স্মৃতি=========কতবার এসে ফিরে যাওকতবার পিছন ফিরে ফিরে দ্যাখোআমি নির্বাক চেয়ে থাকিদেখি শুধু তোমার চলে যাওয়াআবহমান চলে যাওয়াগুলিঘর বদল করি, রাস্তা বদল করি রোজতবুও তুমি দাঁড়িয়ে থাকোতোমার যাবার মুহূর্ত তৈরি হয়সব সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে করেএই চাঁদ-সূর্যের দেশে ঘুরপাক খাইসব আলো নিভে গেলেও অন্ধকারে জ্বলোঅন্ধকারও আলোকিত হয়তোমার হাতের শিরা,তোমার দীর্ঘশ্বাস ছুঁইতোমার ভুরুর চিহ্নে ইঙ্গিত জাগেএত মৃত্যুর পরও বেঁচে থাকিবেঁচে থাকা তবু এক দায়!
এই মৃত্যুযাপন=========তোমাদের বোঝাবো কেমনেআমাদেরও পুড়িবার সাধ জাগিতেছে মনেঅনেক পুড়েছি তাই জমা আছে বহু ছাইহৃদয়ের কান্নায় ভেসেছি অবিরল গোপনে গোপনেচেতনা ফেরেনি তবু, বাতাসে বাতাসে মৃত্যুগানআমাদের মৃত্যুযাপন....তোমরা আগুন শুধু, আগুনের পাখিদাহ ও দহন ক্রিয়ায় শাসন চালাওআমরা সবাই পুড়ে যেতে থাকিএই দেহ আর এই মন কতটুকু বাকি!
লিখিনি কোথাও এই প্ররোচনা=========সব বাঁধন আলগা হয়ে যাচ্ছেকোনও কোনও কিশোরীবেলা ভিজছে একা একাআমরা শুধু অন্ধকারকে কোকিল ভেবেছিআর সিঁড়ির নিচে শুয়ে শুয়ে যাপন করেছি বসন্তকালআমাদের গার্হস্থ্য নদীগুলি ভাসিয়ে নিয়ে গেছেঅবৈধ যাত্রায়কোথাও সমুদ্র ছিল না, শুধু মহাসমুদ্রের কল্পনায়আমাদের বিশ্বাস সহ্য করেছিল চিত হওয়া এবং উবুড় হওয়াতারপর বহুদিন পর জ্যোৎস্না আর আনন্দজটিল অরণ্য প্রান্তরে বাবলাফুল হয়ে ফুটে উঠেছেকাঁদো আত্মা, কাঁদো—আয়ু কিনতে এসেছি আজ এই পার্থিব দোকানে!
এখন আর কোনো রাস্তা নেই=========দাঁড়াবো না, দাঁড়াবো না মনে করেও দাঁড়াচ্ছিএখন আর কোনো রাস্তা নেইবিকেল নামতে শুরু করেছেঅন্ধকার এসে কিনে নেবে আমাদেরকত ইচ্ছে লুকানো বাঁশির মতো ছিলকত ইচ্ছে মৌচাকের দিকে যেতে চেয়েছিলকত ইচ্ছে কেঁদেছিল শুধু নিঃশব্দ কান্নায়আমি কি ইচ্ছেদের দাস নাকি তবে?মুখ ফুটে কিছুই বলিনি ওদেরদিনান্তের মুখ চেয়ে বসিয়েছি কল্পনার ঘরেকল্পনাও বলেনি কিছু;শুধু ওদের সম্মুখেকাপড় খুলেছে আর কাপড় পরেছে...রাঙা পা, ততোধিক ঐশ্বর্যে রাঙা দেহছুঁতে গিয়েও হয়নি ছোঁয়া আরঅনুভবের বিজ্ঞাপনে লেপ্টে গেছে মোহকার্যত শূন্যের পরিধি জুড়ে হেঁটে গেছে কেহ!
মধ্যবিত্ত=========নিজেকে বর্ণনা করার কোনো কৌশল জানা নেই আমারতবু রোজ ভাষা খুঁজি,ভাষার প্রতীক খুঁজিঅদ্ভুত একাকী হয়ে দেখি আয়নায়:শুধু এক মেধাহীন মধ্যবিত্তসংসারের আলো-আঁধারে সরীসৃপের মতো চলাফেরা করেআর ক্রমশ শিকার করার সামর্থ্য হারায়এই অবেলার ছায়ায় যদি দেখা হয়আমার ঈশ্বরের সঙ্গে দেখা হয়তবে কোন্ মোক্ষ চাইব আমি?সব রাস্তা বন্ধ হয়ে গেলেসম্মুখে দৈত্যের দেশ নরকের দরজা খুলে ডাকে: আয় আয়...আমরা কি সবাই তবে নরকগামী হতে চাই?
ঢোল=========এখানে ঢোল বাজাতে এসেছিঢোল বাজিয়ে চলে যাবরাতটুকু জিরিয়ে নিতে নিতেজ্যোৎস্নার সাথে সেরে নিই সঙ্গমসকালে যে যার মতো নাচতে নাচতেনেমে যাব রাস্তায়পৃথিবীতে শুধু ধুলো আছেআর সবাই ধুলো ধুলোযদিও আগুন আছে ভাবিআগুনেই সেঁকে নিতে চেয়েছি ইন্দ্রিয়আমাদের কত শিকার কাহিনিআলো ও আঁধারে শুয়ে আছেজটিল রহস্যময় এই অরণ্য জুড়েআমরা শুধু খুঁজে ফিরেছি হরিণ-হরিণীঢোল বাজে। ঢোল বেজে যায় সারাদিন।ঢোলের বাজনায় আমরাও বেজে উঠিআমাদের ভেতরও ফাঁকা, শূন্য পাক খায়বাজতে বাজতে আমরাও ঢোল হয়ে যাই
সমস্ত যুদ্ধের শেষে=========সব ঘোলাটে হয়ে যাচ্ছেতোমাদের বাক্যবাণের ক্ষত আর দেখা যায় নাএখন এ ঘরে আর পাখি নেইসব পাখি মরে গেছেঅন্ধকারে জাগাবার কেউ নেই এখনমৃত প্রদীপের কাছে আলোর গুনগুনস্মৃতির ধুলো হয়ে আছেপাশ ফিরছিএপাশে ওপাশে ধূসর নিশ্চুপশূন্যের ছবি আঁকছে সারারাতঅভিমান ফিরে আসেনি কোনওদিনচোখের জল মুছে সেও এখন গার্হস্থ্য সৈনিকপৃথিবীতে কোথাও তার গৃহ আছেঅবেলার রঙে হয়তো এখনো আলতা পরেনির্বিবাদে হেঁটে যায় পৃথিবীর পথেএক একটি দিন যায় এক একটি রাতের দিকেসমস্ত যুদ্ধের শেষে আর কি সকাল আসবে আমাদের?আগামীকাল অথবা আর একটি সকালবড় অনিশ্চিত মনে হয় পৃথিবীর কাছে...
আমাদের গৌরব=========অনেক অনেক দিন ধরে আমরা কেঁদে চলেছিআমাদের শেষ হাসিটি কেমন ছিল তা আজ আর স্মরণ করতে পারি নাযুগান্তরের পথে পথে ভাঙা যুদ্ধজাহাজের ভেতরআমাদের পূর্বপুরুষেরা আত্মগোপন করেছিল তারপর বহুদিন পর ইতিহাস খুঁজে খুঁজেআমরা নির্মাণ করেছি গৌরবঅন্ধকার নেমে এলে প্রতিদিন গৌরবকে খুঁজিগৌরব এসে আলো জ্বেলে দিকসব রাস্তা বন্ধ হয়ে গেলে গৌরবকে ডাকিগৌরব এসে রাস্তা খুলে দিকসংঘাত আর প্রবঞ্চনার ভেতর দিয়ে যেতে যেতেআমাদের সামঞ্জস্যহীন দৈন্য কণ্ঠরোধ করে দেয়আমরা আত্মহত্যার কাছে পরামর্শ চাইআমরা প্রতিহিংসার কাছে সমাধান চাইআমাদের গৌরব তখন দূরে দাঁড়িয়ে থাকেপ্রয়োজনহীন বিচ্ছিন্ন ধূসর ঘৃণ্য এক স্ট্যাচুর মতো।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন