একসময় খুব এফ.এম. শুনতাম। তখন সদ্যসদ্য চালু হয়েছে কলকাতায়। ২০০০ সালের আশপাশটায় হবে। তখন আমাদের কলেজের দিন চলছে। একদিকে প্রেমের জন্য মন উড়ুউড়ু। অন্যদিকে পরীক্ষার চিন্তায় বুক দুরুদুরু। অদ্ভুদ এক আলোআধাঁরি বয়স। ভুল করতে সাধ হয়। আবার ভুল হয়ে যাবে, ভেবে ভয়ও হয়। ভয়-ভাবনা-ভাললাগা মেশানো চিরন্তন এক মায়াবী বয়ঃসন্ধির নামই তো ‘যৌবন’!
সারাদিন ধরে সঞ্চয় করা কত কিছু ভাললাগা, মন্দলাগার অনুভূতি নিয়ে রাতে আস্তে করে রেডিওর নবটা অন করা মাত্রই শোনা যেত আর.জে. বলছেন, ‘বলুন তো, সেই মুহূর্তটা ঠিক কেমন ছিল, যখন আপনি প্রথম অনুভব করেছিলেন কারোর ভালবাসার জন্য আপনি সবকিছু করতে পারেন? বাইশ-বিরাশি-বাইশ-বিরাশি আমাদের নম্বর। ফোন করুন। আমি আছি আজ রাতে আপনাদের সাথে। আপনাদের একান্ত রেডিও মিরচিতে...!’ সঙ্গে সঙ্গে বেজে উঠতো মন দুলিয়ে দেওয়া কোনো একটা মিষ্টি গান। সে বাংলা হোক বা হিন্দি... অনুভবের কি ভাষাজ্ঞান থাকতে আছে! যাহা কান কাঁদায়, তাহাই প্রাণ কাঁদায়!
আমাদের মধ্যে যে দু-একজন বন্ধু-বান্ধবীর কলেজ লাইফে প্রেম করার সৌভাগ্য হয়েছিল, তাদেরকে দেখতাম আর ভাবতাম, বড় যত্ন করে এদের বরাত রচনা করেছেন বিধাতা মহাশয়। আর আমাদের বেলায় শুধু কাজ চালানোর মত কিছু একটা লিখে দিয়ে দাসয় সেরেছেন।
কলেজ যাবার সময় শিয়ালদা স্টেশনে হুড়মুড় করে ট্রেন থেকে নামতাম সবাই। অত ভিড়। কে কার দিকে তাকায়। তারই মধ্যে দেখতাম হয়তো কোনো বন্ধুর প্রেমিকা আগে থাকতেই প্ল্যাটফর্মে এসে দাঁড়িয়ে ছিল তার জন্য। ভিড়ের মধ্যে ব্যস্ত দুটো চোখ আতিপাতি করে খুঁজছে প্রাণের মানুষটাকে। দেখতে পাওয়া মাত্রই অদ্ভুদ এক ঝিলমিলভাব ছড়িয়ে পড়তো চোখের তারায়। জগতের সমস্ত পুলক যেন এসে জমাট বেঁধেছে সেই চাহনিতে। সেই পুলকিত চাহনির থেকে মূল্যবান আর যে কিছু থাকতে পারে পৃথিবীতে, তা যেন বিশ্বাসই হতে চাইত না সে বয়সে!
কলেজ যাবার সময় শিয়ালদা স্টেশনে হুড়মুড় করে ট্রেন থেকে নামতাম সবাই। অত ভিড়। কে কার দিকে তাকায়। তারই মধ্যে দেখতাম হয়তো কোনো বন্ধুর প্রেমিকা আগে থাকতেই প্ল্যাটফর্মে এসে দাঁড়িয়ে ছিল তার জন্য। ভিড়ের মধ্যে ব্যস্ত দুটো চোখ আতিপাতি করে খুঁজছে প্রাণের মানুষটাকে। দেখতে পাওয়া মাত্রই অদ্ভুদ এক ঝিলমিলভাব ছড়িয়ে পড়তো চোখের তারায়। জগতের সমস্ত পুলক যেন এসে জমাট বেঁধেছে সেই চাহনিতে। সেই পুলকিত চাহনির থেকে মূল্যবান আর যে কিছু থাকতে পারে পৃথিবীতে, তা যেন বিশ্বাসই হতে চাইত না সে বয়সে!
এখন যখন রোজ অফিস যাবার সময় শিয়ালদা স্টেশনে নামি। দেখি, কত মানুষ পাগলের মত এদিক ওদিক ছুটছে। প্রায় সকলেরই চোখে মুখে যান্ত্রিক ব্যস্ততা। কেউ কারোর দিকে একপলক তাকানোর ফুরসত নেই। নিরন্তর ব্যাস্ত এই ভিড়ের মাঝে ক্বচিৎ-কখনো দু-এক টুকরো এমন ঘটনাও চোখে পড়ে যায়, যা দেখে মনের ভিতরটা আলোকিত হয়ে ওঠে হঠাৎ। মনে হয়, যতই কংক্রিটের জঙ্গল হয়ে যাক কলকাতা, কিছু প্রজাপতি চুপিচুপি আজও ওড়ে এখানে ওখানে!
এই সেদিনকার ঘটনা। ট্রেন ধরার জন্য এসে দাঁড়িয়েছি স্টেশনে। চারপাশে ইতস্তত অপেক্ষারত জনতা। হঠাৎ এক দম্পতির দিকে চোখ পড়ল। বেশভূষা দেখে মনে হয়, গন্তব্য ক্যানিং বা লক্ষ্মীকান্তপুর হবে। ট্রেন দেয়নি। কর্তা হাঁ-করে তাকিয়ে রয়েছে বোর্ডের দিকে। গিন্নি তাকে ডেকে কি একটা যেন বলতে চাইল। কর্তামশাই একটু নড়েচড়ে উঠল। তারপর কোথায় যেন চলে গেল। একটু পরে ফিরে এল একটা কেক হাতে নিয়ে। সেটা গিন্নির হাতে দিয়ে যথারীতি আবার বোর্ডের দিকে হাঁ। গিন্নি যত্ন করে কেকের ছালটা ছাড়ালো খুব আস্তেআস্তে। যাতে ছালের সাথে কেকের একটুও খোসা খসে না যায়। তারপর আরেকবার ডাক পড়ল কর্তার। অর্থাৎ এক কামড় নেবার আবেদন। কর্তামশাই সটান বলে দিলেন, না। এবার শুরু জোরাজুরির পর্ব। কর্তাও খাবে না। গিন্নিও ছাড়বে না। অনেক পিড়াপীড়ির পর শেষে বাধ্য হয়ে একটা কামড় নিতেই হল কর্তামশাইকে। আঃ! ঠিক সেই মুহূর্তটা! গিন্নির চোখের তারার চারপাশে দেখতে পেলাম সেই অমোঘ পুলকের ঝিলমিলানি। চারদিকে এত ভিড়, এত কোলাহলের মাঝেও কোথায় যেন বেজে উঠেছে রেডিও মিরচির সেই মন দুলিয়ে দেওয়া মিষ্টি গানটা। সে বাংলা হোক বা হিন্দি! ভাষায় আর কি আসে যায় ভাই!
ভাবতে ভাল লাগে, এত বছর কেটে যাবার পরেও শিয়ালদা স্টেশনটা আজও একইরকম রোম্যান্টিক থেকে গেছে, যেমনটা আমাদের কলেজের দিনগুলোতে ছিল।
এই সেদিনকার ঘটনা। ট্রেন ধরার জন্য এসে দাঁড়িয়েছি স্টেশনে। চারপাশে ইতস্তত অপেক্ষারত জনতা। হঠাৎ এক দম্পতির দিকে চোখ পড়ল। বেশভূষা দেখে মনে হয়, গন্তব্য ক্যানিং বা লক্ষ্মীকান্তপুর হবে। ট্রেন দেয়নি। কর্তা হাঁ-করে তাকিয়ে রয়েছে বোর্ডের দিকে। গিন্নি তাকে ডেকে কি একটা যেন বলতে চাইল। কর্তামশাই একটু নড়েচড়ে উঠল। তারপর কোথায় যেন চলে গেল। একটু পরে ফিরে এল একটা কেক হাতে নিয়ে। সেটা গিন্নির হাতে দিয়ে যথারীতি আবার বোর্ডের দিকে হাঁ। গিন্নি যত্ন করে কেকের ছালটা ছাড়ালো খুব আস্তেআস্তে। যাতে ছালের সাথে কেকের একটুও খোসা খসে না যায়। তারপর আরেকবার ডাক পড়ল কর্তার। অর্থাৎ এক কামড় নেবার আবেদন। কর্তামশাই সটান বলে দিলেন, না। এবার শুরু জোরাজুরির পর্ব। কর্তাও খাবে না। গিন্নিও ছাড়বে না। অনেক পিড়াপীড়ির পর শেষে বাধ্য হয়ে একটা কামড় নিতেই হল কর্তামশাইকে। আঃ! ঠিক সেই মুহূর্তটা! গিন্নির চোখের তারার চারপাশে দেখতে পেলাম সেই অমোঘ পুলকের ঝিলমিলানি। চারদিকে এত ভিড়, এত কোলাহলের মাঝেও কোথায় যেন বেজে উঠেছে রেডিও মিরচির সেই মন দুলিয়ে দেওয়া মিষ্টি গানটা। সে বাংলা হোক বা হিন্দি! ভাষায় আর কি আসে যায় ভাই!
ভাবতে ভাল লাগে, এত বছর কেটে যাবার পরেও শিয়ালদা স্টেশনটা আজও একইরকম রোম্যান্টিক থেকে গেছে, যেমনটা আমাদের কলেজের দিনগুলোতে ছিল।
ছেলেমানুষদের মত চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে, আমাদের বরাত রচনায় যতই অমনোযোগী হয়ে থাকো ভগবানবাবু, দুঃখ নেই। কেবল খেয়াল রেখ, এই কলকাতা শহরটা যেন কখনো ভালবাসতে ভুলে না যায়!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন