অন্যমনে সাহিত্য. অন্য রকম দৃষ্টিকোন থেকে দেখা একটি প্রতিবিম্ব ভাবনা .. অন্যমনে সাহিত্য.

শনিবার, ১২ মার্চ, ২০২২

ভালোবাসায় সাবিত্রী


  



মনের অগোচরে
================
সাবিত্রী দাস
================


আজও সেই দিনগুলো বারবার এমন করে কেন যে ফিরে ফিরে আসে মিতা ভেবে পায় না ।সে তো সেই কবেকার কথা! কবেই সেসব চুকেবুকে গেছে। আসলে সব মিটে গেছে ভাবলেও সত্যিই মিটে যায় কি! দেখতে দেখতে কম দিন তো আর হলো না !

তবুও সেই এক ভাবনা! ছবির মতো আজও সব পরপর ভেসে ওঠে।

মানুষ যখন নিজের মনের উপর আধিপত্য করতে পারে না তখনই বোধহয় না চাইলেও এই ভাবনাগুলো এসে পড়ে। সত্য সত্যই কী মিতা আর এসব ভাবতে চায় না! নাকি মনের অবচেতনে গভীরে গোপনে একান্ত আপনার ধন হয়ে আজ ও রয়ে গেছে ভালবাসার সেই অধ্যায়টুকু।

কলেজের ফাংশানে প্রথম যেদিন দেখেছিল চোখের পলক পড়ে নি ,সেদিন মিতাও মুগ্ধ দৃষ্টিতে। প্রথম দেখাতেই বোধহয় কিছু একটা হয়ে গেছিল সেদিন।

তারপরের দিনগুলো কেমন করে যে কেটে গেল, দুজনের কেউই বুঝতে পারল না।

ওদের বন্ধু অনেক,শুভাকাঙ্ক্ষী তার চাইতেও অনেক বেশী ,তাই ওদের মেলামেশার খবর পৌঁছাতেও দেরী হলো না। মমতার বাড়ীতে বিয়ের সমন্ধে দেখা শুরু হয়ে গেল জোর কদমে।

মিতা চাইলো সোহমের সাথে ঘর বাঁধতে।

-তোমাকে আমার জীবন সাথী করে পেতে চাইলেও সে সাধ মেটাই এমন সাধ্য আমার নেই ।

-অপেক্ষা করতে তো পারি! বলেছিল মিতা।

-আমার চাকরী নেই তাই তোমার বিয়ে ঠিক হওয়ার খবর পেয়েও মুখ চূণ করে ঘুরে বেড়ানো ছাড়া আর কিই বা করার আছে বলতে পারো! পারলে আমাকে ভুলে যেও।' চলে গেছিল সোহম সেদিন।

মিতার বিয়ের দিন কষ্ট হয়েছিল,ভীষণ কষ্ট! তবুও যখন রবীন ডাকতে এলো, 'শরীর ভালো নেই ,'কথাটা শুনেও শুনলো না, যেতে হলো, বুক ফেটে কান্না আসছিল, তবুও মুখে হাসি নিয়ে ভোজ খাচ্ছিল, প্রথম প্রেমের মৃত্যুর পর যেন নিজের শ্রাদ্ধ বাসরের অনুষ্ঠান! কেবলই মনে হচ্ছিল পুরুষের কাঁদতে মানা যে! মেয়েদের অন্ততঃ নিজের শব বুকে বয়ে বেড়ানোর মতো গুরু দায়িত্ব তো থাকে না। পুরুষ বলেই বাড়ী ফিরে এসে কাঁদলো একান্ত গোপনে ,পুরুষের কান্না নাকি লজ্জার! মনে মনে মিতার উদ্দেশ্যে কতবার বলেছে,

'তুমি সেদিন বিয়ের পিঁড়িতে বসে টের পেয়েছিলে কী আমার হৃৎপিন্ড ব্যবচ্ছদের যন্ত্রণা!

তোমায় সুখী দেখে ভুলে ছিলাম আমার যত চাওয়া পাওয়া আর বঞ্চনার ব্যথা।

টের পাইনি বুকের ভেতরটা পুড়ে যাচ্ছিল অসম্ভব এক অগ্নিদাহের জ্বালায় তবুও পুরুষ বলেই আজও ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম বজ্রাহত তালগাছের মতো।'

সত্যিই কি তাই!মেয়েদের বুকের আগুনে পুড়ে খাক হয়ে যায় ভালবাসা! আর বেমালুম সব ভুলে যায়!

তাই যদি সত্যি হবে তবে আজ আটত্রিশ বছর বয়সে দুই সন্তান আর স্বামীর সাথে ভরা ভর্তি সংসারে থেকেও সোহমকে ভুলে যেতে পারলো না আজও ।অবসরের সময়টুকুতে নির্জনতার মাঝে আজও সেইদিন গুলো ছবির মতো পরপর উঠে আসতে থাকে। শুধু কী তাই! সোহমের সাথে কাল্পনিক কথোপকথনে মগ্ন হয়েছে কতবার! সেসব দিনের কথা ভাবতে গিয়ে কতবার যে নিজের মনেই হেসে উঠেছে !ধাতস্থ হতে লজ্জা ও পেয়েছে বৈকি। মুখখানি রাঙা হয়ে উঠেছে পলকেই ।

কলেজে পড়ার সময় দু’বছরের প্রেম পূর্ণতা পেল না।ব্যস সব শেষ । প্রেমের অস্তিত্ব হারিয়ে গেল বিয়ে,সংসার, সন্তানের ভিড়ে।

হারিয়ে যাওয়া মানে তো আর শেষ হয়ে যাওয়া নয়! হারিয়ে যাওয়া দিনগুলোর খোঁজে ব্যাকুল মন বারবার ফিরে ফিরে আসে তার কাছে, অতীত আর বর্তমান মিলেমিশে একাকার হয়ে ওঠে।

এই তো সেদিন নারী বনাম পুরুষ নিয়ে কথা হতে হতে তর্কাতর্কি!রেগে গিয়ে মুখ ফুলিয়ে মিতা ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে! ভাবছে কেমন জব্দ! ভাবছে আর হাসছে। আর সোহম ! দৌড়ে এসেছে সে। কি সাধ্য সাধনা!খুলবে না, কিছুতেই খুলবে না মিতা! থাক দাঁড়িয়ে। দরজা ঠকঠক করলেই বা কী। ওহ ,এত জোরে ঠকঠক করছে, কেউ না এসে পড়ে আবার! এতটুকুও আক্কেল নেই। দাঁড়াও দেখাচ্ছি তোমায়! ছুটে গিয়ে একটানে দরজাটা খুলে দেয় । এ কী ,মোতির মা ! মোতির মা বলে-' সেই কখন থেকে ঠকঠক করছি! ঘুমিয়ে গেছিলে বৌদি? '

হ্যাঁ গো, হ্যাঁ তাই। মোতির মা বাসন মাজতে শুরু করলো। ঘরে ঢুকে সোফায় বসে পড়ে মিতা। বুক খালি করে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে। ভাবতে থাকে সত্যি সত্যিই হঠাৎ যদি সোহম এসে পড়তো!

 

 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন