোতে গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের মধ্যে, সশস্ত্র সংঘাতের ফলে আবাসিক হাতির জনসংখ্যাটি ২২,০০০ থেকে ৫,০০০ পর্যন্ত কমে যায়।
২০০৩ সালে ইরাককে আক্রমণের সময়, পেন্টাগন ইরাকের উপর ১৭৫ টন তেজস্ক্রিয় ক্ষয়প্রাপ্ত ইউরেনিয়াম ছড়িয়ে দেওয়ার স্বীকার করেছে। (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এক্সএমএক্সএক্স-এ আরও ৩০০ টন নিয়ে ইরাকে লক্ষ্যবস্তু করার কথা স্বীকার করেছে।) এই তেজস্ক্রিয় আক্রমণগুলি ফালুজাহ এবং অন্যান্য শহরে ভয়াবহভাবে বিকৃত শিশুদের ক্যান্সার এবং মহামারীকে তরান্বিত করেছে।
আমার ভারতও এর থেকে মুক্ত নয়। এই বেদ পুরাণের দেশ ভিজেছিল তাঁর সহোদরের রক্তে। এর প্রতিটি পদক্ষেপে ছিল অবিশ্বাস আর বিশ্বাসঘাতকতায় পূর্ণ। ২৬১ খ্রি.পূ. অশোকের ও কালিঙ্গরাজের যুদ্ধের তাণ্ডবে স্তব্ধ হয়েছিল ভারত।এরপর আলেকজান্ডার ,মোহাম্মদ ঘোরী, বাবরের খঞ্জরের বীভৎসতায় রুধিরলিপ্ত হয়েছিল এদেশের মাটি।
আমার ভারতও এর থেকে মুক্ত নয়। এই বেদ পুরাণের দেশ ভিজেছিল তাঁর সহোদরের রক্তে। এর প্রতিটি পদক্ষেপে ছিল অবিশ্বাস আর বিশ্বাসঘাতকতায় পূর্ণ। ২৬১ খ্রি.পূ. অশোকের ও কালিঙ্গরাজের যুদ্ধের তাণ্ডবে স্তব্ধ হয়েছিল ভারত।এরপর আলেকজান্ডার ,মোহাম্মদ ঘোরী, বাবরের খঞ্জরের বীভৎসতায় রুধিরলিপ্ত হয়েছিল এদেশের মাটি।
কয়েক হাজার বছর ধরে দেশের বর্ণ ও জাতপাতভিত্তিক সমাজনীতি পত্তন ও শাসন করে আসছে ধর্ম। যদিও বিশুদ্ধ বেদান্তের প্রবক্তা স্বামী বিবেকানন্দ স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন— জাতিভেদ ধর্মীয় বিষয় নয়, ওটা সামাজিক প্রথা। ক্ষমতাশালীরা ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে। বৈদিক ধর্মের অনুশাসনে এমন হওয়ার কথা ছিল না। কৃত্রিম ও কূটকৌশলে এই ভেদ গড়ে তোলা হয়েছে। নিরীশ্বরবাদী বৌদ্ধ ও জৈন ধর্ম সৃষ্টির আগে বর্ণপ্রথা ছিল। কিন্তু তাতে জাতপাতভেদ ও অস্পৃশ্য-দলিত শ্রেণির জন্ম দেওয়া হয়নি। প্রবল প্রকট ভাবে সেই কাজ করা হয়েছে বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মকে প্রায় ধ্বংস করে ফেলার পরে। প্রথম খ্রিস্টীয় শতকের মনু থেকে শুরু করে অষ্টম শতকের শঙ্করাচার্য ও কুমারিল ভট্টের প্রবল জবরদস্তির কাল পেরিয়ে ষোড়শ শতকের রঘুনন্দন পর্যন্ত হল এই জাতপাতভেদ ও অস্পৃশ্যতাভিত্তিক একচ্ছত্র, সামাজিক, ধর্মীয় শাসনের যুগ। জাতিকে বর্ণহিন্দু, দলিত, পতিত, অস্পৃশ্য ইত্যাদি অসংখ্য বিচিত্র নামে ভাগাভাগি চালানো হয়েছে। আর এর জন্ম মনুসংহিতায়, পঞ্চাশ রকমের ভাগাভাগির মাধ্যমে। সমাজকে ধর্মীয় গোঁড়ামির শাসনে বেঁধে ফেলা হল। জাতির অর্ধেক প্রাণশক্তি নারীকে শূদ্রের সমান স্তরে স্থান দেওয়া হল।
মানুষকে ‘অমৃতস্য পুত্রাঃ’ বললেও মানুষকে অস্পৃশ্য ও দলিত বলে অপমানিত অবস্থানে রাখা হল। নারীজাতি ও তথাকথিত শূদ্রদের সমান স্থানে রাখা ও শিক্ষায় বঞ্চিত করা। তার উপর শাস্ত্রীয় বিধানের জোরে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক নির্যাতন ও শোষণ চালানোর ব্যবস্থা তো ব্যাপক ভাবে আছেই।আর এর উগ্র প্রকাশ পরিলক্ষিত হয় বাবরি মসজিদ ধ্বংসের মাধ্যমে।
এত রাজনীতি এত বীভৎসতা এত যুদ্ধ এত প্রানের ক্ষয় এর থেকে উত্তরণের কোনও উপায় নেই?
আজকের দিনে সমাজতন্ত্রের পুনঃনির্মাণের সূচনা-বিন্দু হতে পারে একটিই বিষয় – পুঁজিবাদ দ্বারা আমাদের সামাজিক অস্তিত্বের সমস্ত ভিত্তির রীতিমতো সৃজনশীল ধ্বংস। ১৯৮০-র দশকের শেষভাগ থেকেই ‘বিপর্যয়’ পুঁজিবাদের (catastrophe capitalism) যুগ এই পৃথিবীকে গ্রাস করেছে। বিপর্যয় পুঁজিবাদের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলা হয়েছে, “পুঁজির সর্বনাশা রথের” নানান অপ্রত্যাশিত অভিঘাতের কারণে চারিদিকে আসন্ন বিপর্যয়ের পুঞ্জীভূত স্তূপ। আজকের দিনে, এই অর্থে বিপর্যয় পুঁজিবাদের প্রকাশ ঘটছে তিনটি বিষয়ের মধ্যে দিয়ে –
(১) বিশ্বব্যাপী বাস্তুতান্ত্রিক/পরিবেশ সঙ্কট,
(২) বিশ্বজোড়া মহামারির সঙ্কট এবং
(৩) অন্তহীন বিশ্ব অর্থনৈতিক সঙ্কট।
এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বর্তমানের “বিশৃঙ্খলার সাম্রাজ্যের” (empire of chaos)। তাদের মধ্যে অন্যতম, বিশ্বজোড়া পণ্য-শৃঙ্খল বা সাপ্লাই চেইন মারফত চরম সাম্রাজ্যবাদী শোষণের ব্যবস্থা; নয়া-উদারনীতিবাদ ও নয়া-ফ্যাসিবাদের উত্থানের পাশাপাশি তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল উদার-গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মৃত্যু, এবং বিশ্বব্যাপী আধিপত্যের ক্ষেত্রে অস্থিরতার এক নতুন যুগের অভ্যুদয়, যার দোসর সীমাহীন যুদ্ধবিগ্রহের বিপদ বৃদ্ধি।
জলবায়ু সঙ্কটের বর্তমান অবস্থাকে বিশ্বের বৈজ্ঞানিকেরা সর্বসম্মতিক্রমে বলছেন “তুলনাহীন পরিস্থিতি”। অর্থ, আগামী কয়েক দশকের মধ্যে যদি কয়লা/তেল জাতীয় জীবাশ্ম জ্বালানির দহনজনিত কার্বন নিঃসরণের মোট পরিমাণকে শূন্যে নামিয়ে আনা না-যায়, তাহলে এই শিল্প-সভ্যতার, এবং আখেরে মানবজীবনেরই অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়বে। এতদসত্ত্বেও, অস্তিত্বের এই সঙ্কট কিন্তু শুধু জলবায়ু পরিবর্তনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বিশ্ব পরিবেশের অন্যান্য সীমানাগুলিও যথেচ্ছ লঙ্ঘিত হচ্ছে প্রতিদিন। বিশ্বপ্রকৃতির যে ব্যবস্থা আমাদের পৃথিবীকে মানবজাতির পক্ষে নিরাপদ বাসস্থান করে তুলেছে, সীমানা লঙ্ঘনের ফলে সেই ব্যবস্থার বাস্তুতন্ত্রের বিন্যাসে চিড় ধরেছে। বিশ্বপরিবেশের ভারসাম্যের বিভিন্ন নির্দিষ্ট সীমানা যথেচ্ছ লঙ্ঘনের অন্যতম ফলাফল:
(১) মহাসাগরের জলে অ্যাসিডের মাত্রা বৃদ্ধি;
(২) বিভিন্ন জৈব প্রজাতির অবলুপ্তি (এবং জিন বৈচিত্র্যের বিলোপ);
(৩) অরণ্যের বাস্তুতন্ত্রের ক্ষয়;
(৪) পরিষ্কার জলের মাত্রা হ্রাস;
(৫) নাইট্রোজেন ও ফসফরাস চক্র ব্যাহত হওয়া;
(৬) পরিবেশে (রেডিওনিউক্লাইড সহ) বিভিন্ন বিষাক্ত পদার্থের দ্রুত ছড়িয়ে পড়া;
(৭) জিন-পরিবর্তিত (জেনেটিকালি মডিফায়েড) উদ্ভিদ ও প্রাণীর নিয়ন্ত্রণহীন সংখ্যা বৃদ্ধি।
পরিবেশের সীমানা লঙ্ঘন ব্যাপারটাই পুঁজিবৃদ্ধির ও পুঁজিসঞ্চয়ের ব্যবস্থার মজ্জাগত বৈশিষ্ট্য – এই ব্যবস্থা তার কার্যত সীমাহীন ও ক্রমবর্ধমান বিস্তারের পথে কোনও বাধাকেই অলঙ্ঘনীয় বলে স্বীকার করে না। কাজেই, বর্তমানে পুঁজিবাদের হাতে অস্তিত্বের সামাজিক ও প্রাকৃতিক শর্তগুলি যেভাবে ধ্বংস হচ্ছে, পুঁজিবাদের গণ্ডি থেকে বেরোতে না-পারলে সেই ধ্বংসযজ্ঞের পরিস্থিতি থেকে বেরোনোরও কোনও পথ খোলা নেই। এক্ষেত্রে একান্ত প্রয়োজনীয় হল “প্রকৃতির সঙ্গে সমাজের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার (বা আন্তঃসম্পর্কের) পুনরুৎপাদন”-এর (social metabolic reproduction) একটি নতুন ব্যবস্থা গড়ে তোলা। এর জন্য চাই
১।সার্বিক শ্রেণি-ব্যবস্থার মেরুকরণ
২।সমাজতান্ত্রিক আদর্শ হিসেবে ভাবনার মেলবন্ধন যেখানে অসাম্য থাকবে না । জীবনের মূল ভিত্তি পরিচালিত হবে রাষ্ট্র দ্বারা। অর্থাৎ আহার, বাসস্থান, শিক্ষা ও সার্বিক স্বাস্থ্যর দায়িত্ব থাকবে রাষ্ট্রের হাতে।আর সেই ব্যবস্থার লক্ষ্য হবে মানুষের প্রকৃত প্রয়োজন মেটানো। তার ভিত্তি হবে মূলগত সাম্য এবং প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সামাজিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার সম্পর্কের উপর যুক্তিগ্রাহ্য নিয়ন্ত্রণ।
৩।স্বাধীনতা যখন প্রয়োজনীয়তা হবে ।একথা সুবিদিত যে জি ডাবলু এফ হেগেলের দর্শনের ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে এঙ্গেলস অ্যান্টি-ডুরিং-এ মত প্রকাশ করেছিলেন, প্রকৃত স্বাধীনতার শেকড় প্রয়োজনকে স্বীকৃতি দেওয়ার মধ্যেই প্রোথিত। বৈপ্লবিক পরিবর্তন হল সেই বিন্দু যেখানে বাস্তব প্রয়োগের মধ্যে স্বাধীনতা ও প্রয়োজনীয়তার মিলন ঘটে।
৩।স্বাধীনতা যখন প্রয়োজনীয়তা হবে ।একথা সুবিদিত যে জি ডাবলু এফ হেগেলের দর্শনের ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে এঙ্গেলস অ্যান্টি-ডুরিং-এ মত প্রকাশ করেছিলেন, প্রকৃত স্বাধীনতার শেকড় প্রয়োজনকে স্বীকৃতি দেওয়ার মধ্যেই প্রোথিত। বৈপ্লবিক পরিবর্তন হল সেই বিন্দু যেখানে বাস্তব প্রয়োগের মধ্যে স্বাধীনতা ও প্রয়োজনীয়তার মিলন ঘটে।
আজকের দিনে মনুষ্যসৃষ্ট জলবায়ু সঙ্কট এবং আবহাওয়ার চরম পরিস্থিতি সম্পর্কে যে জ্ঞান আমরা অর্জন করেছি তা মানুষকে নির্বিচার প্রয়োজনের ক্ষেত্র থেকে সরিয়ে দিচ্ছে। সময়ের দাবি, এই পৃথিবীর মানুষ স্বাধীনতার ও অস্তিত্বের চূড়ান্ত লড়াইয়ে বিপর্যয় পুঁজিবাদের বিরুদ্ধেও চূড়ান্ত সংগ্রামে অবতীর্ণ হোক। পুঁজিবাদের চলতি বিস্তার এই গ্রহকে এবং মানবসমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।
৪।প্রকৃতির সঙ্গে সামাজিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার পুনরুৎপাদনের নতুন একটি ব্যবস্থা ক্ষমতা সমাজের নীচের তলা থেকে গঠিত হলে তবেই প্রকৃত অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ও প্রকৃত গণতন্ত্রের সূচনা ঘটতে পারে।
৪।প্রকৃতির সঙ্গে সামাজিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার পুনরুৎপাদনের নতুন একটি ব্যবস্থা ক্ষমতা সমাজের নীচের তলা থেকে গঠিত হলে তবেই প্রকৃত অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ও প্রকৃত গণতন্ত্রের সূচনা ঘটতে পারে।
“সমাজতন্ত্রের মূলগত ত্রিভুজ”- অর্থাৎ (১) সামাজিক মালিকানা, (২) শ্রমিকদের দ্বারা সংগঠিত সামাজিক উৎপাদন এবং (৩) কৌমের চাহিদা পূরণ। এর অন্তর্নিহিত বার্তাটি হল, অসাম্যের সমাজকে নিশ্চিহ্ন করার মূলগত ভিত্তি বাস্তবিক সাম্যের লক্ষ্যে সংগ্রাম, বর্ণবিদ্বেষ ও লিঙ্গবৈষম্যের বিভাজনরেখা, সাম্রাজ্যবাদের বিভাজনরেখা এবং শোষণের অন্যান্য বিভাজনরেখার মধ্যে নিহিত অসাম্যের বিলোপ।
এতো গেল ধ্বংস আর ধ্বংসের পর আবারও শান্তি ।মানব জীবনেও এর অন্যথা নেই। নিৰ্ব্বাণে শান্তি । নিৰ্ব্বাণ অর্থাৎ নিবিয়া গিয়াছে, তাহার দেহটি মাত্র রহিয়াছে। এর পরে তাহার দেহের ধ্বংস সাধন হবে ।
যেখানে সকল ধর্মসমূহের মূল লক্ষ্য থাকে, স্বর্গ লাভ করা সেখানে বৌদ্ব ধর্মের মূল লক্ষ্য হল নির্বাণ লাভ করা।
এতো গেল ধ্বংস আর ধ্বংসের পর আবারও শান্তি ।মানব জীবনেও এর অন্যথা নেই। নিৰ্ব্বাণে শান্তি । নিৰ্ব্বাণ অর্থাৎ নিবিয়া গিয়াছে, তাহার দেহটি মাত্র রহিয়াছে। এর পরে তাহার দেহের ধ্বংস সাধন হবে ।
যেখানে সকল ধর্মসমূহের মূল লক্ষ্য থাকে, স্বর্গ লাভ করা সেখানে বৌদ্ব ধর্মের মূল লক্ষ্য হল নির্বাণ লাভ করা।
নির্বাণ অব্যক্ত, অনির্বচনীয়, তৃষ্ণার বিনাশই নির্বাণ। নির্বাণ সেই অবস্থা যেখানে জন্ম নেই, জরা নেই, ব্যাধি নেই, মৃত্যু নেই, শোক নেই, মনস্তাপ নেই, হতাশা নেই, এমনকি যেখানে পৃথিবী, জল, তেজ, বায়ু নেই। চন্দ্র সূর্য গ্রহ নক্ষত্র -এর সংস্থান নেই, অথচ অন্ধকারও নেই। যেখানে সংসার স্রোতের গতি রুদ্ধ হয়েছে, সেই পরম অবস্থা কে নির্বাণ বলে।
রামচন্দ্র ভারতী ভক্তিশতক গ্রন্থে লিখিয়াছেন ;-
"সৰ্ব্বপ্রাণীতিপাতাৎ পরধনহরণাৎ সঙ্গমাদঙ্গনায়।
মিথ্যাবাদাচ্চ মদ্যাস্তুবতি জগতি যোহকালভুক্তে নিবৃত্তঃ ।
সঙ্গীতশ্রকৃমুগন্ধাভরণবিললিতাফুক্ষশয্যাসনাদপ্যাসীন্ধীমান্স
এব ত্ৰিদশনরগুরো তৎস্বতে নাত্র শঙ্কা । |
স্রোতাপত্তাদিমার্গান সদবয়বযুতান সুস্তি রাগাদিদোষান |
গোযাস্তে ছিন্নমুলা হতভবগতয়স্তৎফলৈৰ্যান্তি শাস্তিম্।”
মিথ্যাবাদাচ্চ মদ্যাস্তুবতি জগতি যোহকালভুক্তে নিবৃত্তঃ ।
সঙ্গীতশ্রকৃমুগন্ধাভরণবিললিতাফুক্ষশয্যাসনাদপ্যাসীন্ধীমান্স
এব ত্ৰিদশনরগুরো তৎস্বতে নাত্র শঙ্কা । |
স্রোতাপত্তাদিমার্গান সদবয়বযুতান সুস্তি রাগাদিদোষান |
গোযাস্তে ছিন্নমুলা হতভবগতয়স্তৎফলৈৰ্যান্তি শাস্তিম্।”
কারও মতে, নির্বাণ হল মানুষের বর্তমান জীবনের একটি অবস্থার নাম। তখন আমাদের চারিত্রিক উন্নতি এতটার উন্নতি ঘটবে যে, আমাদের আর কোন আবেগ কিংবা আকাঙ্ক্ষা অবশিষ্ট থাকবে না। তাই নির্বাণকে পূর্ণ বিলুপ্তি বলা যেতে পারে।
সকল দুঃখের পরিসমাপ্তি ঘটে নির্বাণের দ্বারা। মানুষের নির্বাণ শেষ হলে মানুষের দুঃখেরও পরিসমাপ্তি ঘটে।
সকল দুঃখের পরিসমাপ্তি ঘটে নির্বাণের দ্বারা। মানুষের নির্বাণ শেষ হলে মানুষের দুঃখেরও পরিসমাপ্তি ঘটে।
বুদ্বের জীবনের তিনটি মূল্যবোধের প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষন করে। যা হল বৈরাগ্য, মৈত্রী এবং প্রজ্ঞা। বুদ্বের জীবনের ভিতর সুস্পষ্টরুপে প্রতীয়মান হয়। এই তিনটি গুণের দ্বারা নির্বাণ লাভ সম্ভব হয়। তার মন্তে তিন ধরনের সমস্যা মানুষকে বারবার দুঃখের দিকে নিয়ে যায় যা হল তৃষ্ণা, দ্বেষ ও অবিদ্যা। বৈরাগ্য হল তৃষ্ণার প্রতিষেধক, মৈত্রী হল দ্বেষের প্রতিষেধক এবং প্রজ্ঞা হল অবিদ্যার প্রতিষেধক।
অসাধারণ একটি প্রবন্ধ। বহুমাত্রিক কোণ থেকে বিষয়কে ধরতে গিয়ে সমাজ সংস্কৃতি মানুষ রাষ্ট্র সব এক ফ্রেমে এসে গবেষণা মূলক উচ্চ ভাবনার লেখা পেয়ে গেলেন পাঠকগণ।
উত্তরমুছুন