অন্যমনে সাহিত্য. অন্য রকম দৃষ্টিকোন থেকে দেখা একটি প্রতিবিম্ব ভাবনা .. অন্যমনে সাহিত্য.

শনিবার, ১২ মার্চ, ২০২২

ভালোবাসায় অনুষ্কা

  



এক শ্রাবণের সন্ধ্যাবেলায়
===================
অনুষ্কা বিশ্বাস
===================




কলেজে পড়ার সময় আলাপ হয় রিনি আর পলাশের। রিনি বড়োলোক বাবার একমাত্র মেয়ে আর পলাশ মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে। ওরা দুজনেই ইংরেজি নিয়ে কলেজে ভর্তি হয়।প্রথম প্রথম দুজন দুজনকে বন্ধু ছাড়া বেশি কিছু মনে করতো না কিন্তু আস্তে আস্তে তাদের মধ্যে সম্পর্কটা আরও গভীর হয়ে প্রেমে পরিনত হয়। এইভাবে কলেজের পড়াশোনা শেষ করে তারা দুজনেই ইউনির্ভাসিটিতে ভর্তি হয় মাস্টার্স কমপ্লিট করার জন্য। এই পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল তবে একদিন হঠাৎ করেই রিনিকে অন্য একটা ছেলের সাথে দেখে ফেলে তারপর আর কী যা হওয়ার তাই হলো। পলাশ আর রিনির মধ্যে দূরত্ব তৈরি হলো। সেই দূরত্বটা এমন পর্যায়ে চলে গেল যে পলাশ রিনিকে ছেড়ে এমনকি ওই ইউনির্ভাসিটি ছেড়ে অন্য ইউনির্ভাসিটিতে ভর্তি হয়। রিনি ভেবেছিল পলাশ তার কথা বুঝবে কিন্তু হাজার চেষ্টা করেও বোঝাতে পারেনি। এরপর কেটে গেছে বেশ কয়েকটা বছর। রিনি আর পলাশের মধ্যে কোনো সর্ম্পক নেই। তবে রিনি আজও পলাশের অপেক্ষায় দিন গোনে। মনে প্রাণে বিশ্বাস করে তার পলাশ তার কাছে ঠিক ফিরে আসবে। রিনি বর্তমানে একটা কলেজের অধ্যাপিকা। কলেজে সে ইংরেজি পড়ায়। নিজেকে কখনো সে একা মনে করেনা। মনে করে পলাশ সবসময় তার পাশে আছে। সেইজন্য সে অন্যকাউকে পলাশের জায়গায় বসাতে পারেনি। রিনির বাবা, মা চেষ্টা করেছিল রিনির বিয়ে দেওয়ার কিন্তু রিনি হাসিমুখে না করে দিয়ে বলেছিল, আমার পলাশ ফিরে এলে তাকে আমি কী উত্তর দেব? সে এখন ভালোই আছে কখনো কখনো গান গায় আবার বাড়ির কাউকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায়। বিশেষ করে বৃষ্টির সন্ধ্যায় কলকাতা শহরের এদিক ওদিক ঘুরতে ভালোবাসে রিনি। সেদিনও ঠিক এমনটাই করেছিল রিনি মায়ের হাজার বারণ সত্ত্বেও বেরিয়ে পড়েছিল বৃষ্টির মধ্যে তার সবথেকে প্রিয় ক্যাফের উদ্দেশ্য। ভেতরে ঢুকে একটা চেয়ারে বসতেই রিনি দেখতে পায় সে যে চেয়ারে বসে আছে ঠিক তার মুখোমুখি একটা চেয়ারে বসে আছে পলাশ। দুজনের চোখাচোখি হতেই পলাশ এগিয়ে গিয়ে রিনি যে টেবিলে বসেছিল সেই টেবিলের একটা চেয়ারে বসে কিছুক্ষন অপলক দৃষ্টিতে রিনির দিকে তাকিয়ে থেকে বলে, আমাকে ক্ষমা করে দাও রিনি। আমি ভুল বুঝেছিলাম তোমায়। রিনি মৃদু হেসে বলে, আমি জানতাম তুমি ফিরে আসবে। আর এই সমস্ত কথা এখন না বললেই নয়। তুমি যে নিজের ভুল বুঝতে পেরেছো এটাই অনেক বড়ো ব্যাপার। এরপর আর কিছু বলতে পারেনি পলাশ। শুধু রিনিকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছিল।রিনি পলাশকে বাঁধা দেয়নি কারন অনেক বছর সেই আরামের স্পর্শ পেয়েছে রিনি ভালোবাসার মানুষটার স্পর্শ পেয়েছে। বাইরে ইতিমধ্যে বৃষ্টি থেমে গেছে এবার বাড়ি ফেরার পালা। রিনি পলাশকে তার বাড়ি নিয়ে যেতে চেয়েছিল। পলাশ লজ্জায় যেতে পারেনি। রিনি একা বাড়ি ফিরে গিয়েছিল। বাড়ি ফিরে পলাশের সাথে দেখা হওয়ার কথা তার বাবা মাকে জানায়। এরপর দুজনের আস্তে আস্তে সম্পর্কটা আগের মত হতে শুরু করে। দুজনে বিয়ের সিন্ধান্ত নেয়। বিয়েটা দুইবাড়ির মতে বেশ ধুমধাম করে হয়।কিন্তু কে জানতো বিয়ের একবছর পূর্ন হতে না হতেই তাদের জীবনে শোক নেমে আসবে। বিয়ের প্রথম বিবাহ বার্ষিকির দিন দুজনে একটা রেস্টুরেন্টে গিয়েছিল রাতের খাবার খাবে বলে। খাবার খেয়ে বিল মিটিয়ে বেরতে বেরতে রাত সাড়ে এগারোটা বেজে গিয়েছিল। তারা সেদিন গাড়ি নিয়ে যায়নি হেঁটেই গিয়েছিল। কারণ রিনি আর পলাশের বাড়ি থেকে বেশি দূরে নয়।তবে একটু নির্জন জায়গায়। রেস্টুরেন্ট থেকে বাড়ি ফেরার পথে ওদের দুজনকে ঘিরে ধরে কয়েকটা বখাটে ছেলে।তাদের মধ্যে একটা ছেলে রিনির দিকে লোলুপ দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে থাকে আর বলে, ইশ কী সুন্দর মাল মাইরি। তারপর পলাশকে উদ্দেশ্য করে বলে, তোমার বউকে আমাদের হাতে তুলে দাও দেখি চাঁদ যদি প্রানে বাঁচতে চাও। পলাশের ইচ্ছে করছিল ছেলেগুলোকে উচিত শিক্ষা দিতে কিন্ত রিনি তাকে বাধা দিচ্ছলো। আর একজন ছেলে রিনির সাথে ধস্তাধস্তি করার চেষ্টা করতেই পলাশ এগিয়ে যায় তাদের দিকে। কিন্ত পলাশ একা পাঁচজন ছেলের সাথে পেরে উঠলনা। শেষ পর্যন্ত আর শেষ রক্ষা হলনা রিনির চোখের সামনে পলাশকে তারা পিটিয়ে খুন করে রিনিকে তারা হুমকি দিয়েছিল, তোমাকে আমরা দেখে নেব ফুলটুসি। বলেই চলে গিয়েছিল। খুব কেঁদেছিল রিনি। পলাশের এভাবে চলে যাওয়াটা রিনি আজও মেনে নিতে পারেনি। পলাশের মৃত্যুর দশ বছর পরও সে সবসময় মনে করে পলাশ তার সাথেই আছে। তাই আজ এত বছর পর রিনি পলাশের ছবির সামনে দাঁড়িয়ে গেয়ে উঠলো, "তুমি রবে নীরবে হৃদয়ে মম নিবিড় নিভৃত পুর্নিমা নিশীথি নী-সম।" আপনারা হয় তো ভাবছেন হঠাৎ আজ কেন রিনি গান গাইছে তাইতো? আজ পলাশের মৃত্যুদিন আর তাদের বিবাহ বার্ষিকী।


 

 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন