ভয় শব্দটার সাথে মনুষ্য জাতি বোধ শক্তি হওয়ার পর থেকেই পরিচিত হয়ে ওঠে। ভয়ের অভিধানিক অর্থ হলো ভীতি, শঙ্কা, ডর, ভীবিত,গ্রাস। ভয়ের সংজ্ঞা বলতে গেলে মনের শঙ্কিত অবস্থা কে যেমন তুলে ধরে তেমনি যদি উদাহরণ দিয়ে বোঝাতে যাই তবে বলতে হয় আমি খুব রাগী বলা যায়, আমি খুব সাহসী বলা যায় কিন্তু আমি ভীতু বললেই কেমন যেনো দূর্বলতা প্রকাশ পায়। কিন্তু জীবনে কোনোদিন ভয় পায়নি এমন কোনো মানুষ পৃথিবীতে আছে কি? বোধ হয় নেই, কারণ ভয় একটা স্বাভাবিক অনুভূতি যা সকলের মধ্যে থাকে। মানুষ যেমন আনন্দ পায়,দুঃখ পায় তেমন ভয়ও পায়। শুধু মানুষই নয় পশু পাখিরাও ভয় পায়। এটি শরীরে একটি সুরক্ষা পদ্ধতি যা প্রাণীকে বিপদের হাত থেকে রক্ষা করে তাই একটু ভয় পাওয়া মন্দ নয় মোটেই বরং ভালো জিনিস। আদিম যুগে মানুষেরা বন্য পশুদেরকে ভয় পেতো বলেই আজো বেঁচে আছে। কারণ তাদের ভয়গুলোয় ওই প্রাণীগুলোর হাত থেকে বাঁচার উপায় বের করেছে। মানুষ হয় পালিয়েছে নয় লড়েছে তাদের সাথে। লক্ষ লক্ষ বছরের অভিযোজনের ফলে আজ মানুষ এই জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে। সাধারণ ভাবে চিন্তা করলে আমরা দেখি মানুষ আগুন, উচ্চতা, অন্ধকার কে ভয় পায় কিন্তু ফুল বা বাচ্চাকে পায় না। কারণ লক্ষ লক্ষ বছর ধরে প্রকৃতির বিপদের সাথে লড়তে লড়তে মানুষের এই ধারণাটা অভিযোজিত হয়ে গেছে যে সে কি থেকে নিরাপদ আর কোথা থেকে বিপদ হতে পারে। উঁচু জায়গা থেকে পড়লে বা আগুনে পুড়লে যে সে মরে যেতে পারে সেটা তাকে নতুন করে শেখানোর প্রয়োজন নেই। বিপদ আসতে পারে এমন জিনিস থেকে ভয় পায়, আবার অচেনা অজানা জিনিস সেই থেকেও ভয় পায়। অনেকের অন্ধকার কে ভয় লাগে কিন্তু তৎক্ষণাৎ সেখানে আলো জ্বালালে ভয় দূর হয়ে যায়, কারণ আলো জ্বালানোর পর সেখানের জিনিস আর অজানা থাকে না দৃষ্টিগোচর হয়। যেমন চাকরি চলে যাওয়ার ভয় অজানা ভবিষ্যতের কথা ভেবে, যদি আগেই জানা থাকতো অন্য নিশ্চিত আয়ের মাধ্যম তবে সেই ভয় কাজ করতো না। ঠিক তেমনি শিশুরা স্কুলে যেতে ভয় পায়, পরীক্ষার আগে কেমন প্রশ্নপত্র আসবে তার ভয়, রেজাল্ট বেরোনোর আগেও ভয় কাজ করে, কোনো বিষয়ের প্রতি ভয় যেমন অঙ্ক বা পদার্থ বিদ্যা। কিন্তু এর মধ্যে ব্যতিক্রম যেটা জানে সেটা নিয়ে ভয় তা হলো মৃত্যু ভয়। "জন্মিলে মরিতে হবে অমর কে কোথা কবে" মৃত্যু হল আমাদের জীবনের কঠিন সত্য, তবুও এই ভয় থেকে আমাদের নিস্তার নেই। আসলে আমরা মৃত্যু কি সেটা জানিনা, মৃত্যুর সময় কতটা কষ্ট হয় প্রাণ বেরিয়ে গেলে সে বিষয়ে অবগত নই। মৃত্যুর পরে পৃথিবীতে থাকা তার প্রিয়জন কেমন থাকবে সেই একটা ভীতিও কাজ করে। ভয় এমন একটি পীড়াদায়ক অনুভূতি যা যন্ত্রণা, বিপদ ও মন্দ অভিজ্ঞতা থেকে সৃষ্টি হয়। ভয় দুই ধরনের একটি সত্যি বিপদের আশঙ্কা থেকে, দুই কল্পিত বিপদের আশঙ্কা থেকে ভয় যার থেকে বিপদের আশঙ্কা থাকে না। কিছু যুক্তিগত ব্যাখ্যা ছাড়াই ভয় যেমন ভূতের ভয়। অনেক অযৌক্তিক ভয়ের শিকড় অনেক গভীরে প্রবেশ করে এবং নির্দিষ্ট বিষয়ে কেন্দ্রীভূত হয় এগুলো কে ফোবিয়া বলে।
তবে আমার জীবনের শৈশব থেকে কৈশোর পেরিয়ে এখন তিরিশের কোঠায় পৌঁছে ও গণিতের উপর ভীতি কিছুতেই কাটিয়ে উঠতে পারিনি, অঙ্ক বিষয় দেখলেই আমি উল্টো রাস্তা ধরি , না জানি কেনো ছোট থেকে এই ভয় কাজ করে কেউ কাটাতে সাহায্য করেনি আরো বেশি ভয় জড়িয়ে গেছিলো কারণ ভুল করলেই বাবার উত্তম মধ্যম জুটবে বলে। ভয় এতটাই প্রবল ছিলো যে অঙ্ক পরীক্ষার দিন টেনশনে নাক দিয়ে রক্ত বেরিয়ে যেতো। কি করে স্কুল,কলেজ, মাস্টার ডিগ্রি অব্দি অঙ্ক টেনেছি শুধু আমি ই জানি। আর একটা ভয়ের কথা না লিখলে লেখাটাই অসম্পূর্ণ রয়ে যাবে সেটা হলো কাছের মানুষকে পেয়েও হারিয়ে ফেলার ভয়, বহু মানুষকে এই পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয় অনিচ্ছাকৃত ভুল এবং ভাগ্যের পরিহাসে আমাকেও হতে হয়েছে। এই হারিয়ে ফেলার ভয় যে কি ভীষণ মারাত্মক মানুষকে ধীরে ধীরে হতাশার ঠেলে দেয়, তবে সময় বুঝিয়ে দিয়েছে যে নিজের হয় সে কোনোদিন হারায় না আর যা নিজের ছিলো না সেগুলোই কালের স্রোতে প্রবহমান হয়। কিছু বছর আগে অব্দি অল্পতেই ভেঙে পড়া মেয়েটি অনেক কিছু হারিয়েও আজ মনের জোরে ভয় কে জয় করেছে। হারিয়ে ফেলার ভয়কে সে পেছনে ফেলে এসেছে। এছাড়া , এই অধম ভগবানের পরে বাবা আর মা ছাড়া কাউকে ভয় পায় না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন