অন্যমনে সাহিত্য. অন্য রকম দৃষ্টিকোন থেকে দেখা একটি প্রতিবিম্ব ভাবনা .. অন্যমনে সাহিত্য.

শনিবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২২

কবিতায় পরাগ

  


ঝড় এসেছিল
===================

ভীষণ গরমে জেরবার,
কোথাও গরম হাওয়া, কোথাও বা ঝরছে ঘাম
বৈশাখের তপ্ত মাটিতে মন থেকে বলে উঠি
একটা ঝড় চাই, আজ বা কাল,

কেটে যায় দিন, বয় ঝোড়ো হাওয়া
মন বলে, এই বুঝি এল, পাগলাঝোরা
আসব আসব করেও, আসে না সেই দিন
রাত কেটে যায়, দক্ষিণের বাতাসে অতৃপ্তির ছোঁয়া,

চৈত্রের আকাশেও ছিল না এতটুকু মেঘ
ভুল করে এসে গেলে , বাতাসে ছোঁ মেরে
নিয়ে গেল ,দূরে কালো পাথরের পাহাড়ে
হাসতে হাসতে ঠান্ডা বাতাস এসেছিল, তারপরে,

এমনি করেই একদিন ঝড় এসেছিল
পশ্চিমের আকাশে মেঘ জমেছিল ,
মুহূর্তে পাগল বাতাস উড়িয়ে নিয়ে গেল
ধুলোবালি , শুকনো পাতা যত জমেছিল ,
আর, নিয়ে এসেছিল সবুজ কিছু ইচ্ছে
বুকের ভেতরে বরফ কুচি গলে জল।

 


বিপ্লব একটি ঝড়ের নাম
===================

ঝড়ের নাম কত রকম হয়
কখনও কি বিপ্লব বলে ডাকব!
যে নামেই হোক না ডাকা,
ঝোড়ো হাওয়ায় ওলটপালট হয়ে
শহর থেকে গ্রামের জীবন শ্মশান করে দেয়,
গাছ উপড়ে, চাল উড়িয়ে, বাঁধ ভেঙে, তছনছ
ডুবে যায় পাকা ফসল , বাড়ি, জমি, খামার
ভেঙে যায় রাস্তা যত, মানুষের সর্বনাশ
অর্দ্ধনগ্ন মানুষগুলোর গামছাখানি থাকে
ঝড়ের উপর আসলে ঝড়, শুধুই সুতো জড়ায় ,

যত ধুলোবালি আর পুরোনো হিসেব নিকেশ
ধুয়েমুছে দিয়ে সব, বলে, নতুনের বার্তা আনে !
ভুল! কিছু থেকে যায়, ছুড়ে ফেলার কথা ছিল,
যত বারই আসে ঝড়, সংখ্যায় ওরা বাড়ে,
শুনেছি, অসুরের মৃত্যু হয় না, রক্তে বাঁচে বীজ !
দুঃখের বিষয়, ওদের হাতেই শাসন তন্ত্র চলে
সুযোগ পেলে পকেট ওদের ফুলে ফেঁপে ওঠে ,
শীর্ণ হতে আরও শীর্ণ, মাটির দীন মানুষগুলো!

আমি সেই ঝড় হতে চাই, বিপ্লব নাম যার
এমন প্রচন্ড, গোড়া ধরে ছুড়ে ফেলার ক্ষমতা
সব হারানো মানুষগুলো ,যেন বাঁচে মনের মত,
সর্বভূক দালালেরা মুছে যাক, সর্বস্বান্ত হোক
নিঃস্ব হয়ে থাকার জ্বালা, বুঝুক কেমন লাগে
অপরের গ্রাস কেড়ে নেওয়ার, সঠিক শিক্ষা পাবে।

 


সবাইকে শ্রমিক বলি কি করে
===================


কে শ্রমিক? শ্রম যে করে?
তাহলে সবাই শ্রমিক, লাঙল কাঁধে কিম্বা কলম হাতে ,
খালি পায়ে বা বুট জুতো পরে
আদুল গায়ে বা কোট প্যান্ট পরে,
যে যার কাজের দায়িত্ব পালন করে ,
যে যার পারিশ্রমিক পায়,
মাস হিসেবে বা ঘন্টা প্রতি ,
সত্যিই কি তাই?
কোথাও গরমিল মনে হয়,
যে পাথর কাটে, জিজ্ঞেস করে দেখো
ওর বাপ, মাও কাটতো পাথর
আজ ও, ওর ভাই , বোন সবাই পাথর কাটে,
ভাগ চাষীটা গত একশ বছর ধরে ফলায় ফসল,
যে রাস্তা তৈরি করে , আগে ছিল ঠিকে কাজে
আজ ছিন্ন মূল, খাতায় নাম লিখিয়েছে ,
হাইরাইজ গুলোতে ওরাই তো কাজ করে
ওদের ঘামে ভেজা ইঁট, বালি, পাথরে
কত রক্ত মিশে থাকে, তবু শহীদের মর্যাদা কি পেয়েছে!
তাজমহলের সামনে শহীদ বেদী তো দেখিনি
তেমনি দেখিনি কোনও ইমারত বা স্থাপত্যের পাশে,
ওরা চিরকাল ব্রাত্য, নিজেদের কাছে সমাজের কাছে
পথে হাঁটি, গাড়ি চালাই আমরা
আয়েশ, আরাম উপভোগ করি ,আনন্দ করি
অর্থের বিনিময়ে,
একবার কি ভাবি, কার পরিশ্রমের ফসল
কি করে নিজেদেরও শ্রমিক বলি?
তবে ওদের কি বলি?

শ্রমিক তারাও, যাদের মাটির সাথে যোগাযোগ
যারা বংশ পরম্পরায় অন্যের গোলামী করে
যাদের মৃত্যুতে কোন হেলদোল হয় না
এতটাই সাধারণ যে, গাড়ির নীচে পিষে দিলেও
নেশাখোর চালকের কিছু হয় না !
ওদের অবস্থার জন্য দায়ী কি আমরা নই?
আমাদের শাসন, শাসক, বিচার , রীতিনীতি ,
নিজেদের ভাবি শ্রমিক, করি আন্দোলন
আমাদের জন্য, আরও ভাল থাকার জন্য ,
অনুচিত নয়, তবে এ আন্দোলন কি 'শ্র মি কে র' !
ভুলে যাই ওদের কথা, যারা দিন আনে দিন খায়
এক একটা স্বার্থপর ? কি করে?
কোথায় হারিয়ে গেছে মুষ্টিবদ্ধ হাত?
যেদিন ওদের, শুধু ওদের জন্য
ওদের একশ বছরের পাওনা আদায়ের জন্য
আমরা আন্দোলনের ডাক দেব

কোন এক বৈশাখের তপ্ত দুপুরে,
আমাদের অংশের ভাগ দেব নির্দ্বিধায় ,
সাম্যতার পথে হাঁটব একসাথে, হাতে হাত
সেদিন বলব, মে দিবসটা ক্যালেন্ডারে আজও মানায়
ওই দিনটিকে সত্যি বলে জানব।

 

 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন