অন্যমনে সাহিত্য. অন্য রকম দৃষ্টিকোন থেকে দেখা একটি প্রতিবিম্ব ভাবনা .. অন্যমনে সাহিত্য.

শনিবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২২

গুচ্ছ কবিতায় তৈমুর

  



স্মৃতি
=========

কতবার এসে ফিরে যাও

কতবার পিছন ফিরে ফিরে দ্যাখো

আমি নির্বাক চেয়ে থাকি

দেখি শুধু তোমার চলে যাওয়া

আবহমান চলে যাওয়াগুলি


ঘর বদল করি, রাস্তা বদল করি রোজ

তবুও তুমি দাঁড়িয়ে থাকো

তোমার যাবার মুহূর্ত তৈরি হয়


সব সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে করে

এই চাঁদ-সূর্যের দেশে ঘুরপাক খাই

সব আলো নিভে গেলেও অন্ধকারে জ্বলো

অন্ধকারও আলোকিত হয়


তোমার হাতের শিরা,তোমার দীর্ঘশ্বাস ছুঁই

তোমার ভুরুর চিহ্নে ইঙ্গিত জাগে

এত মৃত্যুর পরও বেঁচে থাকি

বেঁচে থাকা তবু এক দায়!


এই মৃত্যুযাপন
=========  

তোমাদের বোঝাবো কেমনে

আমাদেরও পুড়িবার সাধ জাগিতেছে মনে

অনেক পুড়েছি তাই জমা আছে বহু ছাই

হৃদয়ের কান্নায় ভেসেছি অবিরল গোপনে গোপনে

চেতনা ফেরেনি তবু, বাতাসে বাতাসে মৃত্যুগান


আমাদের মৃত্যুযাপন....

তোমরা আগুন শুধু, আগুনের পাখি

দাহ ও দহন ক্রিয়ায় শাসন চালাও

আমরা সবাই পুড়ে যেতে থাকি

এই দেহ আর এই মন কতটুকু বাকি!



লিখিনি কোথাও এই প্ররোচনা
=========

সব বাঁধন আলগা হয়ে যাচ্ছে

কোনও কোনও কিশোরীবেলা ভিজছে একা একা

আমরা শুধু অন্ধকারকে কোকিল ভেবেছি

আর সিঁড়ির নিচে শুয়ে শুয়ে যাপন করেছি বসন্তকাল


আমাদের গার্হস্থ্য নদীগুলি ভাসিয়ে নিয়ে গেছে

অবৈধ যাত্রায়

কোথাও সমুদ্র ছিল না, শুধু মহাসমুদ্রের কল্পনায়

আমাদের বিশ্বাস সহ্য করেছিল চিত হওয়া এবং উবুড় হওয়া


তারপর বহুদিন পর জ্যোৎস্না আর আনন্দ

জটিল অরণ্য প্রান্তরে বাবলাফুল হয়ে ফুটে উঠেছে


কাঁদো আত্মা, কাঁদো—

আয়ু কিনতে এসেছি আজ এই পার্থিব দোকানে!


এখন আর কোনো রাস্তা নেই
=========

দাঁড়াবো না, দাঁড়াবো না মনে করেও দাঁড়াচ্ছি

এখন আর কোনো রাস্তা নেই

বিকেল নামতে শুরু করেছে

অন্ধকার এসে কিনে নেবে আমাদের


কত ইচ্ছে লুকানো বাঁশির মতো ছিল

কত ইচ্ছে মৌচাকের দিকে যেতে চেয়েছিল

কত ইচ্ছে কেঁদেছিল শুধু নিঃশব্দ কান্নায়

আমি কি ইচ্ছেদের দাস নাকি তবে?


মুখ ফুটে কিছুই বলিনি ওদের

দিনান্তের মুখ চেয়ে বসিয়েছি কল্পনার ঘরে

কল্পনাও বলেনি কিছু;শুধু ওদের সম্মুখে

কাপড় খুলেছে আর কাপড় পরেছে...


রাঙা পা, ততোধিক ঐশ্বর্যে রাঙা দেহ

ছুঁতে গিয়েও হয়নি ছোঁয়া আর

অনুভবের বিজ্ঞাপনে লেপ্টে গেছে মোহ

কার্যত শূন্যের পরিধি জুড়ে হেঁটে গেছে কেহ!

মধ্যবিত্ত
=========

নিজেকে বর্ণনা করার কোনো কৌশল জানা নেই আমার

তবু রোজ ভাষা খুঁজি,ভাষার প্রতীক খুঁজি

অদ্ভুত একাকী হয়ে দেখি আয়নায়:


শুধু এক মেধাহীন মধ্যবিত্ত

সংসারের আলো-আঁধারে সরীসৃপের মতো চলাফেরা করে

আর ক্রমশ শিকার করার সামর্থ্য হারায়


এই অবেলার ছায়ায় যদি দেখা হয়

আমার ঈশ্বরের সঙ্গে দেখা হয়

তবে কোন্ মোক্ষ চাইব আমি?

সব রাস্তা বন্ধ হয়ে গেলে

সম্মুখে দৈত্যের দেশ নরকের দরজা খুলে ডাকে: আয় আয়...

আমরা কি সবাই তবে নরকগামী হতে চাই?

 

ঢোল
=========

এখানে ঢোল বাজাতে এসেছি

ঢোল বাজিয়ে চলে যাব

রাতটুকু জিরিয়ে নিতে নিতে

জ্যোৎস্নার সাথে সেরে নিই সঙ্গম

সকালে যে যার মতো নাচতে নাচতে

নেমে যাব রাস্তায়


পৃথিবীতে শুধু ধুলো আছে

আর সবাই ধুলো ধুলো

যদিও আগুন আছে ভাবি

আগুনেই সেঁকে নিতে চেয়েছি ইন্দ্রিয়


আমাদের কত শিকার কাহিনি

আলো ও আঁধারে শুয়ে আছে

জটিল রহস্যময় এই অরণ্য জুড়ে

আমরা শুধু খুঁজে ফিরেছি হরিণ-হরিণী


ঢোল বাজে। ঢোল বেজে যায় সারাদিন।

ঢোলের বাজনায় আমরাও বেজে উঠি

আমাদের ভেতরও ফাঁকা, শূন্য পাক খায়

বাজতে বাজতে আমরাও ঢোল হয়ে যাই

 

সমস্ত যুদ্ধের শেষে
=========
সব ঘোলাটে হয়ে যাচ্ছে

তোমাদের বাক্যবাণের ক্ষত আর দেখা যায় না

এখন এ ঘরে আর পাখি নেই

সব পাখি মরে গেছে

অন্ধকারে জাগাবার কেউ নেই এখন

মৃত প্রদীপের কাছে আলোর গুনগুন

স্মৃতির ধুলো হয়ে আছে


পাশ ফিরছি

এপাশে ওপাশে ধূসর নিশ্চুপ

শূন্যের ছবি আঁকছে সারারাত


অভিমান ফিরে আসেনি কোনওদিন

চোখের জল মুছে সেও এখন গার্হস্থ্য সৈনিক

পৃথিবীতে কোথাও তার গৃহ আছে

অবেলার রঙে হয়তো এখনো আলতা পরে

নির্বিবাদে হেঁটে যায় পৃথিবীর পথে


এক একটি দিন যায় এক একটি রাতের দিকে

সমস্ত যুদ্ধের শেষে আর কি সকাল আসবে আমাদের?

আগামীকাল অথবা আর একটি সকাল

বড় অনিশ্চিত মনে হয় পৃথিবীর কাছে...


আমাদের গৌরব
=========

অনেক অনেক দিন ধরে আমরা কেঁদে চলেছি

আমাদের শেষ হাসিটি কেমন ছিল তা আজ আর স্মরণ করতে পারি না

যুগান্তরের পথে পথে ভাঙা যুদ্ধজাহাজের ভেতর

আমাদের পূর্বপুরুষেরা আত্মগোপন করেছিল তারপর বহুদিন পর ইতিহাস খুঁজে খুঁজে

আমরা নির্মাণ করেছি গৌরব


অন্ধকার নেমে এলে প্রতিদিন গৌরবকে খুঁজি

গৌরব এসে আলো জ্বেলে দিক

সব রাস্তা বন্ধ হয়ে গেলে গৌরবকে ডাকি

গৌরব এসে রাস্তা খুলে দিক


সংঘাত আর প্রবঞ্চনার ভেতর দিয়ে যেতে যেতে

আমাদের সামঞ্জস্যহীন দৈন্য কণ্ঠরোধ করে দেয়

আমরা আত্মহত্যার কাছে পরামর্শ চাই

আমরা প্রতিহিংসার কাছে সমাধান চাই


আমাদের গৌরব তখন দূরে দাঁড়িয়ে থাকে

প্রয়োজনহীন বিচ্ছিন্ন ধূসর ঘৃণ্য এক স্ট্যাচুর মতো।

 

 

 

 

 

 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন