অন্যমনে সাহিত্য. অন্য রকম দৃষ্টিকোন থেকে দেখা একটি প্রতিবিম্ব ভাবনা .. অন্যমনে সাহিত্য.
শুক্রবার, ৯ অক্টোবর, ২০২০
সেইসময় এইসময়
সম্পূর্ণা
====================================================================================
তিরিশের শেষে এসে এটুকু বুঝেছে মুখস্থ আর নম্বর, মানে পরীক্ষার বোঝাটা মাথা থেকে সরে গেলে আসল পড়ায় বোধহয় বেশি আগ্রহ তৈরি হয়। মেয়ে ঝিমলিকে ইতিহাস পড়াতে পড়াতে কাল খানিক থেমে গেছিল। বৈদিক যুগ পড়াচ্ছিল মেয়েকে, প্রত্নতাত্ত্বিক সময় বলছে সে যুগ ছিল মাতৃতান্ত্রিক। ওও তেমনই জানতো ঝিমলির বয়সে। আজও পড়তে ভীষণ ভালোবাসে। সেই পড়তে পড়তেই কিভাবে চোখ চলে গেছিল মাতৃতান্ত্রিক সমাজের তকমা আঁটা বৈদিক যুগে। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী প্রাচীনকালে ভারত উপমহাদেশের নারীরা খুব স্বাধীনচেতা, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, শিক্ষিত ও স্বাবলম্বী ছিলেন। শুনলে মনে হওয়া স্বাভাবিক, পুরুষতন্ত্রের ছিটেফোঁটাও তখন ছিল না। মনে করা হয়, অবাধে খোলা চত্বরে বসে স্ত্রী-পুরুষ একত্রে জ্ঞানচর্চা ও বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনা-তর্ক করতে পারতেন। কিন্তু প্রকৃত সত্য হলো যে, প্রাচীনকালে, বিশেষ করে বৈদিক যুগের শেষ দিকে, ভারতীয় উপমহাদেশের নারীদের প্রচুর পরিমাণে অবদমিত হয়েছে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের কাছে। আর এই তাচ্ছিল্য,অবজ্ঞা করার ভুরি ভুরি প্রমাণ রয়েছে।
আবার বৈদিক যুগ পেরিয়ে চারপাশের গ্লোবালাইজ চেহারাটা বলছে পরিবার -সমাজ আর দেশের মোড়ক উন্নত হলেও তারা আজও মেয়েদের চোখা নাক, চোখের সৌন্দর্য, কোমরের ভাঁজে মাপতে ও চিনতে অভ্যস্ত। ভীতু স্বভাবের নম্র নত হেঁট হয়ে থাকা মাথা আর হাহুতাশ আর কান্নার খেলনাবাটি খেলার পুতুল বানিয়ে মেয়েদের দেখতে ভালোবাসে। মেলা থেকে কিনে আনা হাতা ,খুন্তি , বঁটি নিয়ে মেয়েবেলায় খেলতে খেলতেই সংসার, পরিবার সামলানোর প্রয়োজনীয় জড়বস্তু করে গড়ে তোলাই বোধহয় উদ্দেশ্য ছিল । অবশ্য এসব সহজ সরল খেলার দিনগুলো আজকাল কিভাবে যেন মুছে গেছে! কিন্তু মানসিকতা সেই প্রত্যন্ত যুগেই পড়ে আছে।
বিয়ের পর এম এ করতে চেয়েছিল ইতিহাসে,শ্বশুরবাড়ি থেকে আপত্তি তেমন ছিলও না। কিন্তু দু মাস ক্লাস করার পরই ঋদ্ধি মানে ওর স্বামী বলেছিল,
- আমি এ্যাকাউন্টেসি অনার্স, ব্যবসায়ে সব্বাইকে টপকে গেছি। তোমার মতো গবেট এম এ পাশ করে রাঁধবে তো শুধু ডাল ভাত, কোন উন্নতিটা হবে? সব টাকাটাই তো জলে যাবে....।
প্রত্যুত্তরে গার্গী বলতে যাচ্ছিল, 'শুধু অনার্স নই, ওতে ফার্স্টক্লাসটাও ছিল।' কিন্তু বলতে গিয়েও বলেনি কারণ বুঝেছিল ঋদ্ধির মেল ইগো হার্ট হচ্ছে, নিজের অক্ষমতা অন্যের নির্দোষ কাঁধে থুপে দিলে সুবিধা হয়।এমএ পরীক্ষার পার্ট ওয়ান দিয়েও তাই আর এমএটা শেষ করতে পারেনি। কারণ তখন উঠতে বসতে বাড়ছিল অপমান! আর আজও তার বদল ঘটেনি।এখনও সামান্য সামান্য ভুলে বকুনি খায় সবার সামনেই।
হঠাৎই চোখের সামনে পর্দাটা উঠতে উঠতে মনে পড়ছে সেই গার্গী, মৈত্রেয়ীকে, যারা যুগ যুগান্ত ধরে ইতিহাসের হলুদ হয়ে যাওয়া সময় পেরিয়ে আজও রয়ে গেছে উজ্জ্বল নক্ষত্রে! তবে যতটা সহজ করে ইতিহাসে তাদের কথা লেখা আছে, ততটা সহজ হয়তো ছিলনা সোজাসুজি চলার রাস্তাটা।বিদ্যে, বুদ্ধি আর মগজ আর বিভিন্ন ঘাত প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়েই তৈরি করতে হয়েছিল চলার পথ। গার্গী,মৈত্রেয়ীকে নিয়ে যতোটা আলোচনা চলেছে, কতটুকু সত্যি সে জানায় আছে তা নিয়ে আজ প্রশ্ন রয়ে যায়!আসলে হয়তো মনের ভেতর লুকোনো পৌরুষ,পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা মেয়েদের সম্পর্কে কোনো দিনই কোনো সহজ সরল সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি।
কতজন জানে, যখন চারপাশে যাজ্ঞবল্ক্যের মতো দ্বিতীয় জ্ঞানী আর নেই এমনই কানাঘুষো রটছিল, তখন সেসময়ের রাজা চেয়েছিলেন শ্রেষ্ঠ হতে হলে নিয়ম মতো চ্যালেঞ্জ তো করতেই হবে। রাজা নিজেই বেছে ঠিক করেছিলেন আট জন পণ্ডিতকে যাঁরা প্রশ্ন করবেন ঋষি যাজ্ঞবল্ক্যকে এবং নির্ধারণ করবেন তিনিই শ্রেষ্ঠ পণ্ডিত কিনা। এঁদের মধ্যে গার্গী ছিলেন একমাত্র নারী, বাকি সবাই পুরুষ।যখন তার আগের ছ'জন পুরুষ পণ্ডিত পরাজয় স্বীকার করেছিলেন সহজে সেইসময় গার্গীই দ্বিতীয় বার আবারও প্রশ্ন করার সাহস দেখিয়ে ছিল!পৃথিবীর সৃষ্টিতত্ত্ব নিয়ে পরের পর প্রশ্ন করে গিয়েছিল! এই পর্বের শুরুতে সভার সব পণ্ডিতেরা অনুমতি দিলে গার্গী প্রশ্ন করেছিল,
গার্গী- সারা বিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন উপাদান বা একক একত্র হয়ে। বলুন জলের উপাদান বা একক কী, যা একত্র হয়ে সৃষ্টি হয়েছে জল?
যাজ্ঞবল্ক্য- জলের একক হল বাতাস।
এভাবেই একে একে গার্গী যাজ্ঞবল্কের উত্তরের আরেক দিকের ছুঁড়ে দেয়া প্রশ্নে বায়ু, আকাশ, সূর্য,চাঁদ, নক্ষত্রের একক কি পরের পর জানতে চেয়েছিল! শেষের কিছুটা আগে জিজ্ঞেস করেছিল,
গার্গী- দেবতাদের উপাদান কী?
যাজ্ঞবল্ক্য- তাঁদের উপাদান ইন্দ্র।
গার্গী- তাহলে বলুন ইন্দ্রের উপাদান কী!
যাজ্ঞবল্ক্য- তাঁর উপাদান প্রজাপতি।
গার্গী- সেই প্রজাপতির একক কী?
যাজ্ঞবল্ক্য- তাঁর একক হল পরম ব্রহ্ম।
গার্গী- তাহলে ব্রহ্মের উপকরণ কী, অর্থাৎ সেটা এমন কী জিনিস যা পরস্পর একত্র হয়ে সৃষ্টি হয়েছে ব্রহ্মের?
সেও এক সুদীর্ঘ উত্তর। যার সমাপ্তি টেনে যাজ্ঞবল্ক্য বলেছিলেন,
-চির শাশ্বত বা অবিনশ্বর বা অক্ষয়ের নির্দেশে চন্দ্র-সূর্য-নক্ষত্র-গ্রহ-উপগ্রহ নিজের স্থানে নিজের কাজে রত রয়েছে। এবং দীর্ঘ তপস্যার পরেও যদি সেই পরম ব্রহ্মকে উপলব্ধি না করা যায়, তাহলে সেই তপস্যা বৃথা।এটাই চূড়ান্ত। এইখানেই জ্ঞানের শেষ।
তখন জ্ঞানী পুরুষতান্ত্রিক সমাজের প্রতিভূ মহা ঋষি যাজ্ঞবল্ক্য ভীষণ এতটা রেগে বলেছিলেন,
- স্তব্ধ হন ভদ্রে। আর প্রশ্ন করবেন না। বেদের নিয়ম আপনি লঙ্ঘন করছেন। এরপরে জানতে চাইলে আপনার মাথা খসে পড়বে। আপনি মানসিক ভারসাম্য হারাবেন।
প্রত্যুত্তরে গার্গী জিজ্ঞেস করতে পারেনি, 'সেই পরম ব্রহ্মকে কি শুধু আপনিই উপলব্ধি করেছেন? কেন সেই পরম ব্রহ্ম আমাদের তপস্যায় অধরা বা বৃথা?' শুধু হাসি মুখে সেদিন ভরা সভায় নিজের পরাজয় মেনে নিয়ে ছিল,
-যাজ্ঞবল্ক্য, তুমিই সর্বশ্রেষ্ঠ, আমাদের মধ্যে আর কেউ নেই যিনি তোমাকে জয় করতে পারেন।
মনে হয়, যুগের পর যুগ ধরে সেইসময় থেকে এইসময়ের গার্গীদের সাহস, স্পর্ধাকে এভাবেই থামিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে! পুরুষের সমকক্ষ মনে করতে পারেনি। মেয়েদের সেই স্পর্ধা মেনে নিতে পারেনি সে যুগ, এ যুগ মিলিয়ে সবাই-ই।আজও প্রচলিত ছক ভাঙা মেয়েদের আগুনের ওপর হাঁটা পথে নিজেদের প্রতিভার প্রমাণ দিতে হচ্ছে! অজস্র বাধা, উঁচুনিচু রাস্তা পেরিয়ে এসব তুচ্ছ তোয়াক্কা করে মেয়েরা এগিয়েও তো যাচ্ছে! তাদের লড়াইটা আরও সাংঘাতিক! মন থেকে কুর্নিশ করে সেসব মেয়েদের।আসল মগজ, মেধা, মননই তো প্রশ্ন করতে শেখায়! আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় ভুল!
শুধু বোঝেনা কতটুকু সাহসীকতা আছে পোষাকে! ওটা তো বাহ্যিক। স্বাধীনতা, অধিকারবোধ,আত্মমর্যাদা সবটুকু মিশিয়ে তৈরি হয় নিজের সত্তা। কতটুকু স্বাধীনতা আছে আইনের দেয়া চাকরির সংরক্ষণে? বাসের সিট থেকে ট্রেনের কামরা কেন থাকবে মহিলাদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা! হোক কঠিন পথ চলা, ইক্যুয়ালিটি ছাড়া কখনও কি সমান সমান হওয়া যায়? এ প্রশ্ন সরাসরি কেন মেয়েরাই করবেনা সমাজ-দেশ-আইনকে?তারা কেন অগ্রাহ্য করবেনা আইন ও প্রশাসনের দেয়া এই তুুচ্ছ অধিকারগুলোকে!!
তথাকথিত ফেমিনিস্টদের দেখেও অবাক হয়! তাদের চুলের কাটিং, সাজসজ্জা, চোস্ত ইংলিশে "নারী স্বাধীনতা"র আসল মানে কোল্ডশোল্ডার টপের খোলা বুক আর তার বাইরে দিয়ে পিঠে উঁকি মারা ব্রায়ের ফিতে, হাতে ধরা সিগারেট,আর সোল্লাসে মদের গ্লাস নিয়ে চিয়ার্সেই শেষে এসে শেষ হয়ে যায় !! আর বাইরের চাকচিক্যে মোহিত জেনারেশন নেক্সট এদেরই আইডল মানে। প্রলুব্ধ হয়ে যায়!
তবে এও সত্যি, যখন একটা তিন বছরের শিশু বা ষাটোর্ধ্ব মহিলা রেপড হয় তখনও বোঝে পোষাক অন্তত মলেস্টেশন বা রেপের কারণ নয়,একটা ঘৃণ্য মানসিক বিকৃতি মাত্র। স্ট্যাটিস্টিকস বলছে মেয়েরা বাইরের থেকে আজকাল বেশি পারিবারিক মলেস্টেশন বা রেপের শিকার হয় তথাকথিত কাকা, জ্যেঠা, ভাই, দাদাদের মাধ্যমে। আর তখনও জন্মের মতো মুখবন্ধ করিয়ে দেয়া হয় তাদের "পারিবারিক সম্মান" নষ্ট হওয়ার অজুহাতে। আর ধর্ষক ও ভিক্টিম যদি পরিবারের বাইরের হয়,চার পাঁচ বছর ধরে আদালতে পা ঘষে ঘষে জাস্টিস পেলেও, যদি ভুল করেও ভিক্টিম নতুন করে বাঁচার চেষ্টা করে তখন জন্মান্ধ সমাজ, পাড়া-প্রতিবেশী,আত্মীয় আবারও তাকে মেরে ফেলার বদ্ধভূমি হয়ে দাঁড়ায়! এমনকি মেয়েরাই মেয়েদের সবচেয়ে বড় শত্রু হয়ে যায় অবলীলায়! কি অদ্ভুত হিপোক্রেসি!
এসবই ভাবতে ভাবতে তার বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের চারিদিকটা চেয়ে দেখছিল। হঠাৎ পেছন থেকে একটা হাত জড়িয়ে ধরতে চমকে পেছন ফিরে দেখল ঋদ্ধি! মুখে সেই পরিচিত দাম্ভিক হাসিটা! অহংকারী স্বরে হেসে জিজ্ঞেস করল,
- গেস হোয়াট?
নির্লিপ্ত স্বরে গার্গী বলল,
-আবার কোনো কম্পিটিটরকে টপকে গেছ হয়তো!
হাতটা টেবিলে ঠুকে দাপুটে দাম্ভিক স্বরের বাঁধ ভাঙা অহংয়ে বলল,
- ইয়েস! ইয়েস! ইয়েস! ঋদ্ধি সেন ইজ অলওয়েজ অন দ্য টপ।এ্যন্ড দ্য মার্সিডিজ ইজ গনা এন্টার দ্য গ্যারেজ টুমরো।
সব্বাইকে আজ জানিও এই শর্মা এ্যাজ এ্য হাজবেন্ড কতটা দেয় তার ওয়াইফকে! ঝিমলি কোথায়? ওকে খবরটা দিই...
গার্গী নিরুত্তাপ গলায় বলল,
- ওর অনলাইন কেমিস্ট্রি কোচিং ক্লাস চলছে। শেষ হলে জানিও।
তার উত্তরে কিছু বলতে যাচ্ছিল ঋদ্ধি। কিন্তু একেকসময় চরম বিরক্তি সহ্যের বাঁধ ভাঙে। হঠাৎ কিভাবে যেন গার্গীর ভেতর থেকে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে বেরিয়ে এলো,
-এই সবটুকুর কতটুকুতে আমি আছি? এইগুলোই কি আসল সুখ? মাঝ পথেই ঋদ্ধি ওকে থামিয়ে বলল,
- এই একটু থামোতো!ইউ আর ঋদ্ধি সেন'স ওয়াইফ, দ্যাট ইজ এনাফ ফর ইউর আইডেন্টিটি!! আর এসব ফালতু মিনিংলেস ফিলোসফি ঝেরোনা! তুমি হেগেল না প্লেটো যে এত দর্শন কপচাও...! জাস্ট ডিসগাস্টিং! পুরো আনন্দটাই মাটি হয়ে গেল। সরলা তো আজ ডুব দিয়েছে, এবার একটু চা টা জুটবে ?নাকি তোমার ওই দর্শন তত্ত্বেই সন্ধ্যেটা কাটবে?
সটান উঠে দাঁড়িয়ে আর কোনো উত্তর না দিয়ে গার্গী চলে গেল চা বানাতে। কিচেনে গিয়ে আচমকা মনের মধ্যে ফিরে আসছে আদি যুগের আরেক বিদূষী মৈত্রেয়ী!গার্গীর চরিত্রের মতো আগুন মৈত্রেয়ীর না থাকলেও,যখন যাজ্ঞবল্ক্য তার পার্থিব সম্পত্তি ও সম্পদ দুই স্ত্রী কাত্যায়নী ও মৈত্রেয়ীর মধ্যে ভাগ করে দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তপস্যায় মগ্ন হবার উদ্দেশে। তিনি তার স্ত্রীদেরকে তার ইচ্ছার কথা জানান, তখন বুদ্ধিদীপ্ত মৈয়েত্রী তার স্বামীকে জিজ্ঞেস করেছিল,
-পৃথিবীর সমস্ত সম্পদ কি অবিনশ্বর?
ঋষি যাজ্ঞবল্ক্য প্রত্যুত্তরে বলেছিলেন,
- সম্পদ শুধুমাত্র একজন ভোগ করতে পারে, তাছাড়া কিছুই করতে পারে না। সম্পদ অমরত্ব দান করতে পারে না।
মৈত্রেয়ী তখন তাঁর স্বামী ঋষি যাজ্ঞবল্ক্যে কাছে অর্থ প্রচুর্য্য ধন- সম্পত্তি কিছুই না চেয়ে শুধু বলেছিল‘--
- যেনাহম্ অমৃতস্যাম, কিমহম্ তেন কুর্যাম? অর্থাৎ যা আমাকে অমৃত দান করতে পারে না, তা লাভ করে আমি কি করবো?যাজ্ঞবল্ক্য তার কথা শুনে খুশিই হয়েছিলেন। ধীর স্বরে বলেছিলেন,
- না, এমনকি ধনীর জীবনও অমরত্ম লাভ করতে পারে না। ধন সম্পদের মধ্যে অমরত্ম লাভের কোন আশা নেই।
মৈত্রেয়ী তখনও অবিচল স্বরে বলেছিল,
-তাহলে ধন সম্পদ দিয়ে আমি কী করব,যা আমাকে অমরত্ম দান করবে না, মহাশয় আমাকে বলুন তাহলে আমার কী প্রয়োজন?
একজন মেয়ে হয়ে কি অবাক করা দর্শন রেখে গিয়েছিল মৈত্রেয়ী! শুধু মেয়েদের জন্য নয়, দেশ কাল পেরিয়ে পুরো পৃথিবীর জন্য! গোটা পৃথিবীটাই যেন আজ ঘোড় দৌড়ের ময়দান!শুধু টাকা আর প্রাচুর্যে গড়ে তোলা দাম্ভিক বৈভবের মিথ্যে অহং আর তা দিয়ে ক্ষমতার আস্ফালনের জন্য! কদিন আগেই খবরের কাগজে দেখেছে গোটা দেশের অর্থনীতি যখন গত এপ্রিল থেকে নেমে দাঁড়িয়েছে ২৩.৯%এ, বেকারের সংখ্যা কোটিতে ছুঁয়েছে, তখন এই দেশেরই এক শিল্পপতির আয় গত তিন মাসে ৩৫%বেড়েছে!! চোখের সামনে প্রতিদিন দেখছে আরও বেশি ভালো থাকার লোভে কম বেশি সবারই টাকার কাছে কিভাবে ঝুঁকে গিয়েছে মেরুদন্ড। বহু মেয়েকেও দেখেছে স্বামীর দেয়া বিলাস বৈভবের তলায় চাপা পড়া গরবিনী হয়ে বিদ্যে বুদ্ধি বিসর্জন দিয়ে কেন্নো হয়ে বাঁচতে। আজকাল তাই অর্থ আর যশ আর খ্যাতিতে কেমন একটা অরুচি আসে! মনেমনে জানে অবশ্য, নিজেও এমন মেরুদন্ডহীনদের দলেই! সেও হয়তো আপোষে খোরপোশে খরচ হয়ে গেছে!
হঠাৎ অকারণেই চোখটা ঝাপসা হয়ে আসছে।চায়ের জল গ্যাসে বসিয়ে খেয়াল করল কিচেনের জানলার উল্টো দিকের পার্কটায় দুর্গাপুজোর প্যান্ডেল বানানো শুরু হয়ে গেছে। এই করোনা এতো মৃত্যুর পরেও উৎসব হয়ে ফিরবে মা দুর্গা।ষষ্ঠীতে বোধন,মাটির মূর্তিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা,অষ্টমীর অঞ্জলীতে আলোয় মোড়া শহর আবারও হবে বানভাসি। যে মানুষ যে সমাজ যুগের পর যুগ ধরে মেয়েদের কোন ঠাসা করে এসেছে, তাদের মেধা, প্রতিভাকে গলা টিপে মারার চেষ্টা করেছে! মনে রাখেনি দেশও "মাতৃকা", সর্বংসহা "ধরিত্রী", সুফলা "বসুন্ধরা"।বৈদিক যুগ থেকে নারী সমস্ত পৃথিবীকে সিঞ্চন করে এসেছে। সব সব সব্বাই গেছে ভুলে! মাঝেমাঝে তাই ইচ্ছে করে গোটা সমাজটাকে ঝাঁকুনি দিয়ে জিজ্ঞেস করে,অনেক উঁচু সিংহাসনে বসিয়ে আচার বিচার নিয়মে "দেবীপক্ষের দেবী"র পায়ে নত হয়ে আর কতদিন ভন্ডামীর পুজোয় মেয়েরা মিথ্যে পূজিত হবে? কবে সেই শরৎ আসবে যখন সত্যি অর্থে নবমীর সন্ধিপুজো গাইবে,
".....ধূম্রনেত্র বধে দেবি ধর্ম কামার্থ দায়িনি|
রূপং দেহি জয়ং দেহি য়শো দেহি দ্বিষো জহি ||....."
********************************************************
তথ্যসূত্র :
১)বৈদিক যুগ সম্পর্কে প্রখ্যাত গবেষক সুকুমারী ভট্টাচার্যের বর্ণনা।
(২) পূরবী বসুর বৈদিক যুগ নিয়ে প্রবন্ধ
(৩) বেদ : Wikipedia, the free encyclopedia
(৪) In the translation of the Sanskrit text of the Rigveda by Ralph T.H.Griddith(1896),
(৫)বৈদিক যুগ নিয়ে বিভিন্ন ব্লগ
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন