ছুটির ফাঁদে
==================
তিন বছর আগে -
রণবিজয় সেন মুখ বিকৃত করে বলল - যত ঝামেলা সব সরকারী কর্মচারীদের। সপ্তাহে দুদিন মাত্র ছুটি। ইমার্জেন্সিতে তাও বাতিল। সরকারের অনেক ট্যাক্স বকেয়া আছে - যাও, রবিবার অফিস খুলে বস।কন্ট্রাক্টরকে জরুরী ভিত্তিতে পেমেন্ট করতে হবে, দালালের টাকা বুঝিয়ে দিতে হবে, নানারকম হতশ্রী প্রকল্পের আজ শেষ দিন- ছুটির দিনেও তাই অফিস খুলতে হবে। সরকারী কর্মচারীদের ছুটি পাবলিক বা সরকার কেউ যেন সহ্য করতে পারে না।
ক্যালেন্ডারের পাতায় পরপর দু-চার দিন ছুটি থাকলেই সব গেল গেল রব।বিশেষ করে কাগজওয়ালারা হেডিং করবে "ছুটির ফাঁদে রাজ্য"- যেন যারা চাকরি করে ছুটি পাওয়া তাদের মহা অপরাধ। চাকরি করতে রণবিজয়ের আর ভালো লাগে না। অনেক দিন ধরেই সে ভাবছে চাকরি ছেড়ে একটা ব্যাবসা শুরু করবে। ভাবতে ভাবতে সত্যিই সে একদিন চাকরিটা ছেড়ে দিল।
রণবিজয় তার অফিসে বসে আছে। চোখে-মুখে তার খুশীর ছটা। সে এখন সফল ব্যবসায়ী। নিজের ঝাঁ চকচকে সাজানো গোছানো অফিস। তিন বছরে ব্যাবসাটা মোটামুটি দাঁড়িয়েছে। ৮-১০জন কর্মচারী নিয়ে অনেক পরিশ্রম করে সে এই জায়গায় এসেছে।নিজের চেম্বারে রিভলভিং চেয়ারে হেলান দিয়ে রণবিজয় ভাবে আরও আগে চাকরিটা ছেড়ে দিলে হত।
-স্যার,কাল টেন্ডারটা দেওয়া যায় নি। চেম্বারে ঢুকে ম্যানেজার বলল।
মুখে একরাশ বিরক্তি নিয়ে সোজা হয়ে বসে রণবিজয় বলল - কেন?
-স্যার, ওদের ম্যানেজার অসুস্থ। কাল আসে নি।
-আরও তো তিনদিন আছে -
ম্যানেজার মাথা নীচু করে বলল - না স্যার,সরকারী অফিস তো - কাল থেকে পরপর চারদিন ছুটি। বেঙ্গলি নিউ ইয়ার,গুড ফ্রাইডে,তারপর শনি - রবি -
রণবিজয় মনে মনে একটা গালাগাল দিয়ে বলল - সরকারী কাজে এত ছুটি হয়? তাহলে আর ব্যাবসা করব কিভাবে? পরপর চারদিন ছুটির মানে কি?
ক্ষোভে-হতাশায় রণবিজয় চেয়ারে গা এলিয়ে চোখ বুজে রইল।ম্যানেজার ততক্ষণে চেম্বার ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে।

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন