অন্যমনে সাহিত্য. অন্য রকম দৃষ্টিকোন থেকে দেখা একটি প্রতিবিম্ব ভাবনা .. অন্যমনে সাহিত্য.

রবিবার, ৮ নভেম্বর, ২০২০

রেডিও

রেডিও
**************************
তাপসকিরণ রায়
**************************



ফুটপাতেই ওদের রাত্রি গুজার হয়। নেড়া-ন্যাংটা পোশাকেই ওদের ঘুরে বেড়াতে হয়।

--বাবু দুইডা পয়সা দিবা ? হারু হাত পাতে।

--এই যা যা, অনেকেই তাড়িয়ে দেও ওদের। কখনও কোন সুহৃদ লোক হয়ত দশ টাকার একটা নোট হারুর হাতে তুলে দেয়।

ময়লার ডিপো থেকে একবার হারু একটা যন্ত্র পেল। এমন উদ্ভট তার-লোহা প্যাঁচানো জিনিসটা দেখে ভয়ে দূরে সরে গিয়েছিল, ওরে বাবা ! বম নয় তো ? বেশ কিছু সময় ধরে দাঁড়িয়ে থেকে মনে সাহস যোগাল। ও জিনিসটা ধরে নিয়ে চোঁ চাঁ ছুটল বাপের কাছে।

মেশিন পত্র ঠিকঠাক--কেবল উপরের ধাঁচাটা উধাও। বাপ স্বীকৃতি দিল, রেডুও !

পানের দোকানে, বস্তি ঘরে, ভিখারী পাণ্ডার মিঞার হাতে হারু রেডুও দেখেছে বটে ! হারু দু চারবার চাকা ঘুরাতেই ঘড় ঘড় শব্দ হয়ে কাটা কাটা গান হয়ে বন্ধ হয়ে গেল।

--কি হইল, বাপ, দেহ না !

--বেডারি গ্যাছে, বাপ দেখে নিয়ে বলে। ব্যাটারির গা থেকে লালা-ঝোলা জল গড়াচ্ছিল।

এখন বেডারি হারু কোথায় পায় ? জড়ো করা পুরান ব্যাটারিতে কাজ করল না।

হারু আবার পথে নামল। এবার পয়সা নিয়া খাওন না, বেটারী কিনতে হইব। হারু পথের ধপদুস্ত্রর একটা লোকের কাছে গিয়ে হাত পাতল, বাবু দশটা টাকা দিবা ?

দশ টাকার নাম শুনে লোকটা খেঁচে উঠলো, একেবারে দশ টাকা—কেন ? কি করবি ?

--বেডারী কিনুম--রেডুও চালামু, হারু বলে ওঠে।

হঠাৎ লোকটা ভীষণ রেগে গেল, সে হারুর গালে একটা চড় কষিয়ে দিয়ে বলে উঠলো, ভিখারীর ছেলে আবার রেডিও শুনবে !

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন