অন্যমনে সাহিত্য. অন্য রকম দৃষ্টিকোন থেকে দেখা একটি প্রতিবিম্ব ভাবনা .. অন্যমনে সাহিত্য.

বুধবার, ১২ মে, ২০২১

খিড়কির রূপকথা বাক্সের অন্দরে

      
খিড়কির রূপকথা বাক্সের অন্দরে
=========================
তপাশ্রী (তপা ব্যানার্জী)
=========================



'গল্প' কথাটা ছোট্ট হলেও এর মানে সবাই বোঝে এবং ভালোবাসে | বাচ্চা থেকে বুড়ো গল্প শুনতে কে না ভালোবাসে | সারার্থ কত না বৃহৎ আর আকর্ষণ ক্ষমতা সে বোধ করি বলার দরকার নেই | মনে হয় আট থেকে আশি ; নয় থেকে নব্বই সবাই এর জালে জড়িয়ে ফেঁসে পড়ে এমন এর গুণ | তা নিয়েই সেদিন দাদু আর নাতিতে কি তর্ক | নাতি বলে কেউ এখন গল্প বলতেই চায় না | দাদু শুনে অমনি বলে ওঠে ,ধৈর্য্য ধরে কেউ শুনলে তবে না বলতে ভালো লাগে দাদুভাই বলো | বেশ কথার কচকচানি চলছে এমন সময় সানুর মা মানে বৌমা এসে পরিষ্কার করে দিতেই এর মীমাংসা হলো | আসল কথা বাবা জানেন , মোবাইল আর নেট কানেকশন এখন যত ঝামেলার উৎস | ছোট্ট একটা মোবাইল ফোন যার হাতে পড়ছে সেই তার অতি ভক্ত হয়ে পড়ছে | তার ওপর নেট কানেকশন নিয়ে সে মনে করছে সারা পৃথিবীকে নিজের হাতের মুঠোয় করতে পেরেছে আর কিছু জানা বা শোনার দরকার নেই | বিশেষ করে অল্প বয়সী ছেলেপিলেরা তো একেবারে এর নেশায় মগ্ন | মুঠোফোনটি আধুনিক হলে চলতি কথায় যাকে বলে স্মার্টফোন | তাহলে তো কোন কথাই নেই ,একেবারে খাওয়া- দাওয়া ভুলেও থাকতে পারে |

কি যে......বলো না মা ,তুমি তো জানো এখন মোবাইল ফোন কত উপকার করছে , সবার সঙ্গে কত তাড়াতাড়ি যোগাযোগ করতে সুবিধে হয়েছে | হ্যাঁ ,তা বুঝলাম বটে ; তাই বলে কেউ দেখা সাক্ষাৎ করতেই চায় না একদম এটা ঠিক মেনে নেওয়া যায় না | এভাবে একটা ঘরে বসে ফোন করে খোঁজ নিলেই মিটে যায় বুঝি | এতটা একাকীত্ব কোন মতেই ঠিক নয় | আগেও তো ফোন ছিল তা তারের সাহায্যে রিসিভার তুলে দূরের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ হতো | আর খুব প্রয়োজন হলে জরুরী ফোনও হতো | এখন মানুষেরা এপাড়া থেকে ওপাড়া শুরু করে বাড়ির ভিতরে এঘর থেকে ওঘরে কথা হয় ফোনে | মানুষ এতে অলস প্রকৃতির হয়ে যাচ্ছে , যেমন আমার ছেলে সানু | মানে কি বলছো মা ; আমি কি করলাম আবার ! এই যে ডাকলে পরে যাই বলে চুপ করে এক জায়গায় বসে থাকিস | তারপর জোরে চেঁচালে দৌড়ে আসিস | মাঝে মাঝে দেখি তো বাবার কিম্বা আমার ফোন নিয়ে কার্টুন ছবি দেখতে গিয়ে ভুলেই যাস কেউ ডাকছে বলে | ঠিক বলেছো বৌমা, শাশুড়ি বলে উঠলো ; কেবল দূরত্ব বজায় রেখে ফোন করলেই চলবে | সামনে থেকে দেখলে যেমন মনের শান্তি বা চোখের ক্ষিতে মেটে সেটার হবে কী ! কজন আর সেকথা বোঝে বলো ,বৌমা ! এখনকার জেনারেশন কেবল আলগা বাঁধন বোঝে | তারা কর্তব্য বলতে কেবল খোঁজ- খবর নেওয়া আর মাস গেলে কিছু টাকা পাঠালেই সব মিটে যায় মনে করে | সেদিন বিকেলে হাঁটতে গিয়ে শুনলাম রমাদির দুঃখের কথা | রমাদি দুঃখ করছিল একমাত্র ছেলে কতদিন হয়ে গেল নিজের দেশে মানে বাড়িতে আসছে না | বলছিল কাছে বসে ছেলের সঙ্গে দু-দন্ড গল্প করে মনটা ভালো করবো তার উপায় নেই | মাঝে মাঝে মাঝরাতে বসে থাকে ছেলের দেওয়া উপহার ট্যাব ফোন নিয়ে যা থেকে ভিডিও কল করতে শিখিয়ে গেছে ছেলে তাতেই যা কথা হয় | রমাদি বলে মনে মনে ভাবি অনেকে আমার ছেলে ডাক্তার তার ওপর বিদেশে আছে শুনে চমকে ওঠে | বলতে চটপট আর শুনতে ভালো লাগে বটে | রমাদিকে বলি, বিদেশ কি আর ঘরের কাছে যে বললেই চলে আসবে ; সেই সুদূর কার্লিফোনিয়া কি ধারের কাছে | তার ওপর সেখানকার ডাক্তার মানে দায়িত্ব কম সেখানে ! কাজেই এখন দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো বললেও কিছু করার নেই | রমাদি বলে মনের খিদে কী তাতে মেটে বলো পূর্ণিমাদি | কি বলবো ,খুব খারাপ লাগছিল বলতে ; তবুও সাত্ত্বণা দেওয়া ছাড়া আর উপায় কী বলো বৌমা | ঠিকই বলেছেন মা ,আজকাল একটি বা দুটি সন্তান হয়ে ছোট পরিবারগুলোর এই এক সমস্যা হচ্ছে |

......জানো বৌমা শ্বশুর বলতে লাগলো আমাদের সময়ে একটা পরিবারে খুড়তুতো জেঠতুতো কতজন ভাই -বোনদের মধ্যে কেবল একজন কি দুজন ডক্টর কিম্বা উকিল ব্যারিস্টার হতো | সে ছিল কেবল পরিবারের নয় ,পুরো অঞ্চলের গর্ব | একডাকে সেই বাড়িকে সবাই চিনিয়ে দিত | বেশি ভাইবোনের সুবিধা আবার অসুবিধাও ছিল | বড় পরিবারে ছেলেমেয়ের সংখ্যা বেশি থাকতো বলে পয়সার অভাবে অনেকে ইচ্ছে থাকলেও উচ্চশিক্ষার পড়া পড়তে পারতো না | যারা পড়তো নাম যশের পেছনে না ছুটে নিজের অঞ্চলে সেবার মনোভাব নিয়ে চেম্বার করে রোগী দেখতো অল্প পয়সার বিনিময়ে | উকিল মোক্তার হলেও তারা নিজের জায়গায় থেকেই কাজ করে মানুষের কাজে আসত | আর মেয়েরা তখন খুব কমই উচ্চ শিক্ষিত হত | বেশির ভাগ বাড়িতেই মেয়েদের একটু লেখাপড়া শিখে বড় হলেই ভালো সম্বন্ধ দেখে পাত্রস্থ করতো | তাদের বৈবাহিক জীবন সুন্দর হত | এখন দেখো ছোট্ট পরিবার হওয়ার সুবাদে বাবা -মা উভয়ের চাকরির পয়সায় বেশিরভাগ একটিমাএ ছেলে বা মেয়ে ,তাকে যত টাকা লাগে দিয়ে নিজের দেশে চান্স না পেলে অসুবিধা নেই ; বেশি টাকা খরচা করে বিদেশে রেখে পড়াচ্ছে | এভাবে বাবা- মায়ের আশা পূরণ করতে গিয়ে শেষে তারা সেখানেই থেকে যাচ্ছে | অবশেষে দেখা যায় তাদের বাবা- মা বৃদ্ধ বয়সে একাকীত্ব জীবন যাপন করছে আর নিঃসঙ্গতা ভোগ করছে | প্রয়োজনে ছেলে বা মেয়ে আসতে পারে না বলে আধুনিক স্মার্টফোন উপহার দিয়ে শিখিয়ে পড়িয়ে দেয় যাতে ফোনে ভিডিও কল করে তাদের সঙ্গে দূরে বসে ছবি দেখে কথা বলতে পারে | এভাবে সবসময় তাদের কাছে না পেয়ে দূর থেকে ফোনে চলমান ছবিতে উভয়ে দেখার সাধ মেটাতে পারে কিছুটা হলে | তখন বাবা - মাও ছেলের দেওয়া উপহার পেয়ে আহ্লাদে আটখানা হয়ে যায় | সানু অমনি বলে বসল , আচ্ছা মা তাদের বাবা -মা নেয় কেন ! রাগ করতে পারে না | একগাল মিষ্টি হাসি হেসে ঠাম্মী বলে , ছোট্ট দাদুভাই তুমি বুঝবে না সোনা ; বড় হও তখন বুঝবে | দূর বাবা , কি যে বলে ঠাম্মী ,কিছুই বুঝি না | বৌমা সাত্ত্বণা দিয়ে সানুকে বলে , ছেলের ওপর মা-বাবা কি রাগ করতে পারে ! বলো সোনা | তবে অভিমান হয় ঠিকই যা অগোচর থেকে যায় মনের মণিকোঠায় |

বাবা , আপনি তো কেবল এখনকার জেনারেশনকে শুধু দায়ী করতে পারেন না | এর জন্য অতি আধুনিক বাবা -মাকেও দায়ী করতে ভুল করবেন না | তারা নিজেরা নিজেদের কাজকর্ম নিয়ে সারা সপ্তাহ এতো ব্যস্ত থাকে বলে সপ্তাহান্তে নিজেদের কাজের চাপমুক্ত হতে বন্ধুবান্ধব বা কলিগদের সঙ্গে পার্টী করতে চলে যায় ; কোন রেস্তোরা বা অন্য কোথাও | নিজেদের এই অতি আধুনিক জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত থাকতে হয় বলে , ছেলেমেয়েদের সঙ্গে কাটাবার মতো সময় বার করতে পারে না | পরম প্রিয় সন্তানকে পাঠিয়ে দেয় হস্টেল বা বোর্ডিং স্কুলে | একদম ছোটবেলা থেকেই চাকরিজীবী মায়েরা ছোট সংসার হওয়ায় তাদের ছেলে বা মেয়েকে কেজে রেখে অফিস করে আর ফেরার পথে বাচ্চাকে কেজ থেকে নিয়ে বাড়ি ফেরে | এইভাবে বাবা - মা এবং আপনজন ছাড়া ছোট থেকে বাচ্চাদের একটা অভ্যাস তৈরি হতে থাকে | উভয়ের মধ্যে একটা আত্মিক টান কমে যায় | একা থাকতে অসুবিধা হয় না বলে একটা স্বার্থপর মনোভাব তৈরি হয় | আমাদের দিদিভাই তো দূরে থাকে বলে বছরে একবার আসে , তাতে সানুর কত অভিযোগ তার পিপির ওপর | ফোন করলে কথাই বলতে চায় না অনেকসময় ,বলে ওর খেলার সাথী মামনদিদিকে আসতে বলি আসে না বলে | এইতো আসবে সময় হয়ে এলো এভাবে আপনারা কত কথা বলে , ঘুরতে নিয়ে যান আবার খেলনা কিনে নাতিকে বুঝিয়ে থামিয়ে রাখেন | আমি একা থাকলে পারতাম বলুন তো ওর এসব বায়না রাখতে |

মায়ের কথাগুলো মন দিয়ে শুনে দাদাই বলতে লাগল ,হবে নাই বা কেন বৌমা এখনকার ছোট ছোট পরিবার ; বাচ্চারা বড় হয় বাবা - মা আর কাজের মাসী বা আয়ার সঙ্গে নিঃসঙ্গভাবে | খুব বেশি হলে ঠাম্মী বা দাদু থাকে এর বেশি কেউ নয় | এভাবে ছোট থেকে থাকতে আর দেখতে তারাও স্বার্থপর মনোভাপন্ন হয়ে ওঠে | আমাদের সময় এক পরিবারে পঁচিশ থেকে ত্রিশ জন মানুষ থাকতো | কয়েকজন কাকা-জেঠা তাদের ছেলেমেয়ে কাকিমা জেঠিমা এবং ঠাম্মা দাদু তো থাকতোই | কোন পরিবারে তো বড়দাদু ছোটদাদু আর বড়ঠাম্মা ছোটঠাম্মা তারাও থাকতো | সবাই এক সাথে মিলেমিশে কাজকর্ম করতো বাড়ি যেন সবসময় লোকজনে গমগম করতো | কোন অনুষ্ঠান হলে তো রক্ষে ছিল না ,উপরি পাওনা জুটতো আরও নিকট আত্মীয় - পরিজন | বাড়ি যেন একদম যজ্ঞীবাড়ি হয়ে উঠতো | সেখানে আমাদের ছোটবেলায় খেলার সাথী ছিল কাকা জেঠার ছেলেমেয়েরা | তারা প্রায় সমবয়সী ছিল একদম ভাই বোনের থেকে প্রিয় বন্ধুতে পরিণত হতো বেশি | সবসময় গল্প-গুজব আর ভাগাভাগি করে খাওয়া দাওয়া করে বড় হয়েছি বলে হিংসা আর স্বার্থপরতা বেশি প্রাধান্য পেত না | এখন একান্নবর্তী পরিবারে অনেকেই আজ নেই , কেউ চাকরিসূত্রে দূরে বাকীরাও নিজ নিজ প্রয়োজনে আলাদা হয়ে গিয়েছি | অনুষ্ঠানে দেখা হলে খুব গল্প হয় | সানু হঠাৎ বলে উঠলো আচ্ছা দাদাই তোমরা মারপিঠ করতে আর ঝগড়া যেমন আমাদের স্কুলে হয় কখনো সখনো | হ্যাঁ ,হতো না আবার ! তখন বড়োরা মিটিয়ে দিত | আমরা নালিশ করলে শাস্তি পেতাম বেশি | বলা ছিল নিজেদের ঝামেলা নিজেরা মেটাবে | হ্যাঁ ,দাদাই ঠিক বলেছো ; আমাদের স্কুলের মিসরা বলে এমন কথা |

ঠাম্মী -দাদাই এর মুখে এসব শুনে সানুর বাবা বলে উঠল , আর এসব গল্প বলে লাভ কী ! দেশের স্বার্থে হোক আর নিজেদের প্রয়োজনে এখন ছেলেমেয়ের সংখ্যা অনেক কমে গিয়েছে | তার ওপর ঘরে ঘরে মেয়েরা চাকরি করছে | আগে ঘরের বৌমারা সংসার সামলাতো মানে রান্না -বান্না আর বাচ্চা মানুষ করতো | এখন দেশের কাজেও হাত লাগাচ্ছে , তাই সন্তান মানুষ করার সময় বড় কম | লেখাপড়া করে নিজের পায়ে দাঁড়ানো মানেই রোজগার করা | তা করতে গেলে তো সময় বার করতেই হবে ,কি করে বাড়ি বসে একটা বা খুব বেশি হলে দুটো বাচ্চার বেশি মানুষ করবে বলো | আমার বন্ধু সন্তুকে চেনো তো ! আমাদের বাড়িতে অনেক এসেছে | সেদিন ফোনে বলছিল অফিসের চাপ এমন যে ওর বৌ ছেলের স্কুলের মিটিং ছিল যেতে পারে নি | নিজেও অফিস ছুটি করতে পারে নি ,সেই অপরাধে স্কুল থেকে ছেলেকে সাতদিনের জন্য সাসপেন্ড করেছে | এখন স্কুলের সমস্যা জানিয়ে অফিস থেকে ছুটি চেয়েছে | আর জানি না শেষে কি হলো , আবার ফোন করলে জানতে পারবো | একটা বাচ্চা মানুষ করতে হিমশিম খাচ্ছে বৌয়ের অফিসের কাছে ফ্ল্যাট নিয়েছে | ওর বাবা - মা সেখানে থাকতে চান না দমবন্ধ লাগে বলেন নাকী | নিজেদের অত বড় বাড়ি আছে কোলকাতায় সেখানে ওর আর এক ভাইয়ের পরিবার আছে তা ফেলে থাকবেই বা কিভাবে | দুটো বাচ্চার কথা এখানে ভাবাটাই বিরাম্বণা ছাড়া কিছু নয় | যেখানে বাচ্চার স্কুলের জন্য কখনো ছুটি নিতে গেলে হয় বাবা নয় মা এভাবে একজন সময় বার করতে পারে | অনেক বাবা - মায়েরা একই সঙ্গে করপোরেট সংস্থায় কাজ করে বলে বাচ্চার শরীর খারাপ হলে ছুটি পায় না ডাক্তার দেখানোর জন্য | নিজেদের শরীর খারাপ হলে বাচ্চাকে তখন পাশের ফ্ল্যাটের কাউকে বলে যায় কাজের লোকের ভরসায় ফ্ল্যাটে কয়েক ঘন্টা দেখে রাখার জন্য | এইভাবে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ সরকারী নিয়মে চললে তো আমাদের দেশের লোকসংখ্যা এতো বাড়ার কথা নয় বাবা ! তাই না বলুন | আরে বৌমা ! তুমি বলছো ঠিক ! দেখো এসব নিয়ম তো দেশের সকল জনসাধারণ মানবে তবে না ; আমরা মানলে হবে , দেশের সব জনসাধারণ একই নিয়মের আওতার এলে না একটা সুন্দর সমাজ গড়ে উঠতো |

আজকাল মানুষের জীবনযাত্রায় একটু বেশিই আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে | মানুষ আগের মতো খালি কাজ করবো আর বাড়িতে গিয়ে বিশ্রাম নেবো এমনটা চায় না | সবাই এখন একটু ভোগ বিলাসে দিন কাটাতে চায় | এই দেখো শনিবার রবিবার ছুটি থাকে বলে আমি একটু-আধটু ঘুরতে যাই তোমার বৌমা আর নাতিকে নিয়ে | এসব আগেও ছিল বাবু, প্রিতমের ডাকনাম | একান্নবর্তী পরিবারে বয়োজ্যেষ্ঠরা বাড়ির সব বাচ্চাদের নিয়ে সময় করে ঘুরতে নিয়ে যেত | তাদের আবদারগুলো মেটাতো | মা- বাবাকে এসবে অত ধ্যান দিতে হতো না | এটা ঠিক বলেছো বাবা | তবে এখনকার ছেলেমেয়েদের পড়াশুনা করাতে বাবা মাকেও হিমশিম খেতে হচ্ছে | তাতে সুযোগ পেলেই চাপ মুক্ত করতে একটু খোলা বাতাস নেওয়ার জন্য এদিক ওদিক বেরিয়ে পড়ে | জানি না কতটা সুবিধে হয় , এটা ঠিক মনটা কিছুক্ষণের জন্য হালকা লাগে | আর দিনকাল যা এসেছে তাতে যোগ্যতা বিচারে এগিয়ে থাকার লড়াই ছাড়া আর কিছু নয় | সেখানে সবাই নিজেকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে | সবচেয়ে বড় কথা হলো এ প্রতিযোগিতা চলছে শুধু নিজের দেশের মানুষের মধ্যে নয় কেবল বাবা | অন্য দেশের মানুষের জীবনযাত্রাও নকল করার জন্য | তাতে কোন বাধাকেই মানছে না ,তা চালচলন বেশভূষা আর খাবার -দাবার পঠন- পাঠন সবেতেই আধুনিকতার ছোঁয়া আনতে চাইছে | আমিও তো এ দেশের নাগরিক বলে হেসে ফেসে বাবু ,তাই না বাবা বলো ! সবচেয়ে দুঃখ লাগে বাবু জানিস , পেপারে প্রায় দেখি ছোট ছোট পরিবারগুলি প্রতিযোগিতার দৌড়ে এগিয়ে স্বামী- স্ত্রীর মধ্যে নিত্য দাম্পত্য কলহে তস্ত্র | কখনো তা তীব্র আকার নেয় যা কোর্টের দোরগোড়ায় গিয়ে ঠেকে | অমনি বাবুর মা বলে ওঠে ,আহা ! কী যে বল মশাই ,আমাদের মধ্যে কি ঝগড়া হতো না নাকী ! তবে অনেক অশান্তি ঘরের বাইরে বেরোতে পারে নি ,পাছে বাড়ির অন্যান্যরা জানতে পারবে এইভেবে ভয়ে | ঠাম্মীর কথা শুনে দাদু বললো , তাহলে বুঝতে পারছো গিন্নি ; তখন আর এখনকার তফাৎ | বেশি খারাপ লাগে যখন বাচ্চাগুলো আদালতের বিচারে পৃথক থাকে বাবা মায়ের থেকে | অনেক বাচ্চার চাপা কান্নার শব্দ পাঁচতারা হোটেলের ঘরের মতো উঁচু বিল্ডিয়ের দেওয়াল ভেদ করে আকাশে মিলিয়ে যায় | জনমানবশূন্য সাজানো সংসারের ইতিকথা কাউর কর্ণকুহরে প্রবেশ করতেই পারে না | এভাবেই আধুনিক থেকে অতি আধুনিক হওয়ার জন্য অর্থের পিছনে ইদুঁরদৌড়ে শহুরেরা প্রতিনিয়ত নিজেদের বলির শিকার নিজেরা হচ্ছে | মাঝে মাঝে আমরা যখন বয়স্ক বন্ধুরা একত্রিত হই তখন বর্তমান জীবনযাত্রার মান নিয়ে আলোচনা করি আর ভয়ানক সন্দিহান হয়ে পড়ি সমাজের এই অবক্ষয়ের কথা ভেবে | মানুষের মনুষ্যত্ব হারিয়ে যাচ্ছে সেখানে ভালোবাসা দয়া মায়া ক্ষীণ হয়ে কেবল অর্থ লালসা আর ক্ষমতার প্রতিপত্তি প্রাধান্য পাচ্ছে | জানি না এর শেষ কোথায় আর পরিনতিই বা কী ? ভবিষ্যতে দাদুভাইরা কোন পথ বেছে নেবে , কোনটা তারা সঠিক ভাববে ? উওর ভবিষ্যতের কাছেই রইল ?







২টি মন্তব্য:

  1. আপনার প্রাঞ্জল লেখনী আমাদের সমৃদ্ধ করেছে। অন্যমনে সাহিত্য আপনাকে শুভেচ্ছা জানায়।

    উত্তরমুছুন
  2. অন্যমনে সাহিত্য গ্রুপের সম্পাদক ও সকল সদস্যদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা আর অভিনন্দন জানাই । সুযোগ পেলে ভবিষ্যতে আরও
    কিছু কাজ করতেসচাই ।

    উত্তরমুছুন