অন্যমনে সাহিত্য. অন্য রকম দৃষ্টিকোন থেকে দেখা একটি প্রতিবিম্ব ভাবনা .. অন্যমনে সাহিত্য.

বৃহস্পতিবার, ১২ আগস্ট, ২০২১

গুচ্ছকবিতায় চিরঞ্জীব হালদার

  

 

বিদা
==================


বিদ্যালয়ের ছায়া ছোট হয়ে এলে ঘর্মাক্ত পুরুষের

পোঁটলায় স্বরবর্ণ ডেকে ওঠে।



আদিম স্বপ্নের কালপুরুষ

অসংখ্য সময়রেণু জড়ো করে মেপে নিচ্ছেন হাটখোলার কিশোরী মেয়েটা কেন

মূর্চ্ছার মধ্য হ্যমলীনের ধারাবিবরণী পটু।



আজকাল অনেকে কোকিল মাতার মত।

আমরা ভুলে গেছি বাইল্যশিক্ষার ভেতর

তালপানসী ও বীজের অর্ন্তকথন।



পরলোকগত ভাসুরের কথা মনে করে

তালগাছ দেখলেই বড়দি ঘোমটায় মুখ ঢেকে

ফোঁপাতে থাকে।



দেখুন পাঠক, দেখুন

বিদ্যালয় কেমন দাদির অবৈতনিক সিন্দুকে কোন তালাচাবি ছাড়াই অনন্ত বন্দীত্বকে

আলবিদা জানাতে ভুলে গেছে।



শূন্য
==================

মুঠো খুলতেই যে উড়ে গেলো তার নাম শূন্য।



দিন পঞ্জিকার দিক থেকে এক শূন্য উড়াল

দিলে হেসে ওঠে প্রেক্ষাগৃহ।



নদীটার নাম ভব।

কোন জল নেই।

সব মাছেরা প্রনয়ের সময় শূন্যর কেন্দ্রবিন্দুতে।



এই যে ঘুরনপাখা

অবয়বহীন হাওয়ার অন্য নাম ক্ষেত্রপালিকা।

যে আয়রনী যুদ্ধের মধ্য এই বাঁচন

তার করোটি ঠাসা শূন্যের পরাগ।

মিলনের আগে পালিকা দেখে নিচ্ছেন

পরিধি আর দেহবল্লভের মধ্য কোন

বাসরবকুল ডেকে ওঠে কিনা।








সারস
==================

এক বেহিসাবি সারস তার ক্ষুদ্র বন্ধুত্বের গোলাপগুলো ডানায় জমিয়ে রেখে ঘুমিয়ে পড়ে।



গাঢ়ো ঘুমে স্বপ্ন দেখে কোনও এক নৃপতির অগভীর ডাক ও আমিষ বুনন।



কোথাও আত্মহত্যার ঢোল বাজে।

কোথাও ডানায় জমে ওঠা মেয়ের চাপা কান্না গুলো বৃষ্টি হয়ে ঝড়ে পড়ে।



সারস জন্মের থেকে সারস তৃষ্ণা খুটে নিলে

দিগন্ত রচিত হয়।





নিষিদ্ধতান্ত্রিক
==================

কে ভেজালো।

কে শুকালো

ঈশ্বরী না এলিয়েন।

তার খেলনার জৈব পরিস্ংখ্যান আজ ও জানা যায়নি।

তেমন জানা যায়নি কেন মুখেভাত আর বিবাহ

একইদিনে।

কেন ভরা অমাবস্যায় কোন কোন পুরুষ

এলিয়েন ভাষী।



কোন কোন ঈশ্বরী কোন পূর্ব পরিকল্পনা ছাড়াই

বদ্ধপাগলী।

সর্বসমক্ষ্য তার জন্মসাল জিজ্ঞেস করলে

রানিপ্রজাপতি নোনা বর্ষা ডাকলে দোষ দিওনা বাপু।



তার নিবিষ্ট প্রেমিক সেই কবে থেকে নিরুদ্দেশ।

হে জনজাতিকা কৃপা করুন।



দলবদল
==================

আজকাল আরামকেদারাও দেখি

ছায়াদের কাছে বায়না জুড়ে দেয়

নাগরদোলার সাথে দেখা করে দলবদল করবে।



ধরে নিন সেই দিনটা নবকাকার জন্ম দিন।

এই সব অপাংক্তেয় সম্পর্ক

যা নিতান্তই ফাটা কাঁচের মত।



জোড়া লাগলেই লুকানো চিঠির রক্তাক্ত অক্ষর থেকে

নেমে আসবেন অলৌকিক হিপোপটেমাস।



তিনি কেদারায় বসামাত্র

যুগলমানবী তার ক্ষেত্রফল নিয়ে

দরবার করবেন রানী পিঁপড়ের সাথে।



পাঠক আপনি কোন দলে।

আর ভাবতে থাকুন

মৃত্যু এক অস্থাবর সম্পর্ক।







চাহাৎ
==================

অনিবার্য দার্শনিক উপসংহার নিয়ে বিকেল ঘন হয়ে এলো।



আমাদের ফলপ্রসূ ঋতু গাছে তখনো পাখিরা ফিরে আসেনি।

কে যেন বলে উঠলো আর এক দান হয়ে যাক।



আমার পোঁটলায় তখনও হাড় থেকে মাংসের গন্ধ মোছেনি।

নাছোড় স্মৃতির পাশে তন্ময় দিনগুলো ডানা ঝাপটায়।

কাকে বলি আমার খিদে পেয়েছে l

কাকে বলি ছায়াদেরও কিছু স্বপ্ন থাকে।



অনধর পোটলাকে বলি এসো

ঘুম থেকে জাগানোর মন্ত্র শিখিয়ে দিই।

হাড় ও পাখিদের গ্ৰামে মৃত মন্বন্তর

দেখো গোলাপের ফিরিওলা।









কর্ম
==================

কোন ঘোড়সওয়ার ছাড়াই

নীল প্রান্তরচিরে দৌড়ে যায় চতুস্পদ।



ঝুঁকে নেমে আসা মোমফালি মেঘ

কিছু পরামর্শ সেরে নিচ্ছে।

আর ফুলেদের রক্তক্ষরন

না জানার ভান করে হেসে ওঠা রোদ্দুর কে বলেছি

বড়ুয়াদের মেয়েটাকে একটু ক্লোরোফিল

ধার দিতে পার।



ততক্ষনে আমার নিলামপটু বান্ধবের সাথে

নিষিদ্ধ হরফের হিল্লে সেরে ফেলি।





ইজাজত
==================

আজ সকালের ইজাজত নদী।



দুই বাঁকে রুপসী ময়ূরপঙ্খী বক।

তার হৃদয়ের দুই দিকে

লম্বা ঠোঁট আর দীর্ঘ পদযুগল।



ভাসো মনোনিবেশ

ঘাস ও বীজের মনোকণা।

দাগ লাগা সাদা পোশাক ও নাবিকের

প্রত্ম বিবেক।

অঘটন পটীয়সী ধ্রুবক ঈর্ষাসহচরী।



মেহনতী জল তাকে আজ আতিথ্যে ডেকেছে।







স্বর ও লিপি
==================

যেন কৃষ্ণ কাজু নক্ষত্র

ফুটে আছে।

এক নিবিড় গলদেশে।



এ কোন ম্লান রশ্মিকথন নয়।

চিরাচরিত পরিতাপ আর বিধুর

গোপন কলা থেকে নেমে আসা অলীক সরিসৃপের

স্বপ্নীল পদচারনা দিয়ে সে কদমপথিক।



যে কাগজেই ঠিকানা লিখি না কেন

প্লুত ভাষ্কর্যের রতিকুমকুমের সংলাপ

মনে হয়।



ভিতরের রেড়ালটা ক্রমাগত ঠকে যায়

কোন এক অরক্ষনীয়ার সন্ধানে।





শব্দ
==================

শবফুল তুমি কিছু বলো।



পরাগ ও চেতনার মাঝে

জেগে থাকা সময়।

মৃত্যুর ভিতর জেগে থাকা

গোধূলি।

গোধূলির ভেতর জেগে থাকা আলোর উত্তরাধিকার।



আশ্চর্য মৃত্যু

কথা বলো।

কথা বলো রহস্যবিধুর।

গন্তব্য বলে কিছু হয়না।

এই যে হেমন্তের শ্মশান

সময়ের খুলিতে শৈশব ঢেলে

এক একটি জনপদে

পদব্রজ ভরিয়ে দিচ্ছে।



কবিতাই তার শব্দ রেনু।





ঠিকানা
==================

এই গ্ৰামের নাম কোলাহল।



সারি সারি কলা বাগান আর আমন দোলন দিয়ে

কাঙাল হরিনাথ গড়ে নিচ্ছেন মেধাকথন।



তোমাকে চিঠি লেখে সরপুঁটি।

সাইকেলে বাতাস ভরে দেয় হুতোম বাগদি।

তোমার হারিয়ে যাওয়া পোঁটলা ফিরিয়ে হারান ফকির জন্মের সানাই।



মিতু বাগদি তার ছেলের নাম রেখেছিল

কোহল বরন সমাদ্দার



এমন দেদার আমন্ত্রনের পর

আমাদের গৃহকোণ উৎসারিত ভ্রম আর অবিভাজ্য

মোহে মূহ্যমান।

বলুন আমার কি করনীয়।

হে প্রগাঢ় গনসভ্যতা আপনার সভ্য সেমিজ থেকে তুয়া পাখির উড়াল মনে রাখবনা বলেই

আমাদের মিথ্যে কনসার্টের ভেতর বদল করে ফেলেছি পোষাক আর

শরৎ মেঘের ঠিকানা।







অপার্থিব
==================

এটি একশো অক্ষর সম্বলিত অব্যবসায়িক খুচরো ধর্মপদ।

এখানে আঁশগন্ধী টোনাটুনির ঘটিত কোন বিরাম চিহ্নের চ-ও পাবেন না।

না পাবেন পানিনির বিশ্রাম কক্ষের খুঁতখুঁতে

স্ত্রী পাহারাদার।

আপনি যেমন খুশি পর্ব ভাগ করুন কিন্তু চারের অধিক হলে কপালে শনি আছে।

এখানে খোলাখুলি যৌনতার দালালদের

মনোবেদনা সম্বলিত অধার্মিক ভাবনাকে

প্রশ্রয় দেওয়া যেতে পারে।



তাপমাত্রা মডারেট লেবেলে ছাড়িয়ে একশো

হলেও মাথায় তারকাঁটা ঢোকানো চলবেনা।

দেখবেন সুপক্ক আতা বীজের ঘুমে রাতের ব্যাঘাত না ঘটে সেদিকে প্রভুত নজর অটুট রাখবেন।

সব ছাড়া যেতে পারে তবে আঁচলের খুঁটে অবস্থিত ভাগ্যাহত শব্দের খয়রাতির ব্যবস্থা যেনো বর্তমান থাকে।

দেখি আপনার এলেমদারী আর হকের মধ্যে কোন করুণার বিকাশ ঘটিতেছে কিনা তার নজরদারী এখন থেকে শুরু হল।






দর্পন
==================

প্রথাগত অবিবাহিত দর্পন।

যে শুধু নির্মিত ভালবাসার থেকে

অন্ধকার বের করে এনে

মর্গের ডোমকে গোলাপের ভবিতব্য জানাতে

সফল।



তাঁর মুঠোয় কয়েক শো বাবুইয়ের কিচির মিচির।

বাতিকগ্ৰস্ত দারোগার ভিতু ছায়াপথের হারিয়ে যাওয়া পুঁথির অস্পষ্ট আন্দোলিত পৃষ্ঠা।

মেঠো পথে যে বিছিয়ে দিতে পারে

গোটা শরৎ জুড়ে পারিজাতের

নিভৃত স্বপ্নের কোলাজ।



ভেঙে যাওয়া দর্পন থেকে জন্ম নেওয়া

অগনিত জন্মদিন আমাকে চিঠি লেখে।

যেখানে নিবেদন আর গ্ৰহীতার মধ্য বাজতে থাকে

বৃহস্পতিবারের বিকেল ।





পাঠ
==================
প্রাতরাসের টেবিলে

মৃতকে পরিবেশন করলেন।





মৃতের সাথে সংলাপে দক্ষ দুজন।

একজন বামে দক্ষ।

আর একজন তপ্ত লোহার থেকে

তুলে আনা দ্রাক্ষা বিশারদ।



অধিচেতনা থেকে উঠে আসা

অসফল জিরাফ চেতনার পাশে

অলৌকিক শালমুড়ি দিয়ে বসে থাকা শীতকাল

এখন জোরে জোরে

পড়তে বসেছে।



তিনি কি নিরুদ্দিষ্টের

রোজনামচা পড়ছিলেন।





মন
==================

হাওয়া আঁশগন্ধী হয়েছিল কিনা

কে বলে দেবে।



ওহে রূপসী পাদুকা।

তুমি আজকাল পাখি হয়ে যাও।

ঘাই দাও শীতার্ত মাটিতে।



মাটির হৃদয় থেকে যে আপেল ঝরে

তার নশ্বর দেহে কোনো এক দাঁতের কোলাহল ।



এখন শরৎকাল ।

নদী ভীষণ আনমনা।







শূন্য
==================

করুনার পর কোনও শূন্যস্থান বসাও।

ভালোবাসার পর শূন্যস্থান বসাও।



জীবনানন্দ কোনদিন জিজ্ঞেস করবেন না সূর্যমুখী এত হলুদ কেন।



কাতূকুতু প্রিয় দৈবাঙ্গানা।

সে কেন নাভিপাখির পালকে ঢেকে রাখে

সারা শীতকাল।



সব শূন্যেরা ইচ্ছামৃত্যু দাবী করলে

তৃষ্ণার্ত পাখিরা ঘরে ফিরতে ভুলে যায়।



জীবনানন্দের এংলো সুইস রিস্টওয়াচের দুটো

কাঁটাই সেই থেকে বারোটার ঘরে থেমে আছে।

 

 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন