বেকসুর খালাস
==================
বিধানের বর্তমান বয়স তেতাল্লিশ , একটি বেসরকারি বিমা সংস্থায় সর্বনিন্ম স্তরের এজেন্ট । গ্র্যাজুয়েশনের তিন চার বছর পরেও কোন চাকরি পাওয়ার আশা না দেখে মায়ের গয়না বিক্রি করে বাড়ির কাছেই একটা ষ্টেশনারী দোকান করেছিল । দুতিন বছরে ব্যবসাটা মোটামুটি দাঁড়িয়ে গেলে বিয়েও করে নিয়েছিল , দেখাশোনা করে সামাজিক ভাবেই বিয়ে হয়েছিল ।
কিন্তু সে বিয়েটা সুখের হয়নি । বিয়ের পরেপরেই জানা গিয়েছিল তার স্ত্রী অনন্যা অন্য একজনকে ভালোবাসে , অভিভাবকরা ব্যাপারটা গোপন করে বিধানের সাথে বিয়ে দিয়েছিল । বিয়ের মাস দুয়েক পরেই মেয়েটি তার প্রাক্তন প্রেমিকের যোগাযোগ করে খোলাখুলি ভাবে মেলামেশা শুরু করার আত্মীয় প্রতিবেশী মহলে গুঞ্জন উঠেছিল । বিধান অনন্যার সাথে আলোচনা করেই মিউচ্যুয়াল ডিভোর্সের আবেদন করেছিল । ডিভোর্স পেতে অবশ্য আরো বছর দেড়েক লেগে গিয়েছিল ।
বিধান দ্বিতীয় বিয়ে করেনি , তবে ডিভোর্সের বছর পাঁচেক পরে বীথিকা নামের এক চাকুরীরতা মেয়ের সাথে তার আলাপ হয়ে গেল । বিধানের আচরনে মুগ্ধ হয়ে বীথিকা তাকে ভালবেসে ফেলল । বীথিকা জানিয়েছিল সে বিবাহিতা এবং তার একটি মেয়েও আছে । কিন্তু তাকে শ্বশুরবাড়িতে অনেক অত্যাচার সহ্য করতে হয় । সহমর্মী বিধান মেয়েটির ভালোবাসা অগ্রাহ্য করতে পারলো না । তারা দুজনেই যাতে নতুন করে সংসার পাততে পারে সেই উদ্দেশ্যে বিধান বীথিকাকে ডিভোর্সের মামলা করার পরামর্শ দিল ।
কিন্তু একতরফা ডিভোর্স পেতে অনেক সময় লেগে যায় আর তারা অপেক্ষা করতেও চায়নি । ফলস্বরূপ বিধান বিথিকার সাথে পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে তুলল । ওদিকে বিধানের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তুললেও বীথিকা ডিভোর্সের আবেদন করতে গড়িমসি করতে লাগল । সমাজের চোখে ব্যাপারটা দৃষ্টিকটু হয়ে দাঁড়াচ্ছে দেখে বিধান বিথীকার উপরে চাপ সৃষ্টি করল । বীথিকা কিন্তু ব্যাপারটা সহজভাবে নিল না ,সে বিধানের সাথে মেলামেশা ধীরে ধীরে কমিয়ে আনল এবং একসময়ে যোগাযোগ পুরোপুরি বন্ধ করে দিল ।
শুধু তাই নয় বীথিকা যে বাড়িতে ভাড়া থাকত সেখান থেকে একদিন উধাও হয়ে গেল , বিধানের ফোনও অন্য যোগাযোগের পথ বন্ধ করে দিল । বিধান বিভিন্ন জায়গায় বীথিকার খোঁজ শুরু করলে তার শ্বশুরবাড়ির পক্ষ থেকে বিধানের কাছে হুমকি ফোন আসতে শুরু করল । দিন কয়েক পরে বিধানের বাড়িতে পুলিশ এসে জানাল বীথিকা তার বিরুদ্ধে ধর্ষনের অভিযোগে দায়ের করেছে । বিধান নাকি স্বল্প পরিচয়ের সূত্রে তাকে বাড়িতে ডেকে পানীয়ের সাথে মাদক মিশিয়ে অচৈতন্য অবস্থায় ধর্ষণ করেছে । পুলিশ বিধানের কোন কৈফিয়তে কান না দিয়ে গেপ্তার করে কোর্টে তুলল ।
বিচারাধীন অবস্থায় নয়মাস জেলে কাটানোর পরে বিধান জামিনে মুক্তি পেল । এরপরে দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া শুরু হল । বীথিকার পক্ষ থেকে আদালতে বেশ কিছু ভুয়ো সাক্ষী পেশ করা হল , তাদের জেরা ও পাল্টা জেরার মাধ্যমে সময় বয়ে যেতে লাগল । উকিলরা তাদের নিজনিজ মক্কেলের পকেট হালকা করতে থাকল আর জজসাহেব একের পর এক শুনানির তারিখ ফেলতে লাগল । উকিলের খরচ যোগাতে বিধানকে তার দোকান বিক্রি করে দিতে হল আর মা ছেলের সংসার চালাতে বিমার দালাল হিসাবে নাম লেখাতে হল । পরিচিত মহল অবশ্য বিধানকে সন্দেহের চোখে দেখতে লাগল ।
বিধানের মোবাইলে বীথিকার সাথে সমস্ত কথাবার্তার কলরেকর্ড ও এসএমএস সেভ করে রাখা ছিল , সেইসঙ্গে হোয়াটস ম্যাসেজ ছবি ও ইমেল যোগাযোগের রেকর্ড ছিল । বিধান বীথিকার সঙ্গে তোলা অনেক ছবিও তার ফেসবুকএ পোষ্ট করেছিল । এছাড়া বিভিন্ন কেনাকাটার রশিদ , রেস্টুরেন্টের বিল ইত্যাদিও রেখে দিয়েছিল । বিধান শুনানির সময়ে উকিলের মাধ্যমে সেসব রেকর্ড আদালতে জমা দিয়ে বীথিকার অভিযোগের জবাব দিল ।
শুনানী শেষ হতে আটটি বছর কেটে গেল । ইতিমধ্যে দুবার বিচারক ও দুবার পুলিশের তদন্তকারি অফিসার বদল হয়েছে । অবশেষে গত মাসের মাঝামাঝি মাননীয় জজসাহেব স্টেট ভার্সেস বিধান কর এর মামলার অন্তিম রায় ঘোষণা করলেন । তিনি জানালেন আট বছর আগে বীথিকা রায় বিধান কর এর বিরুদ্ধে ধর্ষনের যে অভিযোগ করেছিলেন তার স্বপক্ষে কোন সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া যায় নি , এমতাবস্থায় বিধান করকে সমস্ত অভিযোগ থেকে বেকসুর খালাস দেওয়া হচ্ছে ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন