লকডাউন এবং পারমিতার পরিবার
==========================
বহ্নি শিখা
==========================
প্রতি ঘরে ঘরে কোভিডাক্রান্ত পেশেন্ট যখন নিসর্গ নিস্তব্ধতায় চাপা। দূর থেকে ভেসে আসা কুকুরের কান্না শেয়ালের ডাক। কাকের কা,কা,কা-উ-য়া আর্তস্বর । নিশি পাখির অশুভ সংকেত। সেগুনের ডালে ঠাঁয় বসে প্যাঁচার ডেকে যাওয়া। নিত্য নতুন ভিখারির খয়রাত কামনায় আর্তচিৎকার তখনই হয়তো কারোর জীবনের শ্বাস বায়ু নিঃশেষ হয়ে গেছে চিরদিনের মতো। প্রিয় শহরের অলি-গলি, বড় রাস্তার মোড়ে এম্বুলেন্স রোগীর সেবায়। কোনটা হয়তো ছুটছে পাগলা ঘন্টা বাজিয়ে। স্বজন বিরহে কান্না , ভয় আর বিষন্নতায় প্রত্যেকে অসহায় হতে হতে একসময় উলটে দাঁড়ায় নিজেকে বাঁচাতে। পাশাপাশি লাশের মিছিল। স্তুপাকার হচ্ছে লাস। সৎকারের অপেক্ষায়। কোথাও সারি সারি স্বজনের অপেক্ষায়। দ্বিতীয় ধাপের করোনা পরিস্থিতির লকডাউন কড়াকড়ি না হলে হয়তো আরো, আরো ভয়াবহ অবস্থার শিকার হতে পারতো মানুষ। শহরের হস্পিটাল গুলোতে তিল ধারনের ঠাই ছিলো না। ঠিক সে সময়টাতেই আক্রান্ত হলো ডিউটিরত ভাগ্নী গাইনি বিভাগে ডঃপারমিতা। সংক্রমণ হয়েছিল কলিগের থেকে। তখন ছ'তলা বিল্ডিংয়ের দুতলায় ভাড়া থাকতেন ওর মা, বাবা আর ছোট বোন। একই বিল্ডিংয়ের ছ'তলায় থাকতো পারমিতা৷ মায়ের নির্দেশেই দু'তলার একটা রুমে নিজেকে আটকে দিলো প্রেগন্যান্ট পারমিতা। মায়ের মন সর্বদা উ-চঞ্চলা। মেয়েকে নিয়ে চিন্তা। প্রেগন্যান্ট অবস্থায় ওর খুব কষ্ট হচ্ছিল। ঈশ্বর কৃপায় অল্পতেই পারমিতা একটু সুস্থ হয় ঠিকই কিন্তু তার মা পড়ে গেলেন বিছানায়। পড়লেন তো একেবারেই কঠিন অবস্থায় চলে গেলেন। বিপি নেমে গেলো স্যচুরেশন নেমে গেলো বিপদসীমায়। ভাগ্নী জামাই ডঃপ্রণব পাল। তার আন্তরিক সহযোগিতায় পারমিতা মা'কে শুশ্রূষা করছে। তার বাবা সামলে নিচ্ছেন যাবতীয় কাজ৷ রান্নাবান্না, পথ্য তৈরি, ধুয়া পাখলা সব৷ ছোট বোন সংঘমিতা হেল্প করতো বাবাকে। বিকেলে ওর জ্বর ১০৫ ডিগ্রী। সাথে ডায়রিয়া। সংঘমিতার আগে থেকেই অ্যাজমা। মনে মনে ভীষণ ভয় পেয়ে গেলো সবাই। কিভাবে এই পরিস্থিতি থেকে রেহাই পাবে। পরদিন ওদের বাবারও একই অবস্থা। জ্বর কাশি,বমি ডায়রিয়া,বিপি, স্যচুরেশন অনেক কম । প্রণব এবং পারমিতা মা'য়ের অবস্থার প্রেক্ষিতে অক্সিজেন সিলিন্ডার সহ যাবতীয় ওষুধ পত্র আগে থেকেই হাতের কাছে এনে রাখলো। ওদের অক্লান্ত পরিশ্রম আর সেবায় বাবা আর বোন কিছুটা সামলে উঠলেও মা শক্তি হারিয়েছে কথা বলার। অবশেষে মেরোপেনামা স্টার্ট করা হয়েছে। এর একদিন পরেই প্রণবের প্রচন্ড জ্বর। প্রচন্ড কষ্ট পেয়েছিলো দু'দিন। একে তো দূর্বল শরীর, লকডাউনে রিকশা, অটো, সিএনজি কিচ্ছু নেই । বাসা থেকে হস্পিটাল অনেকটা দূর। দোকান পাটও কাছে নেই। প্রয়োজন ক্লান্তি মানে না। ইতিমধ্যে পারমিতার মা'য়ের আংশিক উন্নতি হয়েছে। তবে কথা বলতে বারণ করা হয়েছে। কিন্তু মন? মন তাকে ভাবনার সাগরে ফেলে দেয়, সে ভাবে, তার যদি কিছু হয়ে যায় কেউ ছোঁবে না ধরবে না কি করে কি হবে? ছোট্ট মেয়েটা এখনো মা ছাড়া কিছু বুঝে না। পারমিতা প্রেগন্যান্ট ওর কি হবে? আর সে? (পারমিতার বাবা) খুব কাঁদবে না? ওর কি হবে? ওর খুব কষ্ট হবে, ওকে কে দেখবে? হায় ঈশ্বর রক্ষা করো,,,, পৃথিবীর সকল মানুষ কে রক্ষা করো,,,।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন