হারি-হারি খেলা
===============
সুদর্শন ব্রহ্মচারী
===============
অফিসে ঢুকতেই বড়বাবু বললেন, ‘ও স্যার, কখনও শুনেছেন নদীতে কচুরিপানা জমে রাস্তা হয়েছে ?’
-কোথায় ?
-এই তো আমাদের টাঙ্গনে মানুষ হাঁটছে । ফরিদপুরের লোকজন বলাবলি কোরছে ।
অভিনব ঘটনা । আলাউদ্দিনকে ফোনে ধোরলাম, ‘হ্যাঁরে আলা, তোদের ওখানে নাকি নদী শুকিয়ে রাস্তা হয়েছে ?’
-হঁ সার, তবে এখন নাই ।
- নৌকো চোলছে ?
-তা চলছ্যে ।
-বাঃ ! তুই নৌকোর ব্যবস্থা কর । আমি আসছি । জায়গাটা দেখতে যাব ।
বড়ো বাবুকে বললাম, ‘চলুন ভেসে আসি ।’ তিনি তো রাজীই হচ্ছেন না । উল্টে ভয় দেখাচ্ছেন, ‘টাঙ্গন কিন্তু মাথা নেয় । তাছাড়া রাতের বেলা ঐ রাস্তাটা কিন্তু ভালো নয় ।’
জেদ চেপে বোসলো । আলাকে বোললাম, ‘কিছু খাবার নিয়ে নিস, মাঝরাত পর্যন্ত ভাসবো ।’
সূর্যের তেজ কোমে গেছে । নদীর কথা ভাবছি । টাঙ্গনের দু’ধারে সবুজ মাঠ । আঁকাবাঁকা আলপথ । নদীর দুপাশে বড় বড় গাছ আর বাঁশঝাড় । রূপোলী জ্যোছনায় নিস্তব্ধ মাঠে ঝিরিঝিরি জল বয়ে যাচ্ছে আর রাতচরা পাখি ডাকছে ভাবতেই মন উড়ে গেল ।
আলা ফোন করছে, ‘স্যার, নৌকা রেডি । কালিয়াগঞ্জ থেকে ফরিদপুরের রাস্তা ধরে আসবেন ।’ সন্ধ্যা নামার আগেই আলাউদ্দিনের বাড়ি পৌঁছে গেলাম । গাড়ির শব্দ শুনে ছোট ছোট বাচ্চারা দৌড়ে এলো । আট দশ বছরের ছেলেরা লুঙ্গি পোরে খেলছে । বাচ্চা মেয়েরা শালোয়ার কামিজ পোরে ঘুরছে । অনেকেরই মাথায় রঙ্গিন বোরখা । সবাই গাড়ি ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছে । অজিত বেশ গর্বের সংগে বললো, ‘গাড়ি দেখতে পায় না তাই মজা নিচ্ছে ।’ আলার সাকরেদ গুটেন আমাদের দেখেই ছুটে এলো । অজিত বোললো, ‘খিদে পেয়েছে ।’ গুটেন হাতের ব্যাগ দেখিয়ে বোললো, ‘মুড়ি চানাচুর আর দিশি মুরগির ডিম সেদ্ধ করে নিয়েছি । হবে না ?’
-খুব চলবে ।
অজিত খুব খুশী । পিছন থেকে চেনা গলায় কেউ চেঁচাচ্ছে, ‘এসে গেছি, আমি এসে গেছি ।’ পিছন ফিরে অবাক না হয়ে পারছি না । মাধব, যে আমার এই সব হঠাত হঠাত বেরিয়ে পড়ায় তাল দেয়, সেও কী ভাবে যেন এসে পড়েছে । খুবই আনন্দ হচ্ছে । জিজ্ঞেস করলাম, ‘কি ব্যাপার তুমি এখানে এলে কী করে ?’
-আমাকে ফাঁকি দেওয়া কী অত সহজ ? খবর পেলাম । চলে এলাম । ব্যাস । জীবন তো একটাই ।’ সে বাইক নিয়ে এসেছে । তাই অজিতকে বললাম, ‘তুমি চাইলে ফিরে যেতে পার ।’ সে খুশি খুশি ফিরে গেলো । আমরা তিনজন চোলেছি । দু ধারে ছোট ছোট পুকুর আর টিনের ঘরবাড়ি । উঠোনে উঠতি বয়সের মেয়েরা চুল বাঁধছে । গ্রামের শেষে বিরাট মাঠ । গুটেন বলল, ‘সোজা গেলেই চকদিলালের ঘাট ।’ পা চালিয়ে নদীর ঘাটে পৌঁছে গেলাম। বালি ভর্তি একটা ট্রাক্টর ঘোঁত ঘোঁত করে উঠতে উঠতে পিছনে গড়িয়ে পড়ছে । চীতকার চেঁচামেচি চলছে । আলাউদ্দিন পড়িমরি করে ছুটে এসে বলল, ‘সার, আসুন । নৌকা এসে গেছে ।’ আমরা লাফিয়ে লাফিয়ে নৌকোয় চোড়লাম । বাঁশের পাটাতনে চট বিছিয়ে বসার ব্যবস্থা । আলা গামছা বিছিয়ে আমার জন্য জায়গা করে দিল । বাঁদিকে বাঁশঝাড়ের মাথায় সূর্য ডুবছে । মাধব ছবি তুলছে । পচাই দাস নৌকার মাঝি । তার হাতে লম্বা একটা বাঁশ । অল্প বয়েসি একটা ছেলে নৌকোর মাথায় হাল ধরেছে । পচাই জিজ্ঞেস কোরলো, ‘সার, কোন দিকে যাবেন ?’
-কোথায় কচুরিপানা জমেছিলো ?
-সে দিকে ভাটির টান ।
আলা ধমক দিয়ে বলছে, ‘এই পচাই আমিও তো দাঁড় টানতে পারি নাকি ? ভয় পাস ক্যান ?’ পচাই নৌকো ঘোরালো। আলা আমার দিকে ফিরে বোললো, ‘স্যার, ছোটবেলা বাগালি কোরতে আসতাম । এর ওর নৌকায় চোড়ে ঘুরতাম । পচাইর বাবার কাছেই আমার হাতে খোড়ি ।’
নৌকা পুবদিকে চলেছে । নদী হঠাত ডানদিকে বাঁক নিল । আলা বলল, ‘এটা চণ্ডীদহ ।’ মাধব জিজ্ঞেস করলো, ‘এখানে কি চন্ডী পুজো হয় ?’
-হঁ, আমরা পর্সাদ খেত্যে আসতাম ।
পচাই বোললো, ‘ঠাকুর ভাসান হয় । ঘাটে পূজা হয় ।’ আমি জানতে চাইছি, ‘এখানে কারা থাকে ?’ আলা বলল, ‘স্যার কৈবর্ত্যদের কথা শুনেছেন ?’ মাধব বলল, ‘যারা সেই বিদ্রোহ করেছিল ?’
-‘এরাই ত তাদের গুষ্টি,’ আলা বলল, ‘কেউ কেউ আমাদের মতো নস্য শেখ হয়েছে ।’
- ‘তোমরাও কি কৈর্বত্য ছিলে ?’ তাকে জিজ্ঞেস কোরলাম । সে বলল, ‘না সার, আমার বাবার ঠাকুর্দা পোলিয়া ছিল । বাংলাদেশের জমিদারি সেরেস্তা থিকা আমি পড়চা আনাইছি । জমিদারের খাতায় বর্মনকে কাট কোরি নস্য শেখ করা আছে ।’ মাধব বলল, ‘নিশ্চয়ই একশ বছর আগে ?’
-হঁ ।
গুটেন বোললো, ‘কৈবর্ত্যদের সঙ্গে জলে কেউ পারবে না । এক ডুবে এপার ওপার করে ।’ আমি নদীটার এপার ওপার দেখছি । ধূসর আবছায়া । এপার ওপারের ব্যবধান শুধু কল্পনা মাত্র । আলা বোললো, ‘ছুটা থিক্যা নদীতে ডুব দেবার ট্রেনিং হবে ।’ মাধব ফোড়ন কাটলো, ‘জলের কাছে থাকলে এমনিতে হোয়ে যায়।’ পচাই দাস কাকে যেন কিছু জিজ্ঞেস কোরছে । তার দিকে ফিরলাম । নৌকোর সামনে একটা লোক নদী পার হোচ্ছে । তার হাতে একটা পুঁটলি । মাথাটা সাপের মত এগিয়ে চোলেছে । গুটেন বোললো, ‘হাটত ফিরিবার তানে- ’
মাধব চীতকার করে জানতে চাইল, ‘নদীতে কত জল ?’ মাঝি বোললো, ‘বেশী না । আট দশ হাত হবে ।’ গুটেন মুড়ি চানাচুর ভাগ করছে । জলের শব্দ বাড়ছে । নদী চওড়া হয়ে বাঁদিকে ঘুরছে । মাঝি সেদিকেই নৌকো ভিড়িয়ে বলল, ‘স্যার এটাই কালিদহ ।’ বাংলাদেশ সীমান্তে আলো জ্বলে উঠল । গুটেন বোললো, ‘বাংলাদেশ থেকে সেই কচুরিপানা পাঠাইল ! একদিনেই এপার উপার জুড়ে গেল ।’ বাঁশ ঝাড়ের পিছনে লম্বা লম্বা গাছ । উল্টোপারে বট অশ্বত্থের ডালে পাখীর কিচিরমিচির । মাধব জিজ্ঞেস করল, ‘এখানে দহ কত গভীর ।’
-‘কেউ জানে না । চৈত মাসে নদী শুখাই যাবে কিন্তু দহ টুসটুসে সোন্দরী ।’
আলা বোললো, ‘আইসক্রিমের মতো ঠান্ডা ।’ পচাই বলল, ‘মিষ্টি জল, সেই বড় বড় শোল ।’ বাঁশঝাড়ের পাশে ঢিবি দেখিয়ে আলা বোললো, ‘সার, এইটা মন্দির হবার ছিল ।’
-এ তো দেখছি মহাশ্মশাণ ।
আলা হাসছে । পচাই বোললো, ‘নকল পীরও বসছিল ।’
-নিশ্চয়ই কিছু ধান্দা ছিল ।
গুটেন বলছে, ‘কালীদহে মেলা লাগল । জলও বিক্রি হচ্ছে ।’ আলা বোললো, ‘রটে গেলো মুসলমানদের অত্যাচারের জন্য ওপা্রে জলদেবী থাকতে পারল না । পিল পিল করে লোক আসছে । টাকা উড়ছে ।’ পচাই তাড়া দিচ্ছে, ‘জলদি করেন, বি এস এফ ধোরবে ।’
-কেন?
-সন্ধ্যা হই গেছে ।
নৌকোয় নেমে আলা বাঁশ হাতে নিয়ে দাঁড়ালো । মাধব নদির গান ধরেছে । উজানে চলেছি । বাঁশঝাড়ের নীচে আবছায়া । নৌকো উল্টোদিকে গেল । ছেলেটা নৌকোয় দড়ি বেঁধে পাড়ে উঠে টানতে শুরু করল । গুটেন চেঁচাচ্ছে হেঁইয় মারো, জোরসে টানো, ইত্যাদি ইত্যাদি । দু দিকেই মনোরম দৃশ্য । দিনের সব শব্দ থেমে গেছে । আলাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘নকল পীরের ব্যাপারটা কি ?’
-সব বেবুস্যা সার, কী আর কই ?
পচাই তাকে বলল, ‘শুনা কথা, তুমার দাদুর কালে নদীতে রাস্তা খুলছিল ।’
- আমার দাদুর বড়বাবা খেয়ার ডাক লিত ।
- তার নামেই ত ঘাট ।
জানতে চাইলাম, ‘কি নাম ?’ আলা বোললো, ‘চকদিলাল । আমাদের বংশত সেই প্রথম নস্য ।’ মাধব এমন একটা ঐতিহাসিক ঘটনা শুনে আলার কাছে গিয়ে বসল । চকদিলাল অনেক খরচ করে ঘাটের ডাক ধরেছিল। খেয়া বন্ধ হোতেই তার মাথায় হাত পড়ল । রোজগার বন্ধ । কী করবে ভেবে পাচ্ছে না । সে আর তার বন্ধু রমণীমোহন চক্রবর্তী রাতারাতি একদিকে পীর আর একদিকে মন্দির বসিয়েছিল । মাধব জিজ্ঞেস করল, ‘রোজগার নিশ্চয়ই হত ?’
-শুইনছি আধাআধি ভাগ ছিল ।
-ভালো ব্যবসা ।
- ‘হিঁদুরা ত পলিয়াদের মানষিই ভাবত না,’ আলা বলছে, ‘কিন্তু পীর ফকিররা আদর করত, খাওয়াইত ।’ মাধব বোললো, ‘জানি বামুনরা বিধান দিত মুসলমানের ছুঁয়া লাগল্যেই নষ্ট জাত ।’
-গরীব লোকগুলা মুসলমান না হল্যে বাঁচত না । উপরওলা ভালো বুদ্ধিই দিয়াছে ।
পচাই বলল, ‘চাষীরা চিরকাল চাষ করে আর চাল ধার করে খায় ।’
আমরা আবার চকদিলাল ঘাটে পৌঁছে গেছি । লোকে দড়িটানা নৌকোয় এপার ওপার করছে । পচাই জিজ্ঞেস কোরলো, ‘উপরে যাবেন না নৌকা ভিড়াই দিব ?’
-‘পাড়ে লাগাও,’ আমি বললাম, ‘চা খেয়ে উজানে যাবো ।’ ওপরে উঠলাম । বট গাছের নীচে দুর্গা মন্ডপ । চারপাশে দোকান । ঘর গেরস্থালির জিনিষপত্র বিক্রি হোচ্ছে । তেলেভাজা আর চা খেয়ে নেমে এলাম । নৌকো উজানে চলল । মাধবকে বললাম, ‘একশ বছর আগে যদি কালীদহে মন্দির আর পীরের মাজার হোতো তাহলে জায়গাটা কেমন হত ?’
- রমনীমোহনের বংশধরেরা লাল টিপ আর গরদের ধুতি পরে পূণ্যি বিক্রি করতো আর এই আলা সাহেব পীরের নামে ব্যবসা চালাত । এই নৌ বিহার স্বপ্নই থেকে যেত ।
সবাই হাসছে । পচাই বলল, ‘আমাদের গেরামটা তাহলে বাংলাদেশ হয়ে যেত ।’ নদী ডানদিকে ঘুরছে । আলা বলল, ‘বাঁ দিকে বাগচা গ্রাম । সামনে নারানপুর ।’ চকদিলালের মাথায় চাঁদ উঠছে । গুটেন তার ব্যাগ থেকে কলা আর ডিম সেদ্ধ বের করে সকলের হাতে ধরিয়ে দিল । ক’টা ছোকরা মাঝ নদিতে ডুব দিয়ে পাড়ে গিয়ে উঠছে । জিজ্ঞেস করলাম, ‘ওরা কী করছে ?’ আলা চেঁচিয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘কী মাস লাগছ্যে ?’
-না, পাই নাই ।
আমি পচাইকে পশ্চিম পাড়ে ভিড়তে বললাম । শ্মাশান ছাড়িয়ে কয়েক’শ মিটার এগিয়ে সে থামল । সাদা বালির চর । জ্যোছনা খেলছে । মাধব বলছে, ‘সত্যি স্বর্গ নেমে এসেছে । নদিতে চাঁদের কী শোভা !’
-‘কবি হয়ে গেলে নাকি ?’ তার পিছনে লাগছি । তিন জন লোক বিড়ি টানছে । মাধব জিজ্ঞেস কোরলো, ‘মাইছ পোইড়ছ্যে ?’
-উপর যাও ।
কয়েকটা ছবি তুলে আমরা এগিয়ে গেলাম । ক’জন লোক জলে ভেসে ভেসে নদীর এপার ওপার করছে । পচাই জিজ্ঞেস কোরল, ‘কে বে ? পিন্টে ?’
-হঃ।
-মাইছ পড়ছ্যে ?
- ছুটা আইড় চলব্যে ?
মাধব বোলল, ‘না, ছুটা লিব না। আগে বাড়ো ।’ বাঁশবনের মাথায় রূপোলি চাঁদ। দু পাশে ইউক্যালিপ্টাস । সুন্দর একটা ফ্রেম । নদী ঝলমল করছে । উল্টোদিকের পাড়ে একটা লোক চীতকার করে নাকি সুরে কি যেন গাইছে । জিজ্ঞেস করলাম, ‘কী গাইছে ?’
- ‘গান না,’ পচাই বলল, ‘ওটা পাগল হই গেছে।’
-‘হলটা কি শুনি ?’ মাধব জানতে চাইল।
-হাড়ি-হাড়ি খেলছিল । তারপর অ্যাক্সিডেন্ট ।
আলা বলল, ‘সার, হাড়ি-হাড়ি মানে জলে ডুব দি করি লুকাঝুকা খেলা।গরীবের খেলা, সার ।’ মাধব বোললো, ‘হারি-হারিটাই বোধ হয় ঐ হাড়ি-হাড়ি হয়েছে ।’
-‘একজন ডুবে পালায়, বাকীরা ধরতে চেষ্টা করে,’ আলা বলছে, ‘নদীর পাড়ে মেলা বসত । সেই ভীড় !’
আমি খেলাটা মনে মনে খেলছি । জলের ভেতের মাছের মতো ছুটছি – যেন যমুনায় কৃষ্ণ রাধার পিছনে ছুটছে ।
মাধব বলছে, ‘ভাগ্যিস এসেছি । নইলে কী যে মিস করতাম !’ গুটেন বলল, ‘পাগলাটা নাকি একজনেক মেরে ফেলেছে ?’ সবাই তার দিকে ফিরলো । মৃত্যু শব্দটা শুনেই সারা পৃথিবী যেন ছুটে এসে চুপ করে দাঁড়াল । আমার ভেতরটা ফাঁকা হয়ে গেল । মন বলছে মায়ার সাগরে সমস্ত সৃষ্টি ছুটে ছুটে হাড়িহাড়ি খেলছে । আলা জিজ্ঞেস করল, ‘পচাই, কী হয়েছিল বে ?’
-পাগলটা তার বন্ধুর কাছে প্রতিদিন হেরে যেত, একদিন সুযোগ পেয়ে তাকে জলের মধ্যে চেপে ধরেছিল ।
আমি মনে মনে মরছি । জলের চাপে আমার হাড়গোড় ভেঙ্গে যাচ্ছে । অসহ্য যন্ত্রণা । মন খারাপ হয়ে গেল । গুটেন বোললো, ‘নিশ্চয়ই চুরি করে নিঃশ্বাস নিয়েছিল ।’ এ ভাবেই পাগলাটা সেদিন খেলায় জিতেও চিরদিনের জন্য হেরে গেছে । আমি চুরি করে নিঃশ্বাস নেবার ব্যাপারটা ভাবছি । হা-ডু-ডু খেলার সময় সেটা করতাম । পচাই বোললো, ‘বন্ধুটি আর উঠছে না দেখে পাগলটা এক ছুটে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে ছিল ।’ তার এখন বেঁচে থাকাটাই বড় অভিশাপ । মাধব বলল, ‘এর চেয়ে বড় ট্র্যাজেডি কী আর আছে ?’
চারিদিকে বিষাদের ছায়া । বাঁশঝাড়ের মাথায় চাঁদটা আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠল । একটা পাখি চীতকার করে কাঁদতে কাঁদতে উড়ে চলেছে । নৈঃশব্দ্য তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে । আর পাগলের মুখ থেকে চির বিচ্ছেদের যন্ত্রণা অর্থহীন শব্দের মতো ছড়িয়ে পড়ছে । আকাশ বাতাস জ্যোতস্না কিছুই আর ভালো লাগছে না । কেউ কোন কথা বলছে না । নদী যেন বইছেও না । মাঝিও হাল ছেড়ে দিয়েছে । নৌকোও আর চলছে না । তবুও ভব সাগরে মৃত্যুর সংগে হারি-হারি খেলা খেলেই চলেছি
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন