মদিরালয়
================
অলভ্য ঘোষ
================
"মদিরালয় যেতে ঘর থেকে চলতে শুরু করে যে মদ খায়।
কোন পথে যাবে সে জানে না।
এক একজন এক একটা পথের সন্ধান দেয় তাকে।
কিন্তু আমি বলছি তুমি একটা পথ ধরে হাঁটতে থাকো
মধুশালা ঠিক পেয়ে যাবে।
বছরে একদিন রঙের হোলি হয় বছরে একদিন বাজির মালায় দেওয়ালী হয়।
দুনিয়ার মানুষ মধুশালার দিকে দেখো সেখানে রোজ দিনে হোলি ও রাতে
দেওয়ালী চলে।
মুসলমান হিন্দু দুই জাত কিন্তু তাদের একটি পেয়ালা সেখানে
একি মদ একি মদিরালয়।
মন্দির মসজিদ ভেদ বাড়ায় সকল ভেদ দূর করে মিলন করায় মধুশালা।"
আভিধী উপভাষার প্রখ্যাত হিন্দি কবি ভারতীয় সুপারস্টার শ্রী অমিতাভ বচ্চন মহাশয়ের বাবা স্বর্গীয় হরিবংশ রাই বচ্চন এর ১৯৩৩ সালে রচিত ১৯৩৫ সালে প্রথম প্রকাশিত বিতর্কিত কাব্য গ্রন্থ "মধুশালা"র ১৩৫ টি পংক্তির মধ্য থেকে উপরের কয়েকটি পংক্তি বঙ্গানুবাদ করলে মোটামুটি এরকমটি দাঁড়ায়।জীবনে কোন দিন সুরা পান করেননি অথচ পানশালা নিয়েই তার কাব্য গ্রন্থ অনেকে অবাক হয়েছিল সে সময়।শ্রিভাস্তাভা কায়েতের ঘরে জন্ম হরিবংশ রাই বচ্চন মনে করতেন তার রক্তের প্রতিটি বিন্দুর ভেতর তার পূর্বজ দের পান করা মধু রয়েছে।কায়স্থদের মদ্যপানের জন্য এক সময় সমাজে বিশেষ দুর্নাম ছিল।
মধুশালা প্রকাশের পর কিছু রক্ষণশীল লোক রে রে করে উঠেছিলেন।যুব সমাজের মাথা চিবিয়ে খাবে।মহাত্মা-গান্ধী কবি কে ডাকেন ও তার কাব্য গ্রন্থ পড়ে শোনাতে বললেন।সব শুনে গান্ধী তার ভেতর খারাপ একটি লাইনও খুঁজে পান না। কবি ছাড়পত্র পান।যে গল্পটা বলবো বলে আজ লিখছি সেটি হল কবি বাবার সাথে শ্রী অমিতাভ বচ্চনের একটি বিশেষ মুহূর্ত থেকে উৎপন্ন একটি কবিতা। আমার জীবনে প্রায় সব লেখাই এভাবেই তৈরি হয় প্রেম করতে করতে, জীবন সংগ্রামের লড়াই লড়তে লড়তে, পথ হাঁটতে হাঁটতে, আঘাত পেতে পেতে, খিস্তি খেতে খেতে, শুনতে শুনতে, পড়তে পড়তে, ছুটতে ছুটতে, উঠতে বসতে; জোর করে কখনো আমি কিছু লিখনি।তাই একজন কবির জীবনের ঘাত প্রতিঘাত ওঠানামা প্রেম অপ্রেম কিছুই ফেলনা নয়।সব কিছুই যে তার উপাদান! কবির জীবন কবির দর্শন কবির প্রেম আর দশ জনের মত নয়।তাই যে গল্পটা বলবো বলে আজ লিখছি আমার বিশেষ ভাবে মনের এক কোনে জায়গা গেড়ে বসে আছে। তাই আপনাদের সাথে ভাগ করছি।
কবি বাবা বাড়িতে থাকলেই একা নিরালায় একটা ঘরে তার লেখার কাজে ব্যস্ত থাকেন সেখানে কারো প্রবেশ অধিকার নেই।ফলে অমিতাভের সাথে তার বাবা হরিবংশ রাই বচ্চনের মুখো মুখি কথা সাক্ষাতের সুযোগ কমছিল।কম মেলে মেশা হয়েছে।সে সময় মা বাবা রা মনে করত ছেলে মেয়ের গ্রাজুয়েট হওয়া একান্ত বাঞ্ছনীয় ।আর ছেলে মেয়েরাও আদাজল খেয়ে সে কাজে লেগে পড়তো।দিল্লি ইউনিভার্সিটি দিয়ে তিন চার বছরের চেষ্টায় অমিতাভ তখন কোনক্রমে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেছেন।কিন্তু কোথায় চাকরি?দরজায় দরজায় ঘুরে একটা চাকরিও জোগাড় করতে পারছেন না।একদিন বিপর্যস্ত বিধ্বস্ত কফি হাউসে বসে আছেন এক বন্ধু এসে বলল;
-"দোষ আমাদের নয় দোষ আমাদের বাবামার যারা আমাদের জন্ম দিয়েছেন।এটাই সমস্যা তারা যদি আমাদের জন্ম নাদিতেন আমাদের এই সমস্যার সম্মুখে পড়তে হতো না।"
অমিতাভের মনে হয় বন্ধুটি চূড়ান্ত সত্য কথা বলেছে।
জীবনের প্রথম এবং সেই একবারই অমিতাভ ভেতরে ভেতরে সাহস সঞ্চয় করে তার বাবার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।এর আগে কখনো বাবার সামনে উচু গলায় কথা বলেননি অমিত।তিনি বলেন;
-আজ আমি জানতে পেরেছি আমার কষ্টের কারণ কি! আপনি কেন আমাকে জন্ম দিয়েছিলেন।
বাবা হরিবংশ রাই বচ্চন চুপ করে থাকেন কোন উত্তর দেন না।ভোর চারটেয় উঠে তিনি রোজ প্রাত ভ্রমণে যেতেন আর আমিত কে জাগিয়ে দিয়ে যেতেন যাবার সময়।পরের দিন প্রাত ভ্রমণে বের হবার সময় একটা সাদা কাগজে কবিতা লিখে বিছানার ওপর রেখে যায় সে তার ছেলের উদ্দেশ্যে।কবিতাটির বঙ্গানুবাদ করলে এরকম দাঁড়াবে।
মধুশালা প্রকাশের পর কিছু রক্ষণশীল লোক রে রে করে উঠেছিলেন।যুব সমাজের মাথা চিবিয়ে খাবে।মহাত্মা-গান্ধী কবি কে ডাকেন ও তার কাব্য গ্রন্থ পড়ে শোনাতে বললেন।সব শুনে গান্ধী তার ভেতর খারাপ একটি লাইনও খুঁজে পান না। কবি ছাড়পত্র পান।যে গল্পটা বলবো বলে আজ লিখছি সেটি হল কবি বাবার সাথে শ্রী অমিতাভ বচ্চনের একটি বিশেষ মুহূর্ত থেকে উৎপন্ন একটি কবিতা। আমার জীবনে প্রায় সব লেখাই এভাবেই তৈরি হয় প্রেম করতে করতে, জীবন সংগ্রামের লড়াই লড়তে লড়তে, পথ হাঁটতে হাঁটতে, আঘাত পেতে পেতে, খিস্তি খেতে খেতে, শুনতে শুনতে, পড়তে পড়তে, ছুটতে ছুটতে, উঠতে বসতে; জোর করে কখনো আমি কিছু লিখনি।তাই একজন কবির জীবনের ঘাত প্রতিঘাত ওঠানামা প্রেম অপ্রেম কিছুই ফেলনা নয়।সব কিছুই যে তার উপাদান! কবির জীবন কবির দর্শন কবির প্রেম আর দশ জনের মত নয়।তাই যে গল্পটা বলবো বলে আজ লিখছি আমার বিশেষ ভাবে মনের এক কোনে জায়গা গেড়ে বসে আছে। তাই আপনাদের সাথে ভাগ করছি।
কবি বাবা বাড়িতে থাকলেই একা নিরালায় একটা ঘরে তার লেখার কাজে ব্যস্ত থাকেন সেখানে কারো প্রবেশ অধিকার নেই।ফলে অমিতাভের সাথে তার বাবা হরিবংশ রাই বচ্চনের মুখো মুখি কথা সাক্ষাতের সুযোগ কমছিল।কম মেলে মেশা হয়েছে।সে সময় মা বাবা রা মনে করত ছেলে মেয়ের গ্রাজুয়েট হওয়া একান্ত বাঞ্ছনীয় ।আর ছেলে মেয়েরাও আদাজল খেয়ে সে কাজে লেগে পড়তো।দিল্লি ইউনিভার্সিটি দিয়ে তিন চার বছরের চেষ্টায় অমিতাভ তখন কোনক্রমে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেছেন।কিন্তু কোথায় চাকরি?দরজায় দরজায় ঘুরে একটা চাকরিও জোগাড় করতে পারছেন না।একদিন বিপর্যস্ত বিধ্বস্ত কফি হাউসে বসে আছেন এক বন্ধু এসে বলল;
-"দোষ আমাদের নয় দোষ আমাদের বাবামার যারা আমাদের জন্ম দিয়েছেন।এটাই সমস্যা তারা যদি আমাদের জন্ম নাদিতেন আমাদের এই সমস্যার সম্মুখে পড়তে হতো না।"
অমিতাভের মনে হয় বন্ধুটি চূড়ান্ত সত্য কথা বলেছে।
জীবনের প্রথম এবং সেই একবারই অমিতাভ ভেতরে ভেতরে সাহস সঞ্চয় করে তার বাবার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।এর আগে কখনো বাবার সামনে উচু গলায় কথা বলেননি অমিত।তিনি বলেন;
-আজ আমি জানতে পেরেছি আমার কষ্টের কারণ কি! আপনি কেন আমাকে জন্ম দিয়েছিলেন।
বাবা হরিবংশ রাই বচ্চন চুপ করে থাকেন কোন উত্তর দেন না।ভোর চারটেয় উঠে তিনি রোজ প্রাত ভ্রমণে যেতেন আর আমিত কে জাগিয়ে দিয়ে যেতেন যাবার সময়।পরের দিন প্রাত ভ্রমণে বের হবার সময় একটা সাদা কাগজে কবিতা লিখে বিছানার ওপর রেখে যায় সে তার ছেলের উদ্দেশ্যে।কবিতাটির বঙ্গানুবাদ করলে এরকম দাঁড়াবে।
"জীবন ও সময়ের সাথে সংঘর্ষ করতে গিয়ে
ভয় পেয়ে আমার ছেলে আমায় প্রশ্ন করছে;
-কেনও আমায় জন্ম দিয়ে ছিলে!
আর আমার কাছেও এই প্রশ্নের কোনও জবাব নেই;
আমার বাবাও কেনও আমাকে জিজ্ঞেস না করে আমায়
জন্ম দিয়েছিল।
আর আমার বাবা কে বিনা অনুমতিতে তার বাবা ;ও তার বাবা
কে বিনা অনুমতিতে তার বাবাও কেনও জন্ম দিয়ে ছিল।
জীবন ও সময়ের সাথে সংঘর্ষ সেদিনও ছিল আজও আছে
হয়তো বেশি। ভবিষ্যতেও থাকবে হয়তো আরও বেশি।
তুমি মনে রেখো তোমার সন্তান কে তুমি তার অনুমতি নিয়ে জন্ম দিয়।"
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন