অন্যমনে সাহিত্য. অন্য রকম দৃষ্টিকোন থেকে দেখা একটি প্রতিবিম্ব ভাবনা .. অন্যমনে সাহিত্য.

সোমবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

অণুগল্পে প্রতীক



খোঁজ
===============
প্রতীক মিত্র
===============


অন্তরা সেনকে কেউ চেনেন?অন্তরা সেন?কোন্নগর শহরে বেশ ক’দিন ধরেই খোঁজ চলছে এই অন্তরা সেনের।বলাই বাহুল্য, খোঁজ মেলেনি।হয়তো মিলবেও না কেননা অন্তরা বেশ ক’দিন হল এই শহর ছেড়ে চলে গেছে অন্যত্র।ভুলটা ফোটোগ্রাফারেরও নয়।সে তো উলটে বিনিময়ে পয়সা দিতেই চেয়েছিল।অন্তরাই অপমান করে সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে।অবীন রায় ফ্রিল্যান্স ফোটোগ্রাফিতে হাত পাকিয়েছে।কোন্নগরে কোনো এক আত্মীয়র বাড়িতে এসে ছবি তুলেছিল নদীর সূর্যাস্তের।সেখানেরই কোনো একটা ছবি ছিল অন্তরারও।অন্তরাকে সে চেনে না।অন্তরারও অবীনকে চেনার কোনো কারণ নেই।ছবিটাও এমন আহামরি কিছু ছিল না।গঙ্গার ঘাটে দাঁড়িয়ে অন্তরা হাসছে।ব্যস!অবীনকে যে যেমন চায় ও তেমন ছবি দিয়ে দেয় পয়সার বিনিময়ে।অন্তরার ছবিটাও ছিল তার মধ্যে।কয়েক মাস পরে কোন্নগরেই একটা বড় হোর্ডিংএ মেয়েদের কোনো অন্তর্বাসের বিজ্ঞাপনে অন্তরার ছবিটা ব্যবহৃত হয়।ছবিতে এমন কিছু অশ্লীল ছিলও না। অন্তরা শাড়ি পড়ে ঘাটে দাঁড়িয়ে হাসছে।সমস্যা ছিল নিচে লেখাটা নিয়ে। ‘অমুক অন্তর্বাসের চেয়ে আরামদায়ক আর কিছু নয়।‘ গন্ডগোলটা বাধে ক’দিন পর যখন অন্তরার পরিচিতরা তাকে বিষয়টা জানায়।অস্বস্তি বাড়তে থাকে।সেটা কানে পৌঁছোয় এমনকি অবীনেরও যেহেতু অবীনের পরিচিতরাও অন্তরাকে কেউ কেউ চিনতো।নিপাট ভালো মেয়ে।কাজের সুত্রে এখানে এসেছিল।এখানে একাই থাকে।অবীন ফোনে পেলে সাক্ষাৎ করতে চায়।অন্তরা অবীনের কার্যকলাপ জানতে পেরে রাগে অপমানে ফেটে পড়ে।সে তার ছোট্ট এক কামরার ফ্ল্যাট থেকে তৎক্ষণাৎ অবীনকে বেড়িয়ে যেতে বলে। অবীন শেষমেশ ক্ষতিপুরণের কথা বলে ওর কার্ডটা দরজার তলা দিয়ে অন্তরার ঘরের মেঝেতে ফেলে চলে যায়।তারপর ক্রমেই বিষয়টা থিতু হয়ে যায়।যদিও অন্তরা বুঝতে পারে লোকে ওকে অন্য চোখে দেখতে থাকে, মাপতে থাকে যদিও তাতে অন্তরার কি দোষ অন্তরা বুঝে উঠতে পারে না।অন্তরা শেষমেশ সিদ্ধান্ত নিয়েই ফ্যালে।গ্রামের বাড়িতে সে ফিরে যায়।সেখানে তার শৈশবের বান্ধবীদের মুখেও সেই বিজ্ঞাপনের কথা শুনে সে সম্পূর্ণভাবে ভেঙেই পড়ে।বান্ধবীরা তাকে নৈতিক সমর্থন দিয়ে বলে ওর ক্ষতিপূরণ চাওয়ার মধ্যে কোনো অপরাধ নেই।শুধু শহরতলী নয়, মহানগরীতেও এই বিজ্ঞাপন ছেয়ে গ্যাছে।আজ যদি ওরা সেই বিজ্ঞাপন দেখে থাকে কাল সেটা অন্যরাও দেখবে।ফলে...ফলে কি তারপর কি তারপর কি হতে পারে সেটা অন্তরাও বুঝে উঠতে পারে না।তবে, বান্ধবীদের সাথে শলাপরামর্শের পরই অবীনের কাছে ফোন যায়।ফোন অন্তরার কোনো এক বান্ধবী করে।অবীন প্রথমে একটু অবাক হলেও পরে ব্যাপারটা হজম করে নেয়। তবে সব মিলিয়ে অবীন খুশিই হয়।একটা পাপবোধ ওকেও আঘাত করে যাচ্ছিল টানা।অন্তরারও হাসিমাখা মুখটা ও আর একবার দ্যাখে।অন্তরা কি ওকে ক্ষমা করবে? ওই অন্তর্বাসের কোম্পানিতে ও ফোন করেছিল।ওরা বোর্ডে সিদ্ধান্ত নিয়ে শীঘ্রই জানাবে।ক’টা দিন কাটে।কোম্পানী রাজী হয়না।ফাঁসে অবীন।টাকা যাবে ওর পকেট থেকে।সেটা কত ওর কোনো আইডিয়া নেই।এদিকে অন্তরা আইনী সহায়তা নেবে হয়তো।খবর ছড়ায় দাবানলের মতন।মিডিয়ার দৌড়াদৌড়ি শুরু হয় কোন্নগরে।সবাই খোঁজ শুরু করে অন্তরা সেনের যে অন্তর্বাসের কোম্পানিতে ছবি তোলানোর জন্য ক্ষতিপূরণ চেয়েছে।কিন্তু কেউ ওর খোঁজ পায়না।আইনী পথগুলো ওর বান্ধবীরা দেখছে।অন্তরা বেপাত্তা।পুরোপুরি।ওর খোঁজ যদিও চলছে মিডিয়ায়, সোশাল মিডিয়ায়... পুরোদমে।















কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন