অন্যমনে সাহিত্য. অন্য রকম দৃষ্টিকোন থেকে দেখা একটি প্রতিবিম্ব ভাবনা .. অন্যমনে সাহিত্য.

সোমবার, ১২ এপ্রিল, ২০২১

অণুগল্পে রতন চক্রবর্তী,


  

 
কালো থাবা
===============================


আকাশে মেঘ করেছে। ঝড় আসবে। এদিকে সন্ধ্যেও হয়ে এলো। কালো মেঘে চারপাশ এমনিতেই আঁধার হয়ে আছে।পিচ ঢালা রাস্তাটা নিরব আর নির্জন। রাস্তার দু'পাশে ঘন গাছপালার জঙ্গল।
একা একা ভয় করছে ঈষিতার। রোজই টিউশান শেষে বান্ধবীদের সাথে বাড়ি ফিরে সে। মানে, পড়া শেষে এক সাথেই বের হয়, আর হঁটতে হাঁটতে রাস্তায় যার বাড়ি আগে পড়ে, সে বাড়ি ঢুকে যায়। ঈষিতার বাড়ি সবার শেষে। একটু দূরেও। অন্যদিনের মতো নয় আজকের দিনটা। অন্যদিন, এরই মধ্যে বাড়ি ফিরতে পারে সে। কিন্তু আজ, হঠাৎ করে কোথা থেকে যে এত মেঘ করলো আকাশে! আর, সব বান্ধবীরা আজ পড়ায়ও আসেনি। কোন যানবাহনও নেই।


ভয়ে ভয়ে পা চালায় ঈষিতা। পাকা রাস্তা ছেড়ে বাড়ি যাওয়ার মাটির রাস্তায় নামে সে। এই রাস্তাটার দু'পাশেও ঘন গাছপালায় ভরা। বাড়ি এখনও মিনিট পঁচিশের পথ। ঈষিকার বাবা নেই। মা হাসপাতালে নার্সের কাজ করে। মা মনে হয় এতক্ষনে বাড়ি চলে এসেছে। মায়ের আজ নাইট সিফট নেই। মা তার জন্য চিন্তা করছে হয়তো।
হঠাৎ ঈষিকা উপলব্ধি করলো তার পেছনে কিছু একটা আছে। হেঁটে আসছে তার পিছু পিছু! ঘাড় ঘুরিয়ে সে সাহস করে পেছনে তাকালো। একটা বিশাল জন্তুর কালো অবয়ব।


ভয়ে কাঠ হয়ে যাবার দশা হলো ঈষিতার। বুকটা ধড় ফড় করছে তার। আতঙ্কের একটা শীতল স্রোত বইছে তার মেরুদন্ডে। এমন পরিস্থিতিতে সে কোন দিন পড়েনি। আশেপাশে কেউ নেইও।
হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকালো। তারপরই কান ফাটিয়ে বাজ পড়লো কোথাও। তারপরই নামলো বৃষ্টি। সেই সাথে ঝড়ো হাওয়া। দৌড়াতে লাগলো ঈষিতা। পেছনের ভয়ঙ্কর জন্তুটাও তার পেছন পেছন দৌড়াতে লাগলো! এই ঝড়েও ঈষিতার পিছু ছাড়েনি ওটা। ভয়ে পাংশু বর্ণ ধারন করলো তার চেহারা। অনেক্ষন দৌড়ানোর পর, চালাঘরটা দেখতে পেলো সে, পথের পেশে।বেড়াহীন একটা ঘরের মতো। ওখানে তিন চারটে অপরিচিত ছেলেকে দেখতে পেলো । পাশে দু'তিনটে সাইকেল দাঁড় করানো।
যাক, সাহস পেলো ঈষিতা। যদিও ছেলে গুলো পরিচিত নয়। তবু মানুষ তো। ঈষিতা ওদের মাঝে গিয়ে দাঁড়াতেই, ছেলে গুলোর চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো। ওদের মুখ থেকে ভস্ ভস্ করে মদের গন্ধ বের হচ্ছে।
একটা ছেলে বললো, 'ঐ ছোট্টো, এতো দেখি মালে মাল্মাল। ছেড়ে দিলে হবে? '
আরেক জন বললো,'আহারে, এমন করে বলিস না। অসহায় পাখি, ঠাঁই নিয়েছে এখানে।'বলেই নিজের রসিকতায় নিজেই খেক খেক করে হাসলো। তারপর আলোচনা শুরু করলো ঈষিতাকে নিয়ে কী করা যায়।ততক্ষনে ঝড় আরো বিশাল রূপ নিয়েছে। চালা ঘরটা কাঁপছে হাওয়ায়।
তৃতীয় জন এসে ঈষিতাকে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে, ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দিলো। চিৎকার করে বললো, 'এত নাটক কিসের রে, হারামজাদারা, ওর হাত পা চেপে ধর দেখি। বাকি দু'জন তাই করলো। তৃতীয় জন তার শার্ট খুলতে লাগলো। তার দু'চোখে লালসা।
সে চিবিয়ে চিবিয়ে বললো, 'ফেলো তক্তা, মারো কুড়াল।'
এবার ঈষিতা সত্যিকারের ভয় পেলো। সে বুঝতে পারলো, সে ভয়ঙ্কর বিপদে পড়েছে। এবার তৃতীয় জন প্যান্টের জিপারে হাত দিলো।


ঠিক তখনই ঘটলো ঘটনাটা। সেই কালো জন্তুটা সহসা এসে ঝাঁপিয়ে পড়লো তৃতীয় ছেলেটার ওপর! ফেলে দিলো ওকে। তারপর চোখের পলকে হামলা চালালো বাকি দু'জনের ওপর। কিছু বুঝে ওঠার আগেই, ওর ধারালো নখ আর দাঁত দিয়ে আঁচড়ে কামড়ে একাকার করে দিতে লাগলো! আহত ছেলে গুলো, রক্তাক্ত দেহে ঝড়-বৃষ্টি মাথায় করে ছুটে পালালো।
শোয়া থেকে ওঠে বসলো ঈষিকা। তার ভয় কেটে গেছে। সে ভালো করে দেখলো। তার পিছু নেয়া জন্তুটা কোন বাঘ কিংবা ভাল্লুক নয়। একটা এলসেসিয়ান কুকুর। কারো পোষা হবে। হয়ত কোন কারনে ছাড়া পেয়ে ঈষিতার পিছু নিয়েছে। ঈষিতা পরম মমতায় কুকুরটার, জলে ভেজা কালো চকচকে দেহটা জড়িয়ে ধরলো। সে ভাবছে। পশু আসলে কারা? এই কুরটা নাকি ঐ ছেলে গুলো !!







কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন