অন্যমনে সাহিত্য. অন্য রকম দৃষ্টিকোন থেকে দেখা একটি প্রতিবিম্ব ভাবনা .. অন্যমনে সাহিত্য.

শনিবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০

আজও ফোটে মুকুল !!



গোবিন্দ মোদক
============

সারা বিশ্ব জুড়েই চলছে এক অদ্ভুত সময়ের আবহ। তার প্রভাব এই প্রত্যন্ত গ্রামেও ! তাই মুখে মাস্ক পরো, হাতে স্যানিটাইজার দাও ! গ্লাভস পরলে বা মাথায় কভার পরলে তো আরও ভালো হয় ! তার ওপর এই দীর্ঘদিন যাবৎ স্কুল বন্ধ ! তাই একেবারে হাঁফিয়ে উঠেছিলেন মুকুলবাবু ! তিনি বাড়িতে টোল খুলে প্রাইভেট পড়াবার পক্ষপাতী নন কোনদিনই। নিজেও কোনদিন পড়ান না। কিন্তু এই করোনা আবহে বাধ্য হয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বলে এসেছেন পড়তে যাবার জন্য। না, টাকার বিনিময়ে নয়, শুধুমাত্র নিজের অবকাশ-যাপনের জন্য এবং ছাত্র-ছাত্রীদের উপকারের কথা ভেবেই মুকুলবাবুর এ প্রয়াস !



মুকুলবাবুর পড়ানোর গুণেই হোক, আর তার সুন্দর ব্যবহারের জন্যই হোক, তাঁর বাড়ির চওড়া বারান্দাটা সব সময় ছাত্র-ছাত্রীতে ভর্তি থাকে। ক্লাস ফাইভ থেকে শুরু করে টেন পর্যন্ত যে কেউ আসতে পারে, আসেও। এমনকি মুকুলবাবুর স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা ছাড়াও অন্যান্য স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা আসতেও দ্বিধা করে না । মুকুলবাবুও সাদরে তাদের গ্রহণ করেন।



মুকুলবাবুর এই সমাজসেবার কথা গ্রাম থেকে অঞ্চলে, অঞ্চল থেকে ব্লকে, ব্লক থেকে জেলায় ছড়িয়ে পড়ে। অনেক অভিভাবকই তাঁর বাড়ি এসে তাঁকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে যান। এতে খুবই আপ্লুত হন মুকুলবাবু এবং দ্বিগুণ উৎসাহে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে সব বিষয়েই পাঠ দিতে থাকেন। অংক, ইংরেজি, বাংলা, বিজ্ঞান, ভূগোল, ইতিহাস --- কোনও বিষয়েই তাঁর জ্ঞানের ঘাটতি নেই ! অথচ তিনি তৎকালীন সময়ের একজন কমার্স গ্র্যাজুয়েট মাত্র !



--- কিরে তোরা আজ পড়বি না !

--- না স্যার ! আজ শুধু সেলিব্রেট হবে !

--- সে কি ! আজ তো শিক্ষক দিবস নয় ! তবে ?

--- শিক্ষক দিবস নয় বটে ! তবে তার চেয়েও আজ আমাদের গর্বের দিন ! এই দেখুন স্যার !

মুকুলবাবু অবাক-বিস্ময়ে ছাত্র-ছাত্রীদের আনা খবরের কাগজ দেখতে থাকেন ! একটি দৈনিক কাগজের জেলার পাতায় মুকুলবাবুর ছবি-সহ হেডিং হয়েছে --- "করোনার আঁধারে আলো ছড়াচ্ছেন মুকুল-স্যার !" অন্যটিতে শিরোনাম -- "আজও আছেন মুকুল-স্যারেরা !" সঙ্গে পাঠদানরত মুকুলবাবুর ছবি !



এইবার ব্যাপারটা বোধগম্য হয় মুকুলবাবুর ! দিন কয়েক আগে কয়েকজন যুবক ক্যামেরা হাতে মুকুলবাবুর সাক্ষাৎকার নিতে এসেছিল। কিন্তু মুকুলবাবু ভালোবেসেই তাদেরকে ফিরিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, --- "বাবা, তোমাদের ওই খবরের কাগজে সেজে-গুজে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময়টুকুকে আমার ক'টা ছাত্র-ছাত্রী পড়ালে বেশি কাজ হবে !" ছেলেগুলো তবু নাছোড়বান্দা ! কিন্তু মুকুলবাবু তাদেরকে কোনও সাক্ষাৎকার দেননি ! তবে এরই ফাঁকে ওরা বুঝি ছবি তুলে নিয়েছে এবং গোটা ঘটনাটা আজ ওদের কাগজে ফলাও করে ছেপেছে !



--- কি ভাবছেন স্যার ! আজ শুধু সেলিব্রেট-ই হবে। এই ..... ভোলা, জর্জ, বিল্টু , কামাল, তন্ময়, পাঁপড়ি, সুজাতা, তবাসুম, সাবিনা ! তোরা ফুল, মালা আর মিষ্টিগুলো নিয়ে আয় তো !



মুকুলবাবু হতভম্ব হয়ে যান ব্যাপার-স্যাপার দেখে ! তাঁর দু'চোখ ঈষৎ আদ্র হয়ে ওঠে। চশমার কাঁচ দু'টো মুছে নিয়ে তিনি একটু ধাতস্থ হয়ে নেন। তারপর বলেন, -- "ঠিক আছে ! সেলিব্রেট হোক, ভালো কথা। কিন্তু আগে দেড়-ঘন্টা পড়াশোনা ! তারপর সেলিব্রেট বা হৈ-হুল্লোড় !"

ছাত্র-ছাত্রীদের সমবেত আওয়াজ -- না স্যার ! আজ শুধু সেলিব্রেট !

মুকুলবাবু এবার হেসে ফেলেন। তারপর ছদ্ম-গাম্ভীর্যে বলেন, -- "আচ্ছা ! আজকের মতো তোদের কাছে হার স্বীকার করলাম" !!

২টি মন্তব্য:

  1. প্রিয় লেখক, প্রিয় শব্দসৈনিক , অন্যমনে সাহিত্য সময়ের ইতিবৃত্ত সংখ্যায় আপনাকে পেয়ে গর্বিত ও আশান্বিত । আমরা আপনাকে শুভকামনা ও শুভেচ্ছা জানাই।

    উত্তরমুছুন
  2. অনেক ধন্যবাদ আপনাকে শ্রদ্ধেয় কবি বন্ধু মহাশয়

    উত্তরমুছুন