গরিব পরিবারে জন্মে দারিদ্র নিয়ে বেঁচে থাকাকে লড়াই বলে কিনা শিবনাথের জানা নেই । জীবনকে মেনে নিতেই সে শিখেছে । কোনো অভিযোগ নেই । থাকলেই বা কি ? কে শুনছে তার কথা ? পনের বছর বয়স থেকেই নেমে পড়েছে রোজগারের পথে । নির্দিষ্ট কোনো কাজ নেই । যখন যা পায় তাই করে । নিজেকে নিজে বোঝায় এই বলে যে পড়াশুনো জানি না , অফিসের চাকরি না ভাবাই ভালো । শারীরিক শ্রমের বিনিময়ে অর্থ উপার্জন করা ছাড়া গতি নেই । আঠেরো বছর বয়সে শিখে ফেলল অটো চালানো । কুড়ি বছর হতে না হতেই প্রথমে মারা গেল বাবা তারপর মা । একদম একা হয়ে গেল সংসারে । সেটা ছিল ভাড়া বাড়ি । অনেক মাসে বাড়ি ভাড়া বাকি । উঠিয়ে দিল বাড়িওয়ালা । পথই হল ঠিকানা । বেঁচে থাকাই কষ্টকর । খেয়ে না খেয়ে চলতে লাগলো দিন । সময়ের স্রোতে ভাসতে ভাসতে গিয়ে ঠেকলো ডাঙায় । পরিচয় হল এক ভদ্রলোকের সাথে । তিন তিনটে অটোর মালিক । শিবনাথকে দিল একটা । যেমন বাৎচিতে সবাই চালায় ।
মোটামুটি যখন রোজগার হওয়া শুরু হয়েছে , ধরে নিয়ে গেল পুলিশ । একসিডেন্ট কেস । যদিও তার দোষ নেই । সাইকেলে ডাবল বাইক করছিল এক স্কুলের ছাত্র । হাসপাতাল মোড়ে ডান দিকে হাত দেখিয়ে বা দিকে ঘুরেছে । কিছু করার ছিল না শিবনাথের । জামিনে ছাড়িয়ে আনল অটোর মালিক । এর পেছনে তার একটা উদ্দেশ্য ছিল । তার এক মেয়ে । মুখের একদিকটা পোড়া । বিবাহ যোগ্যা । শিবনাথকে প্রস্তাব দিলেন । রাজি হয়ে গেল শিবনাথ । মেয়ের সাথে অটোটাও দিয়ে দিলেন শিবনাথকে ।
পরপর দু বছরে দুই ছেলের বাবা হয়ে গেল সে । ছেলেদের বড় করা , মানুষ করা - সবই চলতে লাগলো । সময়ের নিয়মে বড় হয়ে উঠলো দুই ছেলে । দুজনেই বাজির কারখানায় কাজ জুটিয়ে নিল । বিয়ে দিলেন । বড়টির দুটি সন্তান । ছোটটির একটি । বয়স হয়েছে শিবনাথের । তবুও অটো চালায় । একদিন দুঃসংবাদ এল । বাজির কারখানায় আগুন লেগে গেছে । হতাহতের সংখ্যা সরকারি ভাবে জানা যায় নি । যেটা জানা গেছে সেটা হল শিবনাথের দুই ছেলেই মারা গেছে । দুই ছেলের মৃত্যু শোক সহ্য করতে পারলো না ওদের মা । অসুস্থ হয়ে পড়লো । তাকে সুস্থ করে তুলতে বিশাল খরচ । কোথায় পাবে অত টাকা ? তবুও চেষ্টার ত্রুটি নেই শিবনাথের । । দুই পুত্র বধূ আর তিনটে নাতি নাতনির দায়িত্ব তার কাঁধে এসে পড়লো । শিবনাথ জানে না সে জীবনের সাথে লড়াই করছে কিনা । কাকে বলে লড়াই ? ছোট থেকে মেনে নিতে শিখেছে । এবারও মেনে নিল । কফিনে শেষ পেরেকটা পোতা এখনও বাকি |
ছোট নাতিটার কিডনির সমস্যা ধরা পড়েছে । কাঁদছে ছেলেটা । ঠিক মত বাথরুম করতে পারছে না । ডাক্তার দেখানো হল । দুটো কিডনি খারাপ । প্রচুর টাকার প্রয়োজন । কোথাও এতটুকু সম্বল নেই । যাকে মারে তাকে বোধ হয় ভগবান এই ভাবেই মারে । নিরুপায় বৃদ্ধ মানুষটা বিক্রি করে দিল বহু কষ্টে কেনা জমি আর তার ওপরে বানানো দু কামরার ঘর । জানেনা কোথায় থাকবে ? নিজে কি খাবে আর বাকিদেরই বা কি খাওয়াবে ? দুচোখের জলের ধারা বাঁধ মানল না । চোখ মুছে উঠে দাঁড়ালো শিবনাথ । কাঁদলে হবে না । বাঁচতে তাকে হবেই । এতগুলো প্রাণী তার মুখ চেয়ে আছে । যদি এই বেঁচে থাকার নাম লড়াই হয় তাহলে সেই লড়াই শেষ পর্যন্ত সে লড়ে যাবে । লড়াইয়ের ময়দান সে কিছুতেই ছাড়বে না । শিবনাথ জানে ময়দান যে ছাড়ে সে কোনোদিন জিততে পারে না । মাটি কামড়ে পড়ে থাকবে সে ।
পরপর দু বছরে দুই ছেলের বাবা হয়ে গেল সে । ছেলেদের বড় করা , মানুষ করা - সবই চলতে লাগলো । সময়ের নিয়মে বড় হয়ে উঠলো দুই ছেলে । দুজনেই বাজির কারখানায় কাজ জুটিয়ে নিল । বিয়ে দিলেন । বড়টির দুটি সন্তান । ছোটটির একটি । বয়স হয়েছে শিবনাথের । তবুও অটো চালায় । একদিন দুঃসংবাদ এল । বাজির কারখানায় আগুন লেগে গেছে । হতাহতের সংখ্যা সরকারি ভাবে জানা যায় নি । যেটা জানা গেছে সেটা হল শিবনাথের দুই ছেলেই মারা গেছে । দুই ছেলের মৃত্যু শোক সহ্য করতে পারলো না ওদের মা । অসুস্থ হয়ে পড়লো । তাকে সুস্থ করে তুলতে বিশাল খরচ । কোথায় পাবে অত টাকা ? তবুও চেষ্টার ত্রুটি নেই শিবনাথের । । দুই পুত্র বধূ আর তিনটে নাতি নাতনির দায়িত্ব তার কাঁধে এসে পড়লো । শিবনাথ জানে না সে জীবনের সাথে লড়াই করছে কিনা । কাকে বলে লড়াই ? ছোট থেকে মেনে নিতে শিখেছে । এবারও মেনে নিল । কফিনে শেষ পেরেকটা পোতা এখনও বাকি |
ছোট নাতিটার কিডনির সমস্যা ধরা পড়েছে । কাঁদছে ছেলেটা । ঠিক মত বাথরুম করতে পারছে না । ডাক্তার দেখানো হল । দুটো কিডনি খারাপ । প্রচুর টাকার প্রয়োজন । কোথাও এতটুকু সম্বল নেই । যাকে মারে তাকে বোধ হয় ভগবান এই ভাবেই মারে । নিরুপায় বৃদ্ধ মানুষটা বিক্রি করে দিল বহু কষ্টে কেনা জমি আর তার ওপরে বানানো দু কামরার ঘর । জানেনা কোথায় থাকবে ? নিজে কি খাবে আর বাকিদেরই বা কি খাওয়াবে ? দুচোখের জলের ধারা বাঁধ মানল না । চোখ মুছে উঠে দাঁড়ালো শিবনাথ । কাঁদলে হবে না । বাঁচতে তাকে হবেই । এতগুলো প্রাণী তার মুখ চেয়ে আছে । যদি এই বেঁচে থাকার নাম লড়াই হয় তাহলে সেই লড়াই শেষ পর্যন্ত সে লড়ে যাবে । লড়াইয়ের ময়দান সে কিছুতেই ছাড়বে না । শিবনাথ জানে ময়দান যে ছাড়ে সে কোনোদিন জিততে পারে না । মাটি কামড়ে পড়ে থাকবে সে ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন