লারনিং প্রসেস
======================
কুলফি মালাই , কুলফি মালাই ......১০ টাকা ..২০ টাকা। হাঁক দিতে দিতে এগিয়ে গেল আইসক্রিমওয়ালা । জানালার স্লাইডার গ্লাস টা টেনে দিল দিপ্তেশ। গুমোট হয়ে থাকা আবহাওয়াটা এখন অনেকটাই শান্ত। দিপ্তেশ ভাবল সে একা নয় , আরও অনেকে আছে ওরই মতো এমনই অবস্থার শিকার।
নতুন শুরু হওয়া সংস্থার সেলস্ ম্যানেজার হিসেবে গত মে মাসে যোগ দিয়েছে দিপ্তেশ। গত মে মাসেই মাত্র ৭ জন কর্মীকে নিয়ে পথ চলা শুরু হয়েছিল তাদের এই "অল ক্লিন" নামক সংস্থাটির । এদের উৎপাদিত পণ্য - নানান রকম ফেস মাস্ক ও স্যানিটাইজার ।
করোনা আবহে মানুষ যখন দিশেহারা , ভীত- সন্ত্রস্ত , মোবাইলে মোবাইলে ছড়িয়ে পড়া দেশ-বিদেশের মৃত্যুর খবর পড়ে,দেখে আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে সারাক্ষন শুধু হাতে স্যানিটাইজার লাগিয়ে চলেছিল , শুধু হাতে কেন - বারে বারে ধোওয়া না যাওয়া সব কিছুতেই , তখন রমরমিয়ে বেড়েছিল ওদের ব্যবসা। রোজ রোজ এত অর্ডার সাপ্লাই দিতে গিয়ে রাত ১০ টার আগে কোনমতেই বাড়ি ফিরতে পারত না দিপ্তেশ।
আর এখন ! দোকানদার রা আর অর্ডার দিতেই চাইছেনা । যেদিন ই যাচ্ছে সেদিন ই সেই এক কথা - দাদা আগের গুলোই তো এখনো বিক্রি হয়নি , মানুষ আর কিনছে না এইসব । দেখছেন না কত জমে আছে ।
বিফল হয়ে ফিরে আসে দিপ্তেশ ।ওরই বা কি করার আছে। মানুষ তো এখন আর ভয় পাচ্ছে না। প্রায় সবাই আজ সারাদিন বাড়ির বাইরে থাকছে বিনা মাস্কে , স্যানিটাইজার ছাড়া । অফিস- আদালত , ব্যবসা-বানিজ্য সবই চলছে কমবেশি স্বাভাবিক ছন্দে । তাছাড়া করবেই বা কি সাধারণ মানুষ , পেটে খেতে তো হবে । কতজনেরই বা অগাধ জমানো টাকা ছিল যে প্রায় পাঁচ-ছয়মাস ধরে বসে বসে খেতে পারবে !
সবটা জানা-বোঝা সত্বেও মাথাটা কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগে দিপ্তেশের। আর ভালো লাগছেনা , কিছু একটা ভেবে বের করতে না পারলে আর হয়তো চাকরিটাই থাকবে না ওর। ঠিক এই সময়ে সামনে থাকা বেলটা বেজে উঠল। এটা বসের মানে অভয়দার রুমে যাওয়ার ডাক। যদিও অন্য সময় এ অফিসের ওরা প্রায় সবাই অভয়কে সভয়ে এড়িয়ে যায়, কিন্তু এখন তড়িঘড়ি করে ওই ঘরেই দৌড়াল । গিয়ে দেখল বাকিরাও এসে হাজির। অভয় দা এক অদ্ভুত প্রস্তাব রাখল ওদের সামনে। ওদেরকে কদিন নাকি একটু অভিনয় করতে হবে -সাথে ওদের বাড়ির লোকদেরও । অভয় দা রতন কে বললো যেহেতু বাড়িতে ওরা দুজন ই থাকে তাই ওর পক্ষেই সুবিধা । বেশ কিছুদিন বাড়ি থেকে বের হবে না ওরা । আর ফোন করে কাছাকাছি থাকা দুই-একজন আত্মীয় কে জানাতে হবে-যে ওর বৌ করোনা পজেটিভ।
অদ্ভুত ব্যপার তিনদিনের মধ্যে সারা এলাকা জেনে গেল খবরটা। লোকে দিপ্তেশ-দের ব্যাপারেও সন্দেহ র চোখে দেখতে লাগলো। আবার ওদের কাজের চাপ বেড়ে গেল। হূ হূ করে বিকতে লাগলো ওদের তৈরী প্রডাক্ট। স্টক কমে আসতে লাগল ক্রমেই।
দ্বিপ্তেশ নতুন করে জানল, তাদের ব্যবসার আরেক দিক ভয় পাইয়েও ব্যবসা বাড়ানো যায়। মানুষের মনে বসে থাকা ভয়কে জাগিয়ে তুলতে পারলেই অনেক কিছু .........
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন