মাঝে মাঝে মনে হয় পৃথিবীটা একটা পন্য, বাজারের সমস্ত জিনিসের মতোই পৃথিবীর বস্তুগত ও অবস্তুগত উপাদান আজ দেদার বেচাকেনা হয় । বস্তুগত উপাদান তো বেচাকেনা হবেই, কারণ তা থেকে মানুষ জীবনধারণের উপাদান গুলো সংগ্ৰহ করে, কিন্তু যদি বলি অবস্তুগত উপাদান যেমন স্নেহ, মায়া - মমতা ,ভালবাসা ,আদর্শ ও মূল্যবোধ ইত্যাদি বেচাকেনা হয় তাহলে শুনতে অবাক লাগে! অনেকেই বলবেন এগুলো কি বাজারে তোলা যায়? আমি বলি হাঁ আজকাল বাজারে এগুলো দেদার বেচাকেনা হচ্ছে! শুধু তাই নয় ইদানিং আতঙ্ক ও বাজারে মুড়ি-মুড়কির মতো বেচাকেনা হচ্ছে! চাহিদাও যথেষ্ট ভালো! একটু গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলেই ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে ওঠে।
উল্লেখ করা যেতে পারে যে পৃথিবী গড়ে উঠেছে বস্তুগত এবং অবস্তুগত সম্পদের উপর নির্ভর করে, সেই প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ বস্তুগত সংস্কৃতির অন্বেষণ করছে জীবনধারণের জন্য, তখন অবশ্য প্রাকৃতিক সম্পদ পন্য হয়নি, বনচারী মানুষ তাদের জীবনধারণের জন্য এগুলি সংগ্রহ করত, এবং তা সংগ্রহ করার জন্য একে অপরের ওপর নির্ভর করত, শুধু তাই নয় জীবনধারণের প্রয়োজনে তারা জোট বেঁধেছিল। তারা বুঝতে পেরেছিল একাকী বেঁচে থাকা যায় না, জোটবদ্ধতার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে গড়ে তুলেছিল সমাজ, সমাজকে ঘিরে গড়ে ওঠে বস্তুগত এবং অবস্তুগত সংস্কৃতি। তারপর মানুষ ধীরে ধীরে একটা স্থায়ী আস্তানা গড়তে থাকে, শুরু হয় কৃষি পদ্ধতির আবিষ্কার, কৃষি কে কেন্দ্র করে ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে কুটির শিল্প, একে অপরের সহযোগিতায়, গ্রামজীবনের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের জন্য কাঁধে কাঁধ দিয়ে লড়াই করেছে, তখন অবশ্য বস্তুগত এবং অবস্তুগত সংস্কৃতি ওপর সকলের সমান অধিকার ছিল ।
এরপর সমাজ-সংস্কৃতির প্রসার ঘটেছে, জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে আইন-শৃঙ্খলার ও বিঘ্ন ঘটেছে, মানুষ রাষ্ট্রগঠনের কথা চিন্তা করেছে, সমাজ প্রাগৈতিহাসিক থেকে প্রায় ঐতিহাসিক হয়ে ঐতিহাসিক যুগের অবতীর্ণ হয়েছে, সমাজ বিবর্তনের সাথে সাথে মানুষের জ্ঞানের বিকাশ ঘটেছে, দেব তাত্ত্বিক সমাজ থেকে অধিবিদ্যক সমাজ হয়ে আধুনিক শিল্পভিত্তিক সমাজের রূপান্তর ঘটেছে, সমর ভিত্তিক সমাজ থেকে আইন নির্ভর সমাজ হয়ে পুঁজিবাদী সমাজের উত্তরণ ঘটেছে, আর এই পুঁজিবাদী সমাজেই বস্তুগত সংস্কৃতির সাথে সাথে অবস্তুগত সংস্কৃতি ও পন্য হতে শুরু করে।
উল্লেখ করা যেতে পারে যে পৃথিবী গড়ে উঠেছে বস্তুগত এবং অবস্তুগত সম্পদের উপর নির্ভর করে, সেই প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ বস্তুগত সংস্কৃতির অন্বেষণ করছে জীবনধারণের জন্য, তখন অবশ্য প্রাকৃতিক সম্পদ পন্য হয়নি, বনচারী মানুষ তাদের জীবনধারণের জন্য এগুলি সংগ্রহ করত, এবং তা সংগ্রহ করার জন্য একে অপরের ওপর নির্ভর করত, শুধু তাই নয় জীবনধারণের প্রয়োজনে তারা জোট বেঁধেছিল। তারা বুঝতে পেরেছিল একাকী বেঁচে থাকা যায় না, জোটবদ্ধতার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে গড়ে তুলেছিল সমাজ, সমাজকে ঘিরে গড়ে ওঠে বস্তুগত এবং অবস্তুগত সংস্কৃতি। তারপর মানুষ ধীরে ধীরে একটা স্থায়ী আস্তানা গড়তে থাকে, শুরু হয় কৃষি পদ্ধতির আবিষ্কার, কৃষি কে কেন্দ্র করে ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে কুটির শিল্প, একে অপরের সহযোগিতায়, গ্রামজীবনের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের জন্য কাঁধে কাঁধ দিয়ে লড়াই করেছে, তখন অবশ্য বস্তুগত এবং অবস্তুগত সংস্কৃতি ওপর সকলের সমান অধিকার ছিল ।
এরপর সমাজ-সংস্কৃতির প্রসার ঘটেছে, জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে আইন-শৃঙ্খলার ও বিঘ্ন ঘটেছে, মানুষ রাষ্ট্রগঠনের কথা চিন্তা করেছে, সমাজ প্রাগৈতিহাসিক থেকে প্রায় ঐতিহাসিক হয়ে ঐতিহাসিক যুগের অবতীর্ণ হয়েছে, সমাজ বিবর্তনের সাথে সাথে মানুষের জ্ঞানের বিকাশ ঘটেছে, দেব তাত্ত্বিক সমাজ থেকে অধিবিদ্যক সমাজ হয়ে আধুনিক শিল্পভিত্তিক সমাজের রূপান্তর ঘটেছে, সমর ভিত্তিক সমাজ থেকে আইন নির্ভর সমাজ হয়ে পুঁজিবাদী সমাজের উত্তরণ ঘটেছে, আর এই পুঁজিবাদী সমাজেই বস্তুগত সংস্কৃতির সাথে সাথে অবস্তুগত সংস্কৃতি ও পন্য হতে শুরু করে।
এককথায় শিল্প বিপ্লবের পরবর্তীকালে গোটা দুনিয়া জুড়ে সমাজ ব্যবস্থায় পরিবর্তন ঘটে। অষ্টাদশ শতকের শেষভাগ থেকে অর্থাৎ ফরাসি বিপ্লবে পরবর্তীকালে সমাজের কাঠামোগত এবং কার্যগত পরিবর্তন দেখা যায়, গোটা দুনিয়ায় পুঁজিবাদী শ্রেণীর উত্থান ঘটে! এই পুঁজিবাদী শ্রেণীর হাত ধরে উপনিবেশের জোয়ার আসে, গ্রাম্য জীবনের চরিত্রে বদল ঘটতে থাকে । কৃষির বাণিজ্যিকীকরণ শুরু হয়, গ্রাম্য জীবনের সম্পদ উৎপাদন কেন্দ্র করে প্রতিযোগিতা শুরু হয়, জোতদার, মহাজন শ্রেনীর আবির্ভাব ঘটে, ব্যবসা বাণিজ্য কে কেন্দ্র করে নগরায়ন শুরু হয়, গ্রাম্য জীবনের সমাজ কাঠামোর পরিবর্তন ঘটে, যৌথ পরিবার ব্যবস্থা ভাঙতে শুরু করে, পরিবার তথা সমাজের যে একাত্মতা, সংহতি ছিল তাও নষ্ট হতে শুরু করে।
বিংশ শতকের শুরু থেকেই দুনিয়াজুড়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়তে থাকে, বাজার দখলকে কেন্দ্র করে শুরু হয় উপনিবেশের লড়াই, দু-দুটো বিশ্বযুদ্ধকে এরই ফলশ্রুতি হিসেবে ধরা যেতে পারে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে সমাজ-সংস্কৃতির আঙিনায় দ্রুত পরিবর্তন ঘটাতে থাকে, সমাজে শুরু হয় প্রতিযোগিতা! ঠান্ডা যুদ্ধের আবর্তে বিশ্বে মেরুকরণ বাড়তে থাকে ,সেই প্রতিযোগিতার ছোঁয়া সমাজজীবনে পড়তে থাকে, সংস্কৃতির বিলম্বন শুরু হয়! বস্তুগত সংস্কৃতি অবস্তুগত সংস্কৃতি কে পিছনে ফেলে দৌড়াতে থাকে, ফলে সমাজ থেকে দ্রুত ন্যায় -নীতি মূল্যবোধ হঠতে থাকে, যে অবস্তুগত সংস্কৃতি একদিন সমাজ জীবনকে সংহতি দান করেছিল ত পন্য হতে শুরু করে, মায়া-মমতা, প্রেম প্রীতি ভালোবাসা, ধর্ম ,মূল্যবোধ, আদর্শ সবকিছু বিক্রয় যোগ্য পণ্য হিসেবে বাজারে ঘোরাঘুরি করতে থাকে! বিংশ শতকের শেষের দিকে গোটা বিশ্ব বিশ্বায়নের ছাতার তলায় আসে, শুরু হয় অবাধ বাণিজ্য! গোটা বিশ্ব হয়ে ওঠে পন্য! মানুষের মনোজগতের পরিবর্তন ঘটতে থাকে, মানুষ রাতারাতি ধনী হতে চায়, সমাজে চলতে তার প্রতিযোগিতা! এই প্রতিযোগিতার জেরে সমাজে বাড়তে থাকে দুর্নীতি! ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল এর রিপোর্ট অনুযায়ী বিশ্বায়নের পরবর্তীকালে দুর্নীতির হার অনেক বেড়েছে! আর এই রাতারাতি ধনী হওয়ার তাগিদে মানুষ ন্যায়- নীতি মূল্যবোধ, আদর্শ বিবেক সব বিক্রি করে ফেলছে, অতি সম্প্রতি বাজারে আতঙ্ক ও বিক্রি হচ্ছে, গোটা পৃথিবীকে আতঙ্কগ্রস্ত রেখে চলছে ব্যবসা! সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী বিশ্বের বড় বড় ধ্বনি সম্প্রদায় আরো ধনী হয়েছে, তারা মূলধন পাঁচ থেকে ছয় গুণ বাড়িয়ে ফেলেছে! আর গরীব আরো গরীব হয়েছে! পৃথিবী হয়ে উঠেছে পণ্য! এখন বাজারে সবকিছুই কেনাবেচা হয়! সমাজ দার্শনিকদের ধারণা আগামী শতাব্দীতে ন্যায়- নীতি মূল্যবোধ ও আদর্শ কিছুই আর বেঁচে থাকবে না, সবকিছু হারিয়ে মানুষ হয়ে যাবে রোবট জানোয়ার!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন