============
ছেলেটা স্নায়ু রোগে আক্রান্ত। বাইরে দেখে বোঝা মুশকিল। প্রকোপ সময়ের নিরিখে, ঘটনায়।
যে মেয়েটাকে সে ভালবাসে সেও খুব সুস্থ নয়। জেদী আর বদমেজাজি।
দুজনের ভালোবাসা আর ঝগড়া সমান্তরালভাবে ভাবে প্রভাহিত হয় তাদের জীবনে।
ছেলেটির বাবা সত্যবাদিন চট্টোপাধ্যায়, ছেলের জন্মানোর পরই কোন অঞ্জাত কারণে নিরুদ্দেশে
যাত্রা করেন। ওর অসহায় মা দামিনী নিরুপায় হয়ে এক খ্রিস্টান পাদ্রীকে বিবাহ করেন, ধর্মান্তরিত হয়ে।
ছেলে বাড়তে থাকে ওই খ্রিস্টান পাদ্রীর সাহায্যে এক চার্চের হোমে।সিদ্বার্থ পড়াশোনা শেষে বাড়ি এলে ওর মায়ের সঙ্গে ওর পিতার ঝামেলা বাঁধে।
"তোমার ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়ে দাও" - বাবা আদেশ করে।
মা নিরুপায় তবুও আকুতি জানায় - " এতদিন তো সিদ্বার্থ বাইরে ছিল এবার ওকে আমার কাছে থাকতে দাও।"
" না না তা হয় না " - বাবা জানায়।
"কেন ওকি তোমার ছেলে নয়?
" না হলে আমি কেন খরচ করলাম।"
" কিন্তু কোনদিনই ভালোবাসনি? " - মায়ের আক্ষেপ।
জেদী বাবা। ধনী মানুষ। এক বিবাহিত অসহায় মহিলাকে বিবাহ করে তার সন্তান কে পড়াশোনা শিখিয়ে মানুষ করেছেন। আর কি আশা করা যায়?
ভালোবাসা সেটা আপেক্ষিক মাত্র। পয়সা ছাড়া ভালোবাসা জানালা দিয়ে পালিয়ে যায়।
এইসময় ছেলে মা বাবার কাছে আসে এবং বলে - " হোয়াই ইউ আর ক্রায়িং? আই এম গোয়িং টু মাই ডেস্টিনেশন।"
মানসিক অবসাদ শুরু হয়। স্নায়ুযুদ্ধ আরম্ভ হয়।
মেধাবী মাথা অচিরেই রোগের শিকার হয়। পাড়ি দেয় মুম্বাই। ভাল চাকরি জুটে যায় তার। নিঃসঙ্গ জীবন শুরু হয়। ছাত্র জীবন তার সংগবদ্ব ছিলো।
এখন একেবারে একা।
সেই সুযোগে তাপ্তি এলো তার জীবনে প্রেম নিয়ে।
অফিসে আলাপ। মেধাবী মেয়ে। জেদী। সেও উচ্ছাশায় ঘর ছাড়া । মিশুকে।কর্ম্নজীবনে তার বিরাট সাফল্য আসে। উন্নতি আর উন্নতি। সিদ্বার্থ আর তাপ্তি এক হয়ে যায়।
শুরু হয় পথ চলা।এক সঙ্গে থাকা। ছয়মাস ভালোই কাটে। কিন্তু তাপ্তি উচ্চাশা তাকে বিপথে নিয়ে চলে।ক্রমশ ব্যভিচারের পথ নেয়। কর্ম্মে তার প্রমোশন আসে। মদ হোটেল বার নাইট ক্লাবে নিজেকে ডুবিয়ে রাখে সে।
সিদ্বার্থ বুঝতে পারে তাপ্তি তার গন্ডি ছাড়াচ্ছে। অনেক বোঝায়। লাভ হয় না।তাপ্তি তখন নেশায় মত্ত। সিদ্বার্থ ভালোবেসে ভুল করে। খেসারত দিতে
তাদের অবৈধ উত্তরাধিকারী কেও গোপনে বিসর্জন দিতে হয়। তাপ্তি সেই সুযোগ নেয়। সিদ্বার্থ কে ব্ল্যাকমেল করে।
স্নায়ুরোগের প্রকোপ বাড়ে।একদিন রাতে না জানিয়ে সিদ্বার্থ মুম্বাই ছাড়ে। পয়সার অভাব হয় নি। রোজগার আর তার পালিত পিতার দেওয়া সঞ্চয় ভালোই ছিল। উত্তর ভারত ঘুরে শেষে সে এল বিলাসপুরে। পৌঁছে গেল অমরকন্টক। খুঁজতে খুজঁতে এক সাধুবাবার সন্ধান পেল। নাম আনন্দ বাবা। সব কথা ভালোবেসে জানালো তাকে। সাধু বাবা তাকে আশ্রমে এনে রাখলো। সুন্দর আশ্রম আর সাধুদের দেখে মন ভরে গেল সিদ্বার্থ র। সে ওখানেই থেকে গেল।
প্রাকৃতিক পরিবেশে অনেক সুস্থ হয়ে উঠতে লাগলো। দিনরাত সাধুদের সঙ্গে কথা বলে কাজ করে আনন্দ পেতো। আর আনন্দ বাবা তাকে সব সুন্দর কথা বলতেন। মূল কথা ছিলঃ -"ত্যাগেই জীবন, তাতেই প্রাপ্তি আর তাতেই মুক্তি !
ভালোই কাটছিল সব। প্রাকৃতিক নিয়মে একদিন ভোরে প্রবীন সাধু আনন্দ বাবা ৮২ বছর বয়সে অচিন পূরে পাড়ি দিলেন। আনন্দ বাবার প্রয়ানে সিদ্বার্থ হতচকিত হয়ে পড়লো।
আশ্রমের শেষ প্রান্তে চিতা সাজানো হয়েছে। সাধুবাবা শায়িত। আশ্রমের নিয়মানুযায়ী পরবর্তী প্রবীন সাধু ওনার পূর্বজন্ম পাঠ করে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন।
সিদ্বার্থ একপাশে দাঁড়িয়ে। কোনো কথাই তার কর্ণে প্রবেশ করছে না। অনেক পুরোনো কথা। হঠাৎই একটা নাম শুনে সে সম্বিত ফিরে পেল।
" সত্যবাদিন চট্টোপাধ্যায় ছিল ওনার পূর্ব জন্মের নাম।"
ততক্ষণে চিতা প্রজ্বলিত করা হয়েছে। সিদ্বার্থ সময় নষ্ট না করে চিতার সামনে এগিয়ে গেল।
সব ঘটনা মিলে গেছে। তার পিতা তার সামনেই হারিয়ে যাচ্ছে। দু চোখ দিয়ে অশ্রু বারি ঝরে পড়তে থাকলো অগ্নিকাণ্ডে।
মনে পড়ে গেল তার বাবার কথাগুলো -" ত্যাগেই জীবন, তাতেই প্রাপ্তি আর তাতেই মুক্তি! "
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন