অন্যমনে সাহিত্য. অন্য রকম দৃষ্টিকোন থেকে দেখা একটি প্রতিবিম্ব ভাবনা .. অন্যমনে সাহিত্য.

শুক্রবার, ৯ অক্টোবর, ২০২০

সম্পাদকীয়

 

সম্পাদকীয়

=======================================================================================
=======================================================================================
সে সব অনেক পুরনো দিনের কথা চার-এ বেদ ছিল, পাঁচ-এ পঞ্চবাণ, পাঁচ-এ পঞ্চ-কন্যাও ছিল। অতীত ঘাঁটলে এসব পাওয়া যাবে। এখনও সেই পাঁচ আছে। ভোটের আসরে সেই পাঁচ এখন পঞ্চায়েত ।শাস্ত্র ছিল শস্ত্র ও আছে। আমরা মন্ত্র উচ্চারণের ভেতর কন্যাকে দেবীতে উন্নীত করি। দেবী দশভুজা হন । শাস্ত্রকার তাঁর ছলে বলার সুনিপুণ কৌশলে শ্রদ্ধা আর সমর্পণের মায়াজালের দৃশ্য বুনে চলে আর সংস্কারের লতায় পাতায় আবৃত হয়ে দেবী রূপিণী নারীসমাজ শ্রেণী ও বর্ণ বিভাজনের জাঁতা কলে নিষ্পেষিত হয়ে চলে।সেই দেবীরাও প্রবেশাধিকার হারায় তাঁদের শবরীমালায় ।দেব দেবীর পুণ্যভূমি এই ভারতে দুই কোটির বেশি 'অবাঞ্ছিত কন্যা' শিশুর জন্ম নেয় প্রতি বছর।তথ্য বলে পুত্র শিশু লাভের আশায় সন্তান জন্মদান অব্যাহত রাখার কারণে ভারতে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে প্রায় দুই কোটি দশ লাখ 'অবাঞ্ছিত কন্যা শিশুর' জন্ম হয়েছে। গর্ভের শিশু, পুত্র নাকি কন্যা - সেটি নির্ণয়ের জন্য ডাক্তারি পরীক্ষা আইন অনুযায়ী নিষিদ্ধ, তারপরেও এ ধরনের পরীক্ষা চলে এবং গর্ভের শিশুর লিঙ্গ পরিচয় জানার পর সুপরিকল্পিত ভাবে লক্ষ্মী রূপিণী কন্যা শিশুর ভ্রূণ হত্যা করা হয়। দেবী অধ্যুষিত এই দেশে এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর স্বামী কাস্তে দিয়ে তার স্ত্রীর পেট কেটে দেবার পর ওই নারী মৃত ছেলে সন্তান প্রসব করে।''বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও'' রাজনৈতিক শ্লোগানের উত্তেজনায় হারিয়ে যায় কামদুনি।লাইন দীর্ঘ হয় হয়েই চলে। রামের রাজ্যে সীতার নিগ্রহ হয়। থামানো হয় না।মণীষা বাল্মীকির আর্তনাদ মেশা হাথরস এসে পড়ে চা এর কাপে।

আসলে একটা পচনশীল সমাজ ব্যবস্থায় এমনই হয়।আর এর পেছনে এক এবং একটিমাত্র কারণ, রাজনৈতিক নেতাদের ক্ষমতা দখলের লড়াই। বিভ্রান্তি মূলক নোটবন্দি, টাল মাটাল জিএসটি পরিকল্পনা , ডুবতে থাকা অর্থনীতি, আকাশ ছোঁয়া বেকারি, বিপুল সংখ্যক পরিযায়ী শ্রমিকদের ভুল বুঝিয়ে হাজার মাইল হাঁটানো, বাস্তব পরিকল্পনাহীন পরিকল্পনা কিংবা সদ্য পাশ হওয়া নতুন কৃষিনীতির বিরুদ্ধে সারা দেশব্যাপী কৃষক আন্দোলনের লাল ঝড় অথবা আঠাশ বছর ধরে চলা বাবরি মসজিদ ধ্বংস মামলার রায়ের খবরকেও এই হাথরসের কম্পনের সুযোগ নিয়ে কেমন আড়ালে ঠেলে দেওয়া হলো। প্রতিবার নতুন কোন একটি ঘটনার প্রতিবিম্বে অন্য অনেকগুলি বিষয়কে মানুষের নজরের আড়ালে সরিয়ে দেওয়া হবে। এটাই ২০২০ এর ডিজিটাল ভারতবর্ষ।গণতন্ত্রের অর্থ যেখানে মুচলেকা দিয়ে গণতান্ত্রিক অধিকারকে বিসর্জন দেওয়ার ভিতরেই। সিধান্ত তাই আপনাকেই নিতে হবে ।

এই গড়ে ওঠা পুরুষতান্ত্রিক  সমাজে নারী হচ্ছে সভ্যতার সবচেয়ে নিষিদ্ধ কিন্তু আকর্ষণীয় উপাদান।যাকে নিয়ে ঘিরে গড়ে ওঠে মহাকাব্যের উপাখ্যান যার উপস্থিতি আবাহন করে ইতিহাসের মহাসংগ্রাম লেখা হয়। ‘‘নিজেদের অধিকারের ব্যাপারে সামান্য সচেতন হলে মেয়েরা নিশ্চয়ই বুঝত যে জগতে যত নির্যাতন আছে মেয়েদের বিরুদ্ধে সব চেয়ে বড় নির্যাতন হল মেয়েদেরকে সুন্দরী হওয়ার জন্য লেলিয়ে দেওয়া।’’ । এমন করেই দিন ঘোরে মাস ঘোরে বছর থেকে বছরের অতিক্রম চলে। সুদূর অতীত থেকে এসে পড়ে বর্তমান।

কোভিড আতংক কাটিয়ে দুয়ারে দাঁড়ায় এসে মাস আশ্বিন।আর আশ্বিন মানেই কাশ ফুলে ভরে ওঠা নৈসর্গ আর বাঙালির সব ভুলে মেতে ওঠা, পুজোর খুশিতে। আবারো সব ভুলে সেই নারী যে নিজেকে দেবী সাজিয়ে পুজো নেওয়ার প্রাক প্রস্তুতি নিয়ে চলেছি অপরদিকে মনুবাদে মেতে নারী বিদ্বেষে কুলষিত করছি আমাদের চারপাশ।দুটি বিপরীত মুখী স্রোতে দাঁড়িয়ে আমাদের সমাজ চেতনা আর মনন। প্রাক বৈদিক যুগ থেকেই নারী তাদের জ্ঞান প্রজ্ঞায় সিঞ্চন করেছে সৃষ্টিকে। তাই দেবীর বোধনের আড়ালে নারী শক্তিরই আবাহন। নারীর অন্তরের শক্তি জাগ্রত হলে জেগে ওঠে ত্রিনয়ন। নবমীর নবরাত্রিতে জেগে উঠুক ত্রিনয়নী ।

আপাতত তাঁর বরাভয় হাতের আশীর্বাদ সম্বরণে রেখে নয় এর নবমীতে মেতে নবরাত্রির রণনৈপুণ্যে মেতেঊঠে তার দ্বীপ্ততায় নতুন করে সেজে উঠুক এই সমাজ।

বাঙালির এই দেবী শক্তির আবাহন কালে আমরাও ব্রতী হই সেই ত্রিনয়নী নারীর বন্দনায়। তার ভালোবাসায় প্রকৃতি হোক আনন্দময়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন