অন্যমনে সাহিত্য. অন্য রকম দৃষ্টিকোন থেকে দেখা একটি প্রতিবিম্ব ভাবনা .. অন্যমনে সাহিত্য.

রবিবার, ৮ নভেম্বর, ২০২০

ভয় দেখানো



 

ভয় দেখানো
***********************
অঙ্কিতা বক্সী
***********************



তমালের প্ল্যানটা শুনে একটা দুষ্টুমির হাঁসি খেলে গেল রজতের ঠোঁটের কোণে। আজ ধৃতিমান স্যারের অঙ্কক্লাসে ওনার কাছে কি বকাটাই না খেতে হয়েছে ওকে! নাহয় দুটো সিঁড়ি ভাঙা অঙ্কই ভুল হয়েছিল,তাই বলে স্যার সবার সামনে এভাবে বকবেন! ক্লাসের প্রায় সবাই ক্লাস মনিটরের এহেন অপদস্ত হওয়ার দৃশ্য তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করছিল। আর ঐ মিচকে সনৎটা তার উপর আবার মুচকি মুচকি হাঁসছিল।দেখেই রাগে গা জ্বলে যাচ্ছিল রজতের। তার সব রাগ গিয়ে পড়ল স্যারের উপর। আজ স্কুল থেকে বেরিয়ে বসুদের পুকুরঘাটের সিঁড়িতে মুখখানা বেজার করে বসেছিল রজত। প্রিয় বন্ধুকে মনখারাপ করে বসে থাকতে দেখে পাশে এসে বসেছিল তমাল।


-" জানিস তো রজত,ধৃতিমানস‍্যার এখন নাকি ডাক্তারের পরামর্শে প্রতিরাত্রে খাওয়ার পর নৈশভ্রমণে বের হন। আর তপনদার মুখে শুনেছিলাম স্যারের নাকি ভূতে বেজায় ভয়। তাহলে হঠাৎ করে আজরাতে যদি দু ভূতের সাথে ওনার মোলাকাত হয়ে যায়, তাহলে কেমন হয়?"


তপনের ইঙ্গিতটা বুঝে এতক্ষণে একটু খুশিখুশি লাগল রজতকে। এইভাবে অন্তত কিছুটা হলেও স‍্যারের আজকের বকুনিটার শোধ তো তোলা যাবে।


পায়ের খসখস শব্দ হতেই সজাগ হয়ে উঠলো রজত আর তমাল। নিশ্চয়ই স্যার আসছেন। গাছের আড়াল থেকে উঁকি দিয়ে ওরা দেখল, সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি পড়ে গম্ভীর মুখে বেশ দ্রুতপায়ে এগিয়ে আসছেন ধৃতিমানস্যার। আর সময় নষ্ট করার যাবে না ভেবে গায়ের সাদা চাদরটা দিয়ে আপাদমস্তক শরীরটাকে ঢেকে, বিশুদের আমবাগান থেকে লাফ দিয়ে রাস্তায় নেমে পড়ল দুজনে। মুখে গোঁগোঁ করে অদ্ভুত একটা শব্দ করে উঠল ওরা। ওদের দেখে থমকে দাঁড়িয়ে পড়লেন ধৃতিমানস্যার।তারপর খানিকটা পালানোর ভঙ্গিতে হনহন করে পূর্বদিকের ভাঙা রাজবাড়ীটার পাঁচিলের আড়ালে গিয়ে অদৃশ্য হলেন।



-" স্যার মনে হয় ভূতের ভয়ে ওখানে গিয়ে লুকিয়েছেন। চল এবার স্যারের বাড়িতে গিয়ে খবরটা জানাতে হবে। আমরা বলব ওনাকে ভাঙা রাজবাড়ীটার দিকে যেতে দেখেছি।এরপর সবাই যখন ওনাকে খুঁজতে খুঁজতে দেখবে যে উনি ভূতের ভয়ে পাঁচিলের আড়ালে লুকিয়ে আছেন, তখন পরিবারের সবার সামনে ওনার প্রেস্টিজ পুরো ধুলোয় মিশে যাবে।কিন্তু খবরদার!বেফাঁস কিচ্ছুটি বলবিনা।আমরাই যে স্যারকে ভূতের ভয় দেখিয়েছি সেটা যেন কেউ ঘুণাক্ষরেও টের না পায়।" তমালের কথায় সায় দিল রজত।



ধৃতিমানস্যারের বাড়ির সামনের জটলাটা ভেদ করে ওনার বাড়িতে ঢুকতে পাক্কা তিনমিনিট সময় লাগল রজত এবং তমালের। স্যারের স্ত্রী ওদের দেখে বিহ্বল হয়ে কাঁদতে কাঁদতে এগিয়ে এলেন, "তোমরা এসেছ? দেখনা কোথা থেকে যে কি হয়ে গেল! স্কুল থেকে ফিরে মানুষটা সেইযে ঘুমোলেন আর ওনার ঘুম ভাঙলো না।ডাক্তার বলছে হার্ট অ্যাটাক।এইমাত্র ওনাকে শেষযাত্রায় নিয়ে গেল ওরা।" রজত আর তমালের সারা শরীর তখন ঠকঠক করে কাঁপছে। পাশে রাখা সোফাসেটটাতে ধপ করে বসে পড়ল দুজনে। খানিকক্ষণ আগে ওরা যাকে রাস্তায় ভয় দেখিয়েছিল,সে তাহলে কে!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন