ভীতুরাম
===============
তখন সোহম ক্লাস নাইনে পড়ে। ডিসেম্বরের ছুটিতে সুমন স্যার সবাইকে নিয়ে বাঁকুড়া জেলার জয়পুর জঙ্গলে বনভোজন করতে গিয়েছিলেন। সারাদিন ঘোরাঘুরির পর একবারে পেট ভর্তি মাংস-ভাত খেয়ে দেয়ে ছেলে-মেয়েরা খুব ক্লান্ত হয়ে পড়ল। তাদের শরীরে চলার শক্তিটুকুও আর অবশিষ্ট নেই। এবার তারা কেবল বাসে বসে চলন্ত গাড়িতে ঘুমিয়ে কাদা হয়ে যাবার জন্য অপেক্ষা করছে। শীতের বেলা বড্ড ছোট। খাবার পর কাকুদের মাজা-ধোওয়া সারতে সারতে অন্ধকার নামল। সবাই সুমনদার নির্দেশমতো বাসে উঠে বসল কিন্তু বাস ছাড়ার সময় ঘটল এক বিপত্তি। বাসের পিছনের চাকাটা একটা বড়ো ছুঁচালো পাথরে ধাক্কা খেল আর সেই সঙ্গে টায়ারটা গেল পাংচার হয়ে। সবাই এদিকে তন্দ্রাচ্ছন্ন। হাঁকডাক করে ঘুম ভাঙিয়ে গাড়ি থেকে নামানো হল সকলকে। জঙ্গলে তখন অন্ধকার নামতে শুরু করেছে। ধীরে ধীরে চারদিকটা কেমন যেন ভয়ংকর হয়ে উঠছে। দূর থেকে শেয়ালের ডাক ভেসে আসছে। একসাথে অনেকগুলো পায়ের আওয়াজ পেয়ে সামনের বটগাছটার কোটরে আগুনের ভাটার মতো দেখতে কিছু দুটো জিনিস জ্বলে উঠল। তনয়া সেটা দেখিয়ে তনুময়কে বলল," ঐ দেখ গাছে শাঁকচুন্নি আছে। তোর দিকেই দেখছে।" মধুময় ছেলেটা লেখাপড়ায় ভালো হলেও ছিল একটু ভীতু প্রকৃতির। একথা শুনে ও কান্না জুড়ে দিল। একে গাড়ি খারাপ হয়েছে তার ওপর আবার এসব কাণ্ড দেখে সুমনদা প্রচণ্ড রেগে গেলেন আর তনয়ার গালে একটা চড় কষিয়ে দিলেন। এই ঘটনার জন্ম সবার মনটা একটু খারাপ হয়ে গিয়েছিল। তারপর গাড়ির ড্রাইভার নিতাইদা গাড়িতে মজুত পেট্রোল আর ছেঁড়া কাপড়ের সাহায্যে একটা মশাল বানিয়ে ফেলল চটজলদি। মশাল জ্বালাতেই আমরা দেখি কোনো ভূত-প্রেত নয়; গাছের কোটরে বসে আছে দুটো কুটুরে প্যাঁচা। ততক্ষণে তনুময়ের কান্না থেমেছে। আমরা নিজেদের মধ্যে নীচুস্বরে গল্প করছিলাম। কিছুক্ষণ পর গাড়ি সারানোর কাজ শেষ হল আর গাড়ি ছাড়ল রাত ৮:০০ পার সময় করে। আজ থেকে প্রায় ৬ বছর আগে ঘটনাটা ঘটেছিল। তবুও সেইদিনের ঘটনাটা মনে পড়লে এখনো তনয়ার খুব হাসি পায় নিজের মনে। তনুময় এখন ডাক্তারি পড়ছে। সেইদিনের ঐ ঘটনাটা নিয়ে এখনো বন্ধু মহলের সবাই তনুময়কে লাগায় ভীতুরাম বলে। সুমনদাও মাঝে মাঝে মজা করে সবাইকে এই গল্পটা শোনায় আর বলে ,"আমার ছাত্র ভীতুরাম একদিন সাহসীর মতো ছুড়িকাঁচি চালিয়ে কত মানুষকে জীবনদান করবে।"
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন