অন্যমনে সাহিত্য. অন্য রকম দৃষ্টিকোন থেকে দেখা একটি প্রতিবিম্ব ভাবনা .. অন্যমনে সাহিত্য.

সোমবার, ১৫ মার্চ, ২০২১

একটা লড়াকু মেয়ের গল্প

  
অণুগল্পে মৌসুমী রায়
===============




আজ বাঙাল সকালে বন্ধুর সাথে কথা বলেই ঠিক করে ফেলল আজ সে হাইকোর্ট দেখবেই দেখবে। রোজই তো প্রেমের পরকীয়ার গল্প লিখি, আজ নাহয় অন্য কিছু।

ফটাফট রান্না শেষ করে তৈরি হয়ে গেলাম। কিন্তু সে বন্ধুর শর্ত ছিলো একটা আমি উবের বা ট্যাক্সিতে আজ কিছুতেই উঠতে পারবো না। চল আমিও চ্যালেঞ্জ নিলাম, তুই পারলে আমিও পারব। প্রথমে বাসে করে গেলাম সুরেন্দ্রনাথ কলেজের কাছে। সে আসলো, আসার আগে বাড়ির রান্না বোনঝি কে স্কুলে পৌছে তবেই। তার মাঝে কিছু প্রিন্টিং এর কাজ সেরে ফেলেছে। এসেই একটা ফাঁকা বাসে আমায় নিয়ে গেলো লালদিঘী। সেখান থেকে হেঁটে হেঁটে কত কি দেখতে দেখতে এগোলাম হাইকোর্টের দিকে। দুটো ভাঙা বাড়ি দেখলাম, শুনলাম আগে নাকি সেখানে ফাঁসি দেওয়া হত। তারপর সেন্ট জনস চার্চ। ঢুকেই শুরু করলাম ছবি তুলে দে। এরপর গেলাম তার কর্মস্থলে। কত্ত আইনের বই!!!

শুনেছি পিঁপড়ে তার ওজনের থেকে ২০-৫০ গুণ বেশি ওজন তুলতে পারে। আজ তার প্রমাণ পেলাম। একটা রোগা ক্লান্ত মেয়ে কি অক্লেশে ৩০/৪০ টা মোটা মোটা আইনের বই একাই টেনে টেনে ট্যাক্সিতে তুললো তারপর আমায় নিয়ে চলল হাওড়া কোর্টে উকিলদের কাছে বই গুলো পৌছে দিতে। ট্যাক্সি ভাড়া আগেই দিয়ে দিলো যাতে আমি না দিই। তারপর আমায় একজায়গায় বসিয়ে সে ছুটোছুটি শুরু করল যার যার বই তার তার কাছে পৌছে দিতে। এবার আমি জোর করেই কয়েকটা বই ওর হাত থেকে কেড়ে নিয়ে বুঝতে পারলাম মেয়েটা প্রতিদিন কি অসম্ভব পরিশ্রম করে। আধ ঘন্টার মধ্যেই সব কাজ সেরে সে আবার এক ফাঁকা বাসে করে আমায় শিয়াদহ নিয়ে এলো। আমি প্ল্যান করছিলাম ট্যাক্সিতে ওঠার তার আগেই আমায় বাসে তুলে দিলো। সে ছুটলো ছাপাখানায় প্রচুর কাজ বাকি তার। ফিরতে হয়ত সন্ধ্যে গড়িয়ে যাবে।

এই সময় টুকুতে তাকে একবারো খাওয়ার তো দূর, জল খেতেও দেখলাম না। এই মেয়েটা আরো এমন ভারি ভারি কাজ করে যা আমি কল্পনাও করতে পারিনা। নিজেকে কেমন গ্র‍্যাসহপার মনে হচ্ছিলো আজ।

জানি এমন হাজার হাজার মেয়েরা প্রতিদিন বেঁচে থাকার জন্য কি পরিমাণ কষ্ট করে চলেছে রোজ। আর আমি সামান্য বাসে উঠতে চাপ খেয়ে যাই। নারীদিবসে বিশ্বাস করিনা কারণ প্রতিদিন নারী পুরুষ সকলেরই দিবস। যেমন ছাদ ধরে রাখতে গেলে খুঁটির প্র‍য়োজন। একটা ছাড়া আরেকটা অসম্ভব।

তাও আমার আজকের লেখা সেই মেয়েটার জন্য যাকে আমি উদয় অস্ত পরিশ্রম করতে দেখি,বন্ধুদের দরকারে এক ডাকে ছুটে আসতে দেখি। তার জন্য রইল এক আকাশ ভালোবাসা। ঈশ্বর গার্গীর এবং তার মত লড়াকু মেয়েদের কর্মক্ষমতা বজায় রাখুন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন