এই সমাজে সকলে ভালবাসার রাজপ্রাসাদ বানতে চায়, ভালোবাসা ছাড়া এই পৃথিবীতে কিছুই আর নেই, কিন্তু ভালবাসার রাজপ্রাসাদ বানানো অতো সহজ নয়! জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে ঘাত প্রতিঘাত, দুঃখ বেদনা, আশা নিরাশা থাকবেই , আর জীবনের এসব উপাদানগুলো নিয়েই আমাদের চলতে হবে! একটা কথা আছে-" আমরা যা চাই ভুল করে চাই, আর যা পাই তা চাই না!" তাছাড়া জীবন ও সোজা পথে চলে না, কখনো কখনো সে বাঁক নেয়! শুধু তাই নয় এমন বেঁকে যায় যে আর সহজে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে না, যেন মিয়েন্ডার, জীবন ছন্দহীন পথে এত আকাবাকা গতিতে দৌড়াতে থাকে যে তার পরিণতির ইতিহাস হয়তো বিধাতারও অজানা!
সময়টা আট এর দশকের মাঝামাঝি হবে, আমি তখন কালনা কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র, সাধারণত কালনা- মালডাঙ্গা রুটের বাস ধরে যাতায়াত করি, একদিন কলেজ থেকে বেরিয়ে বাসস্ট্যান্ডের দিকে যাচ্ছি, এমন সময় বাণিজ্য বিভাগের আমার এক বন্ধু জানালো যে ধাত্রীগ্রামের রেল গেটের কাছে এক বাস দুর্ঘটনা হয়েছে যার জন্য কালানা বর্ধমান রুটে আজ বাস চলাচল বন্ধ আছে, পল্লাম মহাবিপদে! যাইহোক একটা সমাধান সূত্র বেরিয়ে এলো, একজন হকার বলল-'আরে অত চিন্তা করছো কেন বৌচি দিয়ে চলে যাও, খুব অল্পসময়ের মধ্যেই মেমারি পৌঁছে যাবে!' আর দেখে কে! সবাই মিলে হল্লা করে কালনা বৈঁচি বাস ধরলাম।
এই লাইনের বাসগুলো তুলনামূলকভাবে ভিড় কম থাকে! এত কলেজ স্টুডেন্ট কে একসাথে দেখে তো কন্ডাক্টরের মাথায় হাত, রাগে বলে উঠলো-'তেজপাতার বস্তা! বয়াই সার! তখনকার দিনে বাসে স্কুল- কলেজ স্টুডেন্টদের ভাড়া খুবই কম ছিল! অনেকে আবার ভাড়াই দিত না , এই নিয়ে কত ঝুট ঝামেলা হতো, তা বলে শেষ করা যাবেনা! যাই হোক বাসটা কালনা গেট পেরিয়েছে, অমনি একটা আধ পাগলা হন্তদন্ত হয়ে বাসে উঠলো, উস্কোখুস্কো চুল, জামা প্যান্ট ধুলোময়,, তবে বেশভূষায় কিন্তু কৌলিন্য আছে ! তাকে দেখেই তো কন্টাকটার তেরে গালো, সঙ্গে সঙ্গে সে দু'চারটে ইংরেজি ও ঝেড়ে দিলো কন্টাকটার দিকে! সবাইতো হো হো করে হেসে উঠলো! কন্টাকটারের রাগ উদাও! মুখে মুচকি হাসির রেখা!'তুই পারিস ভবা' - মনে হল কন্টাকটারের বহুদিনের পরিচিত! পাশের ভদ্রলোক আমায় বলল এই ভিখারির হৃদয় ভাঙার ইতিহাস-" তিনি একজন বিখ্যাত ইঞ্জিনিয়ার! নাম ভবানন্দ গোস্বামী! বাড়ি বৌচির আশেপাশে কোন এক গ্রামে, খুব বনেদি ফ্যামিলির ছেলে! যথেষ্ট নামডাক ছিল! এখনো পৈত্রিক ধনসম্পত্তি প্রচুর আছে! রাজ প্রাসাদের মতো বাড়ি! আজ ভিখারির অবস্থা ! এক ভাইপো আছে! সেই মাঝে মাঝে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে যায়! ময়লা জামা প্যান্ট ছাড়িয়ে আবার নতুন জামা প্যান্ট পরিয়ে দেয়! কিন্তু দুই এক দিন! সুযোগ পেলেই আবার রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে! কখনো বাস স্ট্যান্ড! কখনো বাজার! কখনোবা রেলওয়ে প্ল্যাটফর্ম! তার কাছেই জানলাম যে এর পেছনে আছে হৃদয় ভাঙ্গার এক করুন কাহিনী!
ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে পড়তেই ভদ্রলোক এক সুন্দরী ডাকসাইটে ভদ্র মহিলার প্রেমে পড়ে! বেশ চলছিল জীবন! ভালবাসার রাজপ্রাসাদ গড়ার স্বপ্ন দেখছিল! ঠিক সেই সময় ঘটলো বিপত্তি! মেয়েটির বাবা এই ভালোবাসা মেনে নিতে পারেনি! শুধু তাই নয়, তার অন্যত্র বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লাগে! এক ব্যাঙ্ক অফিসারের সঙ্গে বিয়ে ও ঠিক হয়! এই ভালোবাসাকে মর্যাদা দিতে বিয়ের আগের দিন মেয়েটি আত্মহত্যা করে! ভবানন্দ তখন বাঙ্গালোরে এক হঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার! কলকাতায় ফিরে ভবানন্দ এক বন্ধু মারফৎ এই দুর্ঘটনার কথা জানতে পারে, তারপর থেকেই ভবানন্দ নিজেকে হারিয়ে ফেলে, মাঝে মাঝে উধাও হয়ে যায়! আবার ফিরে আসে! এই ভাবেই চলছে ওর জীবন!
বাস বৈঁচি ঢুকব ঢুকব হচ্ছে! আমি হ্যাঁ করে এক দৃষ্টিতে ভবানন্দের দিকে চেয়ে আছি! মনে মনে ভাবলাম একবার ডাকি! পাশে বসাই! হৃদয় ভাঙ্গা ইতিহাস শুনি! রাজপ্রাসাদ থেকে ভিখারি হওয়ার কাহিনী! ডাকবো ডাকবো ভাবছি ! আবার সেই একই ভঙ্গিতে ইংরেজি ফোয়ারা ছুটিয়ে ভবানন্দ বাস থেকে নেমে গেল! আবার হয়তো অন্য কোথায় অন্য কোনোখানে! রাজপ্রাসাদ থেকে ভিখারী! না জানি জীবন আঁকাবাঁকা পথে কোথায় গিয়ে থামবে?
সময়টা আট এর দশকের মাঝামাঝি হবে, আমি তখন কালনা কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র, সাধারণত কালনা- মালডাঙ্গা রুটের বাস ধরে যাতায়াত করি, একদিন কলেজ থেকে বেরিয়ে বাসস্ট্যান্ডের দিকে যাচ্ছি, এমন সময় বাণিজ্য বিভাগের আমার এক বন্ধু জানালো যে ধাত্রীগ্রামের রেল গেটের কাছে এক বাস দুর্ঘটনা হয়েছে যার জন্য কালানা বর্ধমান রুটে আজ বাস চলাচল বন্ধ আছে, পল্লাম মহাবিপদে! যাইহোক একটা সমাধান সূত্র বেরিয়ে এলো, একজন হকার বলল-'আরে অত চিন্তা করছো কেন বৌচি দিয়ে চলে যাও, খুব অল্পসময়ের মধ্যেই মেমারি পৌঁছে যাবে!' আর দেখে কে! সবাই মিলে হল্লা করে কালনা বৈঁচি বাস ধরলাম।
এই লাইনের বাসগুলো তুলনামূলকভাবে ভিড় কম থাকে! এত কলেজ স্টুডেন্ট কে একসাথে দেখে তো কন্ডাক্টরের মাথায় হাত, রাগে বলে উঠলো-'তেজপাতার বস্তা! বয়াই সার! তখনকার দিনে বাসে স্কুল- কলেজ স্টুডেন্টদের ভাড়া খুবই কম ছিল! অনেকে আবার ভাড়াই দিত না , এই নিয়ে কত ঝুট ঝামেলা হতো, তা বলে শেষ করা যাবেনা! যাই হোক বাসটা কালনা গেট পেরিয়েছে, অমনি একটা আধ পাগলা হন্তদন্ত হয়ে বাসে উঠলো, উস্কোখুস্কো চুল, জামা প্যান্ট ধুলোময়,, তবে বেশভূষায় কিন্তু কৌলিন্য আছে ! তাকে দেখেই তো কন্টাকটার তেরে গালো, সঙ্গে সঙ্গে সে দু'চারটে ইংরেজি ও ঝেড়ে দিলো কন্টাকটার দিকে! সবাইতো হো হো করে হেসে উঠলো! কন্টাকটারের রাগ উদাও! মুখে মুচকি হাসির রেখা!'তুই পারিস ভবা' - মনে হল কন্টাকটারের বহুদিনের পরিচিত! পাশের ভদ্রলোক আমায় বলল এই ভিখারির হৃদয় ভাঙার ইতিহাস-" তিনি একজন বিখ্যাত ইঞ্জিনিয়ার! নাম ভবানন্দ গোস্বামী! বাড়ি বৌচির আশেপাশে কোন এক গ্রামে, খুব বনেদি ফ্যামিলির ছেলে! যথেষ্ট নামডাক ছিল! এখনো পৈত্রিক ধনসম্পত্তি প্রচুর আছে! রাজ প্রাসাদের মতো বাড়ি! আজ ভিখারির অবস্থা ! এক ভাইপো আছে! সেই মাঝে মাঝে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে যায়! ময়লা জামা প্যান্ট ছাড়িয়ে আবার নতুন জামা প্যান্ট পরিয়ে দেয়! কিন্তু দুই এক দিন! সুযোগ পেলেই আবার রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে! কখনো বাস স্ট্যান্ড! কখনো বাজার! কখনোবা রেলওয়ে প্ল্যাটফর্ম! তার কাছেই জানলাম যে এর পেছনে আছে হৃদয় ভাঙ্গার এক করুন কাহিনী!
ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে পড়তেই ভদ্রলোক এক সুন্দরী ডাকসাইটে ভদ্র মহিলার প্রেমে পড়ে! বেশ চলছিল জীবন! ভালবাসার রাজপ্রাসাদ গড়ার স্বপ্ন দেখছিল! ঠিক সেই সময় ঘটলো বিপত্তি! মেয়েটির বাবা এই ভালোবাসা মেনে নিতে পারেনি! শুধু তাই নয়, তার অন্যত্র বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লাগে! এক ব্যাঙ্ক অফিসারের সঙ্গে বিয়ে ও ঠিক হয়! এই ভালোবাসাকে মর্যাদা দিতে বিয়ের আগের দিন মেয়েটি আত্মহত্যা করে! ভবানন্দ তখন বাঙ্গালোরে এক হঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার! কলকাতায় ফিরে ভবানন্দ এক বন্ধু মারফৎ এই দুর্ঘটনার কথা জানতে পারে, তারপর থেকেই ভবানন্দ নিজেকে হারিয়ে ফেলে, মাঝে মাঝে উধাও হয়ে যায়! আবার ফিরে আসে! এই ভাবেই চলছে ওর জীবন!
বাস বৈঁচি ঢুকব ঢুকব হচ্ছে! আমি হ্যাঁ করে এক দৃষ্টিতে ভবানন্দের দিকে চেয়ে আছি! মনে মনে ভাবলাম একবার ডাকি! পাশে বসাই! হৃদয় ভাঙ্গা ইতিহাস শুনি! রাজপ্রাসাদ থেকে ভিখারি হওয়ার কাহিনী! ডাকবো ডাকবো ভাবছি ! আবার সেই একই ভঙ্গিতে ইংরেজি ফোয়ারা ছুটিয়ে ভবানন্দ বাস থেকে নেমে গেল! আবার হয়তো অন্য কোথায় অন্য কোনোখানে! রাজপ্রাসাদ থেকে ভিখারী! না জানি জীবন আঁকাবাঁকা পথে কোথায় গিয়ে থামবে?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন