অন্যমনে সাহিত্য. অন্য রকম দৃষ্টিকোন থেকে দেখা একটি প্রতিবিম্ব ভাবনা .. অন্যমনে সাহিত্য.

রবিবার, ৮ নভেম্বর, ২০২০

কুম্ভকর্ণের নাতনি


 

কুম্ভকর্ণের নাতনি
***********************************
পায়েল সেন
**********************************


ছোটবেলার স্মৃতি মনকে নস্টালজিক করে তোলে। দেয়ালের গায়ে রং পেন্সিলের দাগ, ছোট্ট হাতের আঁকিবুঁকি, উপেন্দ্রকিশোর, সুকুমার, ঠাকুরমার ঝুলি, আধ ভাঙা খেলনা, ক্ষয়ে যাওয়া রাবার ইত্যাদি নানারকমের দুস্টু মিষ্টি খুনসুটি।

আজ শিশু সাহিত্য নিয়ে লিখতে বসে তোমাদের সাথে স্মৃতির ঝাঁপি খুলে আমারই শৈশবের একটি ঘটনার স্মৃতিচারণ করছি। আমি তখন অনেকটাই ছোট, প্রাইমারি স্কুলের গন্ডি পেরোয়নি। শৈশব থেকেই আমার ভালোবাসা হলো "ঘুম" , আজো তার সাথে অটুট বন্ধন। বাড়ির লোক, চেনা পরিচিত তা মজা করে আমায় বলে "In a relationship with ঘুম" । ঘুমিয়ে গেলে আমি কুম্ভকর্ণের নাতনি। একবার বিশেষ প্রয়োজনে মা বাবা কয়েক ঘন্টার জন্য বোন আর ভাইকে সাথে নিয়ে আসানসোল গেছিলো, দুপুরে স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে ভাত খেয়ে আমি কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম টের পায়নি। ঘুমটা একটু গাঢ় হতেই চলে গেলাম স্বপ্নের দেশে। দেখি গ্রীষ্মের ছুটিতে বেড়াতে চললাম পক্ষী রাজের ঘোড়ায় চড়ে নাম না জানা কোন দেশে। খুব ভয় লাগছিলো উড়ে উড়ে যেতে ঘোড়া ভাই বলছে শক্ত করে জড়িয়ে ধরো , তোমায় পড়তে দেবো না চিন্তা কোরোনা। ঠাকুরের নাম জপ করতে করতে পৌঁছে গেলাম সেই দেশে। গিয়েই তো ভিরমি খাওয়ার জোগাড়,, একি কোথায় এসে পড়লাম রে ভাই! সুয্যি মামা লজ্জায় সেখানে মুখ ঢেকেছে পূর্ণিমা রাতের জ্যোস্নারা সব নিজেদের মধ্যে খেলা করছে দিন দুপুরে। পুকুরে সাঁতার কেটে বেড়াচ্ছে নেংটি ইঁদুর ছানা, বেড়াল বাচ্চারা। ভলিবল খেলছে বোয়াল, মাগুর, চারা পোনা। রাত হতেই চারিদিকে ঠাঁ ঠাঁ রোদে বাদুর, চামচিকিরা লুকোচুরি খেলছে, চশমা চোখে কাঠবেড়ালি রিক্সা চালাচ্ছে। জিরাফ তালগাছে উঠে পড়ছে, মানুষগুলো হাতে ভর দিয়ে হেঁটে চলে তরতরিয়ে যাচ্ছে। বাঘে গরুতে একসাথে বনভোজন সারছে। গাছের ডালে ঝুলছে হাজার রকম রসগোল্লা চমচম। এমন সময় বিকট আওয়াজ শুনে ধরমরিয়ে উঠে বসলাম , আমার ঘুমের চোটে দুপুর গড়িয়ে বিকেল পেরিয়ে প্রায় সন্ধ্যে হচ্ছে সামনের দরজায় মা সাথে আশে পাশের লোকজন জড়ো হয়ে গেছে, পেছনের উঠোনের পাঁচিল টপকে বাবা এসে বারান্দার দরজা ধাক্কা দিচ্ছে । এতক্ষণ ডাকাডাকিতে আমার সাড়া না পেয়ে সবাই ভয় পেয় গেছিলো কোনো বিপদ হলো নাকি তাই দরজা ভেঙে ফেলার উপক্রম হয়েছিল। কিন্তু আমি যে ঘুমিয়ে কোন পগার পার সেটাই তো সবার কাছে আশ্চর্য্যের বিষয়। মায়ের মধ্যস্থতায় সে যাত্রায় বাবার উত্তম মধ্যম থেকে রেহাই পেয়ে ছিলাম বটে কিন্তু স্বপ্নের কথা ভাবলেই হেসে গড়া গড়ি যাই।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন