অন্যমনে সাহিত্য. অন্য রকম দৃষ্টিকোন থেকে দেখা একটি প্রতিবিম্ব ভাবনা .. অন্যমনে সাহিত্য.

শনিবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২২

অণুগল্পে উত্তম

  

 

বেঁচে থাকা
============


উনিশ বছরের অর্পণ জন্মদিনের দিন বিকেলে বন্ধুদের সাথে মোটর বাইক নিয়ে গিয়েছিল জি টি রোডে লং ড্রাইভে। ওদের বেলুরের বাড়িতে ছোট বোন ছাড়া আর কেউ জানত না অর্পণের এই অভিযানের কথা। অনেক রাত অবধি ছেলে বাড়িতে না ফেরায় চিন্তিত বাবা মাকে দাদার লং ড্রাইভের কথা জানাল অর্পণের দশ বছরের বোন অনিমা। নতুন চালানো শিখেই মোটর সাইকেল নিয়ে জি টি রোডের মত বিজি রাস্তায় গিয়েছে আর রাত সাড়ে বারোটা অবধি বাড়ি ফেরেনি দেখেই অর্পণের বাবা অনির্বাণ দত্ত পুলিশে খবর দিলেন আর মাঝ রাতে প্রায় আড়াইটা নাগাদ খবর এলো প্রায় দশ কিলোমিটার দুরে ডানকুনিতে জি টি রোডে অর্পণদের বাইক এক্সিডেন্ট হয়েছে। দুটো রক্তাত দেহ কলকাতায় নিয়ে আসা হয়েছে।

ভোর পাঁচটার সময় বাবা আর জি কর হাসপাতালে গিয়ে মৃতপ্রায় ছেলেকে সনাক্ত করলেন। বেলা সাড়ে আটটায় ডাক্তাররা জানাল অর্পণের ব্রেন ডেড হয়ে গেছে, ওকে আর বাঁচানো যাবেনা। হাসপাতালের বারান্দায় কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল অর্পণের বাবা মা আর অন্যান্য আত্মীয় বন্ধুরা। অনির্বাণ বাবু ছেলে তার উনিশ তম জন্মদিনেই ওদের ছেড়ে চলে যাওয়াটাকে কিছুতেই মানতে পারছিলেন না। শেষে উনি গিয়ে দেখা করলেন হাসপাতালের সুপারের সাথে ওর একটা বিশেষ আর্জি নিয়ে।

সেইদিনই অর্পণের দেহ থেকে দুখানা কিডনি, লিভার, পাঙ্ক্রিয়াস ও কর্নিয়া দাণ করে দেওয়া হল কলকাতার বিভিন্ন হাসপাতালের পাঁচজন রোগীর দেহে। শেষে অর্পণের মরদেহ তুলে দেওয়া হল অনির্বাণ পরিবারের হাতে বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ। অনির্বাণ বাবু তার একমাত্র ছেলের দেহের পাঁচটা অংশ পাঁচজনের জীবনে এখনো কাজ করে চলেছে এই সান্ত্বনা নিয়েই বাকি জীবনটা কাটিয়ে দেবেন ঠিক করে মরদেহ নিয়ে বাড়ি ফিরলেন ভগ্ন হৃদয়ে। দেওয়ালে টাঙ্গানো অর্পণের ফটোর দিকে তাকিয়ে ওঁর মনে হল ফটোর ভিতর থেকে অর্পণ যেন বাবার দিকে তাকিয়ে তখনো হাসছে। সজল নয়নে অনির্বাণ বাবু শুধু বললেন,’তুই বেঁচে থাকবি, কোনদিনই মরবিনারে হতভাগা। তোকে আমি মরতে দেবনা অর্পণ।‘

হয়ত অনেক মানুষের জীবনের অনাকাঙ্ক্ষিত সমাপ্তি এই ভাবেই কখনো শেষ হয়েও শেষ হয়না, আরও অনেকদিন এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকে।



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন