অন্যমনে সাহিত্য. অন্য রকম দৃষ্টিকোন থেকে দেখা একটি প্রতিবিম্ব ভাবনা .. অন্যমনে সাহিত্য.

সোমবার, ১২ এপ্রিল, ২০২১

একটি গল্পে বহ্নিশিখা


 



মা এবং ভয়
===================



মাথায় চশমা রেখে সারা বাড়ি খোঁজএ বেড়াচ্ছে ঐন্দ্রিলা অবশেষে অরিন্দমকে বলছে-

শোনছো,আমার চশমাটা খোঁজে পাচ্ছি না। দেখোতো একটু।
-- হুম। দেখছি তো! আচ্ছা বলতো তুমি কখনো সায়াক্রিস্ট ডক্টর দেখিয়েছো?


-- ধেত্যেরি। বলছি চশমাটা খোঁজে দিতে।

সে বলে কি না!,,যত্তোসব"।

-- বলি কি আর সাধে, মেমোরি পুরোই লস।


ঐন্দ্রিলা জ্বলসে ওঠে, বলে থাক, আর খোঁজে দিতে হবে না। আমারটা আমিই দেখে নেবো।

-- হুম। ভাবছি পাবনায় না যেতে হয়।

--উফ! আমি চশমা পাচ্ছি না,আর তুমি তামাসা করছো?

ঐন্দ্রিলা হন্যে হয়ে খোঁজে চলেছে। বিছানা,টেবিল, বেসিন,রান্নাঘর,বাথরুম কোত্থাও নেই দেখে হতাশ হয়ে বিছানায় বসে মাথায় হাত দিতেই আকাশ থেকে পড়ল।

কিন্তু অরিন্দম চিন্তিত। মা'য়ের মতো স্মৃতি লোপ পাবে না তো!

সেই ছোট বেলা থেকেই মা তার নিজের ছেলেকে ছেলে বলে চিনতে পারেন নি। তখন অরিন্দম বারো/তেরো বছরের কিশোর। কষ্ট পেয়ে কতো কেঁদেছে অরিন্দম। বাবা চিকিৎসার কোন ত্রুটি করেনি। একের পর এক ডাক্তার চেম্বার করে করে ক্লান্ত বাবা যেদিন চলে গেলেন যাবার আগে বলেছিলেন, "মা কে দেখিস বাবা। ফেলে দিস না। যা রেখে গেলাম তাতে তোদের চলে যাবে।"

মারা যাবার আগে বাবা দ্বিতীয় বার বিয়ে করেছিলেন। মা খুব লজ্জা পেতো। পর পুরুষ ভেবে। অগত্যা বাবা মন্দিরে মালা বদল করে মা'র সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সংসারে ফিরলেন ঠিকই কিন্তু পৃথিবীতে ঠাঁই হলো না।

সৎ ছেলে হিসাবে পরিচিত অরিন্দমের তখন ইন্টার ফার্স্ট ইয়ার। বাবা নেই। মা মা বলে চিৎকার করে কাঁদে। মা কে জড়িয়ে ধরে আদর খেতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে কোলে মাথা রেখে একটু ঘুমুতে। মাঝে মাঝে ভুলে যায়,মা যে তার মা নয়। সৎ মা। সেই মা'য়ের আড়ষ্টতা দেখে বুক ফেটে যায় অরিন্দমের।


ডাক্তার কাকা বলেছিলেন, কোন একদিন নিজে থেকেই স্মৃতি ফিরে আসবে। ডাক্তার কাকা হয়তো অন্য কিছু জানতেন। মিথ্যে স্বান্তনা দিয়েছিলেন বাবাকে। অনেকদিন পেরিয়ে গেলেও স্মৃতি ফেরেনি মা'য়ের।


অপেক্ষা করে করে চলে গেলেন বাবা। পড়াশোনাও আর এগোল না অরিন্দমের। ইচ্ছে ছিল বাইরে পড়াশোনার। কিন্তু নিজ জেলার বাইরে যাওয়া সম্ভব হলো না। কে দেখবে মা'কে? স্থানীয় কলেজে পড়াশোনা শেষ করতে হলো।


বাড়িতে ভালো লাগে না। বাড়ির বাইরেও ভালো লাগে না। অন্তঃসার শুন্য উচ্ছন্নের মতো জীবন। নিজেকে ব্যস্ত রাখতেই একই কলেজে যাওয়া আসা অনারারি টিচার হিসেবে। এ সময়টাতেই পরিচয় ঐন্দ্রিলার সাথে। অল্পদিনের প্রেমের পর বিয়ে।


হঠাৎই একদিন মা'য়ের জ্বর। ডাক্তার এলেন,দেখলেন ক'টা টেস্ট করতে বলে চলে গেলেন। রাত পার হয়নি। সেদিনই প্রথম এবং শেষ বার জ্বরের ঘোরে মা ডেকে ছিলেন "অরিন্দম" "বাবা অরি"! ডেকে চোখ বন্ধ করে নিলেন।


ঐন্দ্রিলা কোন পথে এগোচ্ছে?



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন