বারান্দার গ্রীল দিয়ে আকাশের কান্না ছুঁয়ে দেখছিল দেবন্তী। কমল কচি স্বর্গ সম ছোট ছোট আঙুলে বৃষ্টিজল লাগতেই যেই খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে দেবন্তী,অমনি কানে মিষ্টি ডাক ভেসে আসে... দেবন্তী...? দেবন্তী চোখ ফিরিয়ে দেখে জলের তৈরী মানবী ওর আঙ্গুল ধরে আছে। দেবন্তী বেশ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে-- কে তুমি? আমি বৃষ্টিময়ী,জলের দেশে থাকি।সাত সুমুদ্দুর ঘুরে বেড়াই,মেঘের মঠে চড়েবেড়াই। তোমার কি সুন্দর জলের পাখা বৃষ্টিময়ী!! নেবে তুমি? হ্যাঁ-নেব। তবেযে আমার সাথে আমার দেশে যেতেহবে? আমি যাব তোমার সাথে, নিয়ে যাও আমায়। বৃষ্টিময়ী অদৃশ্য হয়ে যাওয়ায় দেবন্তী চিৎকার করতে থাকে... বৃষ্টিময়ী...আমাকে নিয়েযাও তোমার সাথে,নিয়ে যাও আমায়...! দেবন্তীর চিৎকার শুনে ওর সৎ মা উত্তেজিত কন্ঠে বকাঝকা করে ঘরে পাঠিয়ে দেন। দেবন্তী বিছানায় ফিরে ঘুমোতে যাবে যে মুহূর্তে,সে মুহূর্তে আয়নার মধ্য থেকে ঝর্ণার জলের মতো ঝরঝর শব্দ আসে।দেবন্তী কান পাতে,ঠাওর করে আয়নার দিক থেকেই শব্দটা আসছে।আয়নাতে স্পর্শ করতেই পানির ঢেউয়ের মতো আয়নার কাচে ঢেউ খেলিয়ে ওঠে। আয়নার দিকে তাকাতেই বৃষ্টিময়ীর দেখা মেলে।ঘরের দেওয়াল সরে যায়,সরে যায় বিছানা পত্র,ইলেক্ট্রিক আলো ও অন্যান্ন সহ চেনা ভূবন। দেবন্তীর দুটো জলের পাখা গজিয়ে যায়,স্বচ্ছ পানি চারিদিকে থৈ থৈ....! রাজ হাঁসের পিঠে চড়ে দেবন্তীর মতো অসংখ্য মেয়ে শিশুরা ঘুরে বেড়াচ্ছে।দেবন্তী অবাক চোখে দেখছে সেসব।বৃষ্টিময়ী দেবন্তীরা কনিষ্ঠাঙ্গুল ধরে উড়ে ওঠে খোলা আকাশে.. এখানের মানুষ গুলো জলের তৈরী,ফুল,পাখি,প্রজাপতি,বসত ভিটে সব কিছু জলের!! কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো- এখানে কোন পুরুষ প্রাণী,উদ্ভিদ কিংবা মানুষ নেই।যাকিছু সবই মেয়ে! বৃষ্টিময়ী ওনেক্ষণ উড়ে উড়ে শুধু ফুল ভরা আকাশে গিয়ে থামে দেবন্তীকে নিয়ে।দেবন্তী চারিদিকে চোখ বুলিয়ে জিজ্ঞেস করে.. বৃষ্টিময়ী, আমারা কোথায় এলাম? আমাদের পৃথিবীর রাণীর কাছে। রজা নেই? না। ছিল না? না,এখানে কোন রাজা নেই। হলুদ কেশ, হলুদ চোখ,হলুদ গায়ের রঙ নিয়ে সূর্য্যের মধ্য থেকে বেরিয়ে আসে দেবন্তীর মতোই একটি মেয়ে শিশু।দেবন্তী বৃষ্টিময়ীর আড়ালে লুকায় চোখে আলো সহ্য করতে না পেরে। বৃষ্টিময়ী বলতে থাকে... আলোর ঝলকানিতে দাঁড়িয়ে আমাদের রানী,এ পৃথিবীতে সর্ব কনিষ্ঠ! আর এই পৃথিবী মূলত আকাশ নয়,এটা তোমাদের মতো শিশুদের মন,যা স্বর্গহিসেবে জানতে পারি আমরাই। আমাদের রানী মেয়ে শিশু হয়ে জন্ম নেওয়ায় মেরে ফেলা হয়।তার পর থেকে এই পৃথিবীতে! দেবন্তী চমকে উঠে জিজ্ঞেস করে-- এখানেকি শুধু মৃতরাই আসতে পারে? হ্যাঁ। আমিতো জীবিত। তুমিতো জীবিত নও। দেবন্তীর কাছে ফুলের আকাশ নিছক মনে হয়! বলে ওঠে-- আমি জীবিত! আমি ফিরে যেতে চাই আমার মাটির পৃথিবীতে। তুমি মৃত! ফিরে যেতে পারবে না। আমিতো মরে যাইনি। যখন তুমি তোমার সৎমায়ের চোখের আড়ালে বারান্দায় গভীর রাতে বৃষ্টিতে ভিঁজতে গিয়েছিলে তখন বাজ পরার শব্দে তোমার হার্ট এটাক হয়।তুমি মরে যাও,মরে যাবার পরেই আমাকে দেখতে পাও! আমি মৃত নই,আমি বাড়ি ফিরে যাব।আমাকে যেতে দাও... আমাকে যেতে যাও...! কে আছে তোমার মাটির পৃথিবীতে! কেউতো নেই! সৎমায়ের অত্যাচার ছাড়া!! বাবাটাওতো খেয়াল রাখেন না! তবুও আমি বেঁচে থাকতে চাই।আমায় ফিরিয়ে নিয়ে যাও...! বৃষ্টিময়ী রেগে গিয়ে উপর থেকে দেবন্তীকে ছুড়ে দেয় মাটির পৃথিবীতে। দেবন্তী চোখ খুলে দেখে বারান্দায় প্রতিদিনেরম তোই শুয়ে আছে ও।আকাশে ঝলমল করছে রুপলী চাঁদ একা!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন