অন্যমনে সাহিত্য. অন্য রকম দৃষ্টিকোন থেকে দেখা একটি প্রতিবিম্ব ভাবনা .. অন্যমনে সাহিত্য.

রবিবার, ৮ নভেম্বর, ২০২০

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়
*****************************
ভয়েজার যান এখন সূর্যের বাঁধন কাটিয়ে ছুটে চলেছে ইন্টারস্টেইলার পথে। কল্পনা আর রোমাঞ্চে ভরা সে পথ। এই রোমাঞ্চ আমরা খুঁজে পেতাম ঠাকুমার ঝুলিতে। ব্যাঙ্গমা আর ব্যঙ্গমী উঁচু গাছের মগডালে বসে আমাদের দেখতো আর আমরা ঠাকুমার কোলে বসে দূর আকাশে খুঁজে বেড়াতাম পক্ষীরাজ ঘোড়া।সন্ধ্যা নেমে এলে চাঁদের ভেতর খুঁজে নিতাম চাঁদের বুড়ি।

সময়ের বিবর্তনের ধারায় ক্রমশ বদলে যায় চারপাশের জগৎ আর জীবন। বিবর্তনে পাল্টে যায় সমাজ, সংস্কৃতি, শিল্প-সাহিত্যের ধারা। এই বদলে যাওয়ার সংস্কৃতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ছুটতে ছুটতে আমরা ভুলে যেতে বসেছি শিশুদের কথা।আর্থ সামাজিক অবক্ষয়ের আবরণে রচনার বিষয়-বৈচিত্র্যের সঙ্গে পরিবর্তন ঘটছে তার গতি-প্রকৃতি। তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন প্রকরণ, সৃষ্টি হচ্ছে নতুন ধারার রচনা এবং নির্মাণ হচ্ছে নতুন আঙ্গিক। এজন্য পূর্বের ধ্যান ধারণারও পরিবর্তন ঘটছে।

এই পরিবর্তিত ধারনার কাঁধে ভর দিয়ে আমরা আক্ষরিক ভাবে হয়ে পড়েছি বড়দের কবি, সাহিত্যিক। ভাবনার স্তরে শিশু সাহিত্যকে ব্রাত্য করে এক কোনে সরিয়ে রেখে দিয়েছি।যদিও শিশুসাহিত্য একান্তভাবে ছোটোদের জন্য লেখা হলেও সব বয়সের পাঠকের কাছেই তা পরম আস্বাদ্য।

শিশুর প্রতি প্রগঢ় ভালোবাসাই শিশুসাহিত্য রচনার এক এবং একমাত্র পূর্বশর্ত। শিশুসাহিত্য শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন রবীন্দ্রনাথ, অন্যদিকে এর ঠিক পাঁচ বছর পর ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে (১৩০৬ বঙ্গাব্দ) যোগীন্দ্রনাথ সরকারের ‘খুকুমণির ছড়া’ সংকলনের ভূমিকায় ‘ছড়াসাহিত্য’ ও ‘শিশুসাহিত্য’ শব্দ দু’টি উল্লেখ করেছেন রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী।শিশু যে কোনো জিনিস দেখলে ধরতে চায়, ছুঁতে চায়। ওরা খেলতে চায়। টেলিভিশন দেখতে চায়।মোবাইলের জগতে তাদের অবাধ বিচরণ। তাদের আগ্রহ ও আনন্দের জায়গাটুকু খবর রাখতে হয় আমাদের। বলা যেতে পারে, শিশু মনস্তত্ত্ব আয়ত্ত করে নেওয়া জরুরি। শিশুসাহিত্য যেন শিশুর আনন্দসঙ্গী হয়ে ওঠে, তার জন্য আমাদের ভাবতে হবে সব সময়।

শিশু সাহিত্য শিশুর মানসিক খাদ্য। এই খাদ্য তার মনকে করে সতেজ, সবল। তার স্বপ্ন ও কল্পনাশক্তির বিকাশে শিশু সাহিত্যের কোনো বিকল্প নেই। মুক্তমন, উদার চিন্তা, স্বাধীনচিত্ততার জাগরণ, চারিত্রিক এই বৈশিষ্ট গড়ে তুলতে শিশু সাহিত্য অপরিসীম ভুমিকা পালন করে। একথা ঠিক শিশু সবচেয়ে বেশি শেখে তার পরিবেশ থেকে, পরিবার থেকে, তার নিজস্ব জগৎ থেকে। দয়া, মায়া, বন্ধুতা, প্রতিবেশী ও অন্য মানুষকে ভালোবাসা এই বিষয়গুলো পরিবেশ থেকে প্রকৃতি থেকেও বুঝে মানুষ শিখে নেয়। সেই শিখে নেয়ার ওপর একটি স্থায়ী প্রলেপ দিয়ে দেয় আনন্দ, আবেগ ও গভীর মনোসংযোগে পড়া প্রিয় বইটি। এভাবে মা-বাবা ছাড়াও বইয়ের কোনো কোনো চরিত্র হয়ে ওঠে শিশুর আদর্শ নায়ক, বীর বা মানসসঙ্গী। নিজস্ব সাংস্কৃতিক ধারাও শিশুর ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই শিশু দেশপ্রেমিকতার শিক্ষা পায় এবং দেশকে ভালোবেসে ধীরে ধীরে ভালোবাসতে শেখে সারা পৃথিবী ও তার নানা বর্ণের, নানা গোত্রের বিচিত্র মানুষকে-তাদের সংস্কৃতি, সভ্যতা ও ঐতিহ্যকে।

শিশুরা আমাদের প্রাণ। আমাদের অবিনাশী শক্তি। প্রেরণার বাতিঘর। আঁধার পথের আলোকবর্তিকা। পথিকের অগ্রপথিক। সেনানীর অগ্রসেনা। এদের জন্যই আমাদের সব সৃষ্টি। সৃষ্টির উল্লাস। সৃষ্টি উল্লাসের আনন্দ। আনন্দের আনন্দ। হাসির হাসি। কান্নার আঁধার। আমরা ওদের জন্য কাজ করি। আরো অনেক কাজ করতে হবে ওদের জন্য। অনেক দূরে এগিয়ে নিতে হবে শিশুদের। শিশু সাহিত্যের কাজকে।

তাই এমন রচনা আমরা চাই, যা শিশু-কিশোরের মানস গঠনে ভূমিকা রাখতে পারে। ছোটোদের রুচি গঠন ও মানবিক মূল্যবোধ তৈরিতে সহায়ক এমন রচনাই আমাদের কাম্য। আর এই প্রচেষ্টায় আমাদের ৪৯ জন শব্দ সৈনিকের আন্তরিক ভাবনা শিশু সাহিত্যের ভাণ্ডারকে এতটুকু হলেও সমৃদ্ধ করবে বলে আশা রাখি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন