অন্যমনে সাহিত্য. অন্য রকম দৃষ্টিকোন থেকে দেখা একটি প্রতিবিম্ব ভাবনা .. অন্যমনে সাহিত্য.

সোমবার, ১২ এপ্রিল, ২০২১

সম্পাদকীয়



সম্পাদকীয়
==========================

ভয়। সর্বব্যাপী, সর্বগ্রাসী ভয়।ভয়! শব্দটা যেন আরো ভয় পাইয়ে দেয় আমাদের। এই ভয় আমাদের নিজেকে চিনতে শেখায়।আমরা ভয় পাই আমাদের ভবিষ্যত নিয়ে,আমরা ভয় পাই দারিদ্র্য নিয়ে,প্রাত্যহিক বেকারত্বের সমস্যা নিয়ে আমাদের মনে ভীতি কাজ করে। আত্মসম্মান, অসম্মান,অপমান এগুলো থেকে আমরা নিজেকে লুকিয়ে রাখি।প্রাত্যহিক জীবনের গতিপথে আমাদের জীবনটাই ভয়ের চাদরে মোড়া ।নিওলিবারেলিজম বা নব্য উদারনীতিবাদে রাজনীতিবিদরা নিজের গদি ছাড়তে ভয় পায়।বলা যায়,সব সমস্যার মূল হল এই ভয়।জীবনটা যখনই ভালোভাবে বাঁচার কথা ভাবা হয় ঠিক তখন ভয় এসে দরজায় দাড়ায়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-শেষে পরমাণু-বোমার আতঙ্কের ভয়ে নিউইয়র্ক ডুবে ছিল। নাইন ইলেভন-এর ঠিক কুড়ি বছর পরও গ্রাউন্ড জিরোয় কান পাতলে ভয়ের গুঞ্জন শোনা যায়।

মুম্বই নামক শহরটির উপর ঘটে যাওয়া হাড় হিম করা সন্ত্রাস!কত মৃত্যু, কত স্বজন-হারানোর আর্তনাদ । ট্রেনের মধ্যে বিস্ফোরণ! হোটেলে বিস্ফোরণ!কিংবা দিল্লি! কখনও পার্লামেন্ট। কখনও হাইকোর্ট। কিন্তু দেখো, আবার পরের দিন থেকেই সব যেন স্বাভাবিক, জীবন ফিরে এসেছে জীবনের ছন্দে।

মুম্বই, দিল্লী, নিউ ইয়র্ক, কাঁদতে কাঁদতে উঠে দাঁড়িয়েছে। বাবা-মা-সন্তান-ভাইবোন যার দেহ যেখানে পড়ে রইল তাকে ফেলে নিজেরা আবার সোজা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেমন করেছে করাচি লাহোর ইসলামাবাদ রাওয়ালপিন্ডি কাবুল কান্দাহার পেশাওয়ার, যেখানে গত কয়েক বছরে প্রত্যেক দিন নিরীহ স্বজনকে সন্ত্রাসের মৃত্যুতে বিদায় জানিয়ে মানুষ আবার পরের দিন কাজে বেরিয়েছে। মৃত্যুর কাছে জীবন হেরে গিয়েছে জেনেও জীবন ছাড়া যে কিছুই নেই হাতে, তা মেনে নিয়েই বাঁচার লড়াইয়ে থেকেছে। যে সন্ত্রাস সীমায়িত ছিল বিশিষ্ট কিছু ভূগোলে বিগত দশ বছরে সে ভূগোল তছনছ হয়ে পৃথিবীটা সমান, এক হয়ে গিয়েছে। এ আর এক বিশ্বায়ন। ভয়ের বিশ্বায়ন।

গণতান্ত্রিক আমলেই রাজনীতিতে পরিবর্তনের ধারাটা একতরফা ক্ষমতাকেন্দ্রিক হয়ে উঠেছে—জনগণ ক্রমেই উপেক্ষিত হয়েছে এবং হচ্ছে। কারণ, দ্বিদলীয় গণতান্ত্রিক রাজনীতির সুস্থ ধারা তৈরির ঝুঁকি নিতে বড় দুই দলের কোনোটিই সাহস করে না। ফলে দিনে দিনে ক্ষমতাকে ঘিরে এক ভীতির রাজনীতির ফাঁদে আটকে যাচ্ছি।ক্ষমতাবানেরাই ভীতির রাজনীতির সূচনা করে থাকেন।

ভীতির সংস্কৃতিতে ক্ষমতা হারানোর ভয় জেঁকে বসে এবং ক্ষমতার জন্য যেকোনো আপসই কাম্য হয়ে ওঠে। বড় দুই দলের ক্ষমতা হারানোর পারস্পরিক ভীতির মনস্তত্ত্বের মধ্যে যে ভূমিটি উর্বর হয়েছে, তা হলো ধর্মীয় মৌলবাদ।

পশ্চিমের ভ্রান্ত নীতি ও স্বার্থান্ধ ভূমিকার কারণে লুটতরাজ ও জবাবদিহিবর্জিত রাজনৈতিক অর্থনীতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হল ভয়ের রাজনীতি। যেখানে দুর্নীতি সীমাহীন বিস্তৃত হবে, অবাধ সম্পদ পাচার চলমান থাকবে, সেখানে নানা উপায়ে প্রচ্ছন্ন ও প্রত্যক্ষ ভয়ের আবহ রচিত হবেই, তার জন্য নিয়োজিত হবে উদ্ভাবনী কৌশল।

সন্ত্রাস কিংবা দুর্নীতির বিরুদ্ধে মুখ খুললেই ‘স্বাধীনতার চেতনাবিরোধী পক্ষ’ হিসেবে চিহ্নিত করে ঝাঁপিয়ে পড়া সেই নাটকের এক অবিছিন্ন অধ্যায়।এই ভয়ের রাজনীতি, ত্রাসের আবহ বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়, এই জাল বিস্তার সুপরিকল্পিত।

যুদ্ধবিগ্রহ বা অন্য যে কোনো দুর্যোগ ভুক্তভোগী মানুষকে ভয়, দুশ্চিন্তা আর অবিশ্বাসের কালো অন্ধকারে নিমজ্জিত করে৷ ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার সেই সব মানুষের মনে তীব্র ঘৃণা আর প্রতিশোধস্পৃহা বাসা বাঁধে৷ শান্তির অভী‌‌ষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে হলে এসব মানুষের মনকে সুস্থ করে তোলা দরকার।

প্রিয় বন্ধু ঠিক এই সময় ৩৫ জন শব্দ সৈনিকের কলমের আলোকপ্রভায় উজ্জ্বল অন্যমনে সাহিত্য। সামাজিক অবক্ষয়ের বিপরীতে দাঁড়িয়ে তাঁদের অসি সম মসী সমাজের অনভিপ্রেত ভয়ের বিরুদ্ধে কথা বলে উঠেছে । আমাদের চেতনায় এঁকে দিবে নির্ভীক সমাজের নতুন অধ্যায় এই বিশ্বাস আমাদের রয়েছে ।

 


 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন