অঝোর ধারা
=================
রীতা রায়
=================
কদিন ধরেই দুর্যোগ চলছে .. ঘরের সব আনাজপাতি প্রায় শেষ। লকডাউনের জেরে দুমাস কাজ বন্ধ। রোজ আনা রোজ খাওয়া মানুষের কষ্টের অন্ত নাই।
অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে এবাড়িতে যখন এলো তখন কী সে আন্দাজ করতে পেরেছিল, রাজমিস্ত্রীর সাহায্যার্থে যোগাড়ে'র কাজ করতে যেতে হবে ? রোজকার কাজ টিকিয়ে রাখার জন্য অলিখিতভাবে মজুরি বাবদ আড়াইশো টাকা হাতে পায়, বাকি একশো টাকা দৈনিক হেডমিস্ত্রির কাটমানি। প্রতিবাদ করলেই ছাঁটাইয়ের হুমকি।
বাবা মা কত আদরে নাম রেখেছিল ববিতা। ভেবেছিল, বিয়ের পর খুব সুখী হবে। কিন্তু, বরের চরিত্র খারাপ.. অন্য মেয়েতে মজলো। দুটো নাবালক সন্তানকে মানুষ করবার জন্য তাকে শেষপর্যন্ত্য ঘরের বাইরে পা রাখতে হলো। টানা দশবছর একাই লড়াই করছে। বড় ছেলেটা এবার ক্লাস টেন.. মাধ্যমিক দেবার কথা। টিউশনের সাথে নোট বইও চাই। যেমন বইয়ের ওজন তেমনি তার দাম। সাতশো টাকা ধার করে শুধু শুধু বইগুলো কিনলো ? স্কুল বন্ধ ..পড়াশুনা বন্ধ। তার কাজও বন্ধ। রেশন আর বাচ্চাদের স্কুল থেকে চাল, আলু, আটা যা কিছু পাওয়া যায় আর বাকিটা ধার দেনায় দিনপাত কোনোরকমে। কাজ শুরু হলেই সব দেনা শোধ দিয়ে ঘরের চাল ঠিক করিয়ে নিতে হবে। বর্ষায় টেকা দায় !
চালের কথা মনে হতেই হাঁড়িতে চাল ফুটলো কী না দেখতে গিয়ে ..
এইরে, শুকনো পাতা জ্বলতে জ্বলতে কখন নিভিয়ে গেছে .. আর তো পাতা নেই ! শুকনো কাঠ,পাতা.. যা কুড়িয়ে এনেছিল.. সবই শেষ! কদিন যা দুর্যোগ চলছে..বাইরে বেরোনোই দায়।
কী করবে সে?
বাইরে শোঁ-শোঁ বৃষ্টি, পেটে গনগনে খিদে, ক্ষুধার্ত দুই শিশু, হাঁড়িতে আধফোটা ভাত.. নিভন্ত চুল্লী ! হাতে নতুন কষকষে নিভাঁজ বাচ্চাদের পড়ার 'গাইড বুক' .. লকডাউনের কারনে স্কুল বন্ধ ..
পরীক্ষা হবে না এবছর ...
আপনার প্রাঞ্জল লেখনী আমাদের সমৃদ্ধ করেছে। অন্যমনে সাহিত্য আপনাকে শুভেচ্ছা জানায়।
উত্তরমুছুন