অন্যমনে সাহিত্য. অন্য রকম দৃষ্টিকোন থেকে দেখা একটি প্রতিবিম্ব ভাবনা .. অন্যমনে সাহিত্য.

শনিবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০

সময়ের ছকে মেহুল


 

সুতপা দাস

======================


মৌটুসী টার তীব্র স্বরে ঘুম ভাঙ্গলো।হাত পা গুলোকে টানটান করে আড়মোড়া ভেঙে, চোখ কচলে বিছানায় উঠে বসলো মেহুল।
কী যেন একটা মনের মধ্যে খচখচ করছে। কারণটা বুঝতে ও অবশ্য খুব একটা সময় নিল না সে। আসলে হয়েছেটা কী , তার ঘুম ভাঙ্গার কারণ মৌটুসী পাখির ডাক নয় , তার টেবিল ঘড়িতে দিয়ে রাখা অ্যালার্ম টোন, যেটা ওকে উঠে পরতে বলে সময় জানিয়েছিল সকাল ৭.৩০ টার ।

বাড়ির পেন্ডুলাম দেওয়া বড় ঘড়িটাতেও ঢং ঢং শব্দে ঘন্টা বাজেনা। বাবা খুব অপছন্দ করত শব্দটা - বলত "- জানিস মেহুল এই ঢং ঢং শব্দ শুনলেই কেমন যেন মনে হয় , সময় বড়‌ই দ্রুত ছোটে আর ছুটতে ছুটতে আমাদের জানিয়ে দিয়ে যায়- আমি এগিয়ে যাচ্ছি আরও আরও”। তার থেকে পাখির নরম ডাক‌ই ভালো। যেন বলতে চায় আমি আছি, আমি থাকব এ ডাল থেকে ও ডালে।" তাই বড় ঘড়ির ঘন্টা খুলে দিয়ে তাতে পাখির ডাকের শব্দ করা অডিও টেপ জুড়ে নিয়েছে মেহুল দোকানে গিয়ে। সেটায় এখন প্রতি ঘণ্টায় নানা শব্দে ডেকে চলে নানান জাতের পাখি।

উঁচু ক্লাস তায় পড়ার চাপ ও বেশি। পড়তে পড়তে কখন যে ঘড়ির কাঁটা রাত একটা ছুঁয়েছিল বুঝতেই পারেনি মেহুল। সেইজন্যই সকাল সাড়ে সাতটার অ্যালার্ম দিয়েছিল আজ। বিছানা ছেড়ে চটপট উঠে পড়লো মেহুল। ওকে যে সময়ের সাথে দৌড়তে হবে।

সময়ের পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে ই মেহুল এর বড়ো হয়ে ওঠা। স্কুল শিক্ষিকা মা একা হাতে বাড়ির সব কাজ গুছিয়ে স্কুলে র‌ওনা হয়। মেহুল যায় অনেক পরে। দরজার ডুপ্লিকেট চাবির গোছা টা থাকে ওর ব্যাগে। কোনদিন স্কুলে যেতে দেরি হয়নি মেহুলের ওই একটি দিন ছাড়া, যেদিন ওর চাবির গোছা টা টেবিলে রেখে ভুলে গেছিল ও। পুরো ব্যাগটা মেঝেতে উপুড় করে ঢেলেছিল, খুঁজেছিল বাড়ির আনাচে কানাচে। তারপর‌ই চোখে পরেছিল পেপারের তলা থেকে উঁকি দেওয়া চাবির গোছা টা।

স্কুলে পৌঁছাতে পুরো দশ মিনিট দেরি হয়ে গেছিল ওর। ম্যাম রা অবশ্য কেউই কিছু বলেনি ওকে কিন্তু মা বকেছিলো আর সেই সঙ্গে বুঝিয়েছিল সময়ের হিসেব। আপাতদৃষ্টিতে দশ মিনিট হয়তো কিছুই না কিন্তু সূক্ষ্ম হিসেবে অনেক কিছু। সেদিন‌ই মেহুল প্রথম জেনেছিল যে, সেকেন্ড এর নীচে আরও আটটা ভাগ আছে। যার মধ্যে তৃতীয় ভাগ অর্থাৎ 'এটোসেকেন্ড' কে আধুনিক কালে ক্ষুদ্রতম সময় বলে ধরা হয় আর চতুর্থ ভাগ 'ফেমটোসেকেন্ড' প্রয়োগ হয় দ্রুতগামী লেজার রশ্মিতে ।

সময় নিয়ে মার কাছে এই বকা খাওয়াটাই একদিন মেহুলকে এনে দিল জেলা ভিত্তিক কুইজ প্রতিযোগিতার প্রথম পুরস্কার। সেদিনের প্রতিযোগিতায় শেষ পর্বের শেষ প্রশ্নে আর সব প্রতিযোগীরা যখন হিমসিম খাচ্ছিল দ্রুতগামী লেজার রশ্মিতে ব্যবহৃত সময়ের নাম বলতে , তখনই মেহুল অনায়াসে দিল‌ উত্তর টা।
এরপর মেহুল চিনেছে সময়কে, আর সময় চিনেছে মেহুলকে। প্রতি মুহূর্তে সময়ের সাথে এগিয়ে চলেছে মেহুল......

1 টি মন্তব্য:

  1. প্রিয়ক লেখিকা ও প্রিয় শব্দসৈনিক , অন্যমনে সাহিত্য সময়ের ইতিবৃত্ত সংখ্যায় আপনাকে পেয়ে গর্বিত ও আশান্বিত । আমরা আপনাকে শুভকামনা ও শুভেচ্ছা জানাই।

    উত্তরমুছুন