অন্যমনে সাহিত্য. অন্য রকম দৃষ্টিকোন থেকে দেখা একটি প্রতিবিম্ব ভাবনা .. অন্যমনে সাহিত্য.

রবিবার, ৮ নভেম্বর, ২০২০

পাখির ভাষা


 

পাখির ভাষা  

*********************************

বদরুদ্দোজা শেখু
*********************************


রতন ঢালী মধ্যবয়সী লোক। চাষবাস ক'রে তার জীবনযাপন চলে। মধ্যবিত্ত মানুষ।

তার আছে একটি মাটির বাড়ি, পুরনো টিনে ছাওয়া। পাশে সংলগ্ন বাহির বাড়ি। তার বাইরে কুড়বাড়ি, খড় বিচালি সারগাদা গোবর ইত্যাদি রাখার জায়গা। চৈত্রের দিনে তেমন কাজ নাই।তাই দুপুরের খাবার খেয়ে

একটুখানি শুয়েছে। এমন সময় একটা কিছু দুম ক'রে প'ড়ে যাওয়ার শব্দ হলো। মনে হলো কুড়বাড়ি থেকে শব্দটা এলো।তারপর বেশ কিছু শালিখ পাখির তারস্বরে চীৎকার শুনে তার খুব বিরক্ত লাগলো। তার স্ত্রী অন্য কাজে লেগে থাকায় ব্যাজার মুখে সে বাইরে বেরিয়ে কুড়বাড়ির দিকে গেল। ওখানে খড়ের গাদা সারগাদা এসবের সাথে বেশ কতকগুলো নিম নিশিন্দা বাবলা সজনে আমড়া আতা এইসব গাছও আছে।কুড়বাড়িটা বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘেরা।

সেখানে গিয়ে দেখলো, কতকগুলো শালিখ পাখি কিছু একটা ঘিরে ধ'রে তারস্বরে চেঁচাচ্ছে ,বরং বলা যায় , আর্তনাদ করছে।রতন পায়ে পায়ে একটু কাছে এগিয়ে গেল।

দেখলো, একটা একেবারে ছানা পাখি আর কয়েকটা ডিম ভাঙা অবস্থায় প'ড়ে আছে।

তায় ঘিরে পাখিদের এতো চীৎকার হাহাকার।- - এমন সময় কুড়ের আড়াল থেকে দুটো ডানপিটে ছেলে দৌড় দিয়ে

বাঁশের বেড়া টপকে পগার পার হ'য়ে দিলো ছুট। ওরা ওপাড়ার পাঁচু আর দেবু বলেই

মনে হলো। ইচ্ছে হলো, ওদের কে ধরতে পারলে ক'ষে দুটো চড় লাগাতো।



দুটো শালিখ পাখি কিছুদিন ধ'রে খড় কাঠিকুটো ব'য়ে ব'য়ে নিমগাছের মাঝারি রকম উঁচু ডালে বাসা বেঁধেছিল। ওদের ডিম বা ছানা চুরি করে পেড়ে নিতে গিয়েই হয়তো এই বিপত্তি হয়েছে। কয়েকটি নিম ডালপাতাও ইতস্ততঃ ভেঙে প'ড়ে রয়েছে।

রতন দেখলো, মা পাখিটা মৃত ছানাটাকে ঘিরে  তখনো আর্তনাদ করছে, অন্যান্য পাখিরা তার সাথে যোগ দিয়েছে। শুধু একটা শালিখ একটু দূর থেকে ''কিছুক্কিচ কিছুক্কিচ" জাতীয় শব্দ ক'রে যাচ্ছে। রতন বুঝলো, হয়তো বলছে,খেসারৎ চাই , খেসারৎ চাই । দূর থেকে একটা কাক দেখছে, কিন্তু কাছে যাচ্ছে না। পাখিগুলো স'রে গেলেই হয়তো কাকটা ছানাটাকে তুলে নিয়ে গিয়ে খাবে।

রতন ভাবলো, হ্যাঁ, মানুষের যদি খেসারতের দাবি থাকে তো পাখিদের দাবিও সমীচীন।

মনে মনে বললো, পাখিদেরও দাবির ভাষা আছে, আনন্দের ভাষা আছে, কান্নার ভাষা আছে।

বজ্জাত ছোঁড়া দুটোকে শায়েস্তা করা দরকার। নিরীহ পাখির ছানাটাকেই মেরে ফেললো ! - - - মনে মনে বললো, প্রাণের খেসারৎ কি দেওয়া যায় ? বরং ছোঁড়া দুটোকে পাখিদেরকে রক্ষা করার শিক্ষা দিতে হবে।ওদের বাবাদের ডেকে বলতে হবে।


ছোট্ট বন্ধুরা, তোমরাও পাখিদের

উপর অকারণ অত্যাচার কোরো না।বরং তাদেরকে রক্ষা করতে চেষ্টা কোরো। পাখিদেরকে ভালোবাসো।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন