দত্তক
=============================
পায়েল সেন
=============================
সোনারপুরের প্রথিতযশা মাস্টারমশাই হিসেবে স্বপন বাবুর বেশ নাম ডাক আছে, সবাই তাকে এক ডাকে চেনে। নতুন বাড়িতে উঠে আসার পর ওনার খুব বাগানের শখ হয়েছে কিন্তু সময়ের অভাবে সম্ভব হয়ে ওঠেনি। আসাম থেকে আসা বন্যায় সর্বস্বহারা হারুকে তিনি মালির কাজে রাখলেন। মাস্টার মশাই যখন টিউশনি পড়ান হারুর ছেলেটি দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে শোনে, একদিন তিনি ডেকে জিজ্ঞেস করতেই ভয়ে পালিয়ে যায়। পরে হারুর সাথে ফিরে আসে, স্বপন বাবু ওকে গ্রামের স্কুলেই ভর্তির কথা বলেন । সহায় সম্বলহীন হারু পড়ার খরচ চালাবে কি করে বলতেই মাস্টার মশাই নিজের দায়িত্বে হারুর ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করে দেন। ছেলেটির নতুন নামকরণ করেন উদয়।
সব ঠিকঠাক চলছিলো কয়েক বছর পরে প্রচন্ড গরমের সময়ে হারু একদিন সানস্ট্রোকে মারা যায়। নিজের বলতে উদয়ের আর কেউ রইলো না। মাস্টারমশাই তাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেন , তবে বাড়িতে তার গিন্নী ও দুই ছেলের দাপটে উদয়ের বাস উঠে যাওয়ার জোগাড়। বেগতিক বুঝে স্বপন বাবু উদয়কে বোর্ডিং স্কুলে ভর্তি করে আসলেন যাতে সে পরবর্তী কালে সু শিক্ষা , আচরণ , অনুশাসন সব ই শিখতে পারে। উদয়ের সমস্ত খরচ স্বপন বাবু সময় মতো পাঠিয়ে দিতেন সাথে মাঝে মধ্যে গিয়ে তার সাথে কিছু সময়ও কাটিয়ে আসতেন, নিজের ছেলেদের চাইতে বেশি উদয়ের উপর তার মায়া পড়ে গেছিলো।
দীর্ঘ পাঁচ বছর পর উদয় বিদেশ থেকে এম.ডি পাশ করে সোনারপুরে ফিরেছে তার মাস্টারমশাই সাথে দেখা করতে কিন্তু সেখানে গিয়ে সে জানতে পারে মাস্টার মশাইয়ের স্ত্রী ক্যান্সারে মারা যাওয়া আর স্কুল থেকে অবসর গ্রহণের পরে স্বপন বাবু একদম একা হয়ে গেছিলেন। দুই ছেলেই তার কলকাতায় থাকে একজন নামকরা ব্যারিস্টার আর অন্যজন ইঞ্জিনিয়ার, কিন্তু বৃদ্ধ বাবার সেখানে ঠাঁই মেলেনি ওনার স্থান এখন এক বৃদ্ধাশ্রমে। উদয় এক মুহুর্ত দেরি না করে সেই বৃদ্ধাশ্রমের ঠিকানা জোগাড় করে পৌঁছে যায় তার প্রিয় মাস্টার মশাইয়ের কাছে। চালসে পড়া চোখে উদয়কে চিনে নিতে অসুবিধে হয়নি স্বপনবাবুর, তাকে দেখেই জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললেন। কিছুক্ষণের জন্য উদয় বাইরে গিয়ে আবার ফিরে এসে বললো মাস্টার মশাই তৈরি হয়ে নিন এবার আমাদের বাড়ি যেতে হবে , আজ থেকে তোমায় আমি বাবা হিসেবে দত্তক নিলাম। স্বপনবাবু এই আনন্দ মূহুর্তে না থাকতে পেরে বলে উঠলেন একজন সৎ নিষ্ঠাবান মাস্টারমশাই হিসেবে তিনি তার জীবনে একজনকে অন্তত মানুষের মতো মানুষ তৈরি করতে পেরেছেন এটাই তার পরম পাওয়া।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন