শাহরিয়ার রুবাইয়াত
=============
আমাকে ভালবাসতে পারেনি কেউ।
হেমন্তের অন্ধকারে পথ ভুল করে,
যে গঙ্গাফড়িং রাতদুপুরের গল্প শোনাতে এসেছিল; সেও।
ভুল ভালবাসা ভাঙা মাস্তুলের মত যেমন করে ঝুলে থাকে,
ঠিক তেমন করে বেদনার জল আছড়ে পরে বেলাভূমিতে।
ক্রমশ: শূন্য থেকে পথ হাতড়ে এগোতে গিয়ে দেখেছি,
পৃথিবীর সবটাই কর্পূরের মত ফাঁকি।
জানালার শার্সিতে আঙুল রেখে দেখেছি,
ওপারের অবয়বটি বড় বেশি মলিন।
আমার চলার পথ কেবলই মিশে গেছে অন্তিম আড়ালে।
নিজেকে নিঃশেষ করার আগমুহূর্তে জেনেছি,
সন্ধ্যার রঙ কালো নয়; বাদামী।
একরোখা দুঃখে মলিন স্বপ্নেরা,
চৈত্ররাতের মত হেসে উঠেছে; আগুনের হাত ধরে।
প্রবঞ্চক স্বত্ত্বার অসমাপ্ত আগন্তুক,
বাতাসের চোখে লাগিয়ে দিয়েছিল অভিশাপ।
বিষন্ন গন্ধের পথে হাঁটতে হাঁটতে-
অনেকবার পিছলে পড়েছি নর্দমায়,
কেউ ছুটে এসে হাত ধরেনি;
টেনে তোলেনি দেবদূতের ডানা বাড়িয়ে।
যে নারী জন্ম দিয়েছিল পুরুষ স্বত্ত্বাকে,
তার অস্তিত্ত্বের সবটাজুড়ে ছিল পুরোনো প্রতীক্ষা।
হৃৎপিণ্ড তর্জনী উঁচিয়ে আল সীমানা ছেড়ে ছুটে গেছে;
উন্মত্ত প্রেমিকার মত সহজাত কাঙ্ক্ষিত প্রণয়ে।
নতুন বন্ধনের আলিঙ্গনে যে দিল প্রথম ভ্রূণ,
সে-ও তো শুধুমাত্র স্বপ্নই ছিল; দুঃস্বপ্নের মত করে।
আর আমি জন্ম নিলাম ভুল ঠিকানায়,
কাঠবাদামের নড়বড়ে আর ভাঙাচোরা চৌকিতে,
প্রবল অন্ধকারে সলতে পোড়ানো অগ্নিশিখায়,
নির্মম আর অমানবিক পৃথিবীর বোঝা হতে।
আমি সে-ই ভ্রূণ; জন্ম নিলাম নিপুণ অন্ধকারের মন্দিরে।
কোজাগরী আর কোনদিন আসেনি, আমার চোখে; ঘোর অমানিশা দেখে।
আমাকে ভালবাসেনি জন্মদা, ভালবাসতে পারিনি আমিও।
বুকের গন্ধে কোন মমতা ছিল না, তাই চিনতে পারিনি কোনদিনও।
খুব সন্ধ্যেবেলা; প্রচণ্ড ছুটে গিয়ে ভাঙা আশ্রমের চৌকাঠ পেরিয়েছি অনেকদিন,
ভেতরে আরাধনার সৌদামিনী কোনদিনও জ্বলে ওঠেনি।
গভীর কুয়োর ভেতরে মাথাগলিয়ে; ছিন্নভিন্ন একাকীত্বকে দেখেছি,
জলের অন্তরালে আহত জোনাকির মত বুকফাটা চিৎকার।
আমার হাতে সপ্তলোকের নক্ষত্র ফোটেনি কোনদিন।
মরীচিকার মত দিগন্ত মিলিয়ে গেছে; অন্তহীন প্রতীক্ষায় রেখে।
আমার কোন মানুষ ছিল না; হয়নি কোনদিনও।
খুব ভালবেসে; নিজেকে উজার করে দিয়েছি অনেকবার।
শকুন্তলার চোখের জন্য চলে গিয়েছি কর্ণফুলীর পাহাড়ে।
ডুমুরের বাগানে; চড়ুইপাখির ডানা ধরে মনে হয়েছিল; এ ডানা আমার!
খুব ভোরবেলা; লিচু বাগানের রাস্তায় দাড়িয়ে প্রতীক্ষা করেছি কমলিনীর জন্য।
কৃষ্ণচূড়াও জানে সে কথা, মেঘ রোদ্দুরে ভিজে ভিজে-
হাওয়ারাও শুনেছে সেসব অস্পষ্ট কানাকানির বিরহ অভিসার।
সম্মুখ রাত্রির ছায়ায় গোপন ইচ্ছেরা ভেসে গেছে দূর থেকে দূরে।
হঠাৎ আগুন লেগে স্তব্ধ শ্মশানের মত পুড়ে গেছে সাম্রাজ্য।
জীবনের এ অবধি দেখে নিয়ে বুঝে গেছি, আসলে আমি ভালবাসতেই জানি না।
আমার কোন বাড়ি ছিল না; এখনো নেই।
পতঙ্গের মত যে মানুষের জন্ম; তার এসব থাকে না।
আহার; নিদ্রা; পড়শি; এমনকি ভালবাসাও।
কাপুরুষের মত আত্মহত্যা করতে গিয়ে টের পেয়েছি-
অযাচিত স্বত্ত্বার সহজে মৃত্যুও হয় না।
কপালে পশ্চিম সূর্যাস্তের রক্তিম জলছবি নিয়ে,
যে নারী কাজল চোখে তাকিয়েছিল মহাকালের দিকে,
ভুল করে ভালবাসার জন্য তার কাছে ছুটে গিয়েছি বারবার।
কিন্তু সে অপ্রয়োজনীয় মনে করেছে বলে; স্রষ্টাকে কটাক্ষ করিনি কখনো।
কারন; আমাকে অন্তর্নিহিত স্বত্তা বারংবার জানিয়েছে; ঈশ্বর এ মাটিতেই আছেন; পোড়া গন্ধের মত
অসাধারন লেখা।
উত্তরমুছুন